সিলেটে একজন বললেন, ‘আমি যদি বড় কিছু হতাম, তাহলে জাফর ইকবালকে কোর্ট পয়েন্টে ধরে এনে চাবুক মারতাম।’ বরগুনার একজনের নির্দেশে একটি সালিসে এক গৃহবধূর মাথায় বিষ্ঠা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। বরগুনারই আরেকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন। কক্সবাজারের একজনের হাতে এ পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১৯ জন মার খেয়েছেন। নবাবগঞ্জের একজন এক সরকারি চিকিৎসককে ক্ষমতা কী জিনিস শিখিয়ে দিয়েছেন। ময়মনসিংহে একজনের নির্দেশে এক কলেজশিক্ষককে দিগম্বর করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছিল, এই সেদিন তাঁরই নির্দেশে এক শিশুকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এই ‘একজন’রা আমাদের মহান জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্য। তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি। তাঁরা আইনপ্রণেতা। তাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক।
আমাদের জাতীয় সংসদে সদস্য আছেন ৩৫০ জন। এই ‘একজন’রা হাতে গোনা কয়েকজন। তাঁদের কারণে রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাঁদের কর্মকাণ্ড সাংসদদের জন্য আচরণবিধি তৈরির বিষয়টিকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অধ্যায়ে বলেছিল, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা হবে এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ হবে। একটি সর্বসম্মত আচরণবিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল সুশাসনকে। সেখানে আরও একধাপ এগিয়ে, আরও স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, সংসদের ভেতরে ও বাইরে সাংসদদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ বিধিবিধান করা হবে।
অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন এই দল উপলব্ধি করেছে সাংসদদের আচরণ আইনি বিধিবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।এই উদ্দেশ্যে নবম সংসদে ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি সরকারি দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন ২০১০’ শিরোনামে একটি বিলও এনেছিলেন, যার মৃত্যু ওই সংসদেই ঘটেছে। এখন ওই বিল বা ওই রকম একটি বিল পাস করার যথার্থতা আরও বেড়েছে। নয়তো ওই ‘একজন’রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবেন।
সাবের চৌধুরীর আনা বিলটিতে সাংসদদের নৈতিক অবস্থান, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও আয়-রোজগারের তথ্য, উপহার নেওয়া, সরকারি সম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া ছিল। এই বিষয়গুলো দেখার জন্য একটি নৈতিকতা কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। সেই কমিটি দোষী সাংসদদের শাস্তির সুপারিশ করতে পারত। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পাস করার সুপারিশও করেছিল।
আমাদের জাতীয় সংসদে সদস্য আছেন ৩৫০ জন। এই ‘একজন’রা হাতে গোনা কয়েকজন। তাঁদের কারণে রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাঁদের কর্মকাণ্ড সাংসদদের জন্য আচরণবিধি তৈরির বিষয়টিকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অধ্যায়ে বলেছিল, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা হবে এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ হবে। একটি সর্বসম্মত আচরণবিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল সুশাসনকে। সেখানে আরও একধাপ এগিয়ে, আরও স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, সংসদের ভেতরে ও বাইরে সাংসদদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ বিধিবিধান করা হবে।
অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন এই দল উপলব্ধি করেছে সাংসদদের আচরণ আইনি বিধিবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।এই উদ্দেশ্যে নবম সংসদে ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি সরকারি দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন ২০১০’ শিরোনামে একটি বিলও এনেছিলেন, যার মৃত্যু ওই সংসদেই ঘটেছে। এখন ওই বিল বা ওই রকম একটি বিল পাস করার যথার্থতা আরও বেড়েছে। নয়তো ওই ‘একজন’রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবেন।
সাবের চৌধুরীর আনা বিলটিতে সাংসদদের নৈতিক অবস্থান, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও আয়-রোজগারের তথ্য, উপহার নেওয়া, সরকারি সম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া ছিল। এই বিষয়গুলো দেখার জন্য একটি নৈতিকতা কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। সেই কমিটি দোষী সাংসদদের শাস্তির সুপারিশ করতে পারত। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পাস করার সুপারিশও করেছিল।
কথায় কথায় চড়-থাপ্পড় মারা যেন সাংসদদের কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এটা বন্ধ করতেই আচরণবিধি প্রয়োজন
বিলটিতে বলা ছিল, সংসদের ভেতরে সদস্যরা কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ীই চলবেন। তাঁরা আইন প্রণয়ন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। তাঁরা নিজের বা অন্যের স্বার্থে অবৈধ ও অসৎ পথে যাবেন না। নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদ ও সম্পদের উৎস-সম্পর্কিত তথ্য সংসদের প্রথম অধিবেশনের মধ্যেই প্রকাশ করবেন এবং প্রতিবছর তা নবায়ন করবেন। নৈতিকতা কমিটি যাচাই-বাছাই করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরতে পারবেন না। সরকারি-বেসরকারি খাতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি বা অন্য কোনো সুবিধা পেতে কোনো সুপারিশ করবেন না। সরকারি ক্রয়-বিক্রয়, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সরকারি নীতিনির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করবেন না। স্থানীয় সরকারগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবেন। সদস্যরা ১০ হাজার টাকার বেশি দামের কোনো উপহার নেবেন না। আর তা যদি নিয়েও থাকেন, সেটা নৈতিকতা কমিটিকে অবহিত করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ওই উপঢৌকন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবেন। তাঁরা পরমতসহিষ্ণু হবেন। ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। কোনো সদস্য এই আইন লঙ্ঘন করলে নৈতিকতা কমিটি তাদের বিবেচনা অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
সংসদের ভেতরে সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কার্যপ্রণালি বিধি থাকলেও সংসদের বাইরে তাঁদের আচরণ কিরূপ হবে, তা যেহেতু বলা নেই, তাই ওই আইন করার যৌক্তিকতা থেকেই যায়। বিলটি পাসের পক্ষেও স্থায়ী কমিটি বলেছিল, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সাংসদদের অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং দেশের উন্নয়নে সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা থাকলে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বাড়বে।
নবম সংসদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সদস্যদের অনেকেই আপত্তি করে বলেছিলেন আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যপ্রণালি বিধিই যথেষ্ট। এ ধরনের আইনের প্রয়োজন নেই। অথচ ওই সংসদেই সরকার ও বিরোধীদলীয় নারী সদস্যরা অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। একরকম বাধ্য হয়ে তখনকার তরুণ সাংসদ বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, সংসদে প্রতি মিনিটে ব্যয় হচ্ছে জনগণের ঘামে ঝরা ৩০ হাজার টাকা। তাই যাঁরা এসব অসংসদীয় ও অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিটি শব্দের জন্য ৩০ হাজার টাকা বেতন থেকে কেটে রাখা হোক। অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারকারীদের এক দিনের জন্য হলেও সংসদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
যেহেতু সাংসদেরা সংসদের বাইরেও আইনগতভাবেই কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করেন, তাঁদের জন্য সাংবিধানিকভাবেও কিছু বিশেষ অধিকার দেওয়া আছে। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৬৩ থেকে ১৭৬ ধারায় সাংসদদের জন্য বিশেষ অধিকারের কথা বিবৃত রয়েছে। এসবের বাইরে সাংসদেরা শুল্কমুক্ত গাড়ি পাচ্ছেন, সরকারি প্লট বরাদ্দে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। সোনার নৌকা বা ধানের শীষ উপহার নিয়ে আলোচিত হচ্ছেন। আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ঘটিয়েই চলেছেন। টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী নবম সংসদে আটটি কমিটিতে ১৯ জন সাংসদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল। দশম সংসদ তিনটি কমিটিতে চারজন সদস্যের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সদস্যরা কমিটিকে নিজেদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
এর সঙ্গে কথায় কথায় চড়-থাপ্পড় মারা যেন সাংসদদের কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এটা বন্ধ করতেই আচরণবিধি প্রয়োজন। ব্রিটেন, ভারত কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকান পার্লামেন্টে সাংসদদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। এসব দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সাংসদদের সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, কোথাও কোথাও বেতনও কাটা হয়।
বাংলাদেশে ২৫ বছর পূর্ণ যেকোনো নাগরিক সাংসদ হতে পারেন এবং ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। সংসদে আইন পাসের সময় শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেই কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখেন না, তাঁরা স্থায়ী কমিটিতে বসে আইনের উদ্দেশে আনা বিলগুলোর খুঁটিনাটি বিশ্লেষণও করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহির জন্য কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের তলব করে নানা ব্যাখ্যা চান। এ জন্য শুধু রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই যথেষ্ট নয়, একাডেমিক জ্ঞানও দরকার। সংসদে দেওয়া তথ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সাংসদ হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তাই তাঁদের জন্য আচরণবিধির পাশাপাশি কর্মশালারও আয়োজন করা যেতে পারে।
সংসদের ভেতরে সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কার্যপ্রণালি বিধি থাকলেও সংসদের বাইরে তাঁদের আচরণ কিরূপ হবে, তা যেহেতু বলা নেই, তাই ওই আইন করার যৌক্তিকতা থেকেই যায়। বিলটি পাসের পক্ষেও স্থায়ী কমিটি বলেছিল, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সাংসদদের অবস্থান মর্যাদাপূর্ণ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং দেশের উন্নয়নে সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। সাংসদদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা থাকলে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বাড়বে।
নবম সংসদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সদস্যদের অনেকেই আপত্তি করে বলেছিলেন আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যপ্রণালি বিধিই যথেষ্ট। এ ধরনের আইনের প্রয়োজন নেই। অথচ ওই সংসদেই সরকার ও বিরোধীদলীয় নারী সদস্যরা অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। একরকম বাধ্য হয়ে তখনকার তরুণ সাংসদ বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, সংসদে প্রতি মিনিটে ব্যয় হচ্ছে জনগণের ঘামে ঝরা ৩০ হাজার টাকা। তাই যাঁরা এসব অসংসদীয় ও অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিটি শব্দের জন্য ৩০ হাজার টাকা বেতন থেকে কেটে রাখা হোক। অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারকারীদের এক দিনের জন্য হলেও সংসদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
যেহেতু সাংসদেরা সংসদের বাইরেও আইনগতভাবেই কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করেন, তাঁদের জন্য সাংবিধানিকভাবেও কিছু বিশেষ অধিকার দেওয়া আছে। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৬৩ থেকে ১৭৬ ধারায় সাংসদদের জন্য বিশেষ অধিকারের কথা বিবৃত রয়েছে। এসবের বাইরে সাংসদেরা শুল্কমুক্ত গাড়ি পাচ্ছেন, সরকারি প্লট বরাদ্দে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। সোনার নৌকা বা ধানের শীষ উপহার নিয়ে আলোচিত হচ্ছেন। আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ঘটিয়েই চলেছেন। টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী নবম সংসদে আটটি কমিটিতে ১৯ জন সাংসদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল। দশম সংসদ তিনটি কমিটিতে চারজন সদস্যের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সদস্যরা কমিটিকে নিজেদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
এর সঙ্গে কথায় কথায় চড়-থাপ্পড় মারা যেন সাংসদদের কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এটা বন্ধ করতেই আচরণবিধি প্রয়োজন। ব্রিটেন, ভারত কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকান পার্লামেন্টে সাংসদদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। এসব দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সাংসদদের সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, কোথাও কোথাও বেতনও কাটা হয়।
বাংলাদেশে ২৫ বছর পূর্ণ যেকোনো নাগরিক সাংসদ হতে পারেন এবং ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। সংসদে আইন পাসের সময় শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেই কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখেন না, তাঁরা স্থায়ী কমিটিতে বসে আইনের উদ্দেশে আনা বিলগুলোর খুঁটিনাটি বিশ্লেষণও করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহির জন্য কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের তলব করে নানা ব্যাখ্যা চান। এ জন্য শুধু রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই যথেষ্ট নয়, একাডেমিক জ্ঞানও দরকার। সংসদে দেওয়া তথ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সাংসদ হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তাই তাঁদের জন্য আচরণবিধির পাশাপাশি কর্মশালারও আয়োজন করা যেতে পারে।
No comments:
Write comments