সুন্দরবনের খুব কাছে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আনবার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের পরিবেশবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও জানিয়েছেন, এতে পরিবেশের যেমন বিপর্যয় ঘটবে, তেমনি দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্যদিকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারত মাত্র ১৫ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। কিন্তু ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণের পুরোটাই পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। শুধু তাই নয়, কোনও কারণে যদি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তাহলে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকে। চুক্তিতে না কি এমন সব শর্তই জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা জানিনা, সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট করে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানি করে রামপালে কেন আলোচ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে? আমাদের দেশে প্রচুর কয়লা রয়েছে। এ কয়লা মানের দিক থেকেও ভারত থেকে আমদানির জন্য প্রস্তাবিত কয়লার চাইতে উন্নত। বিশেষত দিনাজপুরের কয়লা ভারতীয় কয়লার চাইতে কোনও অংশে কম নয়। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারতীয় কয়লা আমদানির তোড়জোড় চলছে কার স্বার্থে? আমাদের কয়লা দিয়ে আমরা কি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারি না? নিশ্চয়ই পারি বলে আমরা মনে করতে চাই। এ জন্য দরকার দৃঢ় ইচ্ছা এবং গভীর দেশপ্রেম। সর্বোপরি প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সবার ওপরে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড়রূপে বিবেচনা করতে পারলে অনেক বড় কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব বলে আমরা মনে করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আত্মনির্ভরতাকে পছন্দ করতে পারি না। পরের সাহায্যের প্রতি আমরা চেয়ে থাকি। অন্যরা যে তাদের স্বার্থ ত্যাগ করে আমাদের কিছু দেয় না, দিতে চায় না, একথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আলোচ্য প্রকল্পের লভ্যাংশের ৫০ ভাগই ভারত নিয়ে যাবে মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগের মাধ্যমে। অথচ যদি কোনও কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব না হয় তাহলে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকে। এতেই বোঝা যায় বন্ধুদেশটির উদ্দেশ্য। আসলে আমরা বেনে বন্ধুদের উদ্দেশ্য না বুঝেই বিনিয়োগে রাজি হতে চাই। আমরা নিজেদের তথা দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখতে চাই না। যা দেখি তা ব্যক্তিস্বার্থ। উপস্থিত হাতে যা পাই সেটাই বড় করে দেখি। এমন করে কোনও জাতি কখনও বড় হতে পারে না। আত্মনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয় না। কয়লার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের রয়েছে প্রচুর। তা আমরা কাজে লাগাবার চেষ্টা করি না। সঠিকরূপে উত্তোলনের ব্যবস্থা না নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তা দিয়ে অন্য দেশের বেনেদের পকেট ভর্তি করবার সব রকম ফন্দিফিকির করতে আমরা কসরত করছি ব্যক্তিগত সাময়িক লাভালাভের বিবেচনায়। দুর্ভাগ্য আমরাদের এখানেই। আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে আলোচ্য প্রকল্পটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবার। প্রকল্পটি যেন পরিবেশ ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে না যায়, এ ব্যাপারে গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। এটি নিয়ে যদি আরও অধিকতর ভাবনা-চিন্তার দরকার পড়ে সে দিকটার প্রতিও নজর দেয়া জরুরি।
No comments:
Write comments