Flickr

Monday, 24 September 2012

গণতন্ত্রের ধারা!

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এরশাদ সাহেবের পতনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে ধারা সৃষ্টি হয়েছিল তা অব্যাহত গতিতে চলবে এমন একটি আশা আমরা পোষণ করেছিলাম। আরম্ভটা ভালোই হয়েছিল। তবুও শেখ হাসিনার সূক্ষ্ম কারচুপি মন্তব্যটি কিঞ্চিৎ প্রশ্নের সঞ্চার করেছিল। তারপর নির্বাচনে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ, একবার আওয়ামী লীগ অন্যবার বিএনপি ক্ষমতার আসনে বসেছিল। এতে গণতান্ত্রিক চর্চা ভালো হওয়ার কথা। বাস্তবে তা হয়নি কারণ, পার্টি দুটো গণতন্ত্রের চর্চা করেনি। এক ধরনের 'প্রেসিডেন্টশিয়াল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট' দুটি দলই ক্ষমতার বলে চালিয়েছে। এটি কেন হলো? উত্তরটা সহজ। নেতৃত্বে যিনি সর্বেসর্বা সেই খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দায়ী। কারণ, তারা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে পরীক্ষিত কর্মী বা নেতা না নিয়ে নির্বাচনে আমলাদের (সামরিক ও বেসামরিক) প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন দান করেছিলেন। অর্থ ও ক্ষমতার কথাভেবে এবং এসব নেতা শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। এরা দেশ সেবা করার জন্য দলে যোগদান করেননি। তারা ক্ষমতা ও ধনের জন্য রাজনীতিতে এসেছিলেন। পরীক্ষিত তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী না নেয়ার জন্য দল থেকে আদর্শ লোপ পেল। ফলে ঘুষ ও দুর্নীতিতে ছেয়ে গেল দেশ। দলগুলোর অঙ্গসংগঠনগুলো টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে দলবাজি করা শুরু করল। সরকারি জমি দখল হয়ে গেল। দখল হলো রেলওয়ের জমি। নদীও দখল থেকে নিষ্কৃতি পেল না। চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পেল এবং এটা এমন হলো যে বখরা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই মারামারি শুরু হলো। এ এক অদ্ভুত চিত্র। দলের শাসন লোপ পেল।

  
বলাবাহুল্য, দুর্নীতির এই বল্গাহীন তা-বে আদর্শবাদ, নৈতিকতা, সততা লোপ পেল। পাল্লা দেয়া শুরু হলো কে কতভাবে দুর্নীতি করতে পারে। ঘুষ গ্রহণ করতে পারে। দুই দলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুণীজন আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। মরহুম মোজাফফর আহমদ থেকে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক সরকারকে সতর্ক করে দেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। ভালো কথা কোনো দলই শুনতে রাজি নন।

 আর একটি দিক লক্ষ্য করা যায়। দলের ভেতরেও গণতন্ত্রের চর্চা লোপ পেল। পার্টি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একজনই। এ ঐতিহ্য বন্ধ হলো না। ফলে একক নেতৃত্বে সর্বেসর্বা ব্যক্তিটি সবার কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করেন তা হচ্ছে আনুগত্য। আনুগত্য না দেখালে দলে ঠাঁই নেই কোনোকালেই।

 রাজনীতিতে এইসব চক্র থাকাতে যে গণতন্ত্র অব্যাহত গতিতে চলত তা থেমে গেল। ফলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দলের সর্বেসর্বা। তাদের মুখের দিকে তাকিয়েই অন্যান্য নেতা কথা বলে। বক্তব্য রাখে। বিবৃতি দেয়। এছাড়া আরেকটি কারণ আছে, ভোট ধরতে পারবে কে? দুই নেত্রীর কারিশমা ভোট ধরার উপায়। কাজেই দলের নেতারা তাদের ওপর নির্ভরশীল। নির্ভরশীল হলে নেতা বা নেত্রীর মধ্যে 'ইগোইজম' সৃষ্টি হয়।

 তখন সবাই রাজা নন। একজনই রাজা এ রাজার রাজত্বে। আর একটি দিক বিবেচনায় নিতে হয়। ছোট ছোট যে বামপন্থী দল আছে তা দেশের রাজনীতিকে নষ্ট করেছে। তাদের কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য নেই। ভোটে দাঁড়ালেও ভোট পাবে কিনা সন্দেহ। তবুও সুধীজনের প্রত্যাশা যতটুকু ক্ষমতা আছে তা নিয়ে এ সব দল লড়বে। কিন্তু না, তারা আত্মসমর্পণ করে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে। বামপন্থী চেতনার অবসান হয়। দক্ষিণমুখী চেতনার জন্য তারা বিসর্জন দেয় আদর্শ। দলে যে ভিড়ল তার প্রধান কারণ, ক্ষমতা, দুএকটা পদ, কিংবা মন্ত্রিত্ব। তাই দিলীপ বাবু কমিউনিস্ট হয়ে আওয়ামী লীগে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। এতে তার আদর্শ তার চোখে বিসর্জিত হয়নি।

 এ প্রসঙ্গে পরিবারতন্ত্রের কথা বলা যেতে পারে। গেল কয়েকবছর ধরে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে 'মাইনাস' করার কথা বলা হচ্ছে। ১/১১-এর সময় বড় করে, এখন ছোট করে। কিন্তু যারা বলছেন তারা হয়তো ভুলে যান এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একদিনে চেপে বসেনি। এটা বলা চলে সেই '৭১-৭২ থেকে। শেষ মুজিবের সময় থেকে। নইলে আওয়ামী লীগের নেতার তো অভাব ছিল না। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, নজরুল ইসলামের পরও অনেক ছিলেন। মিজানুর রহমান চৌধুরীর কথা বলতে পারি। তা কেউ না হয়ে শেখ হাসিনা নেতা হলেন কেন? নেতারাই তো তাকে বানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। গৃহবধূ থেকে টেনে এনে তাকে নেতা বানানো হলো এবং এরা দুজনই নেতা বনে তো গেলেন। নির্বাচনে তাদের নামেই তো ভোট আসে। অন্য কারো নামে নয়। অবশ্য নির্বাচনে যিনি দাঁড়াচ্ছেন তার ওপরও কিছুটা নির্ভর করে। মনে রাখা ভালো, ভারতের মতো দেশেও পরিবারতন্ত্র ঘোচাতে পারেনি। নির্বাচনে নেহরুর বংশই ভোটার টানে। ফলে বিজয়। কাজেই রিস্ক নিয়ে লাভ কী? ওখানে চেষ্টা তো কম হয়নি। সোনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করা যায়নি বিজেপির জন্য। কিন্তু নেতৃত্ব তো তার হাতে, কংগ্রেসের নেতৃত্বের কথা বলছি।

 এই প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাচারী-স্বৈরাচারী এরশাদের প্রসঙ্গ আনতে হয়। তার ৯ বছরের শাসনামলে দুর্নীতির যে বিষবাষ্প বাংলাদেশকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল তার তুলনা হয় না। গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর তিনি ডাস্টবিনে চলে যাবেন এ রকমই আশা করা হয়েছিল। যে আশা সঙ্গত ও যৌক্তিক কিন্তু না, তিনি অবিশ্বাস্য মেধা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থান করে নিলেন। কাউকে ভাই ডেকে, কাউকে বোন ডেকে। তালবাজ এরশাদ তালমতই শেখ হাসিনাকে বোন ডেকে তার দলে ভিড়লেন। যদিও প্রত্যাশা মেটেনি, মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি, তবুও তিনি আছেন এবং তার মর্যাদা বেড়ে গেল ভারতের আমন্ত্রণে। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। নিশ্চিত এটা, ভারত সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলেছে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে, আর প্রথম ফ্রন্ট আওয়ামী লীগ। বস্তুত, এরশাদ ধরে নিয়েছেন খালেদা জিয়া যেমন একরোখা তাতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থায় নির্বাচন করবেন না, তখন বিরোধী পক্ষের ভূমিকায় এরশাদ ছাড়া আর কে আছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে আর তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হবেন এবং নেতা হয়েও আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। রাজনৈতিক দাবাখেলায় সব সময় সব সাধ মেটে না। কিন্তু কখনো কখনো মিটে যায়। কে জানে এরশাদ সাহেবের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে কি না।


 দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের বীজটি উপ্ত হয়ে শাখা-প্রশাখা মেলে ফলে ফুলে বৃক্ষ হয়ে উঠবে এ আশা বাতুলতা। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নামেই, কারণ একবার নির্বাচন হয়। নির্বাচন শেষে আবার পাঁচ বছর পর আবার নির্বাচন হয়। এর নাম গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের এই ধারা দুটি দলই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মেনে চলে এবং জনগণকে যে সব ওয়াদা দেয় তা অপূর্ণই থেকে যায়। মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, জনসেবা _এর কিছুই পায় না। মানুষ অবাক হয়ে দেখে কীভাবে ক্ষমতাসীন দলটি সব কিছু ভুলে গেল। তাই মাঝে মাঝে শুনতে হয় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে, ওই দুজন থেকে এরশাদ সাহেবই তো ভালো। কত বড় আঘাত পেলে ও নিরাশ হলে জনগণ এরকম কথা বলতে পারে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবশ্য এতে এসে যায় না। তারা ভাবে তাদেরই জয় হবে। জনস্বার্থ রক্ষিত হোক কিংবা না হোক। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে যে 'যুদ্ধ' চলছে কীভাবে তার মীমাংসা হবে সেটাই প্রশ্ন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটার গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে বিশ্বাস হয় না। তাহলে কি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মীমাংসা হবে। তাতে কি মঙ্গল হবে দেশের?
তা হলে কি গণতন্ত্রের চর্চার সামান্যতম ধারাটি যা আছে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। লাভ হবে কার?

Saturday, 22 September 2012

রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

 সুন্দরবনের খুব কাছে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আনবার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের পরিবেশবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও জানিয়েছেন, এতে পরিবেশের যেমন বিপর্যয় ঘটবে, তেমনি দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্যদিকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারত মাত্র ১৫ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। কিন্তু ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণের পুরোটাই পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। শুধু তাই নয়, কোনও কারণে যদি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তাহলে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকে। চুক্তিতে না কি এমন সব শর্তই জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা জানিনা, সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট করে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানি করে রামপালে কেন আলোচ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে? আমাদের দেশে প্রচুর কয়লা রয়েছে। এ কয়লা মানের দিক থেকেও ভারত থেকে আমদানির জন্য প্রস্তাবিত কয়লার চাইতে উন্নত। বিশেষত দিনাজপুরের কয়লা ভারতীয় কয়লার চাইতে কোনও অংশে কম নয়। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারতীয় কয়লা আমদানির তোড়জোড় চলছে কার স্বার্থে? আমাদের কয়লা দিয়ে আমরা কি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারি না? নিশ্চয়ই পারি বলে আমরা মনে করতে চাই। এ জন্য দরকার দৃঢ় ইচ্ছা এবং গভীর দেশপ্রেম। সর্বোপরি প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সবার ওপরে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড়রূপে বিবেচনা করতে পারলে অনেক বড় কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব বলে আমরা মনে করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আত্মনির্ভরতাকে পছন্দ করতে পারি না। পরের সাহায্যের প্রতি আমরা চেয়ে থাকি। অন্যরা যে তাদের স্বার্থ ত্যাগ করে আমাদের কিছু দেয় না, দিতে চায় না, একথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আলোচ্য প্রকল্পের লভ্যাংশের ৫০ ভাগই ভারত নিয়ে যাবে মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগের মাধ্যমে। অথচ যদি কোনও কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব না হয় তাহলে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকে। এতেই বোঝা যায় বন্ধুদেশটির উদ্দেশ্য। আসলে আমরা বেনে বন্ধুদের উদ্দেশ্য না বুঝেই বিনিয়োগে রাজি হতে চাই। আমরা নিজেদের তথা দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখতে চাই না। যা দেখি তা ব্যক্তিস্বার্থ। উপস্থিত হাতে যা পাই সেটাই বড় করে দেখি। এমন করে কোনও জাতি কখনও বড় হতে পারে না। আত্মনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয় না। কয়লার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের রয়েছে প্রচুর। তা আমরা কাজে লাগাবার চেষ্টা করি না। সঠিকরূপে উত্তোলনের ব্যবস্থা না নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তা দিয়ে অন্য দেশের বেনেদের পকেট ভর্তি করবার সব রকম ফন্দিফিকির করতে আমরা কসরত করছি ব্যক্তিগত সাময়িক লাভালাভের বিবেচনায়। দুর্ভাগ্য আমরাদের এখানেই। আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে আলোচ্য প্রকল্পটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবার। প্রকল্পটি যেন পরিবেশ ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে না যায়, এ ব্যাপারে গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। এটি নিয়ে যদি আরও অধিকতর ভাবনা-চিন্তার দরকার পড়ে সে দিকটার প্রতিও নজর দেয়া জরুরি।

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাতিল প্রয়োজন


১। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দ্বিখন্ডিত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত ডমিনিয়ন নামে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। যে সব হিন্দুর বাড়িঘর ও ভূ-সম্পত্তি পাকিস্তান ভূখন্ডে পড়ে তা হস্তান্তর করে অনেকে ভারতে চলে যেতে চায় এবং অনুরূপভাবে যে সব মুসলমানের বাড়িঘর, বিষয় সম্পত্তি ভারত ভূখন্ডে পড়ে তাদের মধ্যেও অনেকে তা হস্তান্তর করে পাকিস্তান চলে যেতে চায়। পাকিস্তানের হিন্দু নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যার হিন্দুরা পাকিস্তানকে স্বদেশ যেমন মনে করতো না; তেমনি ভারতের মুসলমানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মুসলমানরাও ভাতরকে স্বদেশ মনে করতো না। এই মনোভাব অসন্তোষ ও আন্দোলন আকারে দেখা যায় বা বুঝা যায়।
২। উভয় রাষ্ট্রের জনগণের এই মনোভাব উভয় রাষ্ট্রের সরকার প্রধান বুঝতে পেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূন একত্রে মিলিত হয়ে একটা চুক্তি বা প্যাক্ট করেন; যা নূন-নেহরু প্যাক্ট নামে খ্যাত। এই প্যাক্টের ফলে ভারতের মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে যারা তাদের বাড়িঘর ও বিষয় সম্পত্তি পাকিস্তানের হিন্দু নাগরিকদের সমমূল্যের বিষয় সম্পত্তির সাথে বিনিময় মূলে হস্তান্তর করতে পারবেন তা চুক্তি হয়। এই নূন-নেহরু প্যাক্টের ফলে পাকিস্তানের হাজার হাজার হিন্দু এবং ভারতের হাজার হাজার মুসলমান মহাজের হয়ে বা হিন্দু বিনিময়কারী ও মুসলিম বিনিময়কারী হয়ে নিজ নিজ সম্পত্তি বিনিময় করেন।
৩। ভারত সরকার এই বিনিময়কে স্বাগত জানালেও পাকিস্তান সরকার সেভাবে স্বাগত জানায়নি। ফলে বিনিময় আমমোক্তার নামা ও বিনিময় দলিল সম্পাদনে ভারত সরকার কোন বাধা সৃষ্টি করেনি। পাকিস্তানের হিন্দুরা ভারতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নোটারী পাবলিক অফিসে উপস্থিত হয়ে তাদের পাকিস্তানস্থিত বাড়িঘর ও বিষয় সম্পত্তি বাবদ বিনিময় আমমোক্তার নামা দলিল মুসলিম বিনিময়কারী বরাবর সম্পাদন করে দিয়েছেন এবং ঐ একই সময়ে ভারতীয় মুসলিম বিনিময়কারী তার ভারতীয় সম্পত্তির বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে হিন্দু বিনিময়কারীর বরাবর রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। বিনিময়ের সব ঝামেলা একদিনেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মুসলিম বিনিময়কারী হিন্দু বিনিময়কারীর নিকট হতে সম্পাদিত আমমোক্তার নামা নিয়ে এসে পাকিস্তানের জেলা প্রশাসকের অফিসে তা জমা দিয়ে তা ড্যালিড করার ও বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য আবেদন করেন। মুসলিম বিনিময়কারীর ডিসি অফিস ঘোরার যাত্রা শুরু হয়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ঘুরে ৩০-৪০ বছরেও পাকিস্তানের বা বাংলাদেশের ডিসি অফিস বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়নি অর্থাৎ মুসলমানদের কিছু বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং কিছু বিনিময় দলিল এখনও রেজিস্ট্রি হয়নি। অনেক বিনিময়কারী নিজে মারা গেছে। অনেকের পুত্র পর্যন্তও মারা গেছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের দুর্নীতিবাজ ডিসি ও এডিসিরা মুসলিম বিনিময়কারীদের বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি না করে বছরের পর বছর তাদের উৎপীড়ন করেছে।
৪। পাকিস্তান সরকার হিন্দুদের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে ১৯৬৪ সালে ১ নং অর্ডিন্যান্স জারি করে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইউব খান ০৬/০৯/১৯৬৫ ইং তারিখে পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন; যা ১৬/০২/১৯৬৯ ইং তারিখে প্রত্যাহার হয়। এই সময়ে যে সব হিন্দু পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে বসবাস করেছে তাদের ভূ-সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শত্রু সম্পত্তি আইনের যাত্রা এখান হতেই শুরু হয়। শত্রু সম্পত্তি আইন বলবৎ থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান শত্রু সম্পত্তি আইনের অবসান না ঘটিয়ে বরং এক ধাপ এগিয়ে তিনি শত্রু সম্পত্তির মালিকানা সরকারের উপর ন্যস্ত করে শত্রু সম্পত্তি আইনের নামকরণ করেন ‘‘অর্পিত সম্পত্তি’’ বা "Vested Property"। শেখ মুজিবুর রহমান ইচ্ছা করলে এই শত্রু সম্পত্তি আইনের অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা দিতে পারতেন যে ‘‘শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হলো। দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের বিচারের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির মীমাংসা হবে।
৫। শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সরকার প্রধান হয়েছেন শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু কেউ এই সাধারণ মানুষ বা কৃষকদের দিকে ফিরে দেখেননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে যে সব অবাঙালি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল বা পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থান নিয়েছিল তাদের বাড়িঘর, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ভূসম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বা Abandoned Property ঘোষণা করা হয়। অবাঙ্গালীদের এই পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে লুটপাট করতে উপর তলার মানুষের শ্যেনদৃষ্টি থাকায় এই পরিত্যক্ত সম্পত্তির শীঘ্র স্থায়ী সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু হিন্দু মুসলমান সাধারণ নাগরিকদের শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তির মীমাংসা না করে তাকে আরো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বা আরো যুগান্তর কাল ধরে প্রজা উৎপীড়ন করার জন্য রঙিন নাম দেয়া হয়েছে ‘‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন-২০১২।’’
৬। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের By Product হলো পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন এবং ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের By Product হলো শত্রু সম্পত্তি আইন বা অর্জিত সম্পত্তি আইন। ভারত সরকার ভারতীয় মুসলিমদের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে কোন বাধা সৃষ্টির আইন যথা ১৯৬৪ সালের অর্ডিন্যান্স নং ১ বা ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে ‘‘শত্রু সম্পত্তি’’ এই ধরনের উৎপীড়নমূলক আইন পাস করেনি। কিন্তু পাক সরকার বা বাংলাদেশ সরকার করেছে। এই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় ১০ কোটি হিন্দু-মুসলমান Affected হবে বা হয়েছে। কারণ ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রায় ৮০% ভূসম্পত্তির মালিক ছিল মুসলমানরা। বৃটিশ শাসন আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং জমিদার বা জমিদারী সৃষ্টির কৌশলে হিন্দুরা ৮০% ভূসম্পত্তির মালিক হয়। ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানের মুসলমানরা জজ, ব্যারিস্টার, সচিব, জেলা প্রশাসক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, এসপি, কর্নেল, মেজর, ব্রিগেডিয়ার ইত্যাদি চাকরি করে ও ব্যবসা বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থ রোজগার করেছে এবং অর্থশালী হয়েছে। ভারত হতে অনেক মুসলমান তাদের ভারতীয় সম্পত্তি নূন নেহরু প্যাক্টের অধীনে বিনিময় সূত্রে এ দেশের বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক হয়েছে। এইভাবে মুসলমানরা পুনরায় ৮০% সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সি. এস রেকর্ডে দেখা যাবে ৮০% জমির মালিক হিন্দু এবং আর. এস রেকর্ডে দেখা যায় ৮০% জমির মালিক মুসলমান। সুতরাং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় ১০ কোটি হিন্দু-মুসলমান Affected হবে এবং ৫ কোটি মামলার জন্ম হবে। এই ৫ কোটি মামলার বিচার করতে হাজার হাজার বিচারক নিয়োগ করতে হবে। হিন্দু আইনে ‘‘রিভারসনার’’ নামে একটি শব্দ আছে। এই রিভারসনার আইনের আওতায় বাংলাদেশে বসবাসকারী অধিকাংশ হিন্দু ভারতে চলে যাওয়া হিন্দুদের অর্পিত সম্পত্তি ‘‘স্বার্থাধিকারী’’ হিসাবে প্রত্যর্পণ আইনে দাবিদার হতে পারবে। সুতরাং এই আইন অতীত কালের কলেরা বা বসন্ত রোগের মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়বে। লাশ দাফন করার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ও আদালতে এইসব জটিলতার বিচার হতে পারতো। এই আইন হিন্দু-মুসলমানের সুসম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। একটি ‘‘নিবর্তনমূলক আইন।’’
৭। যে মুসলমান তার স্বোপার্জিত অর্থ দিয়ে ষাট দশকে হিন্দুর নামীয় এস এ রেকর্ডের ভূমি বা বাড়ি খরিদ করেছেন বা যে ভারতীয় মুসলিম বিনিময়কারী ষাট দশকে হিন্দুর সম্পত্তির সাথে নিজের সম্পত্তির বিনিময় মূলে প্রাপ্ত হয়ে ৪০/৪৫ বছর ভোগ দখল করছে বা ঐ আমলের ৫০০/- টাকা মূল্যের সম্পত্তি বর্তমান আমলে ৫০,০০,০০০/- (পঞ্চাশ লাখ) টাকার সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে সেইসব সম্পত্তি এসএ এবং আরএস রেকর্ডের মালিকানার পরিবর্তনের কারণে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের কাঠামোতে পড়েছে। এই জটিলতা দূর করতে হবে। ৫ কোটি মামলার উদ্ভব। এই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে কোন হিন্দু বা কোন মুসলমানের লাভ নেই বা লাভ হবে না। শুধুমাত্র দুর্নীতির দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার ঘুষের টাকা ডিসি অফিসে, রাজস্ব অফিসে, তহসীল অফিসে দিতে হবে। জুতো ক্ষয় হবে। ডিসি অফিসে কতদিন ধরে ঘুরতে হবে তার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হিন্দুর কপাল ও মুসলমানের কপাল একসাথে পোড়ার কাজ শুরু হয়েছে।
৮। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এমনই বিষধর আইন যে, যুগান্তর কালের বিচারাধীন মামলার সম্পত্তির যদি খতিয়ান নং ও দাগ নং গেজেটে প্রকাশিত হয়; তবে সেইসব সম্পত্তির বিচারকার্য সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আদালতের বিচারাধীন মামলা বা আপিলের বিচার করার এখতিয়ার জজ সাহেব, অতিরিক্ত জজ সাহেব হারিয়ে ফেলবেন। অর্থাৎ এই আইন দ্বারা বিচারকের এখতিয়ার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই আইন মানুষের মৌলিক অধিকার, সম্পত্তি ভোগ দখলের অধিকার হরণ করেছে। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যকার সুসম্পর্ক বিনষ্ট করে দিবে। আদালতের বিচারকের বিচার ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই বাংলাদেশের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য প্রধান বিচারপতির সদয় দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক এই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি যদি জনকল্যাণকর না হয়ে জন নিবর্তনমূলক মনে হয় তবে তা বাতিল বা রদ, রহিত করার আহবান জানাচ্ছি।

Wednesday, 19 September 2012

দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

হলমার্ক গ্রুপকে দেয়া সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিই। অথচ মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো ব্যাংকিং খাতেই ধস নেমেছে। এটা নিয়ে হৈচৈ করারও কিছু  নেই। সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা চালিয়ে দেশের ক্ষতি করছে। এটা বড় কিছু নয়। তিনি আরো বলেন, দেশের সংবাদমাধ্যমেরও সংস্কারের (রিফর্ম) দরকার আছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ইউএসএআইডি, প্রগতি ও এমআরডিআই আয়োজিত ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর এসব বক্তব্য শুনে মনে হয়, তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আর সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হিসেবে তিনি যদি কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে বলতে হবে- কানার হাতে কুড়াল তুলে দেয়া হয়েছে। 
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রগতি এবং ইউএসএআইডি'র মিশন ডিরেক্টর রিচার্ড গ্রিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম, টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডি. নেটের নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান।  আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংকের সততা বিভাগ জিহাদি মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এই জিহাদি মনোভাব নিয়ে কাজ করা যাবে না। বিশ্বব্যাংক যা বলে, তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিহীন। এটি দুর্নীতি প্রতিরোধের বিরোধী হিসেবে কাজ করে। ওই সেকশনটাকে সংশোধন করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কালো টাকা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। কালো টাকা থাকবেই। এটা মেনে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।'
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শেয়ারবাজারে যে দুর্নীতি হয়েছে, এ জন্য দুদকে কেউ সাক্ষী দিচ্ছে না। সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা দুর্নীতি বন্ধে আইসিটি বা তথ্য প্রক্রিয়া সাহায্য করবে। কিন্তু সিস্টেমেটিক দুর্নীতি বন্ধে আইসিটি কি করবে- এমন প্রশ্ন রেখে হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে যদি অনুমতি নিতে হয় তাহলে দুর্নীতি কিভাবে বন্ধ হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিচারপতিকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ছোট ধরনের দুর্নীতি কমে এসেছে, এখন বড় ধরনের দুর্নীতি কমানোর জন্য বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। গোলামুর রহমান বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হতে পারে। দুর্নীতি এক দিনে আসেনি। তাই দুর্নীতি একদিনে, এক মাসে বা এক বছরে কমে যাবে না। যদি বছরে ১০০ জনের শাস্তি হয়, তাহলে এটা একটা উদাহরণ হতে পারে।' গোলামুর রহমান শব্দের অর্থ রহমানের গোলাম, দাস, বান্দাহ। কিন্তু জাতির আশা-ভরসার স্থলে বসার পর এই রহমানের গোলাম সরকারের গোলামে পরিণত হয়েছে। যেখানে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে পাহাড়সম অপকর্মের জন্য জিজ্ঞাসিত হতে হবে, সেখানে তাকে প্রধান অতিথি করে যে নজির স্থাপন করেছে, তা অবাক করার বিষয় বটে। যে মন্ত্রী তার কৃতকর্ম ও বেফাঁস বক্তব্যের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, সে অর্থমন্ত্রীকে ওই অনুষ্ঠানে কি তোয়াজই না করছেন দুদকের এই অপরিণামদর্শী কর্তাব্যক্তি। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার এটি অনন্য নজির নয় কি। সচেতন মানুষ তো এমনটাই মনে করছে। সর্বত্র যা টক অব দ্য টাউনে পরিণত।
দুর্নীতি ও জালিয়াতির এ ঘটনাটি মিডিয়া উপস্থাপনে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য পুরো মিডিয়া যেখানে ধন্যবাদ পাবে, সেখানে অর্থমন্ত্রী উল্টো মিডিয়াকে এক হাত দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন। তিনি এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে বলে অপরিণামদর্শী মন্তব্য করেছেন। দিনি রিফর্ম বা সংস্কারের কথা বলে সেটা দুর্নীতি সহায়ক মিডিয়া সংস্কারের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নিশ্চয়। মিডিয়াকে সঠিক, বাস্তব সত্য পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে নিয়ে  যাওয়ার ব্যাপারটিই তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। তার কথায় তাকে অর্থমন্ত্রী না বলে অথর্ব মন্ত্রী বলাই মনে হয় অধিক যুক্তিযুক্ত। সংসদে তার এসব কথা নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাই তাকে তুলোধুনো করেছেন। ফলে তিনি দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে নিষ্কৃতির পাওয়ার চেষ্টা করছেন। দুর্নীতি তো দুর্নীতিই, সেটা এক টাকা হোক আর ৪ হাজার কোটি টাকা হোক। একে ভিন্ন চোখে দেখা আর উপস্থাপনের চেষ্টা দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও লালনের নামান্তর। এটা সত্য, এটাই বাস্তব। এটা সবাই জানে-বোঝে। এটা বুঝতে বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। লবণ-ভাত খাওয়া যে কেউ তা সহজে বুঝতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদের মতে, এ ক্ষেত্রে এভাবে ঋণ দেয়ায় সঠিক নিয়ম পালন করা হয়নি। তাই এটি স্পষ্ট দুর্নীতি। তার মতে, ব্যাংককে এমনিতেই তারল্য সংকট চলছে, তার ওপর এমন ঘটনা ব্যাংকে লেনদেনকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে মানুষ ব্যাংক বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। তার মতে, অর্থ নিরাপত্তা খোঁজে। সেখানে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাধার প্রাচীর তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, অর্থমন্ত্রী ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাকে তেমন কিছু ঘটনা নয় বলে উড়িয়ে দেয়ায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি তিনি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন? ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করা হবে, আর বাকি টাকার কি হবে, তা কিন্তু তিনি বলেননি। তা হলে কি সেটা দুর্বৃত্তরা হজম করবে নেবে? এভাবে জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ হবে?      
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলে এবং পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা ওই ব্যাংকের কাজ নয় বলে মন্ত্রী কেন হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, এখন আর সেটাও বোদ্ধাদের কাছে অজানা নয়। কেন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেটা তো আজ ষোলো আনা পরিষ্কার। হঠাৎ কেন তিনি মিডিয়ার সংস্কার দাবি করলেন, সেটা  বুঝতে কারো জজ-ব্যারিস্টার হতে হবে না। দুদক কেন সঙ্গে সঙ্গে হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্র তৎক্ষণাৎ সিজ না করে অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে সেমিনারে মনোনিবেশ করেছে-সে এক প্রশ্ন বটে। অনেকের মতে, দুদক সময়ক্ষেপণ করে দুর্নীতিবাজদের কাগজপত্রের বৈধতা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এই কাগজগুলো সিজ করলে ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছে, তা জানা যেত। এখন সুযোগ পেয়ে তারা আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র তৈরি করে নেবে। এতে বেঁচে যাবে রাঘব-বোয়ালরা। কাগজপত্র সঠিক না থাকলে কার কথা, কার ফোন এবং কার নির্দেশে এমনটা করতে হয়েছে- তা বেরিয়ে আসত। কাগজ ঠিক থাকলে সেখানে ইচ্ছা থাকলেও কারো কিছু করার নেই। সোনালী ব্যাংকের অডিট কেন এবং কার কারণে ঢিলে হয়েছে- খুঁজে বের করতে হবে তাও। কে বা কারা এ জন্য কলকাঠি নেড়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। হলমার্কের কর্ণধার বলেছেন, তিনি এর ২০ গুণ অর্থের মালিক। ভালো কথা। তিনি এ অর্থের মালিক হওয়া দোষের কিছু নয়। তবে তা তিনি বৈধ না অবৈধ পথে কামিয়েছেন, তা দেখার আছে বটে। আর বৈধ হলে সেটায় তিনি ট্যাক্স দিয়েছেন কিনা, তা এনবিআরকে ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আশার কথা, দেশে আইন করে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও তার বাবার ছবি টাঙ্গানোর নিয়ম করা হয়েছে, সেখানে হলমার্কের কর্ণধারের অফিসে তা না করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ছবি টাঙ্গানোর মাজেজা দেশ ও জাতি জানতে চায়। একটা লোন পেতে তার সমপরিমাণ সম্পদ বা তারও বেশি সম্পদ ব্যাংককে গ্যারান্টি হিসেবে দিতে হয়। দেখা হয় ব্যাংক লেনদেনের ইতিবৃত্ত। ম্যানেজার, অফিসার, পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ-কার কত লোন দেয়ার এখতিয়ার, সে সীমাও বেঁধে দেয়া আছে। এটার বদৌলতে লোন পাওয়া যায়। হলমার্কের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়েছে কিনা, তা খোলাসা হয়নি আজও। সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে মানুষ বলাবলি করছে। করছে সন্দেহ। হলমার্কের লোকজনের বৈশাখী টিভির সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়া এবং পরে হাতে-পায়ে ধরার পর সেই সন্দেহ আরো বেড়েছে। হলমার্কের লোকজনের মিডিয়ার ওপর হামলে পড়া আর অর্থমন্ত্রীর সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্যে কোথায় যেন একটা মিল যাওয়া যায়। আর সেটা হলো, আসল রহস্য উ ঘাটনে বাধার প্রাচীর তৈরি করা। সাংবাদিকরা এমনটাই মনে করছেন। তারা আরো মনে করছেন, কাজটা করেছে ওপর তলার লোকজন। অথচ এ জন্য বলি দেয়া হচ্ছে বা হবে অসহায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে আসল চোরের দল। ঘটনার পেছনের চোররা ধরা না পড়লে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন ঘটনা রোখা যাবে না। তবে সন্দেহ করা হয়, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এমন একজন সদস্যকে টিভিতে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। ঘটনার পর তার চেহারায় চোর চোর ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মানুষ বলাবলি করছে। পাশাপাশি তার কথায় রহস্যের গন্ধ মিলছে। ঘটনা অনেকটা ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না'-এর মতো। যিনি কথায় কথায় দেশ ও জাতিকে নীতিবাক্য শোনান, তার আমলে এমন ঘটনা ঘটল, আর তিনি তা জানেন না- এটা কোনো বেকুফও বিশ্বাস করবে না। শুধু পরিচালনা পর্ষদ নয়, পুরো পারিষদকে এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সময়ের দাবি। এখানে কারো দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী, গবর্নর থেকে লোন পাস করা পরিষদবর্গ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, এমন লোকজন লোনের জন্য নির্দেশ বা চাপ দিলে তা না দিয়ে পারে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার এ জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝতে পেরেছিল গত এপ্রিলেই। ফলে রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করতে গত মে মাসে পরিদর্শক দল পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্ত চলাকালে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রূপসী বাংলা শাখায় উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনি তদন্ত দলের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। উপদেষ্টার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করার কথা বলে তিনি তাদের নিজের বিজনেস কার্ডটিও দেন। রূপসী বাংলা শাখায় গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম চালালেও সে সময় হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে প্রকাশ করা হয়নি। বলা যায়, হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনাটি সে সময়ই উন্মোচিত হতে দেয়া হয়নি ওপর মহলের হস্তক্ষেপে। এই জালিয়াতি ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায়, এ জন্য ওই মহলটি শুধু সোনালী ব্যাংকেই হস্তক্ষেপ করেনি, বাংলাদেশ ব্যাংককেও প্রভাবিত করেছে। সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের প্রতিটি শাখা বছরে দুবার নিরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় নিরীক্ষা করা হয়নি! নিরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। নিয়মিত নিরীক্ষা করা হলে অনিয়ম বেরিয়ে আসত। আবার নিয়মানুযায়ী, কোনো কর্মকর্তার এক শাখায় তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়। রূপসী বাংলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমানকে পদোন্নতি দেয়ার পরও রূপসী বাংলা শাখায় রাখা হয়। প্রায় পাঁচ বছর তিনি একই শাখায় কর্মরত থাকেন। তাকে রেখে দেয়া হয় জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনরা।
সরকারের স্বার্থ রক্ষাকারী দুদককে মনে রাখতে হবে, অভয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য নিতে হবে। আর ধরতে হবে সেই চোরদের, যার প্রভাব খাটিয়ে এই অপকর্ম সংঘটিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ঘুণে ধরা এ সমাজের অপরাধ প্রবণতা কমাতে হলে ধরতে হবে সমাজের ওপর তলার চোরদের। ছিঁচকে চোরদের ধরে লাভ নেই। বরং এদের ফাঁসিয়ে এরা পার পেয়ে যায়। আর এভাবে পার পেয়ে যায় বলেই সমাজে অপরাধ বাড়ছে বৈ কমছে না। অপরাধ কমাতে হলে একটু কষ্ট হলেও দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে নির্মোহভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ পাবে না দুর্বৃত্তরা। দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে দুদককেই নিয়ামক শক্তি মনে করে দেশবাসী। এত কিছুর পরও মানুষ ভরসা করতে চায় যে, দুদক ঘুরে দাঁড়াবে। পরিচয় দেবে মেরুদন্ড সোজা আছে এখনো। নখর-দন্তসম্পন্ন বাঘ বলতে যা বোঝায়, তার পুরোটা নিয়ে দুদক কাজ করছে। দুদকের দায়িত্বশীলদের মাথায় রাখতে হবে, দুর্নীতি যে করে, তাকে পদ দিয়ে যতদিন বিচার করা হবে, দেশে ততদিন দুর্নীতি থাকবে। দুর্নীতিবাজ যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে যতক্ষণ পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো না যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দম্ভকে গুঁড়িয়ে দেয়া যাবে না- ততক্ষণ পর্যন্ত এ দেশ ও জাতিকে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দেয়া যাবে না। আর সেটা না পারলে যারা এ জায়গায় বসে আছেন, তারা জাতির অন্ন ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করছেন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।                                         

Wednesday, 12 September 2012

প্রধানমন্ত্রীর ঠাট্টা

 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে নিয়ে এমনই খেলা খেলছেন যে, এখন কখনও কখনও মনে হয় তিনি বোধ করি অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলোপ করতে চান। যে দেশের জনগণ তার পিতার হত্যার বিচার করেনি বা চায়নি সেদেশের অস্তিত্বের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি যে কি করছেন এবং কি করছেন না সেটি এক বিশাল সমস্যার ব্যাপার। হীরক রাজার মতো যখন যা খুশি তাই করছেন এবং বলছেন। যেহেতু রাষ্ট্রক্ষমতা তার হাতে, তার পুরোটা ব্যবহার করে তিনি বিরোধীদল ও জনগণের উপর চূড়ান্ত দমননীতি চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তার চোখের পাতা পড়ে না।
২০০১-২০০৬ সালে যখন তিনি বিরোধীদলে ছিলেন তখন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে তার প্রধান অভিযোগ ছিল ঐ সরকার মহাদুর্নীতিবাজ, ‘চোর, চোর, মহাচোর'। এখন নিজেই দুর্নীতির গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে যাচ্ছেন। তিনি সমস্ত লীগ-অনুলীগকে তো দুর্নীতির ওপেন জেনারেল লাইসেন্স (ওজিএল) দিয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশে যে এসব লীগের সংখ্যা কত তা বোধ করি কেউ হিসাব করে বের করতে পারবে না। ঘাট-শ্রমিক লীগ, রিকশা-শ্রমিক লীগ, আওয়ামী প্রাক্তন-সৈনিক লীগ এমন সব নামে রাস্তা-ঘাটে নানান চিকা ও ডিজিটাল ব্যানার দেখা যায়। আর অনুমোদিত লীগগুলোর তো কোনো কথাই নেই। তারা টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। মহামান্য প্রধানমন্ত্রী নির্বিকার। হাতে যথেষ্ট টাকা পয়সা না থাকলে ওরাই বা চলবে কি করে? মিটিং-মিছিলই বা কেমন করে করবে?
যদিও এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত টেলিকনফারেন্স করেন। যদিওবা কখনও ঘর থেকে বের হন তাহলে তার জন্য থাকে সীমাহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আজকাল ঘর থেকে কমই বাইরে বের হন তিনি নিরাপত্তার ভয়ে। এবং তিনি কেন যে তার নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী বাদ দিয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করেছেন সেটা বোধগম্য নয়। তবে কি সেনাবাহিনীকে তার বড় ভয়? প্রথমে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা খুন হয়েছেন বিডিআর বিদ্রোহে। সেখানে আলোচনার নামে যা ঘটেছে তাকে কেউ অনুমোদন করে না। সেনাবাহিনীর অনেক অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টেলিভিশনে আলোচনা করেছেন যে, যদি তাদের অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেয়া হতো তাহলে এত অফিসারের প্রাণহানি হতো না। কিন্তু আলোচনা ও সাধারণ ক্ষমার নামে সময়ক্ষেপণের নামে সেনাবাহিনীর এত সংখ্যক অফিসার বিডিআর বিদ্রোহে প্রাণ দিতে হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহ যে কী সেও এক ধূম্রজাল। বিদ্রোহের আগে তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু এইভাবে বিডিআর সদস্যরা তাদের অফিসারদের খুন করতে পারে-এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এবং এই প্রশ্ন বার বার উত্থাপিত হয়েছে যে, সত্যি কি বিডিআর সদস্যরাই এই সেনা কর্মকর্তাদের বেছে বেছে খুন করেছে? নাকি এর পেছনে অন্য কারো মদত ছিল? সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। আনিসুজ্জামানের তদন্ত রিপোর্ট সরকার গিলে ফেলেছে, প্রকাশ করেনি। আনিসুজ্জামান তদন্ত রিপোর্ট দিয়েই বিদেশে চলে গেছেন। আর ফিরেছেন কিনা সে রকম রিপোর্ট সংবাদপত্রে দেখি না। সেখানে অনেক প্রশ্নবোধক কথা ছিল। তার জবাব দেয়ারও প্রয়োজন সরকার অনুভব করেনি। ফলে বিডিআর বিদ্রোহ এখন পর্যন্ত প্রশ্নবোধকই রয়ে গেছে।
সেনাবাহিনী বলেছিলো, বিডিআর সদস্যরা যেভাবে প্রশিক্ষিত তাতে একজন বিডিআর জওয়ান তিনজন ভারতীয় বিএসএফ সদস্যকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। ফলে সবসময়ই ভারতের বিডিআর-ভীতি ছিল। আর এ কারণেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যখন ভারত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তখন সেই চুক্তির একটি শর্ত ছিল যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারকে বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করে বর্ডার গার্ড বাহিনী করতে হবে। জানা যায় যে, ঐ চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পিতা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এই চুক্তি তিনি মানেন না এবং মানবেনও না। শেখ হাসিনা তার পিতাকে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কী না করছেন! এখন চতুর্দিকে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যে চুক্তি প্রত্যাখ্যাত করেছিলেন, সেই চুক্তি তিনি বাস্তবায়ন করে ফেলেছেন। বিডিআর বিদ্রোহের দায়ে হাজার হাজার সদস্যকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা আর কোনোদিন এই বাহিনীতে ফিরতে না পারে। নতুন মুখ চাই যারা সরকারের অনুগত ও ভক্ত। এরা শুধু পাহারাদার হিসেবে লাঠি নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর বিএসএফ থাকবে বন্দুক নিয়ে। ফলে এখন প্রতিদিন বিএসএফ একজন না একজন বাংলাদেশীকে খুন করছে। বিগত সাড়ে তিন বছরে সরকার একবারের জন্যও তার কোনো প্রতিবাদ করেনি। যে বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করেনি, তাদের যদি বিএসএফ গুলি করে থাকে, সরকারের বিবেচনায় সম্ভবত তারা ভাল কাজই করেছে। ‘জয় বাংলা' ধ্বনি দেবো। সব শেষ।
আসলে এই প্রসঙ্গে আমি আলোচনা করতে চাইনি। আমি আলোচনা করতে চেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর ঠাট্টা বিষয়ে। আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কত কথাই না বলেছেন। চারদলীয় জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সেই সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অভিযোগ ছিল যে, এরা জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। অতএব এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এরপর তিনি আরও বলেছিলেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশের সকল গ্যাসের উৎস শুকিয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সব কূপ গ্যাসে ভরে যায়। এর অর্থ হলো এই যে, বিএনপি একটি অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল। আপনারা তাদের ভোট দিয়েন না। কিন্তু শেখ হাসিনা খেয়াল করছেন না যে, তিনি কিভাবে ক্ষমতাসীন হলেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার অাঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। কথাটা শেখ হাসিনার পছন্দ হয়নি। সেই কারণে তিনি এত বড় পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিলকে ‘যাও বাচ্চা, শো রাহো' বলে বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
জলিল অবশ্য এখন দু'চার কথা বলেন। জনসমক্ষে বলেন, সংসদেও বলেন। আওয়ামী লীগের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অাঁতাতের মাধ্যমে গঠিত সরকার সেটি পরোয়াও করে না। এই সরকার যে অাঁতাতের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল সেটা আমার বক্তব্য নয়, সেটা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের বক্তব্য। জলিলকে যেসব কারণে বিশ্রামে যেতে হয়েছে তার প্রধান কারণ সম্ভবত তার বক্তব্য।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ হলেও, দেশকে দুর্নীতিতে সয়লাব করে দিলেও শিক্ষা দিতে ভালই পারদর্শী। তিনি বলেছিলেন, বিএনপিকে তিনি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন। শিক্ষা তিনি দিয়েছেনও বটে। বিএনপি'র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গাড়ি পোড়ানো কিংবা সচিবালয়ে বোমা মারার দায়ে অভিযুক্ত করে জেলও খাটিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায়ই শেখ মুজিবুর রহমান জাসদ নেতাদের জেলে পুরেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে টাঙ্গাঈলের কাগমারিতে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। কিন্তু এই শিক্ষা দেয়ার পরিণতি শেখ মুজিবের জন্য শেষ পর্যন্ত সুখকর হয়নি। জোট সরকারের দুর্নীতি, দুর্নীতি বলে শেখ হাসিনা ও তার চ্যালা-চামুন্ডারা সারা বিশ্ব সরব করে তুলেছিলেন। এখন তো মনে হয়, তার সে অপপ্রচারে বিশ্ববাসী খানিকটা বিভ্রান্তও হয়েছিল। কিন্তু এখন দাঁড়িয়েছে কী? এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসেবে সারা পৃথিবীতে ঘৃণিত ও নিন্দিত হচ্ছে। এর সবই আবার সপ্রমাণ। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, কুইক রেন্টালে লুট, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, সুরঞ্জিতের বস্তাভর্তি টাকা এগুলো এখন আর বিশ্বের কারো কাছে অজানা নেই। হলমার্ক কেলেঙ্কারি তার দুর্নীতির সর্বশেষ উদাহরণ। এর কোনোটাই অসত্য নয়। সবই তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে এদের কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। অথচ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তারা করেছে, তার একটিরও কোনো প্রমাণ নেই। শুধুই চাপা, বগি আওয়াজ।
এবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, বুয়েট ছাত্রদের বিরুদ্ধে কিভাবে কঠোর হতে হয় তা দেখিয়ে দেবেন। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে তিনি ইতিমধ্যেই জনসাধারণ বিভিন্ন অংশকে শিক্ষা দিয়েছেন। বিদ্যুতের দাবিতে সাধারণ মানুষ যখন বিক্ষোভ করেছে তখন তাদের পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করেছেন। আর বলেছেন এ ধরনের বিক্ষোভ করলে যেটুক বিদ্যুৎ দেয়া হয়, তাও বন্ধ করে দেয়া হবে। কী শাসন! বুয়েটের ছাত্ররা কেন নিজের শরীরের রক্ত ঢেলে ভিসি-প্রোভিসি'র অপসারণ চাইলেন? তখন তিনি তার গোপালী ভিসিকে রক্ষার জন্য ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর হবার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ঐ রক্ত ঢেলে প্রতিবাদ জানানোকে বিকৃত মানসিকতা বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এই কথা উপলব্ধিই করতে পারছেন না যে, অবিরাম জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, জনগণকে শায়েস্তা করে তার শেষরক্ষা হবে না। কোনো দেশে কারোরই তা হয়নি।
বিদ্যুতের দাবিদারদের তিনি অবিরাম নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেই যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিংও। বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আর কোনো চিন্তা নেই। বিদ্যুতে সয়লাব হয়ে যাবে গোটা দেশ। কিন্তু তা তো হয়ইনি বরং সে উৎপাদন আরও কমেছে। তাও প্রধানত দুর্নীতির কারণে। কয়েকদিন আগে বলেছেন, লোডশেডিং হতেই থাকবে। তা না হলে লোডশেডিং কি জিনিস জনগণ ভুলেই যাবে। দুর্নীতির মহাযজ্ঞস্থল কুইক রেন্টাল। এর মাধ্যমে আওয়ামী চাঁমিরা ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, এই হাতানোর সুযোগ আরও বহুদিন অব্যাহত থাকবে। আর এই কুইক রেন্টালের যারা সমালোচনা করবে, তাদের বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ সাতদিনের জন্য বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক-সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে সরকারের এখন যুদ্ধ চলছে। ঠাট্টা-মশকারা আর জনগণকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা প্রধানমন্ত্রী যতটা সহজ ভেবেছেন, সম্ভবত সেই কাজটা অত সহজ নয়।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও নিম্নআয়ের মানুষ


বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা তার সঙ্গে লোডশেডিং ও দাম বৃদ্ধি কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং তা কীভাবে সরকার সামাল দিতে পারবে এই বিষয়ে ভেবে কার্যকর পদক্ষে নিতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে উৎপাদনশীল সব প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে বিদ্যুতের প্রয়োজন বা চাহিদা। তাই দেশের সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে এর জোগান বা সুষম বণ্টন যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন রকম সমস্যার কারণে লোডশেডিং, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা ইত্যাদির কারণে এখনো ভোগান্তির শেষ নেই।

 সম্প্রতি জানা গেল আবারো এক দফা বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। আর খুচরা গ্রাহক পর্যায়েই বেড়েছে ২৬ থেকে ৩০ শতাংশ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবার নিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো দাম বাড়ল। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে যদিও বিইআরসি জানিয়েছে তেলভিত্তিক উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এবার দাম বৃদ্ধি হলো। একে তো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের, তার ওপর সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে বিদ্যুতের ব্যবহার, এমন অবস্থায় খুচরা গ্রাহকদের বিলই যদি ২৬ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় তবে তা উৎকণ্ঠার বিষয়। আর এর সঙ্গে সঙ্গে যতই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হোক না কেন তাই বলে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বা জোগান দিতে বরাবরই তৈরি হচ্ছে নানারকম সমস্যা। দেশজুড়ে আরো ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও বলেছে রমজান মাসের তুলনায় এই মাসে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হবে। কারণ রমজান মাসে যে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল তা এই মাসে তুলে নেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যে হারে বাড়ছে তাতে করে ভর্তুকি কমিয়ে দাম বাড়ালেও এ মাসে যে ভয়াবহ লোডশেডিং হবে তার আশঙ্কা বিদ্যমান। কারণ বেশকিছু বিদ্যৎকেন্দ্র বন্ধ রেখেছে পিডিবি। এতে করে বিতরণ কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করছে। প্রসঙ্গত একটি ব্যাপার উল্লেখ্য যে, এর আগেও যেমন বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এবারো তেমনই বাড়ল কিন্তু দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেবার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার চেষ্টা করেছে বিদ্যুতের উন্নয়নের জন্য কিন্তু বাস্তবায়নে তৈরি হয়েছে নানারকম প্রতিবন্ধকতা। আর এটা অনেকেই বলেছেন বিদ্যুতের এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য কুইক রেন্টাল পদ্ধতি সমাধান নয়, এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে স্থায়ী সমাধান হয়। এটা ঠিক যে শুরু থেকেই সরকারের উচিত ছিল কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে না গিয়ে ভর্তুকির বিষয়টি বিবেচনায় এনে স্থায়ী সমাধান করার পদক্ষেপ নেয়া। এই বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সে পদক্ষেপ নেয়নি। বাস্তবতার আলোকে সরকারকে দাম বাড়ানো লাগতেই পারে কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে সমন্বয়ের বিষয়টিও। এবার এই ৬ষ্ঠবারের মতো দাম বাড়া নিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেছেন, বাস্তবতার আলোকে দাম বাড়াতে হচ্ছে এবং আমরা নিম্নআয়ের মানুষের বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।
  
আমরা মনে করি বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা তার সঙ্গে লোডশেডিং ও দাম বৃদ্ধি কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং তা কীভাবে সরকার সামাল দিতে পারবে এই বিষয়ে ভেবে কার্যকর পদক্ষে নিতে হবে। সর্বোপরি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন সবারই বিদ্যুৎ সুবিধার নিশ্চয়তা থাকে। আর নিম্নআয়ের মানুষকেও বিবেচনায় এনে সরকার বিদ্যুৎ উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেবে আমরা এমনটাই আশা করি।

Tuesday, 4 September 2012

নারী ও ধর্মব্যবসায়ী পশ্চাৎগামী চিন্তা চেতনা - ১

ধর্মের দোহাই দিয়ে, বাঙালী নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শারীরিক ভাবে বিচ্ছিন্ন রাখার যে ষড়যন্ত্র বহুযুগ ধরে চলে আসছিল এর মুল উৎপাটনে পথে বেগম রোকেয়ার ভূমিকা অস্বীকার্য। ১৯০৪ সালে ২৪ বছর বয়সী রোকেয়া দৃঢ় ভাবে তার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলেন। তার মত মেধাবী, আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মননশীল,সাহসী নারী বাঙালী সমাজে আজও বিরল।
তার সাহিত্য যেমন কালজয়ী তেমন তার প্রখর চিন্তাশক্তি, যুক্তি-বোধ অনেক পুরাতন কুসংস্কার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল।
তাকে মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত করার হলেও এটা তার কাজের সামান্য একটা পরিচয় মাত্র ।
শুধু মুসলিম সমাজ নয়, তিনি সমগ্র বাঙালী সমাজে নারী কে মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নারী কে তারস্ব-মহিমায় প্রজ্বলিত হবার শক্তি যুগিয়েছেন।
তিনি তার // আমাদের অবনতি // শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন ,
যখনি কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছে, তখনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচন রূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। … আমরা প্রথমত যাহা সহজে মানি নাই তাঁহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি।…আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। পুরাকালে যে ব্যক্তি প্রতিভাবলে দশ জনের মধ্যে পরিচিত হইয়াছেন , তিনি আপনাকে দেবতা কিংবা ঈশ্বর প্রেরিত দূত বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। ।। ক্রমে যেমন পৃথিবীর অধিবাসীদের বুদ্ধি-বিবেচনা বৃদ্ধি হইয়াছে সেরূপ পয়গম্বর দিগকে(অর্থাৎ ঈশ্বর প্রেরিত মহোদয়া দিগকে) এবং দেবতা দিগকেও বুদ্ধিমান হইতে বুদ্ধিমত্তর দেখা যায় !!
তবেই দেখিতেছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলো পুরুষ রচিত বিধিব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।
কেহ বলিতে পারেন তুমি সামাজিক কথা বলিতে গিয়া ধর্ম লইয়া টানাটানি কর কেন? তদুত্তরে বলিতে হইবে, ‘ধর্ম’ শেষে আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে, ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন। তাই ধর্ম লইয়া টানাটানি করিতে বাধ্য হইলাম”

( রোকেয়া, আব্দুল কাদির, ১৯৭৩, ১১-১৩)
রোকেয়া তার লেখায় সকল কথিত ঈশ্বর প্রদত্ত দূতদের ভণ্ড এবং চতুর হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ঈশ্বর এবং ধর্মগ্রন্থগুলো যে তাদের চতুরতার কৌশল মাত্র,রোকেয়া স্পষ্ট ভাষায় তার-ই ব্যাখ্যা করেছেন।যদিও সামাজিক চাপের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি প্রবন্ধ থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল কিন্তু এর গুরুত্ব আজও এই সমাজে প্রবলভাবেই বিদ্যমান।
ঐতিহাসিকগনের মতে, রোকেয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখা হচ্ছে জ্ঞানফল। গল্প আকারে রোকেয়া লিখেছেন,
ফল ভক্ষণ করিবা মাত্র হাভার জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হইল নিজের নগ্নতা সম্পর্কে উপলব্ধি হল। চুল দিয়ে শরীর ঢাকলেন। মানবিক আত্ম উপলব্ধি হতে থাকল। অজানা মর্ম বেদনায় তাঁহার হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত হইল
এরপর আদম নিজে পত্নীর উচ্ছিষ্ট জ্ঞানফল খেলেন। খাওয়ার পর তারও জ্ঞানোদয় হল- তখন তিনি নিজের দৈন্যদশা হৃদয়ের পরতে পরতে অনুভব করিতে লাগিলেন। এই কি সর্গ? প্রেমহীন, কর্মহীন, অলস জীবন- ইহাই স্বর্গসুখ ? আরও বুঝিলেন তিনি রাজ বন্ধী, এই ইডেন-কাননের সীমানার বাহিরে পদার্পণ করিবার ক্ষমতা তাঁহার নাই।… এখন অজ্ঞতারূপ স্বর্গ সুখের স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল, জ্ঞানের জাগ্রত অবস্থা স্পষ্ট হইতে লাগিল। সুতরাং মোহ ও শান্তির স্থলে চেতনা ও শান্তির দেখা দিল। মোহ, কর্মহীনতার অনন্তসুখ থেকে মুক্ত হয়ে মানবিক সৃষ্টিশীলতার যাতনা নিয়ে আদম হাওয়া যখন কোন এক অজ্ঞাত পরিবর্তন লাভের জন্য ব্যাকুল হইলেন তখন // পরমেশ্বর উদ্যান ভ্রমণে আসিয়া ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, তোরা স্বাধীনতা চাহিস? যা তবে দুর হ ! পৃথিবীতে গিয়ে দেখ স্বাধীনতার কত সুখ!
তারপরই কনক দ্বীপে অর্থাৎ পৃথিবীতে তাঁহারা, অভাব, স্বাচ্ছন্দ, শোক-হর্ষ-রোগ্য-আরোগ্য, দুঃখ-সুখ প্রভৃতি বিবিধ আলো আধারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া প্রকৃত দাম্পত্য জীবন লাভ করিলেন।
ধর্মগ্রন্থে নারী কে বলা হয়েছে পাপাচারে প্রলুব্ধকারিণী, অথচ রোকেয়া স্পষ্ট দেখিয়েছেন নারী এখানে পুরুষ কে আত্মসচেতন করেছে।পুরুষের ভেতরের মানবিক গুণাবলী কে জাগ্রত করেছে।তাকে জ্ঞান চিন্তায় প্রজ্ঞায় সক্রিয় করেছে। নারী এখানে শক্তিমতী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তিনি গল্পের ছলে আরও একটি চমৎকার সত্যি সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন ,
দুইশত বছর হইল এই দেশের অদূরদর্শী স্বার্থপর পণ্ডিত মূর্খেরা ললনাদিগকে জ্ঞান ফল ভক্ষণ করিতে নিষেধ করে , কালক্রমে ঐ নিষেধ সামাজিক বিধানরূপে পরিগণিত হইল এবং পুরুষেরা এ ফল নিজেদের জন্য একচেটিয়া করিয়া লইল। ফলে নারীর কোমল হস্তের সেবা যত্ন বঞ্চিত হওয়ায় জ্ঞানবৃক্ষ মরিয়া গিয়াছে। নারীর আনিত জ্ঞানফলে নারীর সম্পূর্ণ অধিকার আছে, এ কথা অবশ্য স্মরণ রাখিবে
( রোকেয়া, আব্দুল কাদির ১৯৭৩, ১৮০-১৮৮)
স্বামী শব্দ যে প্রভু ধারণারই প্রকাশ মাত্র বেগম রোকেয়া তা ঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি তার ‘স্ত্রীজাতীর অবনতি শীর্ষক’ প্রবন্ধে লিখেছেন,
স্বামী শাব্দের অর্থ কি? দানকর্তা কে দাতা বলিলে যেমন গৃহকর্তা কে গ্রহীতা বলিতেই হয়, সেইরূপ একজন কে স্বামী, প্রভু, ঈশ্বর বলিলে অপর কে দাসী না বলিয়া রা কি বলিতে পারেন?
তার এধরনের সাহসী সৎ লেখার জন্য মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে, তাকে দমাতে চেয়েছে তাই তিনি লিখেছিলেন ,
আমি কারাসিয়াং ও মধুপুর বেড়াইতে গিয়া সুন্দর সুদর্শন পাথর কুড়াইয়াছি,উড়িষ্যা ও মাদ্রাজে সাগর তীরে বেড়াইতে গিয়া বিচিত্র বর্ণের বিবিধ আকারের ঝিনুক কুড়াইয়া আনিয়াছি। আর জীবনের পঁচিশ বছর ধরিয়া সমাজ সেবা করিয়া কাঠমোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইয়াছি
পর্দা প্রথা,কোরআন শিক্ষা নিয়ে রোকেয়ার বক্তব্য পড়ে অনেক ক্ষেত্রে মনে হতেই পারে সে একজন গোরা মুসলিম কিন্তু এক্ষেত্রে বোঝা জরুরী তার সামাজিক অবস্থান এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব তার মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক ছিলনা কিন্তু তার অবস্থান থেকে ধর্মীয়গুরুদের এবং ধর্মের রীতিনীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর বক্তব্যগুলো তাকে কখনোই একজন ধর্মান্ধ হিসেবে উপস্থাপন করে না।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ করা জরুরী, রোকেয়া বিষয়ে আকিমুন রহমান তার বিবি থেকে বেগম গ্রন্থে, বেগম রোকেয়া কে স্বামীর অনুকরণকারি হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন । তার যুক্তি অনেক ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হলেও তখনকার রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে আজকের সমাজের নারীদের চেয়ে তার চিন্তা অনেকাংশে অগ্রসর ছিল।তিনি রীতি মেনেছেন সামাজিক কারণেই।তাকে সামাজিক বিধি ব্যবস্থায় অনেক কৌশলী হতে হয়েছিল।
বেগম রোকেয়া কে নিয়ে এ বিষয়ে আনু মুহাম্মাদ এর চমৎকার একটি লেখা আছে।
এর দুটা লাইন এমন ,
রোকেয়ার অগ্রসর চিন্তা ধারণ করতে না পেরে সমাজ তার কম গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় কেই গ্রহণ করেছে- মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত। আর সেই কাজেও রোকেয়া সেই সময় সহযোগিতা পান নি।
কঠিন প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি লড়েছেন ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। তিনি ধর্মের পশ্চাদপদ নিয়ম নীতি কে অস্বীকার করেছেন। রোকেয়ার অগ্রসর চিন্তা সমাজ মেনে নেয়নি বলে তাকে নিঃসঙ্গই থাকতে হয়েছে। তবুও তিনি তার চিন্তার প্রকাশ থেকে পিছু হটেননি। আজকের সমাজ তাকে মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত খেতাব দিয়ে তাদের দলভুক্ত করার চেষ্টা করলেও সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া একজন মুক্তমনা মানুষ।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter