Flickr

Wednesday, 12 September 2012

প্রধানমন্ত্রীর ঠাট্টা

Posted by   on

 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে নিয়ে এমনই খেলা খেলছেন যে, এখন কখনও কখনও মনে হয় তিনি বোধ করি অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলোপ করতে চান। যে দেশের জনগণ তার পিতার হত্যার বিচার করেনি বা চায়নি সেদেশের অস্তিত্বের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি যে কি করছেন এবং কি করছেন না সেটি এক বিশাল সমস্যার ব্যাপার। হীরক রাজার মতো যখন যা খুশি তাই করছেন এবং বলছেন। যেহেতু রাষ্ট্রক্ষমতা তার হাতে, তার পুরোটা ব্যবহার করে তিনি বিরোধীদল ও জনগণের উপর চূড়ান্ত দমননীতি চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তার চোখের পাতা পড়ে না।
২০০১-২০০৬ সালে যখন তিনি বিরোধীদলে ছিলেন তখন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে তার প্রধান অভিযোগ ছিল ঐ সরকার মহাদুর্নীতিবাজ, ‘চোর, চোর, মহাচোর'। এখন নিজেই দুর্নীতির গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে যাচ্ছেন। তিনি সমস্ত লীগ-অনুলীগকে তো দুর্নীতির ওপেন জেনারেল লাইসেন্স (ওজিএল) দিয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশে যে এসব লীগের সংখ্যা কত তা বোধ করি কেউ হিসাব করে বের করতে পারবে না। ঘাট-শ্রমিক লীগ, রিকশা-শ্রমিক লীগ, আওয়ামী প্রাক্তন-সৈনিক লীগ এমন সব নামে রাস্তা-ঘাটে নানান চিকা ও ডিজিটাল ব্যানার দেখা যায়। আর অনুমোদিত লীগগুলোর তো কোনো কথাই নেই। তারা টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। মহামান্য প্রধানমন্ত্রী নির্বিকার। হাতে যথেষ্ট টাকা পয়সা না থাকলে ওরাই বা চলবে কি করে? মিটিং-মিছিলই বা কেমন করে করবে?
যদিও এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত টেলিকনফারেন্স করেন। যদিওবা কখনও ঘর থেকে বের হন তাহলে তার জন্য থাকে সীমাহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আজকাল ঘর থেকে কমই বাইরে বের হন তিনি নিরাপত্তার ভয়ে। এবং তিনি কেন যে তার নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী বাদ দিয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করেছেন সেটা বোধগম্য নয়। তবে কি সেনাবাহিনীকে তার বড় ভয়? প্রথমে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা খুন হয়েছেন বিডিআর বিদ্রোহে। সেখানে আলোচনার নামে যা ঘটেছে তাকে কেউ অনুমোদন করে না। সেনাবাহিনীর অনেক অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টেলিভিশনে আলোচনা করেছেন যে, যদি তাদের অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেয়া হতো তাহলে এত অফিসারের প্রাণহানি হতো না। কিন্তু আলোচনা ও সাধারণ ক্ষমার নামে সময়ক্ষেপণের নামে সেনাবাহিনীর এত সংখ্যক অফিসার বিডিআর বিদ্রোহে প্রাণ দিতে হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহ যে কী সেও এক ধূম্রজাল। বিদ্রোহের আগে তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু এইভাবে বিডিআর সদস্যরা তাদের অফিসারদের খুন করতে পারে-এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এবং এই প্রশ্ন বার বার উত্থাপিত হয়েছে যে, সত্যি কি বিডিআর সদস্যরাই এই সেনা কর্মকর্তাদের বেছে বেছে খুন করেছে? নাকি এর পেছনে অন্য কারো মদত ছিল? সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। আনিসুজ্জামানের তদন্ত রিপোর্ট সরকার গিলে ফেলেছে, প্রকাশ করেনি। আনিসুজ্জামান তদন্ত রিপোর্ট দিয়েই বিদেশে চলে গেছেন। আর ফিরেছেন কিনা সে রকম রিপোর্ট সংবাদপত্রে দেখি না। সেখানে অনেক প্রশ্নবোধক কথা ছিল। তার জবাব দেয়ারও প্রয়োজন সরকার অনুভব করেনি। ফলে বিডিআর বিদ্রোহ এখন পর্যন্ত প্রশ্নবোধকই রয়ে গেছে।
সেনাবাহিনী বলেছিলো, বিডিআর সদস্যরা যেভাবে প্রশিক্ষিত তাতে একজন বিডিআর জওয়ান তিনজন ভারতীয় বিএসএফ সদস্যকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। ফলে সবসময়ই ভারতের বিডিআর-ভীতি ছিল। আর এ কারণেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যখন ভারত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তখন সেই চুক্তির একটি শর্ত ছিল যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারকে বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করে বর্ডার গার্ড বাহিনী করতে হবে। জানা যায় যে, ঐ চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পিতা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এই চুক্তি তিনি মানেন না এবং মানবেনও না। শেখ হাসিনা তার পিতাকে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কী না করছেন! এখন চতুর্দিকে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যে চুক্তি প্রত্যাখ্যাত করেছিলেন, সেই চুক্তি তিনি বাস্তবায়ন করে ফেলেছেন। বিডিআর বিদ্রোহের দায়ে হাজার হাজার সদস্যকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা আর কোনোদিন এই বাহিনীতে ফিরতে না পারে। নতুন মুখ চাই যারা সরকারের অনুগত ও ভক্ত। এরা শুধু পাহারাদার হিসেবে লাঠি নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর বিএসএফ থাকবে বন্দুক নিয়ে। ফলে এখন প্রতিদিন বিএসএফ একজন না একজন বাংলাদেশীকে খুন করছে। বিগত সাড়ে তিন বছরে সরকার একবারের জন্যও তার কোনো প্রতিবাদ করেনি। যে বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করেনি, তাদের যদি বিএসএফ গুলি করে থাকে, সরকারের বিবেচনায় সম্ভবত তারা ভাল কাজই করেছে। ‘জয় বাংলা' ধ্বনি দেবো। সব শেষ।
আসলে এই প্রসঙ্গে আমি আলোচনা করতে চাইনি। আমি আলোচনা করতে চেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর ঠাট্টা বিষয়ে। আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কত কথাই না বলেছেন। চারদলীয় জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সেই সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অভিযোগ ছিল যে, এরা জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। অতএব এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এরপর তিনি আরও বলেছিলেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশের সকল গ্যাসের উৎস শুকিয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সব কূপ গ্যাসে ভরে যায়। এর অর্থ হলো এই যে, বিএনপি একটি অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল। আপনারা তাদের ভোট দিয়েন না। কিন্তু শেখ হাসিনা খেয়াল করছেন না যে, তিনি কিভাবে ক্ষমতাসীন হলেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার অাঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। কথাটা শেখ হাসিনার পছন্দ হয়নি। সেই কারণে তিনি এত বড় পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিলকে ‘যাও বাচ্চা, শো রাহো' বলে বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
জলিল অবশ্য এখন দু'চার কথা বলেন। জনসমক্ষে বলেন, সংসদেও বলেন। আওয়ামী লীগের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অাঁতাতের মাধ্যমে গঠিত সরকার সেটি পরোয়াও করে না। এই সরকার যে অাঁতাতের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল সেটা আমার বক্তব্য নয়, সেটা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের বক্তব্য। জলিলকে যেসব কারণে বিশ্রামে যেতে হয়েছে তার প্রধান কারণ সম্ভবত তার বক্তব্য।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ হলেও, দেশকে দুর্নীতিতে সয়লাব করে দিলেও শিক্ষা দিতে ভালই পারদর্শী। তিনি বলেছিলেন, বিএনপিকে তিনি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন। শিক্ষা তিনি দিয়েছেনও বটে। বিএনপি'র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গাড়ি পোড়ানো কিংবা সচিবালয়ে বোমা মারার দায়ে অভিযুক্ত করে জেলও খাটিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায়ই শেখ মুজিবুর রহমান জাসদ নেতাদের জেলে পুরেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে টাঙ্গাঈলের কাগমারিতে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। কিন্তু এই শিক্ষা দেয়ার পরিণতি শেখ মুজিবের জন্য শেষ পর্যন্ত সুখকর হয়নি। জোট সরকারের দুর্নীতি, দুর্নীতি বলে শেখ হাসিনা ও তার চ্যালা-চামুন্ডারা সারা বিশ্ব সরব করে তুলেছিলেন। এখন তো মনে হয়, তার সে অপপ্রচারে বিশ্ববাসী খানিকটা বিভ্রান্তও হয়েছিল। কিন্তু এখন দাঁড়িয়েছে কী? এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসেবে সারা পৃথিবীতে ঘৃণিত ও নিন্দিত হচ্ছে। এর সবই আবার সপ্রমাণ। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, কুইক রেন্টালে লুট, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, সুরঞ্জিতের বস্তাভর্তি টাকা এগুলো এখন আর বিশ্বের কারো কাছে অজানা নেই। হলমার্ক কেলেঙ্কারি তার দুর্নীতির সর্বশেষ উদাহরণ। এর কোনোটাই অসত্য নয়। সবই তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে এদের কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। অথচ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তারা করেছে, তার একটিরও কোনো প্রমাণ নেই। শুধুই চাপা, বগি আওয়াজ।
এবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, বুয়েট ছাত্রদের বিরুদ্ধে কিভাবে কঠোর হতে হয় তা দেখিয়ে দেবেন। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে তিনি ইতিমধ্যেই জনসাধারণ বিভিন্ন অংশকে শিক্ষা দিয়েছেন। বিদ্যুতের দাবিতে সাধারণ মানুষ যখন বিক্ষোভ করেছে তখন তাদের পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করেছেন। আর বলেছেন এ ধরনের বিক্ষোভ করলে যেটুক বিদ্যুৎ দেয়া হয়, তাও বন্ধ করে দেয়া হবে। কী শাসন! বুয়েটের ছাত্ররা কেন নিজের শরীরের রক্ত ঢেলে ভিসি-প্রোভিসি'র অপসারণ চাইলেন? তখন তিনি তার গোপালী ভিসিকে রক্ষার জন্য ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর হবার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ঐ রক্ত ঢেলে প্রতিবাদ জানানোকে বিকৃত মানসিকতা বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এই কথা উপলব্ধিই করতে পারছেন না যে, অবিরাম জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, জনগণকে শায়েস্তা করে তার শেষরক্ষা হবে না। কোনো দেশে কারোরই তা হয়নি।
বিদ্যুতের দাবিদারদের তিনি অবিরাম নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেই যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিংও। বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আর কোনো চিন্তা নেই। বিদ্যুতে সয়লাব হয়ে যাবে গোটা দেশ। কিন্তু তা তো হয়ইনি বরং সে উৎপাদন আরও কমেছে। তাও প্রধানত দুর্নীতির কারণে। কয়েকদিন আগে বলেছেন, লোডশেডিং হতেই থাকবে। তা না হলে লোডশেডিং কি জিনিস জনগণ ভুলেই যাবে। দুর্নীতির মহাযজ্ঞস্থল কুইক রেন্টাল। এর মাধ্যমে আওয়ামী চাঁমিরা ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, এই হাতানোর সুযোগ আরও বহুদিন অব্যাহত থাকবে। আর এই কুইক রেন্টালের যারা সমালোচনা করবে, তাদের বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ সাতদিনের জন্য বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক-সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে সরকারের এখন যুদ্ধ চলছে। ঠাট্টা-মশকারা আর জনগণকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা প্রধানমন্ত্রী যতটা সহজ ভেবেছেন, সম্ভবত সেই কাজটা অত সহজ নয়।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter