Flickr

Wednesday, 27 June 2012

একটা ঘণ্টার বৈদ্যুতিক সুইচ অফ রাখলেই কি এর পূর্ণ সমাধান আসবে?

Posted by   on

বাঙালি জাতি অল্পতে খুশি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা এ চারটি মৌলিক চাহিদা হলেও মানুষের প্রধান চাহিদা হলো খাদ্য। আর ডিজিটাল যুগে বিদ্যুৎ। বর্তমান সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান শর্ত যে বিদ্যুৎ তা হয়তো সরকার ভুলেও কখনো ভেবে দেখেনি। দেশের মন্ত্রীরা প্রায়ই বলে থাকে ১৫০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ তৈরি করেছি অথচ সেই বিদ্যুৎ যায় কোথায়? প্রতিবছর সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের মোটেও উন্নতি নেই। মানুষ এ বিদ্যুৎ নিয়মিত পেলেই হয়তো অন্য কোনো চাহিদার কথা ভুলেও মুখে আনবে না। রাত-দিন নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ যখন অতিষ্ঠ, হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে, ঠিক সেই মুহূর্তেই চতুর্থবারের মতো বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক মাস পর ঘোষিত সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আগের মাসের জেরসহ। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেছেন বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও সরকার বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েই যাচ্ছে। এতে জীবনযাপন আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে ইউনিট প্রতি গড়ে ৩০ পয়সা (৬ দশমিক ২৫ শতাংশ) ও পাইকারি পর্যায়ে ২৮ পয়সা (৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। এখন আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের ৭ টাকা ৮৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি সেচ পাম্পের জন্য ২ টাকা ২৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পের ৬ টাকা ২ পয়সা অনাবাসিক ৩ টাকা ৯২ পয়সা, বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ৭ টাকা ৭৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিইআরসি এ নতুন মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে গড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ পাইকারি পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ে। তার ঠিক ২ মাস আগে ১ ডিসেম্বর থেকে খুচরা ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ ও পাইকারি ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। ৪ মাসের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় দাম ৪ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৯৬ পয়সা ও পাইকারি পর্যায়ের ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ১৭ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও বিইআরসি পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রথম দফায় ১১ শতাংশ ও দ্বিতীয় দফায় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়ায়। তখন অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে খুচরা বিদ্যুতের দামও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথমবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০১০ সালের মার্চে। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলেও তীব্র লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। শহরে বিদ্যুতের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও গ্রামে বিদ্যুতের দেখা মেলে মাঝে মধ্যে। রাজধানী ঢাকায় এখন প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি গভীর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে অসহনীয়। মফস্বলের কথা ভাবাই যায় না। রাতে সেচ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলা হলেও গ্রামের মানুষের অভিযোগ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। কয়েকদিন পর গরমের তীব্রতা বাড়লে লোডশেডিংয়ের কারণে দেশবাসীকে ভোগ করতে হবে সীমাহীন ভোগান্তি। বিদ্যুতের এ বিপর্যয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসা। শিল্প-কারখানা রাতে ১২ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

 শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের অভাবে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে গৃহস্থালীর বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিকল হয়ে পড়ছে। আইপিএসও এখন কাজ করছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি ও পাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধ থাকছে ওয়াসা পাম্পগুলো। গ্যাস সঙ্কট আরো নাজুক পরিস্থিতিতে। গোটা দেশের চিত্র যখন এ রকম ঠিক তখনই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলা হলো বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মতে, দাম বাড়ানো হলেও সহনীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারণ জ্বালানি সঙ্কট ও সাশ্রয়ের কারণে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা যেটুকু আছে সেটুকুর পুরোপুরি ব্যবহার হবে না। যদিও দাম বাড়ানো হচ্ছে বেশি দামের তেলচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি বলে। গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩০ পয়সা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ জনতা। তাতে লাভ কি বা হবে? কে ভাববে দেশের সাধারণ জনতার কথা। দেশের সাধারণ জনগণ ভোগান্তি চায় না, চায় বিদ্যুৎ অথচ সরকার অর্থের বৃহৎ অংশ ব্যয় করে অন্য খাতে। সরকারের বোঝা উচিত জনগণের চাওয়া-পাওয়া কি? কোনো ঘাটতি পূরণ করলে পরবর্তীতেও সরকার গঠন করা সহজ ব্যাপার হবে। বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনশীল অবস্থায় নেই। এতে সরকারের আগাম দিনগুলো পড়ছে বিপাকে। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ জনতাকে। ফলে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষতির হিসাব গুনতে হচ্ছে কৃষি খাতকে। বর্তমান সময় বোরো মৌসুমের সময় অথচ জরিপে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মফস্বল এলাকাগুলোয় ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়াই স্বপ্ন। এতে বিগড়ে যাচ্ছে দেশের কৃষক শ্রেণীর জনতা। অল্প কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। চলছে এইচএসসি পরীক্ষা অথচ বিদ্যুতের অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চর্চা করতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের সব ভালো কাজ অন্ধকারে হারিয়ে যাবে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মতো। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির হিসাব না করতেই হিসাব করতে হবে আবার জ্বালানির মূল্য বুদ্ধির। এই প্রথম দেশে জ্বালানির মূল্যপ্রতি লিটার ১০০-র কাছাকাছি। হয়তো বা শতককেও ছাড়িয়ে যাবে। আর জ্বালানির মূল্য এরকম আকাশছোঁয়া হলে বিদ্যুতের মূল্য হ্রাস কল্পনাও করা যায় না। এত হতাশার পরও সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের ব্যাপারে কোনো সান্ত্বনার আগাম বাণী নেই। একটা ঘণ্টার বৈদ্যুতিক সুইচ অফ রাখলেই কি এর পূর্ণ সমাধান আসবে?

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter