Flickr

Wednesday, 6 June 2012

ক্ষমতা দখলের নেপথ্য নায়ক

Posted by   on

মূলত আমাদের সেনাবাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালন করে যে সুনামের অধিকারী হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। অথচ দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ বিশ্বের দরবারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যিই সময়োপযোগী। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তা খুবই দুঃখজনক এবং সমগ্র জাতির ওপরই কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সেনা সদস্যদের মধ্যে কিছু বিপদগামী সদস্য আবারো অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সেনা শাসন চালু। হিজবুত তাহরীর মতো একটি ইসলামী জঙ্গি সদস্যদের মদদ নিয়ে আমাদের দেশকে আবার ১/১১-এর মতো বিতর্কিত করা। যেসব সেনা সদস্যদের কথা গোয়েন্দা সংস্থা অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তাদের অনেকেই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। ই-মেইলের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে সংবাদ প্রচার হয় মাত্র কয়েক মিনিটের মাধ্যমে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে যুগে সেনা বিদ্রোহের ঘটনা বিস্তৃত আছে। আমাদের দেশেও অনেক দুঃখজনক অধ্যায়ের কাহিনী রচিত আছে। কয়েকবার সেনা সদস্যদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসারের কারণে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনসহ অনেকেই প্রাণ হারান। পরবর্তীকালে মেজর জিয়াসহ অনেক অফিসারের জীবন শেষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারো চলছে চেষ্টা। খবরটি সেনা সদস্যদের জন্য যেমনি দুঃখজনক, তেমনি জনগণের জন্য অপমানজনকও বটে।

 ইতিহাসের পিছনে গেলে সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনায় ১৮৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসির পরিবর্তে ডাইকাউন্ট ক্যাটিং বড় লাট হয়ে আগমন করেন। তখন কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচ- বিক্ষোভ দেখা দেয়। সে বিক্ষোভ সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহিরা প্রথম বিদ্রোহ করে কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে। দক্ষিণ ভারতের এক বলিষ্ঠ ব্রাহ্মণ সিপাহি 'মঙ্গল পান্ডে'কে পদাতিক সিপাহিদের উত্তেজনা করার জন্য ফাঁসি দেন। সিপাহি বিপ্লবের প্রভাব ঢাকার সিপাহিদের ওপর পড়ে এবং বৃটিশ সেনারা ঢাকা কালেক্টরে নিয়োজিত ৫১ সিপাহির অস্ত্র কেড়ে নেয়। লালবাগে সিপাহিদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চাইলে সেখানে সংঘর্ষে ৪০ সৈনিক নিহত হন। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত মুসলমানরা সম্পূর্ণভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করেনি। বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের এবারকার এই অন্যায় প্রচেষ্টার মধ্যে অন্যরকম উদ্দেশ্য ছিল বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এর পূর্ণ বিবরণ অবশ্যই সরকারের জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা দরকার। সত্য ঘটনাটি কী তা অবশ্যই পলাতক জিয়ার অনুসারীদের কাছ থেকে বের করে জনগণকে জানাতে সরকার সচেষ্ট থাকবেন এটাই জনগণের দাবি।
দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। এ ক্ষেত্রে হিযবুত তাহরীর র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি সংস্থার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীতেও শেকড় গড়তে সক্ষম হয়েছে। মূলত দেশে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ মিশনের আদ্যোপান্ত খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে? এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এ জঙ্গি সংগঠনের বিদেশি ওইংগুলোও এ নীলনকশা বাস্তবায়নে তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের দেশি-বিদেশি নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এরই মধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রশাসন হিযবুত তাহরীরকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সন্দেহভাজন এমন কয়েকটি এনজিওর কর্মকা- মনিটর করার জন্য গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে।

 একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভিন্ন উদ্দেশ্যে বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা তৈরি করে দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর পরিবেশ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী জাতির কাছে তাদের জবাবদিহিতা এবং আনুগত্য স্বীকারের পাশাপাশি তার দায়বদ্ধতার পরিচয়ও তাদের কাছ থেকে জাতি পেল। রাষ্ট্রবিরোধী কুলাঙ্গারদের যেভাবে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিল তা ছিল অভাবনীয় অধ্যায়। সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে সেই বাস্তব চিত্রই দেখতে পাওয়া গেল সেনাবাহিনীর বীর জওয়ানদের কাছ থেকে। লক্ষ্য কোটি ধন্যবাদ। বর্তমান সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ উক্ত ঘটনায় ১৬ কোটি বাঙালির অন্তর থেকে ধন্যবাদ বের হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।
তবে এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম যে বিবৃতি দিলেন তার বক্তব্য কি সঠিক? সরকার কি নিজেই নিজের গর্তে প্রবেশ করেছে? তার বক্তব্য মনে হচ্ছে সরকার সেনাবাহিনীর একটি অংশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমার মনে হয় মহাসচিব হওয়ার পথে ফখরুল সাহেব যে সাহস দেখাবার কথা তা তিনি দেখাতে ব্যর্থ হলেন। তার বক্তব্যটি ছোট বাচ্চাদের গল্প বলার মতো হয়ে পড়েছে। এক রাজা তার রাজ্য হারাবার ভয়ে তার নিজের দেহে নিজে আগুন জ্বালিয়ে জনগণের সহানুভূতি তার দিকে ফেরাতে সমর্থ হয়েছেন। বর্তমান সরকার সেই রাজার মতোই করেছে। ফখরুল ইসলাম দলীয় অবস্থানে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সরকারকে যে দোষারোপ করছেন তার সত্য-মিথ্যা জনগণ জানতে চায়।

 মূলত আমাদের সেনাবাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালন করে যে সুনামের অধিকারী হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। অথচ দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ বিশ্বের দরবারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যিই সময়োপযোগী। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তা খুবই দুঃখজনক এবং সমগ্র জাতির ওপরই কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়। সমস্যার গভীরে গিয়ে উক্ত ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 সরকারকে মনে রাখতে হবে এর অন্দরে বাহিরে যারাই ছিল তারা সবাই দেশের অকল্যাণ কামনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এদের সমূলে বিনাশ করা প্রয়োজন। হিযবুত তাহরীর সদস্য সংখ্যা কত? তার সঠিক চিত্র নিয়ে এদেরকে জেএমবির মতো ফাঁসির মঞ্চে আনতে হবে। বাংলা মায়ের বুকে আর আমরা অন্যায়ভাবে রক্ত ঝরা দেখতে চাই না। সামরিক শাসনের নামে কুশাসন আর জাতি দেখতে চায় না। জিয়া, এরশাদের মতো অবৈধ রাষ্ট্রনায়ক গণতান্ত্রিক বিশ্ব আর দেখতে চায় না। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধানসহ সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

 ইসলামকে ব্যবহার করে হিযবুত তাহরীর সদস্যদের যেভাবে বিপদগামী পথে পরিচালনা করছে তা আমাদের যুব সমাজের জন্য খুবই খারাপ দিক। ভবিষ্যৎ বংশধরদের সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব সরকার এবং বিরোধী দলের। এখানে যে দলই ওদের পক্ষে যাবে সে দলই মারাত্মক ভুল করবে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান চাই না। কেমন করে ওরা এত দূরে অবস্থান করল এটাই ভাবনার বিষয়। ওদের শক্তি বৃদ্ধি পেলে তা শেখ হাসিনা বা বেগম জিয়া অথবা ইসলামের কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। ওরা সবার জন্যই ক্ষতিকর। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকবেন। অবশেষে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করলাম।


No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter