Flickr

Tuesday, 10 December 2013

এক মহা দুর্যোগের ঘনঘটা

 
বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যাকাশে আজ এক মহা দুর্যোগের ঘনঘটা। ঈশান কোনে দেয়াটা আস্তে আস্তে গুড়ুম গুড়ুম করে ডাকছে। চারদিক থেকে ঘন কালো মেঘ এসে সেখানে জড়ো হচ্ছে। সমস্ত জনগণ এক মহা আতংকে দিন কাটাচ্ছে, এই বুঝি প্রলয়ঙ্করী ঝড় শুরু হলো! সবারই মনে ভয় না জানি কি হয়! আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে রাজনৈতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিটাই বেশী হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিটা হয় দেশের কতকটা অঞ্চল জুড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিটা হয়ে থাকে দেশজুড়ে। তাই আজ সারা দেশের মানুষ এক মহা দুর্যোগের ভয়ে আতংকিত হয়ে আছে।
লোকে বলে আমার কথা নাকি ফলে যায়। কিšুÍ কথাটা সত্য নয়। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম হাবা গোবা। এ জন্য অনেকেই আমাকে আদু বলে ডাকতো। আমার মা ডাকতেন অলগদ্ধা বলে। অলগদ্ধা মানে সবচেয়ে বড়ো বোন্ধা। আদু বা বোন্ধা যাই হোক, পরিচিত জনরা আমাকে দেখলেই জিজ্ঞেস করেন, “আদু ভাই, নির্বাচন কি হবে?” আমি কোনো কিছু না ভেবেই বলি ‘হবে।’ তখন তারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট তো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তয় নির্বাচন হবে কেমন করে?” উত্তরে আমি বলি কেনো হতে পারবে না? ১৯৭১ সনে তুমুল যুদ্ধের মাঝেও একটি নির্র্বাচন হয়েছিলো। লোকেরা পাস করে এমপি হয়েছিলো, মন্ত্রী হয়েছিলো। ১৯৯৬ সনেও তেমনি একটি নির্বাচন হয়েছিলো। সেবারও লোকেরা পাস করে এমপি, মন্ত্রী হয়েছিলো। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবারও তেমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশটা মিটিয়ে নেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এটা তো আমাদের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। এর জন্য দরকার একটু বুদ্ধির। তখন অনেকেই বলে বসেন, “এটা করা সম্ভব হবে না। আঠারো দলীয় জোটকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন করা অসম্ভব। আঠারো দলীয় জোট তা প্রতিহত করবে। ভয়ে মানুষ ভোট দিতে যাবেই না।” উত্তরে আমি বলি, কচু করবে। প্রতিহত করার সুযোগই পাবে না। নির্বাচনে কোনো ভোটারের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ারই দরকার পড়বে না। তখন জিথনের রাজ্জাক মামা বলেন, “আরে বেটা, মানুষ ভোট দিতে না গেলে নির্বাচন হবে কি করে? সেটা কি আইনসিদ্ধ হবে? দেশের মানুষ বা বিশ্বাবাসী কি সেটা মেনে নেবে?” উত্তরে আমি বলি, হাঁ সেটা খাঁটি আইন অনুযায়ীই হবে। আর বিশ্ববাসী বা অন্য কেউ সেটা মানলো বা মানলো না তাতে কারো কিছু এসে যায় না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার ধারণা বিশ্ববাসী মেনে নেওয়ার মতো করেই একটি নির্বাচন করা হবে। মসুয়া গ্রামের মানিক ভাই বললেন, “বিষয়টা বুঝলাম না। একটু খোলাসা করে বলুন না ভাই।”
মানিক ভাইয়ের সাথে আরো কয়েকজন এসে আমাকে ধরলো বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে। আমি তখন বললাম এর জন্য দরকার একটু বুদ্ধির। বুদ্ধি করে পটিয়ে পাটিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে, বিরোধী দল ও ব্যক্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। যেমন জেনারেল এরশাদ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ছক্কু মিয়াসহ বেশ কিছু লোককে তার বিরোধী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতেন। এর মধ্যে জেনারেল এরশাদ দলবল নিয়ে ছক্কু মিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজিও হয়ে গেছেন। তার দলের কয়েকজনের মন্ত্রিত্বও উপহার হিসেবে পেয়েছেন। অনেকে বলছেন দুই একজন সুন্দরী বান্ধবী পেলেই তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন যেভাবে নাচতে বলা হবে তিনি তেমনি নাচবেন। একটি ইসলামী দলকে জন্ম দিয়েও সে ভূমিকায় অভিনয় করানোর ব্যবস্থাও প্রায় পাকাপাকি। প্রয়োজনে ১৪ দলের দুই একটি দলকেও বলা হবে জোট ছেড়ে আলাদাভাবে নির্বাচন করতে। এ ছাড়াও প্রতিটি সিটের জন্য আরো কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও দাঁড় করানো হবে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে। তখন সরকারি দল বলবে যে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন, আগে থেকে নির্ধারিত লোকেরা ছাড়া, অন্য সব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে। এভাবে ৩০০ সিটের সব ক’টিতেই সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিরা অতি সহজেই পাস করে আসবে। ইচ্ছে করলে বিশ ত্রিশটি সিটে যৌথ বাহিনীর প্রহরায় কিছু লোক দেখানো নির্বাচনের ব্যবস্থাও করা হতে পারে। সে নির্বাচনকে কেহই অবৈধ বলতে পারবে না। কারণ সেটা সংবিধান অনুযায়ীই হবে। যা দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার তেমনি একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। যদি তাই করা হয় সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে? একজন নিরপেক্ষ লোক হিসেবে আমি বলবো, না।  আমি যখন এ লেখাটি লিখছি তখন সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একজন সাংবাদিক এ প্রশ্নটা করেছিলেন। উত্তরে মার্কিন মন্ত্রী বলেছিলেন, “এটা নির্ভর করবে দেশের জনগণ সেটাকে কিভাবে নেবে তার ওপর।” তার উত্তরটা যেমন সুন্দর তেমনি সঠিক। কারণ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তারা সেটাকে মেনে নিলে কারো কিছু বলার নেই। কিšুÍ যদি মেনে না নেয়, তা হলেই সমূহ বিপদ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। সরকারকে অচল করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।  যদি তাই করে তবে তাতে বহু মানুষের প্রাণ যাবে। বহু মায়ের কোল খালি হবে। বহু মেয়ে বিধবা হবে। বহু ছেলেমেয়ে এতিম হবে। বেগম খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার গায়ে আঁচড়টিও লাগবে না। চলমান আন্দোলনে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। বহু মানুষের গা, চোখ, মুখ পুড়ে বীভৎস হয়ে গেছে। কিন্তু জয়, আরাফাত বা তারেকের গায়ে তো একটি আঁচড়ও লাগেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও শেখ জামাল বা শেখ কামালের গায়ে কোনো আঁচড় লাগেনি। যুদ্ধই বলেন, বিপ্লবই বলেন বা আন্দোলনই বলেন, সকল ক্ষেত্রেই প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। সাধারণ মানুষের রক্তেরঞ্জিত হয় রাজপথ। বড়োরা সুখেই থাকে। বরং আমরা দেখি ঈদ এলেই দুই নেত্রীই ব্যস্ত হয়ে উঠেন কার আগে কে ঈদ শুভেচ্ছ পাঠাবেন। এখনো নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে ইচ্ছেটা পোষণ করলেই সব ঠিক হয়ে যায়।
যে সংঘাত চলছে সেটার কারণ আর কিছুই নয়। একজন চাচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অনেকদিন টিকে থাকতে। অন্য জন চাচ্ছেন ক্ষমতায় যেতে। পাটা শীলের এই লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে মরিচের। অনেক প্রাণ গিয়েছে। আরো অনেক যাবে। শীতে শিমূল, জিগার গাছের পাতা যেমন করে ঝরে পড়ে তেমনি ঝড়ে পড়ছে অগণিত তাজা প্রাণ। এর কি শেষ নেই? এ জন্যেই কি লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছিলো? এভাবে চলতে থাকলে একশোবার স্বাধীন হলেও এদেশের মানুষের কোনো মঙ্গল হবে না। দেশটা কি শুধু দুই নেত্রীর উত্তরাধিকার সম্পত্তি হয়ে গেছে? কে দেবে তার উত্তর? ১৬ কোটি মানুষের দেশে একটি উপযুক্ত পুরুষ নেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। এ লজ্জাটা ঢাকি কি করে? ২০১৩ সালে যতগুলো লোকের প্রাণ গেলো ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তেইশ বছরেও ততগুলো মানুষ রাজপথে মারা যায়নি। কি বলবো! ১৯৭৩ সনের ১ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবের কাছে আমেরিকান তথ্য অফিসের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকার বেগম মতিয়া চৌধুরীর সামনে মেরে ফেলে ৮ তরুণ যুবককে। বেগম মতিয়া চৌধুরীও আহত হয়েছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে পালাচ্ছিলেন। তাদেরই উত্তরাধিকারীগণ যদি মানুষ মারে তাতে বলার কি আছে? আমি জোর গলায় বলতে চাই যে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা একজন অবৈধ এমপিকে মন্ত্রী বানিয়ে যেভাবে পাখীর মতো মানুষ মেরেছেন তা কেউ মেনে নিতে পারে না। এডভোকেট সাহারা খাতুনের চেহারাটা সুন্দর না হতে পারে, তার মনটা খারাপ ছিলো না। তাই তিনি মানুষ মেরে হাত রাঙ্গাননি।
 
ক্ষমতার জন্য মানুষের এতো লোভ কেনো? আমি তো একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। কিন্ত আমি নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে করি। বেগম জিয়া বা শেখ হাসিনা কেনো তা পারেন না? কেনো তারা ক্ষমতার লোভে মানুষ হত্যার খেলা থেকে বিরত হতে পারেন না? শেখ হাসিনা যেমন বাবা, মা, ভাই সব আপনজনকে হারিয়েছেন, বেগম জিয়াও তো হারিয়েছেন তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। একজন মেয়েলোকের কাছে তার স্বামী সমস্ত পৃথিবী থেকেও প্রিয়, সেরা। আপনারা উভয়েই এতো এতো রক্ত দেখেও কেনো থামছেন না? বেগম জিয়ার লোকেরা যেমন বোমা মেরে, পুড়িয়ে লোক মারছে, শেখ হাসিনার লোকেরাও গুলী করে, লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে এবং বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লোক মারছে। Responsibility lies the head that wears the crown,” কথাটি যদি সত্য হয় তা’হলে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা দু’জনের কেহই মানুষ হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। তবে শেখ হাসিনার দায়টা বেশি যেহেতু তিনি ক্ষমতায় আছেন। একজন লোক যদি রাস্তার মাঝখানে বসে পায়খানা করে এবং অন্য একজন যদি তার পাছায় লাথি মারে সে ক্ষেত্রে দুজনকেই দায়ী করতে হবে, যে লাথি মারলো শুধু তাকে নয়। দেশটা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। দেশটা আমাদেরও। আমরা সাধারণ মানুষেরও। যেমন ছাত্রদল, যুবদলের কর্মীরা বোমাসহ ধরা পড়ছে, তেমনি উজ্জলের মতো ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরাও বোমাসহ ধরা পড়ছে। আপনারা কেনো বলেন না যে আর যাই করো মানুষের গায়ে বোমা মেরো না। বাসের ভেতর বোমা মেরো না। মানুষ মেরো না। যে লোকগুলো গুলী খেয়ে বা বোমার আগুনে পুড়ে মরেছে বা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে তারা তাদের বাবা মা’র কাছে কোনোক্রমেই তারেক বা জয়ের চাইতে কম প্রিয় নয়। আপনারা যেমন চাচ্ছেন বার বার প্রধানমন্ত্রী হবার, তারা চাচ্ছিলো শুধু কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে। মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তার প্রাণটা। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের কি যে আকুতি তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। জিথন গ্রামের আব্দুল জব্বারের হাত পায়ের আঙ্গুলগুলো কুষ্ঠরোগে ভোগে পঁচে ঝরে গিয়েছিলো। পায়খানা প্র¯্রাব বিছানাতে শুয়েই করতেন। সারাক্ষণ জ্বর ও গায়ের ব্যথায় কান্নাকাটি করতেন। কিন্ত জব্বার সাহেব মরতে চাইতেন না। মরে যাবেন এই ভয়ে তার জন্যে খতমে ইউনুছ পড়াতে দিতেন না। আর আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে অথবা ক্ষমতায় যেতে কত মানুষের সেই প্রিয় প্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন তার সংখ্যা বলা মুস্কিল। মনে রাখবেন, “ঊাবৎু ধপঃরড়হ যধং বয়ঁধষ ৎবধপঃরড়হ.”
এক পক্ষ বলছেন যে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রবর্তন ছাড়া কিছুতেই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অন্য পক্ষ বলছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক মামদো ভূত আর নয়। বস্তুতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এমন একটি সরকার যা রাষ্ট্রের ভেতর আর একটি রাষ্ট্র। এর নজীর রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কোথায়ও নেই। এটাকে বলা যেতে পারে An unnecessary devil” বা একটি অপ্রয়োজনীয় আপদ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর যখন এ ব্যবস্থাটা গ্রহণ করা হচ্ছিল তখন আমি একটি লেখায় বলেছিলাম যে এ ব্যবস্থাটা শুধু একবারের জন্যেই করা হোক। এটাকে সংবিধানে ঢুকানোর প্রয়োজন নেই। এটা এক সময় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্ত আমার মতো নগণ্য আদুর পরামর্শটার প্রতি আমাদের হাতী নেতা, গন্ডার নেতা, সিংহ নেতা, বাঘ নেতা এমন কি শিয়াল খাটাস নেতারাও কান দিলেন না। এটা সোজা কথা যে যিনিই ক্ষমতায় থাকবেন তিনি হিসেব নিকেশ করেই তার প্রিয়ভাজন লোককেই প্রধান বিচারপতি বানাবেন যাতে সময়ে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানাতে পারেন এবং তাকে দিয়ে ফায়দা লুটতে পারেন। তখন সকল দল বা নেতারা একমত ছিলেন। তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এখন যদি আওয়ামী লীগ বিএনপির দাবী মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন করেন, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগও একই দাবী করবে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটাকে হয় পাকাপোক্ত করতে হবে নতুবা পুনরায় দেশ সমস্যার কেচিকলে আটকা পড়বে। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা উঠিয়ে দিয়ে একটি ভালো কাজই করেছিলেন। কিন্তু সেটা রহিত করতে যে পথটা অনুসরণ করেছেন সেটা ভুল পথ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করা হয়েছিলো সকল দল ও মানুষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে। কিন্ত সেটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে মূলত এক দল বা একটি জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। হুট করে যে কোনো কিছু যেমন সংবিধানে ঢুকানো ঠিক নয়, তেমনি হুট করে শুধু মেজরিটির জোরে সংবিধান সংশোধন করাও ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞনী জনাব গেটেল বলেছেন, ÒNo tyrany is so great as that of majority rule.” একটি দেশের শাসনতন্ত্র সব কিছুর ঊর্র্ধ্বে। এটি দেশের সকল মানুষের অধিকারের রক্ষা কবচ। এটাকে যত্রতত্র বদল করা ঠিক নয়। এটা বাচ্চার হাতের পুতুল নয় যে মনে লইলো তা নিয়ে খেললো, মনে লইলো না ভেঙ্গে ফেললো। এটার আভিজাত্য ক্ষুন্ন করা মোটেই ঠিক নয়। কিন্ত আমাদের দেশের নেতারা শাসনতন্ত্রকে একটি সুন্দরী ফালতু মেয়ে বানিয়ে ফেলেছেন। যার যখন খুশি তাকে ধর্ষণ করছে। বড়ই মজার ব্যাপার হলো যারা প্রথম শাসনতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন তারাই দুই বছরের মাথায় ১৯৭৪ সনে তার গায়ে হাত দেয়া হয়। তা করে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেয়। তারপর যখন যেই ক্ষমতায় এসেছে সে-ই তাকে ইচ্ছে মতো ধর্ষণ করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে ঢুকানোটা এবং বাদ দেয়াটা দুটোই ধর্ষণের শামিল। শাসনতন্ত্রের কোনো বিধান সংযোজন বা বিয়োজন করতে হলে তা নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরেও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করা প্রয়োজন। অন্য দেশে তাই হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। বলতে পারেন যে সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিক্রমেই এটা সংশোধন করা হয়েছে। মাফ করবেন, আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরা অনেকটা ভেড়ার মতো। সামনের ভেড়াটি যেদিকে যায় অন্য সব ভেড়া তার পেছন পেছন যায়। তাদের নেতার বিরোধিতা করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। নেতার বিরোধিতা করলে তার সদস্যপদ হারাতে হয়। ফলে একজন সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিবেকের বিরুদ্ধে হলেও নেতা বা নেত্রীর কথা মতো কাজ করতে হবে। ফলে এখানে একজন সংসদ সদস্যের স্বাধীনতা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ ছাড়াও সংসদের মিটিংয়ের সময় আমরা দেখতে পাই যে সম্মানিত সদস্যগণ বক্তব্য রাখতে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের নিজ নিজ নেতা বা নেত্রীর ভজন সংগীত গাইতে গাইতেই তাদের জন্যে বরাদ্দকৃত সময় পার করে দেন। যখন মাননীয় স্পীকার বলেন, “মাননীয় সদস্য আপনার সময় শেষ,” তখন তিনি বলেন, “মাননীয় স্পীকার, আমি তো আমার এলাকার জন্যে কোনো কথাই বলতে পারি নাই। দয়া করে আমাকে আরো এক মিনিট সময় দেন।” অর্থাৎ তারা যে কথা বলার জন্যে সংসদে এসেছেন সে কথা বলতে সময় পাননা। সংসদের কার্যবিরণী চেক্ করে দেখুন। যদি আমার কথা সত্য না হয় তবে আমি জনসমক্ষে কান ধরে সাতবার উঠা বসা করবো। এ রকম তিন শত সদস্যের কাছ থেকে একজন মানুষের জ্ঞান আশা করা যায় না। আর তারাই সংবিধান সংশোধন করে থাকেন। যখন তখন করে থাকেন।
এখন এ সংকট থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি? উপায় একটাই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। কিন্ত কোনো পক্ষই তো আলোচনায় আসছে না। মাঝখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ হবে শুনে দেশবাসী বেশ আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্ত আলাপের পর দেখা গেলো অগ্রগতি দূরে থাক বরং সমস্যার অবনতি হয়েছে। তাদের কথাবার্তায় বুঝা গেলো কেহই সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে চান না। ওটা আলোচনা ছিলো না। ওটা ছিলো একটা ডিবেট বা তর্কযুদ্ধ। প্রথম তর্কযুদ্ধটা হয় টেলিফোন নিয়ে প্রায় দশ মিনিট। এর পর শেখ হাসিনা বললেন, “কেমন আছেন?” উত্তরে বেগম জিয়া বললেন, “ভালো আছি।” কিন্ত আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি বললেন না, “আপনি কেমন আছেন?” শেখ হাসিনা বললেন, “আগামী আটাশ তারিখ (২৮-১০-১৩) সন্ধ্যায় গণভবনে আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি।” জবাবে বেগম জিয়া বললেন, “আমি যাদের প্রয়োজন মনে করবো তাদেরকে নিয়ে যাবো। তবে সেটা হতে হবে ২৯ তারিখের হরতাল শেষ হবার পর।” এর পর শুরু হয় দুই নেত্রীর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। কাকে কে হারাবেন সেই চেষ্টা। যেটাকে গ্রামের ভাষায় বলে থাকে ‘মাইয়ালোকের দন।’ শেখ হাসিনা একবারও বলেননি যে আসুন সব ভুলে গিয়ে আমরা আলোচনা করে একটা সমাধানে পৌঁছি। বরং খালেদা জিয়া অন্তত তিনবার বলেছেন, “অতীত ছেড়ে দিয়ে আমি বলতে চাই এখন সামনের দিকে কি করে আগাবেন সেটার পথ খুঁজে বের করি। .....সামনের দিকে এগোতে চাই।” তিনি এও বলেন, “১৯৯১ সালে আমরা দু’জন আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম।” মানুষ বলে যে ফোনালাপে বেগম জিয়া, যদিও তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডিগ্রিধারী শেখ হাসিনার থেকে এগিয়ে আছেন। শেখ হাসিনা যদি সত্যি সত্যি আলোচনা চাইতেন, তবে তিনি ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর আলোচনার জন্য রাজি হয়ে যেতেন। তাতে তার অন্তত কূটনীতিক জয় হতো। প্রিয় দেশবাসী, ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর বা ৩০ তারিখ মিটিং করতে রাজি হলে কি অসুবিধেটা হতো? ২৮ তারিখের রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে যেতো? অপরপক্ষে, বেগম জিয়াও তো ২৮ তারিখের পর শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে বলতে পারতেন, “একটা সময় দেন।” কারণ শেখ হাসিনা তো বলছেন, “আলোচনার দাওয়াত এখনো বহাল আছে।” অর্থাৎ দুজনের কেউই আলোচনার জন্য আগ্রহী নন। আবার আলোচনার টেবিলে বসলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাও নয়। মূলত সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় পক্ষেরই আন্তরিকতা থাকতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার আলোচনার মাধ্যামে সমস্যা সমাধান করে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় না। কারণ এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ১.৯ (আমার জরিপে) এ নেমে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে ভেবেই তারা কৌশলের পথ ধরেছে। ক্ষমতায় আসতে হলে ভালো কাজ করে মানুষের মন জয় করে আসতে হবে। কিন্তু তারা সেটা পারছেন না। তাদের কৃতিত্বের মাঝে আছে শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচার। এটা দিয়ে গণমানুষের মন জয় করা সম্ভব হয়নি। উদ্যোগটা ছিলো মহতি কিন্তু বিচারকার্যটা হয়েছে প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া এতোদিনের পুরনো বিষয় নিয়ে মানুষের আকর্ষণ নেই। বরং এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীরা মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। সাঈদীর ফাঁসির রায় শুনে সারা দেশের মানুষ যেভাবে গর্জে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খোদ আওয়ামী লীগের কোনো একটি লোকও তেমনি গর্জে উঠেনি, একমাত্র কাদের সিদ্দিকী ছাড়া। শেখ হাসিনাকে যেভাবে হত্যা করতে চেয়েছিলো এবং সেখানে যে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিলো তারপর তার দলের দেশ অচল করে দেয়ার কথা ছিলো। কই, তারা কেউ তো রাজপথে আসেনি। ভালোবাসা জোর করে আদায় করা যায় না। যখন মানুষ কাউকে ভালবাসে জোর করে তাদের কেউ ফেরাতেও পারে না। সাঈদীকে মানুষ ভালবাসা দেখিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গণহত্যার নায়কদের কেউ কোনো ভালোবাসাই দেখায়নি। তাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের গান সাধারণ মানুষের কাছে তেমন বোধগম্য নয়। যেমন কবি নির্মলেন্দু গুণ একবার এমপি ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমার হাতে একটি পোস্টার দিয়ে বলেছিলেন, “আমার জন্য কাজ করো।” আমি বলেছিলাম, আপনাকে মানুষ চেনে না। মানুষের কাছে আপনার কথা কী বলবো? তিনি বলেছিলেন, “বলবা, মুজিব হত্যার প্রতিবাদকারী।” আমি বলেছিলাম, এ কথাটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সাধারণ মানুষ তার মানে বুঝে না। সেবার নির্মলেন্দু গুণ মাত্র চার ভোট পেয়েছিলেন। তেমনি যুদ্ধাপরাধীর বিচার কথাটি সাধারণ মানুষ তেমন বুঝে না। আওয়ামী লীগও এ কথা বুঝে। তাই জনমতের ভয়ে নির্বাচনকে কৌশলে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করলে সেটা হবে আরো ভয়ঙ্কর। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, ১৯৯১ সনের নির্বাচনে পাস করে বেগম জিয়া খুব ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্ত পরেরবার ছেলের হাতে নাটাইটা ছেড়ে দিয়ে তিনি ডুবেছিলেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনাও অত্যন্ত ভালো কাজ করেছিলেন। জনাব নাসিমের বাড়াবাড়ি না হলে তিনি পরেরবারও ক্ষমতায় আসতেন। এবার তিনি মোটেই ভালো কাজ করেননি। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারি চাপা দেবে কেমন করে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোর গলায় তারেকের কেলেঙ্করির কথা বলতেন। আদালতে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এখন তার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বল বেগম খালেদা জিয়ার কোর্টে। আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনা সরকার ব্যর্থ। তার একটি প্রমাণই যথেষ্ট। সেবার তিনি বিদেশ থেকে ১৮টি ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন, এবার একটিও পাননি। যদি সাজানো নির্বাচন দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যেতে চান সেটা হবে চরম ভুল। দেশ চরম বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে। তাতে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। অপশক্তি অজুহাত পাবে ক্ষমতা দখলের। শেখ হাসিনা যতই বলুন না কেন, “আমরা শাসনতন্ত্র সংশোধন করে নিñিদ্র করে দিয়েছি যাতে কোনো অপশক্তি আসতে না পারে।” এ কথটা নিতান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক। অপশক্তি কখনো শাসনতন্ত্রের পথ ধরে আসে না। অপশক্তি আসে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে। ১৯৭৪ সনেও শাসনতন্ত্রকে আরো বেশি নিñিদ্র করা হয়েছিলো। কিন্ত পেরেছিলেন অপশক্তিকে রোধ করতে?
তাই দেশের ও দেশের জনগণের স্বার্থে, শান্তি এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে উভয় নেত্রীরই উচিত খোলা মন নিয়ে আলোচনায় বসা। শুধু লোক দেখানো আলোচনা নয়, সত্যিকার অর্থেই সঙ্কট সমাধানের স্বার্থে আলোচনা করতে হবে। একানব্বইয়ের মতো সকলে মিলে আলোচনা করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে হবে। সেটা করতে হবে দ্রুত। কারণ সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারেও ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আমার মতে, শুধু এবারের নির্বাচনটা পরিচালনা করার জন্য একটি নির্বাচন পরিচলনা কমিটি/কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচন শেষ হলে নতুন সরকার শপথ নেয়ার সাথে সাথে এই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে চিরদিনের জন্য। এজন্য শাসনতন্ত্রের সংশোধনেরও প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটির সদস্যরা হবেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দুজন অধ্যাপক, যারা কখনো লাল, সাদা, সবুজ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না; দু’জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যারা জজ থেকে পদোন্নতি পেয়ে বিচারপতি হয়েছিলেন; দু’জন অবসরপ্রাপ্ত সচিব যারা চাকরিজীবনে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব বা উপদেষ্টা ছিলেন না এবং সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা যার পদবী মেজর জেনারেলের নিচে নয় এবং যিনি কখনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব বা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেননি। যদি প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রি সভার অন্য সদস্যরা ক্ষমতায় থাকতে চান তা থাকতে পারেন। তবে তারা তাদের দফতরের রুটিন কাজ হিসেবে নথি সহি করতে পারেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা সেটাই মেনে নেবেন। কমিটির সদস্যরা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টার সমপদমর্যাদাসম্পন্ন হবেন। নির্বাচন কমিশন এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করবেন। কমিটি ইচ্ছা করলে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অথবা আওয়ামী লীগ সরকারের পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় দুই-পঞ্চমাংশ মন্ত্রী বিএনপি জোট থেকে সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে দায়িত্বে একজন বিএনপি জোটের সুপারিশকৃত ব্যক্তিকে নিতে হবে। একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আওয়ামী লীগের একজন প্রতিমন্ত্রী থাকতে পারেন। এই মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নির্বাচন শেষে নির্বাচিত সরকার শপথগ্রহণের সাথে সাথে এই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই মন্ত্রিসভার সদস্যগণ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তবে তা তারা পারবেন। কিন্তু তারা নির্বাচনী কাজে সরকারি কোনো যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সেবা পেতে পারবেন।
আমিও এদেশের একজন নাগরিক। দেশের কথা, দেশের জনগণের ভালো মন্দের কথা বলার অধিকার আমারও আছে। তাই আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা চিন্তা করতে পেরেছি, তাই বলেছি। গ্রহণ করা না করা সংশ্লিষ্টজনদের ব্যাপার। তবে আমি আবার বলছি, সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। কাউকে খাটো করে ভাবার উপায় নেই। তাই আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতেই হবে।
গতবছর নবেম্বরের শেষদিকে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নে আমাকে একটি মেসেজ দিয়ে হাসু আপাকে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। আমি চেষ্টা করেও সেটি তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তিনি এ বছর আরো দুদিন আমাকে তাগিদ দিয়েছিলেন মেসেজটি পৌঁছে দিতে। কিন্তু তিনি তো এটা জানেন না যে, আমার মতো চুনোপুঁটি প্রধানমন্ত্রীর ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঠিক দুদিন আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আমি কৌশলে হস্তগত করেছিলাম। কিন্তু আমি সেটি বঙ্গবন্ধুকে দিতে পারিনি। কারণ তার কাছে পৌঁছার ক্ষমতা আমার ছিলো না, যেমন তার কন্যার কাছেও আমি যেতে পারিনি। আমি আমার লেখা ‘আজব দেশের আজব মানুষ’ উপন্যাসটিতে সে বার্তাটির বর্ণনা দিয়েছি। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার দুদিন আগে আমি কিছু আলামত দেখতে পেয়ে মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসারকে ফোনে জানিয়েছিলাম। কিন্ত ঐ ব্যক্তি তাতে গুরুত্ব দেননি। যদি গুরুত্ব দিতো তবে অনেকগুলো মানুষ প্রাণে বেঁচে যেতো, অনেককে সারাজীবন যন্ত্রণা বয়ে চলতে হতো না। ঘটনা ঘটার পর আমি এ নিয়ে আইজি সাহেবকে বেনামীতে বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। মনে হয়, তিনিও তাতে কান দেননি। আমাদের দেশের অবস্থা এমন কেন? প্রধান মন্ত্রী কী আমারও প্রধানমন্ত্রী নন? কেন আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারি না?
পথ চলতে চলতে মাঝে মাঝে দেয়ালে দেয়ালে দেখি অপশক্তির পদছায়া। ভয় হয় আবার কী আমরা হারিয়ে যাবো অন্ধকারের অতলগহ্বরে? যদি আমাদের দুই নেত্রী হুঁশিয়ার না হন তবে সামনে খুব অন্ধকার দিন আসছে। এই বুড়ো বয়সে চাই না আবার অন্ধকারের যুগে ফিরে যেতে। আমি আলো চাই। আলো, আরো আলো।

Tuesday, 3 December 2013

আমাদের সংবিধান

রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার জন্য মানুষকে অজস্র রক্ত দিতে হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলো আজ সেই মানুষগুলোর রক্তের উপর দাড়িয়ে আছে। পৃথিবীর যেখানেই রাজার শাসন ছিল সেখানে প্রতিটি রাজা দাবী করেছেন; তারা ঈশ্বরের প্রতিনিধি তাই জনগণকে শাসন করা তাদের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমেরিকায় কখনো রাজা ছিল না। অন্যদিকে ইউরোপের মানুষগুলো যখন আমেরিকায় বসতি গড়ছে তারাও ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য আমেরিকায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দিকে জোর দেয়। ফলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে শুরু করেন জনগণের ভোটে, ফলে কোন পবিত্র অধিকারের বলে রাষ্ট্র পরিচালনার করার সুযোগ আর থাকল না। একই বিষয় ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রেও।

১৮৪৬ সালের পর থেকে ইংরেজি ভাষায় সেকিউল্যারিজম বলতে অনেক সময় বোঝান হয়ে থাকে জর্জ জ্যাকব হোলিওক-এর মতবাদকে। হোলিওক ছিলেন অজ্ঞেয়বাদী (agnostic) তিনি মনে করতেন বিধাতা থাকতেও পারেন নাও থাকতে পারেন, পরকাল থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। তা নিয়ে তর্ক করা যায়। কিন্তু মাটির পৃথিবীর ও তার বুকে মানুষের প্রাণ যাত্রা প্রত্যক্ষ সত্য তা নিয়ে তর্ক করার কোন অবকাশ নেই। তাই আমাদের সকল কর্মের লক্ষ্য হওয়া উচিত পার্থিব জীবনের কল্যাণ। যদি কেউ পরকাল বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে ভাল কাজ করলে সে তার ফল পাবে। আর যদি পরকাল নাও থাকে তাহলেও ক্ষতি নেই। হোলিওক মনে করতেন-মানুষ যত কারণে অসুখী হয় তার মধ্যে দারিদ্র্য প্রধান। তাই মানুষের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হওয়া উচিত রাষ্ট্র থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়। কেউ যাতে গরীব থাকতে না পারে। তবে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে হোলিওক এর বিশেষ মতবাদকে বুঝি নাহ। আমরা বুঝি; সেখানে সরকারী ধর্ম বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ইহলোক, বেহেস্ত নিয়ে আমরা আলোচনা করব না।

ব্যক্তির ধর্মচর্চার স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে। প্রতিটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়ে থাকে ততটুকুই যতোটুকুতে সমাজ বা ভিন্ন ব্যক্তির অসুবিধা বা সমস্যা না হয়। ১৮৩০ সালের দিকে আমেরিকায় নতুন এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা নিজেদেরকে মরমন বলে(mormon), মরমনরা বলে যে, যেহেতু একমাত্র নবি ইসা ছাড়া অন্য সকল নবী বহু বিবাহ করেছে সেহেতু বহুবিবাহ অন্যায় কিছু নয়। এমন বক্তব্যের ফলে আমেরিকায় নিন্দার ঝড় উঠে এবং আইনগতভাবে এদের নিষিদ্ধের দাবী জানান হয়। পরবর্তীতে মরমনরা নিজেদের বহুবিবাহের বিষয়টি থেকে সরে আসে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় অসংখ্য মামলা হয়। আমেরিকার সংবিধানে লেখা হয়- কোন ব্যক্তিকে চাকুরীর যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ধর্ম সর্ম্পকে প্রশ্ন করা যাবে না। এক মামলাকারী অভিযোগ করেন মেরিল্যান্ড প্রদেশে বিধাতার নামে শপথ নিতে হয়। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয় তাদের কাছে বিষয়টি বিব্রতকর ও এর মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা হয়। যা আমেরিকার সংবিধানের পরিপন্থী। আদালত মামলাকারীর পক্ষে রায় দেয় এবং এই প্রথার অবসান ঘটে। তবে আমেরিকার প্রেসিডন্টকে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ করতে হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান গঠন করা হয় ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। এরপর সংবিধানের অনেক ধারার পরিবর্তন এসেছে, অনেক নতুন ধারাও যুক্তি হয়েছে। লক্ষ্য করতে দেখা যাবে বাংলাদেশের সংবিধান শুধু থেকে ছিল ক্রুটিপূর্ণ ও একে অপরের সাথে সার্ঘষিক। ক্রুটিযুক্ত হওয়ার দোষের নয় কিন্তু সেই ক্রুটিকে স্থায়ী করে বৈধতা দেওয়া অন্যায়। যেমন-সংবিধানে বাংলাদেশের সকল মানুষকে ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল যা ছিল ক্রুটিপূর্ণ। কারণ এই দেশের সবাই বাঙালি নয়। বাঙালি ছাড়া ত্রিশের বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই বাংলাদেশে ছিল। ফলে এই ‘বাঙালি’ জাতির সাথে তাদের কথা না লিখার ফলে তাদের জাতিগত পরিচয় সাংবিধানিকভাবে অস্বীকার করা হল। এরকম চাপিয়ে দেওয়া সংখ্যাগুরুর স্বভাব। সংখ্যাগুরু নিজের প্রভাব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সবসময় ক্ষুদ্র অংশের উপর তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় তা অযৌক্তিক হলেও।

সবাইকে বাঙালি করার মতন একাত্তর যুদ্ধে সবাই আল্লাহ উপর বিশ্বাস স্থাপন করে যুদ্ধ গেছে তা স্পষ্টভাবে আমাদের সংবিধানে লেখা আছে। লক্ষ্য করুণ এখানে সৃষ্টিকর্তা না বলে আল্লাহ উপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা উল্লেখ করা আছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে কোন অবিশ্বাসী কী যুদ্ধে যায় নি? প্রশ্ন আসে; তৎকালীন বৃহৎ অমুসলিম জনগণ কী আল্লাহ উপর বিশ্বাস স্থাপন করে যুদ্ধে গিয়েছিল? হাজার হাজার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কী আল্লাহ উপর বিশ্বাস স্থাপন করে যুদ্ধ করেছিল? সহজ বাক্যে না, তারা যে যার যার সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। আল্লাহ শব্দটিতে আপত্তি থাকত না যদি আল্লাহকে ঈশ্বর কিংবা ভিন্ন নামে ডাকা সম্ভব হতো।
11853914_10206295009067053_356510742_n
গণপ্রজাতন্ত্রী (প্রজা থাকলে তো রাজাও থাকার কথা, শব্দের মাইর প্যাচে তাই তো আসে। যদিও আমেরিকাও যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র লেখা আছে) বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা আছে-
[আমরা অঙ্গিকার করিতেসি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদেরকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুগ্ধ করিয়াছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।]

11855591_10206295009147055_1981636951_n
রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক ভাষাকে বেছে নেয়। তাই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রয়োজন হয়। এরশাদ ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে যুক্ত করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়; যখন কোন স্বৈরাচার কিংবা সামরিক শাসক ক্ষমতা দখল করেছে তখনই সংবিধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ্যের ধর্মকে যুক্ত করে জনগণকে খুশি করার চেষ্টা করেছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেন, এরশাদ যুক্ত করেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। পৃথিবীতে নেপাল একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই নেপাল হিন্দুরাষ্ট্রের তকমাটি সংবিধান থেকে মুছে ফেলে। অনুভূতিপ্রবণ রাষ্ট্র হওয়ায় রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি আমরা মুছে ফেলতে পারি নি।
11846226_10207227136907203_1815929382_n
সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহে লেখা আছে- [সর্বশক্তিমান আল্লহ উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলির ভত্তি!] ধর্ম কেন্দ্রিক গন্ডি থেকেও যদি ভাবতে হয় তাহলে সবার জন্য সর্বশক্তিমান প্রভু কিংবা সৃষ্টিকর্তা শব্দটি ব্যবহার করা কী উচিত ছিল না? আর আস্থা বিশ্বাস স্থাপন না কে কী কিছু করা যাবে না? তা কী আইন বর্হিভূত অপরাধ হবে?
সংবিধানে আরেকটি মজার বিষয় আছে। পৃথিবীতে বেশির ভাগ ইসলামিক রাষ্ট্রে কোন গণতন্ত্র নেই। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে এরা সবসময় পাকিস্তানপন্থী ছিল। শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর তারা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া শেখ মুজিবের আমলে সৌদি আরব বাংলাদেশের মানুষের হজ্ব ভিসা বাতিল করে দেয়। গুটি কয়েক রাষ্ট্রবাদে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আর্ন্তজাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতি উন্নয়ন বিষয়ে লেখা আছে-
[রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সর্ম্পক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন।]
বাস্তবতা যাই হোক না কেন আমাদের সংবিধানে চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সংবিধানে ৩৯ এ চিন্তা , বিবেক ও বাক স্বাধীনতার কথা বলা আছে। সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে।
৩৯।
(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বৈদেশীক রাষ্ট্র সমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক, জনশৃংখলা, শালীনতা ও নৈকিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংগঠনের প্ররোচনা সর্ম্পকে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাবস্বাধীনতার অধিকারের এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সংবিধান কী বলে তা ৪১ নাম্বারে দেখা মিলবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা-
৪১।
(১) আইন শৃংখলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।
(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনের অধিকার রহিয়াছে।
(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।
ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে অবিশ্বাসী কিংবা ধর্মত্যাগীদের নিয়ে কিছু না বলা হলেও কাউকে ধর্মের বিষয়ে জোর করা যাবে না তা স্পষ্ট করে বলা আছে। পাকিস্তানের আদালত ২০০৭ সালে ভিন্নধর্মালম্বী শিক্ষার্থীদের ইসলাম বিষয়ক বই জোর করে পড়ানোর বিরুদ্ধে রায় না দিলেও তা কার্যকর হয় নি। ফলে বর্তমান অমুসলীম শিক্ষার্থীরা ইসলাম ধর্ম পড়তে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র এখনো সেই পর্যায়ে যায় নি। তবে ধর্মীয় বিষয়টি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে থাকা উচিত যার ইচ্ছা সে এই বিষয়টি নিয়ে পড়বে, জোর জবরদস্তি করা যাবে না।

Sunday, 6 October 2013

Happy Blasphemy Day, Happy Birthday ‘Mukto Mona’


By |October 6th, 2013|
I wrote a piece in Bengali on Blasphemy day, 2013.  I could not find time earlier to post this in English blog. Here it is:  
———————–
Today is September 30th, also known as Blasphemy Rights day.  This day is dedicated to those who are systematically being persecuted, harassed, or killed for their simple expression of Freethought (more precisely, for their ‘blasphemous’ views towards religion).
In medieval ages “blasphemy” was equated with sin, as it was considered an insult to a deity or Holy Scripture. But as time progressed, we apparently became more civilized by promoting the idea that any belief should be open to examination and taboo-free. In most progressive parts of today’s world, particularly in Europe and North America, the old blasphemy laws have been overturned. However, few other parts of the world have retained social ideas that are reminiscent of the mediaeval age. Pakistan, Saudi Arabia, Iran and Bangladesh are some prime examples. In Bangladesh, as we already know, several bloggers were recently put behind bars on the sole basis that they were openly atheist (Pls. refer to my write up published in current issue of Free Inquiry Magazine on this topic). In Pakistan (as from the U.S. Commission on International Religious Freedom report), at least 203 incidents of violence in the name of religion have resulted in some 1,800 casualties and more than 700 deaths in just the last 18 months. These Islamic countries, based on their religious legal code known as Sharia, are deeply anti-woman as well. Recently, a 19-year-old gang rape victim (yes, you read right – rape victim, not the rapist) was sentenced to 200 lashes and to six months in jail for the crime of indecency and speaking to the press in Saudi Arabia (read here). In another incident, Raif Badawi, a blogger in Saudi Arabia has been sentenced to seven years in prison and 600 lashes on charges of blasphemy (here). The nonbelievers in these Islamic countries face the most severe treatment at the hands of both mullahs and the state.
Today, we state clearly that considering apostasy to be a criminal offense in state level in fact is an inexcusable offense. If being religious is someone’s right, then being critical to religion is also one’s right.  There is nothing wrong to be critical to any idea or ideology, as CFI aptly put on its Blasphemy day banner – ‘Ideas do not need rights, People do’!
I wished I would write more on this year’s celebration of blasphemy day, but one unexpected email changed the entire theme of my planned write-up. The email arrived from Patuakhali, one of the remote districts in South-western Bangladesh:
“Every human being wants to be happy; but if we don’t know how to find a way to walk the road of happiness then we will just grow up naturally and die someday without getting the taste of real happiness.
Few years ago, I was desperately looking for a way to find the path of happiness. I guess I have found it at last. Now I know the real happiness is reading “Mukto-Mona [Freethinker] blog” every day.  The real feeling is to know the truth and all I have got from you. I’m really thankful to you for showing the right path. I wish your happiness and bright future always”.
However, it was the last paragraph of the email that really touched my heart. It says:
I have a daughter. As a mark of respect to you and your creation – Mukto-Mona blog, I call her ‘Muktomona’ [freethinker is Bengali] as well. She is two years old now. I will try my best to make her real muktomona I look forward to my daughter growing up and one day asking me, among the millions of names, why did I pick and choose her name ‘muktomona’.  That day I would tell her about you and show her your site and explain -‘That’s why’!
 
This was a wonderful gift for me on ‘Blasphemy day’. I founded this ‘blasphemous site’ Mukto-Mona (www.mukto-mona.com) in the year of 2001, with a singular intention: to debate and discuss on controversial, but utterly important issues.  Only with this principle, I thought, can the construction of a progressive, rational and secular society be possible in mainstream Bangladesh and South Asia. I was proud of MM’s growing popularity in the progressive community over the years, but I never imagined that a person from remote Pauakhali would one day inspired one day so much that he would name his little girl ‘Mukto-Mona’.
What a pleasant surprise! I hope just as her name suggests, the little girl will  one day grow up to be a ‘blasphemous’ freethinker.  I hope she maintains an  inquisitive mind throughout her life, and will be a wonderful person and that she will enhance her life with an ethical, scientific, and philosophical outlook.  I wish her all the best.
Happy blasphemy day 2013. We will celebrate the day as ‘Mukto-Mona Day’  from now on.
Avijit Roy
Founding Moderator, Mukto-Mona
Blasphemy Day, 2013
(September 30, 2013)
 
____________
Dr. Avijit Roy is a Bangladeshi-American blogger, published author, and prominent defender of the free thought movement. He is an engineer by profession, but well-known for his writings in his self-founded site, Mukto-Mona—an Internet congregation of freethinkers, rationalists, skeptics, atheists, and humanists of mainly Bengali and South Asian descent. As an advocate of atheism, science, and metaphysical naturalism, he has published seven Bangla books, and many of his articles have been published in magazines and journals. His latest book, Obisshahser Dorshon (The Philosophy of Disbelief), has been critically well-received and is a popular Bengali book on science, skepticism, and rationalism. He writes from Atlanta, Georgia.  He can be reached through twitter (@avijit_roy_MM) and Facebook.

Friday, 4 October 2013

Bangladesh Arrests Gay Couples and Threatens Supporters

Bangladesh Arrests Gay Couples and Threatens Supporters

by Steve Williams

Bangladesh Arrests Gay Couples and Threatens Supporters                    
Two women from the Bangladeshi capital of Dhaka have been arrested for their relationship, a move that demonstrates how the nation’s administration is resisting calls for equality.
Reports say that the couple,  Lucky and Mishti, fell in love while working in a factory in the capital in Dhaka. The local media states that the couple have been living together for at least eight months. Some reports suggest they are “married,” though as Bangladesh criminalizes homosexuality and does not recognize same-sex marriage, this appears to have been a symbolic Hindu wedding and not one with any legal weight.
The couple were recently detained at their rental home after police were “tipped off” as to the couple’s relationship. Reports say that at the time of their arrest, the two were made to submit to “sex tests,” at which time they were deemed to be female — this is because Lucky had apparently presented with a masculine* appearance.
Homosexuality is illegal under the nation’s penal code. Section 377 demands that “Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with imprisonment for life [or hard labor] for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to [a] fine.”
However, the section invoked in the above case is a broader offense with the couple being tried under Section 29o, which concerns itself with “offences affecting the public health, safety, convenience, decency and morals” and demands that “Whoever commits a public nuisance in any case not otherwise punishable by this code, shall be punished with a fine which may extend to two hundred taka.”
This follows a similar case in June of this year where a young lesbian couple, also from Dhaka, were detained and are now threatened with life in prison.
As the Huffington Post notes, Bangladesh is among a handful of nations on the list of U.S. allies who at least in terms of statutes criminalize their LGBT population in much more overt ways than, say, Russia, which of course has been in the press for its anti-gay propaganda law.
Moreover, Bangladesh’s administration recently rejected calls from the United Nations to decriminalize homosexuality, saying that to do so would conflict with “socio-cultural values of the country.” Bangladesh is, per its Constitution, a secular state but the encroachment of the predominant Islamic faith has been marked. Perhaps unsurprisingly then, attitudes to homosexuality in Bangladesh are predominantly negative.
A recent example of this comes in the form of a vocal protest from Bangladeshi Islamic groups against Nobel laureate Muhammad Yunus over comments he made in 2012 against Uganda’s worsening gay rights situation.
Hundreds of Imams in Bangladesh are planning a rally against the anti-poverty campaigner, while organizer Maolana Moniruzzaman Rabbani told the AFP on Monday that “Yunus must apologize for supporting homosexuality or he must be prosecuted for standing against the Quran and Islam.”
Yunus, also hounded by a government tax probe that is thought to be connected not to Yunus’ business affairs but his political affiliations with the government’s opposition, is no longer living in Bangladesh and his current fixed residence is unknown.
What is perhaps most troubling about Bangladesh’s anti-LGBT stance is that its administration is actively enforcing criminal penalties against same-sex couples, resisting calls to change that and actively pursuing those who show LGBT rights advocacy. This creates a dangerous climate of oppression and intolerance to free speech that should worry not just the LGBT population, but all citizens.

Monday, 23 September 2013

Diary'71

In 1971, Senator Edward Kennedy was only 39 years but he was astute enough to realize that a terrible genocide has taken place in erstwhile East Pakistan by the marauding and occupational army of Pakistan. The spate of mass killing had stirred the mind of this liberal senator from America so much so that the senator rushed to Dhaka barely 60 days after Bangladesh got its independence on December 16, 1971. Senator Kennedy wanted to visit the prime killing field, which was the campus of Dhaka University where hundreds of professors, students, and staff members were butchered by Pakistani army alone in the wee hours of March 26, 1971. All told, nearly 3 million people were the victims of wanton killing by the brute occupational army. This bothered Senator Kennedy who came to Bangladesh to bring into fore the Bengali genocide. The senator gave an impromptu speech at the campus showing his anguish over the mass murder inside the campus. This is not all. The senator crisscrossed parts of West Bengal during 1971 to bring attention to the colossal refugee problem when tens and thousands of Bengalis, young and old, moved from erstwhile East Pakistan to neighboring Indian states of West Bengal, Assam, Meghalaya, and Tripura under the threat of annihilation by the brute occupational force of Pakistani military that waged a full-scale genocide and ethnic cleansing..

Today, America is mourning the death of Senator Kennedy as soon as the news of his passing away was flashed in the morning of August 26, 2009. Valiantly, he fought the brain cancer for about a year. He died in his Cape Cod home surrounded by family members in the night of August 25, 2009.

Senator Edward Kennedy, who was popularly known as Ted Kennedy, served nearly 50 years in the US Senate; he was eulogized as ‘Lion of the Senate.’ Some even went as far as calling him the ‘Patriarch of the Senate.’ He left a strong legacy and to his credit authored many legislations those that impacted the entire gamut of American life over the last half a century. He left his marks on legislations covering health care, civil rights, education, immigration reform, etc.

Among senators he was one of the bluest liberal legislators who never shied away from speaking his mind. At a time he was seen as a combative politician who would not give an inch but at other times he was very gentle and kind. In early 2008 he courageously endorsed the candidacy of Barack Obama in the Democratic primaries when political endorsement was difficult to come by. Senator Kennedy and his family members including his niece, Caroline Kennedy, gave their enthusiastic endorsement to Barack Obama, which catapulted the freshman senator from Chicago to become a viable alternative to Senator Hillary Clinton to run for the highest office in the land. What happened next is a history.

President Obama was vacationing in Martha’s Vineyard in Massachusetts when the news of Senator Kennedy’s death filled the air waves on Wednesday (August 26, 2009) morning. In a brief statement to the press, President Obama lauded Kennedy as one of the “most accomplished Americans” in history and a man whose work in Congress helped give millions new opportunities. Obama included himself to be one of the millions who benefited from Kennedy’s legislative work in the Senate.

Senator Ted Kennedy started his public service as a senator from Massachusetts in the early 1960s when President Lyndon B. Johnson was in the White House and he served the nation as a senator continuously until his death. During these times 9 presidents had served the nation.

His pristine public service record was briefly marred by an incidence in 1969 when his car went under water near Chappaquiddick, Massachusetts resulting in the death of a female campaign worker. This incident practically ruined his ambition to run for the White House in 1980 presidential election. Senator Kennedy then devoted all his energies to help legislate key civil rights laws and other bills that had impacted lives of millions of Americans.

Today, I learned via official e-mail that flags at all US government offices all across the nation will be half-staff starting from August 26 through August 30, 2009. I am awed by the proclamation made by President Obama. I have never witnessed such adulation made by any sitting president to a legislator.

With the passing away of Senator Ted Kennedy America lost a giant legislator and Bangladesh lost a dear friend. Senator Kennedy did all he could to thwart President Nixon’s ability to help Pakistan during 1971. If there weren’t a senator like Kennedy, Nixon would have helped General Yahya Khan militarily and Bangladesh’s Liberation War would have prolonged causing loss of more lives. Senator Ted Kennedy’s name should go in the annals of Bangladesh history as an American legislator who gave so much to stop a full-scale genocide perpetrated by Pakistani military. And that should be his legacy from the perspective of Bangladesh and her Liberation War.

Monday, 9 September 2013

৯ সেপ্টেম্বর বাঘাইছড়ি ট্রাজেডি দিবস ১৭ বছরেও খুনি শান্তিবাহিনীর বিচার হয়নি

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের এক-দশমাংশ ভূমি ৫০৯৩ বর্গমাইলজুড়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিনটি জেলা। চেঙ্গী, মাইনী, কাছালং বিধৌত এবং বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের পার্বত্য তিন জেলা। অথচ পাহাড়ের মানুষের মাঝে নেই কোন শান্তি, নেই কোন স্বস্তি। দুর্গম পাহাড়ের প্রতিটি আনাচে-কানাচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাস। কোথাও চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, এলাকার আধিপত্য ও দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতা। উপজাতি-বাঙালি প্রতিটি মানুষই আজ পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। অথচ প্রশাসন কোনই ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কিন্তু, কেন? পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেআইনী অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজি। জেএসএস, ইউপিডিএফ, ছদক, গুন্ডুস, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, সাজেক নারী কল্যাণ সমিতি, ভূমি রক্ষা কমিটি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ইত্যাদি নামে- বেনামে পার্বত্যবাসী জনগণের ওপর চালানো হচ্ছে চাঁদাবাজির স্টিম রোলার। এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই।
বিগত ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, রাঙামাটি জেলার লংগদু থানার শতাধিক কাঠুরিয়াকে আলোচনার কথা বলে নেয়া হয়েছিল বাঘাইছড়ি থানার পাকুয়াখালীর গহীন অরণ্যে। ক্ষুধার্ত, অভুক্ত বাঙালি শ্রমিকরা কাজের আশায় সরল মনে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কথায় বিশ্বাস করেছিল। চাঁদা নির্ধারণের জন্য আলোচনার ফাঁদে ফেলে এভাবে যে শতাধিক কাঠুরিয়াকে হত্যা করা হবেÑ সেই আশঙ্কাটিও ভেবে দেখার সুযোগ ছিল না।
৫ জন করে চোখ বেঁধে গহীন অরণ্যে নিয়ে তাদেরকে বেয়নেট চার্জ করে প্রথমেই গুরুতর আহত করা হয়। এরপর দা/ছুরি দিয়ে হাত-পা কেটে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে পাহাড়ের তলদেশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। এভাবে মোট কতজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তারও কোন সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে হত্যাকা- ঘটে যাবার পরও তৎকালীন সরকার ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন একে ¯্রফে গুজব(!) এবং উপজাতীয়দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র(!) বলেও চালিয়ে দিতে মোটেও দ্বিধা করেনি। কিন্তু স্বজনদের আহাজারি ও কান্নাকাটির পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। নিখোঁজ ও নিহত কাঠুরিয়াদের সন্ধান করতে পরে সেনাবাহিনীকে নামানো হয়। লংগদু ও বাঘাইছড়ির দুর্গম পাহাড় ও গহীন জঙ্গলে ব্যাপক খানা-তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় বাঙালিদের সক্রিয় সহযোগিতায় একে একে লাশের সন্ধান আসতে থাকে। পাহাড়ের গহীন তলদেশ থেকে এবং দুর্গম জঙ্গল থেকে কাটা-ছেঁড়া, ক্ষতবিক্ষত বিকৃত চেহারার লাশগুলো উদ্ধার করে আনা হয় লংগদু উপজেলা পরিষদের মাঠে। সেখানে মুচি ডেকে লাশগুলোর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেলাই করে মানব আকৃতি দেয়া হয় এবং লংগদু মাঠে বিরাট জানাযা করে লাশগুলোকে সমাহিত করা হয়। ১৭ বছর পরও আজো ৩৫টি কবর লংগদু থানা পরিষদ মাঠের একাংশে সাজানো আছে। দেখলে মনে হবে ৩৫ জন বাঙালী ভাই যেন পাশাপাশি শুয়ে আছে। সেখানে অপর পাশে রয়েছে লংগদু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ সরকারের কবরস্থান। লংগদু গুলশাখালীতে ব্রাশফায়ার করে খুনি শান্তিবাহিনী হত্যা করেছিল উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ রশিদ সরকারকে।
বাঘাইছড়ির পাকুয়াখালীর কাঠুরিয়া হত্যাকা- ঘটার পরও সরকারের শীর্ষপর্যায়কে ঘটনাটি জানানো হয় নাই। বরং একে নিয়ে নানারূপ গুজব ও বাঙালিবিদ্বেষী প্রচারও চালানো হয়। ফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে লংগদু হত্যাকা- আদৌ ঘটেছে কি-না(?), তার তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি পাঠানো হয়েছিল।
তোফায়েল-আমু-রাজ্জাক- হাসনাত-দীপঙ্কর তালুকদারসহ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। নৃশংসতা ও বর্বরতা স্বচক্ষে দেখে তারাও বিস্মিত হয়ে যান। মানুষকে এভাবে কেউ হত্যা করতে পারে, এ যেন কল্পনাও করা যায় না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই বর্বর জঘন্য হত্যাকা-ের ঘটনায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নাই। চীন ভ্রমণের প্রাক্কালে ১৯৯৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অশ্রুসজল কণ্ঠে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কাছে বাঘাইছড়ি হত্যাকা-ের তদন্ত ও খুনীদের বিচারের ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু বিচারের বাণী আজও নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। জাতি আজও দীর্ঘ ১৭ বছর পরও খুনীদের বিচার দেখতে পেল না। সরকার একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেসব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও প্রকাশ হয়নি।
বাঘাইছড়ি হত্যাকা-ের পর প্রচার মাধ্যমে তৎকালীন শান্তিবাহিনী এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছিল এবং বলেছিল- তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এই লোমহর্ষক হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। অথচ তার পরেও সরকার খুনী শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বরং ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর খুনী শান্তিবাহিনীর নেতা সন্তু লারমার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংসদীয় কমিটির নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। অতি উৎসাহী কেউ কেউ বলেন একে পার্বত্য শান্তিচুক্তি। অথচ শান্তিচুক্তির ১৬ বছর পরও পাহাড়ে আজও চলছে অবাধে চাঁদাবাজি ও বন্দুকযুদ্ধ। অথচ তারপরেও এর বিরুদ্ধে নেই কোন সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গার জন্য নেই কোন বাস্তবসম্মত অত্যাধুনিক ব্যবস্থা।
দেশী ও বিদেশী চাপের মুখে আজও আটকে আছে পাহাড়ের সার্বিক ভাগ্য। পাহাড়ের মানুষ ভূমি, ভাত ও ভোটের অধিকার নিয়ে ঝুলে আছেন শান্তিচুক্তির বেড়াজালে।
৯ সেপ্টেম্বর এলেই স্মরণ করা হয় সেইসব হতভাগা কাঠুরিয়াদের। কিন্তু খুনীদের বিচারের দায়ভার যেন কেউই আর বহন করতে রাজি নয়। তাহলে কে করবে এই বিচার?

দ্বিতীয় বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় বিপ্লব?

 
সারা দেশের মানুষ সম্ভাব্য সংলাপের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ধৈর্য ধারণ করে আছে। বিরোধী দলও সংলাপের পরিবেশ তৈরি করার প্রয়োজনে বলতে গেলে আন্দোলন স্থগিত করে সাংগঠনিক কাজে সময় কাটাচ্ছে। ঠিক এই সময় হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি করে সচিবদের ডেকে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করে দিলেন। ফলে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। নির্বাচন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি কি আসলেই নির্বাচন চান নাকি বিরোধী দলকে উস্কানি দেয়ার জন্যে কিংবা বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী রূপরেখার বৈশিষ্ট্যগুলো হলো সংবিধান সংশোধন না হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হচ্ছে না। দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এই সময় সংসদও বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ ও এমপিগণও স্বপদে বহাল থাকবেন। দৈব-দুর্বিপাক হলে মেয়াদ শেষের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবে। এটা একটা উদ্ভট পরিকল্পনা। এ ধরনের নির্বাচনের নজীর সমসাময়িককালের ইতিহাসে কোথাও নেই।
মধ্যযুগেও কোন দেশে এই ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী কি সত্যি সত্যি নির্বাচন করার জন্য এই পরিকল্পনা করেছেন নাকি কোন অসাংবিধানিক শক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। একথা দিবালোকের মতো সত্য সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কোন প্রকারেই জয়লাভ করতে পারবে না। বিগত ৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গণনির্যাতন চালিয়েছেন সমসাময়িককালের কোন দেশে এর নজীর নেই। ফলে নির্বাচনে পরাজিত হলে তার দল গণরোষের (ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারের ভাষায়) শিকার হবে।  বস্তুত সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি চান কোন অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করুক। তাহলে তিনি শ্যামকুল দুই দিক রক্ষা করতে পারবেন। নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়ন না করে সারতে পারলেন অপরদিকে তার দল ঝামেলা থেকে রক্ষা পেল। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্রের জন্যই তার জন্ম হয়েছে। গণতন্ত্রই দেশের মানুষের কাম্য। গণতান্ত্রিক শাসনই জনগণের চাহিদা। এই গণতন্ত্রের জন্যই শেখ মুজিব নিজেও সারা জীবন লড়াই করেছেন। বর্তমানে দেশের মানুষের চাহিদাও নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন। বর্তমান সরকার কর্তৃক সৃষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পরিবর্তন চায় মানুষ। পরিবর্তনের জন্য দরকার নির্বাচন। এমন নির্বাচন যে নির্বাচনে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। ২০০৮ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। কোন প্রকার সাজানো বা পাতানো নির্বাচন নয়। চাই একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন যে নির্বাচনে আপামর জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। যেহেতু এই সরকারের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সেহেতু এই সরকারের অধীনে মানুষের মতামত প্রতিফলিত হওয়ার মতো কোন নির্বাচন হতে পারে বাংলাদেশের মানুষ কেন বিশ্বের কোন মানুষ বিশ্বাস করে না।
বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ব্যক্তি গোষ্ঠী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন তথা আপামর জনগণ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই লক্ষ্যে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠেছে। তাই নয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন জরীপে দেখা গেছে, দেশের শতকরা ৯০% ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সেই নির্বাচনে যেন সেনাবাহিনীর তদারকি থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সাথে এটাও একটা দাবি।
এই জনমতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে আমাদের সকল বন্ধুপ্রতীম দেশ। বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে। এই লক্ষ্যে বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসার জন্য তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে অনুরোধ উপরোধ করে চলছে। এজন্য উদ্বিগ্ন জাতিসংঘও। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিনিধি কয়দিন আগে বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে গেছেন। কিন্তু এর ভিতরও সংলাপের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। মাত্র কয়দিন আগে বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে টেলিফোনে আলাপ করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল ঢাকা আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি বিরোধী দলীয় একটি প্রতিনিধি দলকে জাতিসংঘে পাঠাবার জন্যও তিনি অনুরোধ করেছেন। এরপর সরকারি দলের মধ্যে রণে ভঙ্গ দেয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল।
হঠাৎ করে সচিবদের ডেকে এনে সংসদ বহাল রেখে মেয়াদের পূর্বেই নির্বাচনী রূপরেখা প্রকাশ করায় মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। সর্বত্র একটা হতাশার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংবাদপত্রগুলোর দিকে তাকালে হতাশার গভীরতা অনুধাবন করা যায়। সর্বত্র একটা গুমোট ভাব থমথমে অবস্থা। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বাকশাল গঠনের আকস্মিকতার সাথে তুলনা করছেন। শেখ হাসিনার পিতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৮ মে ডিসেম্বর দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। জরুরি অবস্থার ফলে সকল রাজনৈতিক কর্মকা- মিটিং মিছিল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। ৭৫ সালের জানুয়ারিতে ঘোষণা করলেন তিনি সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে তাঞ্জানিয়ার আদলে একদলীয় পদ্ধতি চালু করবেন।
২৫ জানুয়ারি মাত্র ১৩ মিনিটের অধিবেশনে একদলীয় পদ্ধতির আইন পাস করলেন। ২৫ জানুয়ারি একদলীয় পদ্ধতি সংক্রান্ত আইন পাস করার প্রাক্কালে জনাব আবুল মনসুর আহমদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমদ বিরোধী গ্রুপের নেতা জনাব আতাউর রহমান খানের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে, বিরোধী নেতা আতাউর রহমান খান ওয়াক আউট করলে অন্তত ১০০ জন আওয়ামী লীগ এমপি তাকে অনুসরণ করবে। আতাউর রহমান খান ঐ বার্তায় আস্থা স্থাপন করে আশ্বস্ত হলেন যে, একদলীয় পদ্ধতির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ একটা বিরাট প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করবে এবং শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন।
১৩ মিনিটের সংসদ অধিবেশনে একদলীয় বাকশাল বিল উত্থাপনের সাথে সাথে বিরোধী নেতা আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে বিরোধী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন, আব্দুল্লাহ সরকার, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ বিরোধী গ্রুপ বহু প্রতীক্ষিত ওয়াক আউট কার্যকর করে। কিন্তু না, ওয়াক আউটের পর আতাউর রহমান খান পিছন দিকে তাকিয়ে দেখেন মোড় বড়ি খাড়া সেই ৬ জন তার পিছনে দ-ায়মান। যা হোক এদিকে একদলীয় বাকশাল আইন কণ্ঠভোটে পাস হয়ে গেল। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একমাত্র রাজনৈতিক দল গঠিত হয়ে গেল। সংসদের মেয়াদ বিনা নির্বাচনে ৫ বৎসর বৃদ্ধি হয়ে গেল। শেখ মুজিব নিজে হলেন বাকশালের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান কিভাবে নির্বাচিত হবেন কিংবা শেখ মুজিব কত দিন চেয়ারম্যান থাকবেন পরবর্তী চেয়ারম্যান কিভাবে হবেন এর কোন ব্যাখ্যা বাকশাল আইনে ছিল না। বাকশাল আইনে বিধান রাখা হলো সকল সংসদ সদস্য বাকশালে যোগ দিতে হবে অন্যথায় তাদের সদস্য পদ বাতিল বলে গণ্য হবে। দৈনিক ইত্তেফাকসহ সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হলো। রাশিয়ার প্রাভদা বা চীনের পিপলস ডেইলীর আদলে সরকারি নিয়ন্ত্রণে চারটি সংবাদপত্র রাখা হলো। শেখ মুজিব এই পরিবর্তনের নাম দিলেন দ্বিতীয় বিপ্লব। দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি শোষণমুক্ত সমাজ কায়েমের ঘোষণা দিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন সচিবদের ডেকে যেরূপ নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা করলেন  তা বাকশালেরই ভিন্নরূপ। মানুষের হাত পা বেঁধে নির্বাচন। নির্বাচন না হলেও শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন।
এর আগে তার বশংবদ প্রধান বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন তাকে বলা যায় অনাকাক্সিক্ষত রায়। এই রায়ের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক লোক দেখানোর জন্য ১০ জন এ্যামিকাস কিউরী নিয়োগ দিলেও তাদের কারোরই পরামর্শই তিনি শোনেননি। সেই রায়ের নির্দেশ মতই বাপের চতুর্থ সংশোধনীর আদলে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছেন। পিতা করেছেন দ্বিতীয় বিপ্লব। পিতার আদলে তিনি করলেন অঘোষিত তৃতীয় বিপ্লব। নির্বাচন করেন বা না করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে বহাল করে নতুনভাবে নির্দেশনা জারি করবেন। তার নাম দিবেন তৃতীয় বিপ্লব। এই বিপ্লব হবে দ্বিতীয় বিপ্লবেরই ধারাবাহিকতা। পাঠক আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে মুখে ফেনা তুললেও আজও তারা ৪র্থ সংশোধনী বা বাকশালের সমালোচনা করেনি। কিংবা আজও তারা বলেনি যে বাকশাল পদ্ধতি ছিল ভুল। বরং বাকশালের যথার্থতাই প্রচার করে থাকেন। এই প্রেক্ষাপটেই আ’লীগ সরকারের কর্মকা-কে দেখতে হবে। দ্বিতীয় বিপ্লবের অন্য এক শেখ হাসিনার তৃতীয় বিপ্লব আসছে কি না!

Tuesday, 3 September 2013

বিএনপি-জামাত মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পায়না

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের মনের অন্ত:স্থলে কোন দল ঢুকতে পারছেনা। তার মূল কারন হচ্ছে, দলের মানূষগুলো অবৈধ লুটপাটে ব্যস্ত এবং জনগণের সেবা করা তাঁদের মূল লক্ষ্য হলেও তাঁদের অধিকাংশই তা মোটেই করেননা। আর জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে যারা কাজ করেন, যেমন বিভিন্ন শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীসহ আরো এধরনের ব্যক্তিবর্গ, এদের শাস্তির কোন ব্যবস্থা গ্রহনের কোন পদক্ষেপ গ্রহন তো অনেক দুরের বিষয়, এসমস্ত লোকের বিপক্ষে একটি কথাও বলেননা কোন রাজনীতিবিদ। আর এজন্যই মূলত: রাজনীতিবিদরা জনগণের আন্তরিক কোন ভালবাসা পাননা।
বিএনপি-জামাত মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পায়না আরো দু’একটি ভিন্ন কারনে। যেমন, জামাতের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীর অবস্থান এবং তাদের বিচারে সরাসরি বাধাপ্রদান, বিচার-কাযর্ক্রমের বিরুদ্ধে দেশব্যপি জঘন্যতম সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম পরিচালনা করা। আর বিএনপি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে আসলে জামাতের এসমস্ত জঘন্যতম কাযর্ক্রমগুলো বিএনপি কর্তৃক সথমর্নদানের কারনে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য যেসমস্ত আসামীর বিচারকাজ চলমান, তারা আসলেই একাত্তরে এসমস্ত অপরাধ করেছিলেন এবং মানুষ তাদের এসমস্ত অপরাধ সংঘটনের জন্য আজো ঘৃণা করে, তাদের বিচার চায়। এদের অপরাধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তো বটেই, অধিকাংশ মানুষই চান, এদের চরমতম শাস্তি ফাঁসি হোক। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে ২০১৩-র ৫-ই ফেব্রুয়ারী গুটিকয়েক তরুনের শাহবাগে অবস্থান যেমনভাবে বিস্ফোরিত হয়ে গণমানুষের একান্ত প্রানের দাবীতে পরিণত হলো, সেটাই গণমানুষের এবিষয়ক অবস্থান স্পষ্ট করে।
আজকাল অনেকে বলেন, বিএনপিকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জামাতের সাথে তাদেরকে সম্পকর্চ্ছেদ করতে হবে। কথাটা অবশ্যই ঠিক, তবে এই সম্পকর্চ্ছেদটা এমনভাবে করতে হবে যাতে মানুষ তা বিশ্বাস করতে শুরু করে এমনভাবে যে, হাঁ, আসলেই বিএনপি জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করেছে। এটা বিশ্বাসযোগ্য না হলে তাতে বিএনপি-রাজনীতির কোন লাভ হবেনা।
আবার শুধুমাত্র জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করলেই যে বিএনপির রাজনীতির লাভ হবে, তা নয়। মানুষের মনে এই বিশ্বাস তাদের সম্পর্কে আসতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া তারা অব্যহত রাখবে, যাদের যে শাস্তি হয়েছে, তা প্রদান করবে।
এছাড়া ক্ষমতায় গেলে তারা আর দু:শাসন-অনিয়ম-অবিচার করবেনা, এসমস্ত সংস্কৃতি থেকে তারা বের হয়ে আসবে এবং এসমস্ত যারা করবে, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে। মোট কথা ক্ষমতায় গেলে দেশ পরিচালনায় সকল মানুষের মধ্যে স্বস্তির একটা পরিবেশ বিরাজ করবে, সেবিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন তারা।
এই উভয়বিদ বিশ্বাস বিএনপি যদি মানুষের মনের মধ্যে জন্মাতে পারে, তবে সরকারী দল অথবা সরকার যতই দমন-পীড়ন করুক না কেন, তাদের আন্দোলন জমে উঠবে। কারন যতই যুদ্ধাপরাধীর বিচার করুক না কেন, সরকারের দু:শাসন-অনিয়ম-অবিচার দেখতে দেখতে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। মানুষ সবর্ক্ষেত্রে সুশাসনের, ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিরাজমান, এরকম একটি দেশ চায়। ব্যাপক মানুষের মনে উন্নয়ন ততোটা দাগ কাটেনা, যতোটা কাটে অবিচার-অনাচার। অন্যায়-অবিচারের একটি ঘটনাই স্থায়ীভাবে মানুষের মনে গেঁথে যেতে পারে। অথচ এরকম ঘটনা ছাড়া সুশাসনের কোন ঘটনাই দেশে ঘটছেনা। মানুষ আসলে বিরক্ত। তবে বিরক্ত হলেও মানুষ বিএনপি’র উপর আরো বিরক্ত তাদের জামাত-নির্ভরতা, জঙ্গী-লালন, সরকারের কোন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করার কারনে।
পত্রিকা মারফৎ আরো জানা গেল, জামাত ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে। আসলে জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল লোকের সংখ্যা একান্তই অপ্রতুল। এর একমাত্র কারন এদলের সদস্যরা সহনশীল নন। জামাত একটা ক্যাডারভিত্তিক দল এবং এদলে বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি এরা নির্মম। ইসলামী দলগুলির রাজনীতি কেমন হওয়া উচিৎ, সেবিষয়ে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি মনে করি, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে যাতে দেশ চলে, সেটাই হওয়া উচিৎ তাদের লক্ষ্য ও কাযর্ক্রম। কিন্তু এটা করতে হলে তো তাঁদেরকে হতে হবে সহনশীল। দেশে দুর্নীতির সাথে এদের কোন সম্পর্ক নাই, এরা দুর্নীতি করেননা। শুধু যদি তারা সহনশীলতা অজর্ন করতেন, তবে রাজনীতিতে অনেক কিছু অজর্ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত্।
বিদেশী বন্ধুদের সহায়তা এবং বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে এদের অনেক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সম্পদগুলি যদি দরিদ্র মাদ্রাসা-ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষার পেছনে ব্যয় হতো এবং তাদের মধ্যে সহনশীলতার চর্চা হতো, তবে অনেক বড় আর বিশাল সহনশীল এক শক্তি তারা অজর্ন করতে পারতেন। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ডাক্তার হতো, হতো ইঞ্জিনিয়ার-গবেষক-শিক্ষক। দেশের মানুষ এই শক্তিকে তখন শ্রদ্ধা-ভালবাসা আর ভক্তিতে ক্ষমতায় বসাতেন। কিন্তু কোথায় সংগঠনটির সেরকম পরিকল্পনা! বিশেষত: ২০১৩-র পর যে কাযর্ক্রম তারা চালিয়েছে, তাতে মানুষের অবজ্ঞা-ই শুধু পেয়েছে তারা, আর কিছু নয়। এখন তো আবার বিএনপিও তাদেরকে পরিত্যাগ করার কথা চিন্তাভাবনা করছে। আসলে বিএনপি তাদের পরিত্যাগ করুক বা না করুক, এরকম জামাতের দেশের কোন প্রয়োজনীয়তা কোনকালেই ছিলনা, আজো নেই, থাকবেওনা কোনদিন।
জামাতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে সহনশীল হয়ে মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষিত করে দেশের মানুষের মনে ভালবাসার স্থায়ী জায়গা করে নেবে, না-কি গণমানুষের হৃদয় থেকে স্থায়ীভাবে ছিটকে সরে যাবে যোজন যোজন দুরে। আর বিএনপিরও আসলে কোন উপায় নাই রাজনীতিতে টিকে থাকার যদি তারা মানুষের মনে এরকম বিশ্বাস অজর্ন করাতে ব্যর্থ হয় যে, তারা জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করেছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তারা দেশে আক্ষরিক অর্থেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এবং এদেশকে একটা সুশাসিত দেশ হিসেবে মানুষকে তারা উপহার দেবে।

Thursday, 29 August 2013

Bangladesh newspaper urges repeal of anti-gay law

Bangladesh newspaper urges repeal of anti-gay law

Dhaka TribuneA newspaper in Bangladesh has announced its opposition to the country’s harsh anti-gay law.
The Dhaka Tribune, which was launched in April, today published an editorial that urged “Decriminalising same-sex relations.”
Under the laws of Bangladesh, same-sex relations are punishable by up to a life sentence.
The opinion piece ran under a secondary headline arguing that “Everyone has the right to live his or her life without fear, and nothing is gained by making people a target for persecution.” The editorial stated:
Same-sex relationships are outlawed under Section 377 of the Bangladesh Criminal Code.
Fear of persecution forces LGBT (lesbian, gay, bisexual and transgender) people to hide their sexuality. More importantly, this law reinforces a societal attitude that marginalises and stigmatises those who are attracted to others of the same sex, and is unnecessarily punitive.
We understand that in a conservative and traditional country, such as Bangladesh, many may have deep-seated religious or other objections to homosexuality. We do not seek to legislate tolerance or approval of homosexuality. People are entitled to their beliefs and their moral principles.
However, we do believe that even most people, who object to homosexuality, do not want to see people put in jail for it, do not want the state to waste its resources treating it as a crime, and do not want to create an environment that allows for persecution and immiseration of homosexuals.
We believe that the well-meaning citizenry of Bangladesh, whatever their feelings about homosexuality, would agree that everyone has the right to live his or her life without fear, and that nothing is gained by making people a target for persecution.
Decriminalisation of homosexual acts between consenting adults would be a good first step to ensuring the security of homosexuals from those who prey on the vulnerable, and surely this is something we can all agree is desirable.
Online comments on the editorial included a Muslim saying, “I suggest you start writing editorials for some Western newspaper. These are ideas simply going to divide the nation at a time when we are already divided in national issues. … I am deeply offended by this proposal.”
Another said, “The moment any step to decriminalize homosexuality is taken, you’ll see massive demonstrations against such move.”
One supporter chimed in, “I’m glad the Dhaka tribune is taking up the issue. At the very least it will raise awareness. I wish some of the Bangla dailies would be as bold.”
Last month, a Bangladeshi lesbian couple faced the possibility of life imprisonment for ‘marrying’ in secret.  On the basis of Section 377 of the Bangladesh Criminal Code, a 16-year-old Hindu and a 21-year-old Muslim were arrested in Dhaka on  July 23 because of their relationship.

Friday, 23 August 2013

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্য সঙ্কটের অশনি সঙ্কেত


পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষ হলো। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। আবার আমাদের সমাজেও বিভিন্ন শ্রেণী বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের বাস। এসব মানুষের জীবনযাত্রা এক নয়। গ্রামের মানুষগুলো যারা গরিব অসহায় তাদের পুরো বছরই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনেক দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় প্রতি বছরই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গ্রামের মানুষগুলো পবিত্র রমজান এ একটি মাস নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন ও রোজা রেখেছে। আমরা মুসলমানরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি- সে কথা শুরুতেই বলেছি। কিন্তু একইভাবে সারা বছরতো বটেই; রমজান মাসেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমরা দ্রব্যমূল্য বাড়াই অধিক মুনাফা লাভের আশায়।
  
এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যারা বিভিন্ন কৌশল, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এবারের রমজানেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রমজানের মধ্যে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের মজুদ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু কোনো নজর রেখে লাভ হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। পবিত্র রমজানে সাধারণত চিনি, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা বুট, পেঁয়াজ ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা থাকে বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, এক চিনি ছাড়াও অন্য সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে, আমরা এমন এক দেশে বাস করছি, যেখানে চিনির চেয়ে গুড়ের দাম বেশি। ইদানিং আবার লক্ষ্যণীয় যে, লবণের দামও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। হয়তো এমন এক সময় আসবে যে, চিনির চেয়ে লবণের দামও বেড়ে যাবে। তখন অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। লবণের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার পক্ষে সরকারের কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। যে লবণের দাম দু-তিন মাস আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তারতম্য হিসাবে ছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকা, সে লবণের দাম এখন প্রতি কেজি ৩০ টাকা। এতে করে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষরাই নয়, মধ্য আয়ের মানুষগুলোও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একের পর এক অজুহাত দেখিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের সরকারের সেদিকে কোনোই নজর নেই। মাঝে মাঝে হুঙ্কার ছাড়ে, দাম বেশি নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসলে এগুলো লোক দেখানো মাত্র, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

 শুধু নিত্যপণ্যেই নয়; দাম বেড়েছে মাছ, মাংস ও সবজির। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো মাছে ভাতে বাঙালি। তখন গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল। সময়ের ব্যবধানে ও ক্রমাগত জনসংখ্যাধিক্যের কারণে সেই গোলা আর নেই, সঙ্গে সঙ্গে পুকুর ভরা মাছও অনেক কমে গেছে। রমজানে মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বড় বড় শহরে বিশেষ করে সিটিগুলোতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তেমন সুফল পাওয়া যায় না। সরকারের এক হিসাবে দেখা যায়, গত রমজানের চেয়ে এবারে কয়েকটি পণ্যের দাম বেশি। এ পণ্যসামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আটা, তেল, পামওয়েল, মসুর ডাল, রসুন, লবণ ইত্যাদি। তবে এ বছরে ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। সরবরাহ যথেষ্ট নয়। ইলিশকে বলা হয় মাছের রাজা। এক সময়ে হাটে-বাজারে প্রচুর ইলিশ আমদানি হতো। দামও কম ছিল, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। কিন্তু কোথায় কী হয়ে গেল, সে ইলিশের আমদানি পর্যাপ্ত নয়, তেমনি দামও চড়া। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই, পবিত্র রমজানের শেষের দিকে ছোট ছেলে বায়না ধরে বসলো, ইলিশ মাছ খাবে। সে বলে, আব্বা অনেকদিন হলো ইলিশ খাওয়া হয়নি, ইলিশ খাব। ছেলের বায়না পূরণ করতে দুপচাঁচিয়া বাজারে গিয়ে ইলিশের দাম শুনে মাথায় হাত। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম এক হাজার টাকা। আর এক কেজির নিচে ৮০০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত। দাম শুনে আমি হতবাক। এক কেজি মাছ কিনতে হিসাব করে দেখলাম, দুই মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, ধানের বাজার নেই। কিন্তু রুপালী ইলিশের বাজার ঠিকই রয়েছে। তবুও কষ্ট করে একজন পিতা হিসেবে ছেলের বায়না পূরণ করতে এক কেজি মাছ কিনলাম। এক দোকানি বলল, বর্তমানে ইলিশের আমদানি কম। কিন্তু ইলিশের আমদানিতো কম হওয়ার কথা নয়। সরকার তো পুরো রমজান মাসে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করেছে। সরকারি হিসাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে আনুমানিক তিন লাখ ৪০ হাজার টন। আর গত মে মাস পর্যন্ত ইলিশ মাছ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টন। এ হিসাবে দেশে প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টনের বেশি ইলিশ থাকার কথা। সরকারি হিসাবে ইলিশ উৎপাদনের এ চিত্রে এতো ইলিশ কোথায় যায়? সরকারের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, রপ্তানি বন্ধ হলে কি হবে, অন্যান্য মাছের সঙ্গে ইলিশ পাচার হচ্ছে দেদারছে। ফলে আমদানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে দামও বেড়ে যায়। শুধু যে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে তা নয়, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্য ছাড়া বিদ্যুৎ, বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতের খরচ বেড়েছে।

 যা হোক, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে খাদ্য সঙ্কটের অশনি সঙ্কেত। এ দুইয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে এ দেশের জনগণ। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও বলেছে, জুলাই মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য ও চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা আবারও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিরূপ আবহাওয়া। এ অস্বাভাবিক বা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের এক অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির কারণে জুলাই মাসে সারাবিশ্বে খাদ্যের দাম বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবার প্রচুর খরা, ব্রাজিলে অসময়ে বৃষ্টি। ফলে ভুট্টো, গম, চিনি উৎপাদন কম হওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। অপরদিকে, ভারতে দেরিতে বৃষ্টিপাত, অস্ট্রেলিয়ায় খরার ফলে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র আমেরিকা খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে। সেই আমেরিকায় এখন প্রচ- খরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬২ শতাংশ এলাকায় এবার অনাবৃষ্টির কারণে প্রচ- খরায় এই সমস্ত অঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বেকায়দায় পড়তে হবে সারাবিশ্বের মানুষকে। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা ভালো নয়, সেখানেও খরা। ২০০৭-০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার খরার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল। সেবার আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবারের অবস্থাও একই। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী 'দি ইকোনমিস্টে' খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা সবচেয়ে দুর্বল। এমনকি উগান্ডা, কেনিয়া, নেপাল ও মিয়ানমারের চেয়েও নাজুক। অর্থাৎ খাদ্যের জন্য বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এক ধরনের নির্ভরতা রয়েছে।

 সুতরাং, সারাবিশ্বের খাদ্য সঙ্কটের ঢেউ বাংলাদেশে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যেহেতু গোটা বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে, যার ফলে খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে করে তার প্রভাব পড়বে নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর। তাদের জীবনযাত্রাকে গভীর সঙ্কটে ফেলে দেবে। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটে যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমায় ফেলে দিয়েছিল, তার অধিকাংশই দরিদ্র দেশের জনগোষ্ঠী।
গোটা বিশ্বের যে খাদ্য সঙ্কটের অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে, তার কতগুলো মৌলিক কারণ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বের খাদ্য সঙ্কটের ঢেউ আঘাত হানে। আবার অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে বসতবাড়ি নির্মাণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায়। আবার পৃথিবীতে সব দেশের খাদ্য উৎপাদন এক ধরনের নয়। মাটি, জলবায়ু ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য ভাত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়ছে না। এ জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। এমতাবস্থায় সরকারকে পর্যাপ্ত চাল, গম আমদানি করে মজুদ রেখে আপদকালীন সময়ে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া কৃষির ওপর গুরুত্ব, অধিক উৎপাদনে কোনো বিকল্প নেই। শুধু ধান নয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পেতে ধানের পাশাপাশি গম, আলু, সরিষা, ভুট্টো, শাকসবজি বেশি উৎপাদন করে পুষ্টির অভাব পূরণ করতে হবে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে খাদ্য সঙ্কট মানে ধান, চাল, গমের অভাব নয়, এর সঙ্গে জড়িত পুষ্টিগুণ শাক-সবজি।
যাহোক, প্রতিবছর আমরা দেখেছি রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এ বছরও পবিত্র রমজান মাসে তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা রমজান মাসেও দাম বাড়িয়ে দেয়। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, ছোলা, বুট, মসুর ডালের দাম বেড়ে যায়। সরকারও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক রমজান মাসেই মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছে সাধারণ ও অসহায় মানুষ। অপরদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের যে অশনি সঙ্কেত দেখা দিয়েছে, তাতে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গভীর সঙ্কটে পতিত হবে বলে খাদ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

Wednesday, 7 August 2013

ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চয়তা

প্রতারকচক্র সারাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেবে এমনটি হতে পারে না। মানুষের ভেজালমুক্ত যাবতীয় খাবার, ব্যবহার্য জিনিসপত্রের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারেরই অন্যতম দায়িত্ব।

বাংলাদেশের মানুষের একটি প্রধান সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্যে ভেজালসহ নানা রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। ভেজালকারীদের হাতে বন্দি দেশের মানুষ এবং নিরুপায়। খাদ্য, খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রতে যেমন ভেজালের আধিক্য প্রকট, তেমনি মৌসুমি ফল ও নানারকম খাদ্যে ফরমালিনসহ রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণের ফলে মানুষের সুস্থতার সঙ্গে জীবন ধারণের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা ভেজাল বা ফরমালিনযুক্ত খাদ্য শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে পত্রপত্রিকায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এর সরেজমিন প্রতিবেদন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। পত্রিকার কাজ পত্রিকা করে যাচ্ছে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কাজও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া করে যাচ্ছে যথার্থই। কিন্তু যাদের কাজ এসবের ওপর নজরদারি রাখা, প্রতিরোধ করা, তারা কতটুকু কী করছেন সেটা বাজারের ভুক্তভোগী সবাই কমবেশি জানেন। এ অবস্থা মানুষের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তায় যে কত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

 সম্প্রতি জানা গেল, ভেজাল লবণে সয়লাব হয়ে গেছে সারাদেশ। এসব লবণ আমদানি করে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে প্যাকেটজাত করে লবণ বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর স্বাভাবিকভাবেই এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৮০০ কোটি টাকার লবণ শিল্প প্রকল্প। প্রতারকের এরকম দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। যায়যায়দিনের এক প্রতিবেদনের মারফত জানা যায়, কনফিডেন্স সল্টের নামে লবণ বিক্রি করছে এক শ্রেণীর প্রতারক। তারা অল্প দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সাপ্লাই দেয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানিগুলো। নিম্নমানের লবণ ব্র্যান্ডিং কোম্পানির নামে বাজার থাকায় সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাদের। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে বিনিয়োগ নিয়ে হুমকির মুখে পড়া শুধু নয়, লবণ শিল্পের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, ভেজাল লবণ বাজারে সয়লাব হলে তার দামও অনেক কম হয়। সাধারণ ক্রেতারা কম দামের কারণে তাই ক্রয় করে। আর এতে দেশের জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখে পড়ে; তেমনিভাবে সত্যিকারের উন্নত লবণ প্রস্তুতকারীরা এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত লবণ আমদানির সুযোগ প্রদান করে। এ সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়। লবণের প্রতি কেজির দাম পড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা। আমদানিকারকরা লবণ আমদানি করে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। মূলত সেই সময় যেসব প্রতিষ্ঠান লবণ কিনে নিয়েছে তারাই এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের মোড়ক নকল করে নিম্নমানের লবণ বাজারজাত করছে। এ ধরনের খবরে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। কারণ সরকার আমদানির সুযোগ দিল আর তাই সম্বল করে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী প্রতারকচক্র তাকে ব্যবহার করে ভেজাল লবণ বাজারে সয়লাব করে দিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কি করছিল? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন উদ্বেগ প্রকাশ করছে অথচ আমদানির সুযোগ দেয়ার সময় পর্যবেক্ষণ করতে হতো কারা আমদানি করছে এবং এর পরে এসব লবণ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


এখন সার্বিক পরিস্থিতি সাপেক্ষে আমরা মনে করি, সরকারের এসব বিষয়ে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। কেননা প্রতারকচক্র সারাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেবে এমনটি হতে পারে না। মানুষের ভেজালমুক্ত যাবতীয় খাবার, ব্যবহার্য জিনিসপত্রের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারেরই অন্যতম দায়িত্ব।

Monday, 29 July 2013

Blogger Asif sent to jail again

Asif Mohiuddin. Star file photo
Asif Mohiuddin. Star file photo
A Dhaka court on Monday cancelled bail of blogger Asif Mohiuddin and sent him to jail in a case filed against him for making “derogatory comments about Islam and Prophet Muhammad (pbuh)” in social media.
Judge (in-charge) Md Akharuzzaman of the Court of Metropolitan Sessions Judge passed the order as his one-month bail period expired on Sunday.
The judge said Asif was granted bail on June 27 on health ground. “But there was no new ground to extend his bail,” the judge said after hearing a petition filed by Asif seeking extension of his bail period.
On June 27, the court fixed August 25 for hearing on charge framing against Asif and three others bloggers — Subrata Adhikari Shuvo, Russel Parvez and Mashiur Rahman Biplob — in the case.

Wednesday, 10 July 2013

সাধু সাবধান

 
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে গত পাঁচ বছরে সীমান্তে ২১৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩২৩ জন। আর গত ছয় মাসে (২০ জুন পর্যন্ত) নিহত হয়েছেন ১৪ জন, আহত হয়েছেন ৩১ জন। গত ২৬ জুন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এসব তথ্য জানান। মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। বিজিবি মহাপরিচালক দাবি করেন, গরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। তিনি জানান, যে কারণেই হত্যাকা- হোক না কেন প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত সীমান্তের ঘটনায় বিএসএফ-এর কাছে ৪৫টি প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সম্পর্কের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা কমে এসেছে। সীমান্তের পরিস্থিতি অনেক শান্ত ও ভালো। সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিবির মহাপরিচালক তার অবস্থান থেকে বক্তব্য প্রদান করেছেন। বিজিবির মহাপরিচালক তার পদে থেকে যে রকম বক্তব্য দেয়া সঠিক মনে করেছেন, সে রকম বক্তব্যই প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা বিশেষ কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি এবং ভারতীয় বিএসএফ-এর আচরণ প্রসঙ্গে প্রায়  প্রতিদিনই সংবাদপত্রে বিভিন্ন রিপোর্ট মুদ্রিত হয়ে আসছে। ঐসব রিপোর্টে বিএসএফ-এর গুলীতে হত্যাকা-ের ঘটনা ছাড়াও বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন, বাংলাদেশী নাগরিকদের গরু-ছাগল-মৎস্য ও ফসল লুটে নেয়ার ঘটনা মুদ্রিত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এবং প্রতিবাদ করা হলে তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা দেখছি। কিন্তু ঐসব কথা এবং আশ্বাস বাণীর বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। বিজিবি মহাপরিচালকও বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত বিএসএফের কাছে ৪৫টি প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব কড়া প্রতিবাদ ও প্রতিবাদপত্রকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো গুরুত্ব দেয় কি? গুরুত্ব দেয় না বলেই বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও বিএসএফ হত্যাকা-, জুলুম, নির্যাতন ও আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। বিজিবিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কোনো সমীহ করছে না। বাংলাদেশী জনগণের জানমালের প্রতিও কোনো সম্মান প্রদর্শন করছে না বিএসএফ। আমরা জানি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এমনকি মাথা উঁচু করে প্রতিবাদটুকুও করতে পারছে না। একটি স্বাধীন দেশের সরকারের এমন নতজানু ও অক্ষম ভূমিকা দেখতে নারাজ দেশের জনগণ। এসব দেখে পর্যবেক্ষক মহলে প্রশ্ন জাগেÑ বাংলাদেশ তো ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র, কিন্তু শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের তুলনায় বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী এতো নিষ্ঠুর কেন? এর কারণ কি পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা? সামরিক বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতিকে ‘ভীতির ভারসাম্য’ বলে অভিহিত করে থাকেন। অর্থাৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যদি অস্ত্র ও শক্তির একটা ভারসাম্য থাকে কিংবা পরস্পরকে ভয় করার মতো উপাদান থাকে, তাহলে সহজে কেউ কাউকে ঘাটাতে চায় না। অনেক সময় ছোট রাষ্ট্রও আশপাশের বড় রাষ্ট্রগুলোকে অস্ত্র ও সমরশক্তির দাপটে তটস্থ করে রাখে। যেমন-ইসরাইল। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় একটি ছোট রাষ্ট্র। অস্ত্র ও সমরশক্তিতেও দেশটি দুর্বল। এ কারণে শান্তির নীতি গ্রহণ করেও দেশটি শান্তিতে থাকতে পারছে না। আবেদন-নিবেদন এবং প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হত্যা ও আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশী নাগরিকরা। তাই এখন জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, আমরা কি এভাবেই দিনের পর দিন মার খেয়ে যেতে থাকবো, নাকি আমাদেরও করণীয় কিছু আছে? পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় শান্তির বুলি আওড়ালেই শান্তি হাতে এসে ধরা দেয় না। শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশে বসবাস করতে চাইলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সমৃদ্ধ অর্থনীতি, সুশাসন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং জাতীয় ঐক্য-সংহতির চেতনা বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য গুণাবলী। এইসব গুণাবলীর ব্যাপারে কোনো দেশের সরকার এবং রাজনীতিবিদরা অবহেলা করলে সে দেশের প্রগতি, নাগরিকদের উন্নত জীবনযাপনের আকাক্সক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে না। বাংলাদেশে এখন যেন আমরা সেই চিত্রই লক্ষ্য করছি। সরকার ও রাজনীতিবিদরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও ব্লেম গেমের যে সংস্কৃতি চালু রেখেছেন তাতে প্রতিদিনই তাদের মান-মর্যাদার পারদ অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে নাগরিকদের মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সমীহ করে চলার তেমন কোনো কারণ নেই। ফলে সহসাই যে বিএসএফ-এর আগ্রাসন বন্ধ হয়ে যাবে তেমনটি ভাবার কোনো যুক্তি নেই। এমন অবস্থায় জনগণ সময়ের কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারে। সেই ভূমিকার নাম গণজাগরণ। একমাত্র গণজাগরণের চাবুকই আমাদের রাজনীতিবিদদের এবং  সমাজপতিদের শঠতা ও প্রতারণার রাজনীতি থেকে বিরত রাখতে পারে। আর গণজাগরণ প্রসঙ্গে চলে আসে যুবসমাজের কথা।
আমরা জানি, যে কোনো দেশের তরুণ-যুবকরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে জাতির যোগ্যতাও। সংখ্যার দিক থেকেও আমাদের দেশের তরুণ ও যুবকরা গরিষ্ঠ। কিন্তু ট্রাজেডি হলো, দীর্ঘদিন ধরেই এই তরুণ ও যুবকদের ভুল পথে পরিচালিত করে আসছে দেশের রাজনৈতিক অভিভাবকরা। সরকারগুলোর দায়িত্ব ছিল দেশ ও জাতির স্বার্থে তরুণ ও যুবকদের বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- কাক্সিক্ষত দায়িত্ব পালনের বদলে তারা তরুণ ও যুবকদের বিনষ্টের পথ আরো ব্যাপক করেছে। এ কারণেই হয়তো ‘ফোরাম অব ইয়ং প্রোফেশনালস’ নামক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মন্তব্য করেছেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যারা আছে তারা হলো ‘গু-ালীগ ও টেন্ডারলীগ’। তারা গু-ামি ও টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত তরুণরা দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তন নিয়ে কাজ না করে টেন্ডারবাজি ও গু-ামি করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন হবে না। আমরা জানি, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক সরকারি দল কিংবা বিরোধী দলের রাজনীতি করেন না। সরকারি দলের ছাত্র-যুবকদের ভ্রষ্ট কর্মকা- লক্ষ্য করেই আক্ষেপের সুরে তিনি তার মন্তব্য করেছেন। ব্যারিস্টার রফিক কিংবা দেশের প্রবীণ কোনো নাগরিকই তরুণ ও যুবকদের নেতিবাচক বিশেষণে চিহ্নিত করতে চান না। বরং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি ও মর্যাদার উন্নয়নে তারা তরুণ ও যুবশক্তির মেধা ও কর্মতৎপরতার উপর নির্ভর করতে চান। কিন্তু দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি আজ তাদের মধ্যে হতাশার মাত্রাই বৃদ্ধি করছে। হতাশার এমন  বাতাবরণের জন্য দেশের রাজনীতিবিদরাই দায়ী এবং বর্তমান সময়ে যারা সরকারে আছেন তারা বিশেষভাবে দায়ী। কারণ তারা দেশের সংবিধান ও শপথের কাছে দায়বদ্ধ।
জনগণের ভোটে যখন রাজনীতিবিদরা সরকার গঠন করেন, তখন তাদের উপলব্ধিতে যে বিষয়গুলো থাকার প্রয়োজন, তা থাকে কি না সে ব্যাপারে এখন জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকার গঠন মানে তো ক্ষমতার দ-গ্রহণ করা নয়, বরং গণআকাক্সক্ষা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ। দায়িত্বের এই বিষয়টা উপলব্ধি করলে কোনো সরকার তথা সরকারের মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিরা উদ্ধত হতে পারেন না, বরং দায়িত্বের চাপে তাদের বিন¤্র হওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের পর পলিট ব্যুরোর এক সদস্যের একটি মন্তব্য স্মরণ করা যায়। তিনি তখন বলেছিলেন, নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের বদলে আমরা পলিটব্যুরোর সদস্যরা কর্তৃত্বের ছড়ি ঘুরিয়েছিলাম, এ কারণেই আমাদের পতন হয়েছে। পতনের এই তত্ত্বটা সবার জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে। জানি না আমাদের সরকার ও রাজনীতিবিদরা এই তত্ত্ব থেকে কতটা উপকৃত হতে সমর্থ হবেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। এই সব নির্বাচনে স্থানীয় বিষয়গুলোর চাইতেও অধিক গুরুত্ব পেয়েছে জাতীয় ইস্যুগুলো। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এখন সরকারের কর্তব্য আস্থা হারানোর কারণগুলো খতিয়ে দেখা। কিন্তু এর পরিবর্তে সরকার যদি যে কোনোভাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের রণকৌশল গ্রহণ করে ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চায়, তাহলে সেটা হবে বড় ভুল। এমন ভুল তাদের আরো বড় পরাজয়ের দিকেই ধাবিত করবে। আসলে ভুলের সংশোধনই হলো ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়। আর ভুলের ওপর দাঁড়িয়ে কৌশল ও দাপটের রণনীতি হলো চূড়ান্ত ধ্বংসের পথ। ইতিহাসের এই সত্য সবার জন্যই প্রযোজ্য। সরকার কিংবা বিরোধী দল কেউই ইতিহাসের অমোঘ এই রায়ের বাইরে থাকতে পারে না। জনগণ দেশের রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে। সরকারের দাম্ভিকতা ও খেয়ালিপনায় তারা সংক্ষুব্ধ। সময়ের আহ্বানে তারা সাড়া দিতে শুরু করেছে। জনগণের এই জাগরণ সামনের দিনগুলোতে হয়তো মহাজাগরণে পরিণত হবে। যার যা প্রাপ্য তা বুঝিয়ে দিতে জনগণ ভুল করবে না। অতএব সময় থাকতেই সাধু সাবধান।

Friday, 24 May 2013

আতঙ্কিত জনপদে বসবাস

আতঙ্কিত জনপদে বসবাস
বর্তমানে আতঙ্কিত এক জনপদের নাম বাংলাদেশ। সর্বত্র, খুন, গুম, হত্যা, অপহরণ, লাশ এ যেন এক নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য। লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। ঘরে ঘরে কান্নার রোনাজারি আর আহাজরি। প্রতিনিয়ত চেনা পরিচিত মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কারো লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কারো কোন সন্ধান-ই পাওয়া যাচ্ছে না। সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, সাবেক ছাত্র নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন এক বছর পেরিয়ে গেছে। আজো তার পরিবার তার সন্ধানে চেয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারকে আশ্বস্ত করার পর দেশবাসী ভেবেছিল ইলিয়াস আলীকে হয়তো সরকার ফিরিয়ে দিবে কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রায় দেড় বছর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র ওয়ালিউল্লাহ ও মোকাদ্দেসকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে পঞ্চাশ জন যাত্রীর সামনেই র‌্যাব সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় আজ পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ হয়েছেন দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা  হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি প্রভাষক নজরুল ইসলাম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নিখোঁজ আছেন। গত ১১ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১২টার সময় ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ১৫-২০ জনের একদল সাদা পোশাকধারী লোক তাকে ধস্তাধস্তি করে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা জয়পুরহাট সদর থানা থেকে প্রায় ৩শ’ গজ দূরে মেইন রোডের সাহেবপাড়া মহল্লার বাসার কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙ্গে ৩ তলার ওপরে উঠে যায়। তার স্ত্রী সালমা সুলতানা জানান, ‘ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়ে ইতোমধ্যেই জয়পুরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি।’ পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বলেন, দেশে চলছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে দমন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীর বিশেষ বাহিনীর পরিচয়ে বাসা-বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে খুন ও গুম করা হচ্ছে। একই অবস্থা রাজশাহীর শিবির নেতা মাসুমের।  শিবির নেতা মাসুমকে গত ৪ এপ্রিল রাত আড়াইটায়  র‌্যাব সদস্যরা ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে যায় বলে শিবিরের অভিযোগ। কিন্তু এই লেখাটি লেখা পর্যন্ত ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এভাবে প্রতিনিয়ত নাম না জানা অসংখ্য বণি আদম হারিয়ে যাচ্ছে। কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে, কাউকে নেয়া হচ্ছে কোন পরিচয় দেয়া ছাড়াই। প্রতিনিয়ত এখানে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে ।  ২১ এপ্রিল দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৩ মাসে ২৬৭ ‘বেওয়ারিশ’ লাশ- আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার সড়কের পাশ থেকে গত ৮ এপ্রিল বিচ্ছিন্ন দুটি পা উদ্ধার করে পুলিশ। চারদিন পর উত্তরার আবদুল্লাপুরে একটি পরিবহন কাউন্টারের সামনে পড়ে থাকা লাগেজে দুই পা কাটা এক তরুণীর লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, উদ্ধার হওয়া পা দুটি ওই তরুণীর। গতকাল শনিবার পর্যন্ত পা ও হতভাগ্য তরুণীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। এভাবেই প্রতিদিন ঢাকা ও এর আশপাশের সড়কের পাশে, নদী, খাল-বিল, ডোবানালা থেকে অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যাচ্ছে।..... এক্ষেত্রে  পুলিশী অবহেলারও প্রমাণ মিলেছে। এসব কারণে অজ্ঞাতপরিচয় খুনিরা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ময়নাতদন্তের পর পরিচয়হীন এসব লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। রাজধানী ও এর আশপাশে বছরে কত অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয় তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পুলিশের কাছে নেই। দীর্ঘদিন ধরেই বেওয়ারিশ লাশ দাফন করছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী গত বছর বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৪৭। চলতি বছরের তিন মাসেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭-তে। ....ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী নদী এবং বিভিন্ন ডোবানালা, মহাসড়ক-সড়কের পাশ থেকে পরিচয়হীন এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলোর কোনওটি থাকে গুলীবিদ্ধ, কোনওটি ধারালো অস্ত্রে জখমি, হাত-পা বাঁধা, আবার  কোনওটি মস্তকবিহীন। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা হত্যার পর গুমের কৌশল হিসেবে লাশ এসব স্থানে ফেলে যায়। অনেক লাশই পচে-গলে বিকৃত হয়ে যায়। ফলে পরিচয় শনাক্ত করা যায় না।’ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য, সরকারদলীয় বাহিনীর সন্ত্রাস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম আজ নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মানুষের জীবনের যেন আজ কোন নিরাপত্তা নেই। ভয়ঙ্কর খুনি সন্ত্রাসীদের দলীয় বিবেচনায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ফাঁসির আসামীকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ বিবেচনায় জেলখানা থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে নিরপরাধ মানুষদের গ্রেফতার করে হামলার মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্যাম্পাসে রাজপথে প্রতিনিয়ত দিবালোকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া, হামলা, খুন, দখল দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে বারবার। কিন্তু এ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠনটির ক্যাডাররা সবসময় থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়, হামলা করে, খুন করে তাদেরই কাউকে কাউকে আবার দেখা যায় পুলিশের সাথে সখ্যতায়। যার ছবি বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। একদিকে সরকারদলীয় সন্ত্রাস অপরদিকে সরকারি বাহিনীর মানুষ খুনের নেশায় বাংলাদেশকে যেন এক খুনের জনপদে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ যেন আজ এক মৃত্যু উপত্যকা। যেখানে জীবন সম্পদের কোন নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তা নেই ঘরে, বাইরে, রাস্তায় কোথাও। মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায় নিরাপত্তার জন্য। কিন্ত আজ নিজের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই জনগণ তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। গ্রেফতারের পরে গুম, খুন ছাড়াও কোন কারণ ব্যতীত-ই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কোন সময়, যে কোন স্থানে নির্বিচার গুলি করতে এখন আর দ্বিধা করে না। বিরোধী দলের মিছিল সমাবেশে এখন তারা গুলী করতে যেন একটু আনন্দ-ই পায়। দেশবাসী এ দৃশ্য দেখছে বেশ কিছুদিন যাবত। ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে- পৃথিবীর কোন স্বাধীন দেশের জনগণের ওপর এমন গুলী, এমন গণহত্যার কোন নজির নেই। এ গণহত্যার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আজ গণহত্যা চলছে। সে দিনের সে গণহত্যার রেশ এখনো কাটেনি। এখনো নিহতের পরিবারে কান্না আর শোকের আহাজারিত। পুলিশের গুলী এবং হামলায় অসংখ্য মানুষ এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপরদিকে আহত-নিহত পরিবারগুলোতে প্রতিনিয়ত চলছে পুলিশের অভিযান। এ গণহত্যার পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন ‘ আমি স্তম্ভিত। আমি ক্ষুব্ধ। আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাবার কোনো ভাষা আমার নেই। আমাদের এই দেশে আবার চলছে পৈশাচিক গণহত্যা। পাখিরমতো গুলী করে মানুষ হত্যা চলছে। গণহত্যার পৈশাচিক তা-বে মেতে ওঠেছে সরকার। ফ্যাসিবাদের নগ্ন থাবায় রক্ত ঝরছে, প্রাণ যাচ্ছে দেশের শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র নাগরিকদের। বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর এমনকি কুলবধূরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না এই নির্মম হত্যাকা- থেকে। মনে হচ্ছে, কোনো ভিনদেশী হানাদাররা যেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেছে। কোনো একটি সরকার নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর এমনভাবে গণহত্যা চালাতে পারে তা আমাদের কল্পনারও অতীত। এধরনের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই আমরা ১৯৭১ সালে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই স্বাধীন দেশে আবার অন্য কোনো অজুহাতে কখনো কোনো সরকার গণহত্যার পথ বেছে নেবে তা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমি এই মুহূর্তে এই গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। আমি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। .... ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসর হিসেবে চিত্রিত করে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে মুসল্লী, খতীব ও ইমামদের পর্যন্ত হেনস্তা করেছে। প্রতিবাদ মিছিল থেকে কিশোর-তরুণদের ধরে নিয়ে তাদের গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজ গৃহে গৃহবধূকে পর্যন্ত গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। ... সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের ধরে ধরে জবাই করার আওয়াজ তুলছে। বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুরে উৎসাহিত করছে। এসব তৎপরতার মাধ্যমে আমাদের জনজীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় অর্থনীতিকে যারা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার তাদের বাধা দেয়ার পরিবর্তে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা তাদের কাছে গিয়ে এসব কর্মকা-ে সমর্থন যোগাচ্ছে। ...ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টির সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই বহন করতে হবে।’
২১ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বড় বাধা, গণগ্রেফতার বিচার বহির্ভূত হত্যা ও পুলিশের গুলীতে মৃত্যু: এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট বি.বি.সি. প্রকাশ করে তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গণগ্রেফতার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- ও পুলিশের গুলীতে মৃত্যু। সরকার দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও ঐ রিপোর্টে দাবি করা হয়।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করে রিমান্ডে নির্যাতনকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে রিপোর্টটি। গত বছর ৭২ ব্যক্তি এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্সের কথা বললেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যাকা- অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালে ৭০ জনের বেশি মানুষকে বিচার ছাড়া হত্যা করা হয়েছে। ৪০টি হত্যাকা-ের জন্য র‌্যাবকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। এসব তথ্যের সূত্র হিসেবে স্থানীয় মিডিয়াকে দেখানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বরাত দিয়ে বলা হয়, রাজনৈতিক সংঘর্ষে মারা গেছেন ১৬৯ জন। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিৎ দাসের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বাকস্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, সাংবাদিক নির্যাতন বৃদ্ধি ও সংবাদ-মিডিয়ায় সেন্সরশিপও বাধ্য হচ্ছে। সহিংসতা, সংঘাত ও অব্যাহত দুর্নীতিকে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক ক্ষেত্রে মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ২০১২ সালে ১০৫টি সমাবেশ সরকার ভ-ুল করে দেয় বলে রিপোর্টে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে সন্দেহের ভিত্তিতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- ও গুমের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর যোগসাজশের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ সত্ত্বেও তা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে কেরি বলেন, এই প্রতিবেদন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে, সার্বজনীন মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিটি সরকার দায়বদ্ধ।’ একই ধরনের একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে ১৯টি মানবাধিকার সংগঠনের সম্মিলিত ফোরাম হিউম্যান রাইটস ফোরাম, যা আগমী ২৯ এপ্রিল জেনেভায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পেশ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার রিপোর্ট আসেনি, প্রকৃত অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। কারণ স্থানীয় মিডিয়ার দু’একটি বাদ দিলে প্রায় সবগুলোই সরকারদলীয় সমর্থক এবং তাদের সংবাদে সরকারের ও সরকারি দলের প্রতি একটি প্রকাশ্য অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। যে সংবাদ একেবারে প্রকাশ করলে নয় তা-ই শুধু প্রকাশ করে। এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, গত ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যে গণহত্যা পরিচালিত হয় তাকে সরকার সমর্থক সব মিডিয়া বিরোধী দলের সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলীতে প্রায় দুইশত লোক মারা গেল, প্রায় দশ হাজার লোক আহত হলো আর সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলো বলেছে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা বিপরীত পক্ষে ফটিকছড়িতে সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দুইশত মোটরসাইকেল নিয়ে মাদরাসা, মসজিদ এবং গ্রামবাসীর উপর হামলা করতে গেলে গ্রামের সাধারণ জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। এতে জনতার গণধোলাইয়ে তিনজন নিহত হয়। তাকে সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলো বারবার বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন রংয়ে, বিভিন্ন ঢংয়ে প্রচার করছে। আমি এ নিহতের ঘটনাকে সমর্থন করছি না। তবে একটি বিষয় বুঝতে হবে- কেন গ্রামের সাধারণ জনগণ লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে? এর কারণ, জনগণ সরকারের জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুনে অতিষ্ঠ। নির্যাতিত জনতা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে মাত্র। সরকার তাদের জুলুমের মাত্রা না কমালে ভবিষ্যতে হয়তো আরো ভয়াবহ হতে পারে, যা থেকে সরকারকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
স্বাধীন-সার্বভৌম এ জনপদের মানুষ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার, সুশাসন, গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন এবং সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের জন্য বারবার লড়াই করেছে। দুশ’ বছরের বৃটিশের গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করতে বারবার আন্দোলন ও বিদ্রোহ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতার মন থেকে আন্দোলনের চিন্তা দূরীভূত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, মীর নিসার আলী তিতুমীরসহ অনেক নেতার নেতৃত্বে এ জনপদে স্বাধীনতার লড়াই হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের সঙ্গী-সাথীসহ  জীবন দিয়েছেন কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলন, জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি। তাদের দেখানো পথেই জনতার তীব্র প্রতিরোধ এবং আন্দোলনের মুখে ইংরেজরা বিদায় নেয়, জনতা দুশ’ বছরের ইংরেজদের গোলামী থেকে মুক্তি পায়।  এ পথ ধরেই আসে ৫২’র ভাষা  আন্দোলন এবং  ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ। যদিও আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা মানে ’৭১-এর বাইরে কিছু নেই। এ ইতিহাস বোঝানোর, শেখানোর, পড়ানোর, বলানোর এবং এ চেতনার কথা বলে স্বকীয়তা এবং আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তরুণদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে অতি আধুনিকতার নামে ধর্মনিরপেক্ষ তথা ধর্মহীন হওয়া। বাম-পতিত কমিউনিস্ট যারা এখন বর্তমান আওয়ামী সরকারের কাঁধে সওয়ার হয়ে তরুণ প্রজন্মকে আত্ম পরিচয়হীন এক জাতিতে পরিণত করার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে। একদিকে আত্মপরিচয়হীন, চেতনাহীন একটি জাতি তৈরির চেষ্টা চলছে, অপরদিকে প্রতিবাদী তরুণদের হত্যা করা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে জীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করার পর অথবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাবার পর মানুষগুলোকে গায়েব করে ফেলা হচ্ছে। সরকার হয়তো ভাবছে এভাবেই প্রতিরোধের ভাষাকে স্তব্ধ করে দেয়া যাবে, মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী- কোন অত্যাচারী শাসকই অত্যাচার চালিয়ে নিজের ক্ষমতার মসনদ স্থায়ী করতে পারেনি। হিটলার চেয়েছিল সমগ্র পৃথিবী জয় করতেত। কিন্ত পরিণতিতে তাকে পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল। ইংরেজরা অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের এ দেশ ছেড়ে যেতে হয়েছিল। ইহাহিয়া এবং ভুট্টোকে জনতার দাবির সামনে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। মিসরের ত্রিশ বছরের শাসক হোসনী মোবারককে এখন কারাগারে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ সরকারের দুর্দিনের বন্ধু বলে পরিচয় দেয়া সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ সাহেব। এখানেও হয়তো সরকার ভাবতে পারে কোন আন্দোলন এবং প্রতিবাদই করতে দেবো না, রাস্তায় নামতে দেবো না। সরকার বিরোধী কোন সংবাদপত্র রাখবো না। যেমন এক অভিনব কায়দায় এখন আমার দেশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু জনতার প্রতিবাদের ভাষা মাঝে মাঝে এমন ভয়ানক হয় কোন প্রতিরোধ দিয়ে তা আর ঠেকিয়ে রাখা যায় না।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter