Flickr

Wednesday, 19 August 2015

এক অভূতপূর্ব আক্রমণের সম্মুখীন বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা

Posted by   on

বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা এক অভূতপূর্ব আক্রমণের সম্মুখীন। একদিকে চাপাতিধারী উগ্রপন্থী, অন্যদিকে অপরাধের গন্ধ খুঁজে বেড়ানো সরকার। উভয়ের ফাঁকে বাক স্বাধীনতা যেন জিম্মি। ধর্ম-নিরপেক্ষতা প্রচারের কারণে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হাতে চার ব্লগার এ বছর খুন হয়েছেন। ধর্ম-নিরপেক্ষতাকে উগ্রপন্থীরা ‘ইসলাম-বিরোধী’ হিসেবে বিবেচনা করে। এ মাসের শুরুর দিকে ব্লগার নীলয় নীল হত্যাকা-ের পর আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আনসার আল ইসলাম নামে একটি উগ্রপন্থী দল এর দায় নিয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতেও এমন হামলা আরও ঘটবে। পুলিশ নীলয় নীল ও অন্যান্য নিহত ব্লগারের ওপর হুমকির বিষয়টি জানতো। কিন্তু তাদের সুরক্ষা দিতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।
একটি ন্যায়পরায়ণ সরকার দ্রুত এ হত্যাকা-ের নিন্দা জানাতো। একই সঙ্গে আক্রমণকারীদের ধরার চেষ্টা করতো। কিন্তু তার পরিবর্তে পুলিশ সবার আগে ব্লগারদের প্রতি আত্ম-নিষেধাজ্ঞা (সেলফ-সেন্সরশিপ) আরোপের আহ্বান জানালো। পুলিশের প্রধান পরিদর্শক একেএম শহিদুল হক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা একটি অপরাধ। নীলয় নীল হত্যাকাণ্ডের তিন সন্দেহভাজনকে আটক করতে পুলিশের ১ সপ্তাহেরও বেশি লেগেছে। অথচ অভিযুক্ত দায়ীদের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ জানতো। পুলিশ প্রধানের বক্তব্য ছিল মর্মপীড়ক, কিন্তু বিস্ময়কর নয়। কারণ বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমানহারে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
এ সপ্তাহেই ফেসবুকে এক মন্ত্রী ও আরেক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের দায়ে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে আটক করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সরকারী কৌঁসুলিরা বলেছেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করে মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন প্রবীর শিকদার।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি আদালত আইটি শিক্ষক রুহুল আমিন খন্দকারকে তার অনুপস্থিতিতে তিন বছরের কারাদ- দিয়েছে। একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকারের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় রাজনীতিকদের দায়ী করে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে কীভাবে এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে পেরেছেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি ২০১১ সালে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এটিই তার অপরাধ। এ মন্তব্যের কারণে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারকরা তার দোষ খুঁজে পেয়েছেন।
দুই সপ্তাহ আগে ২টি প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও অন্যান্য নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ওই ২ মানবাধিকার সংগঠন। বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, যেসব কর্মকা- পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন করে, তা মানহানির পর্যায়ে পড়ে। একে নাশকতামূলক হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের উচিত পন্থা পরিবর্তন করা, আন্তর্জাতিক মানদ- গ্রহণ করা, সাংবিধানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। যত দ্রুত সম্ভব এসব করা উচিত। কেননা, যতদিন ধরে কর্তৃপক্ষ বাক-স্বাধীনতার ওপর দমনপীড়ন অব্যাহত রাখবে, ততদিন নিজেদের প্রাণ হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন সোচ্চার মানুষরা।লেখিকা: মীনাক্ষী গাঙ্গুলি প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter