Flickr

Tuesday, 6 July 2010

গণতন্ত্র, আমরা বা তৃতীয় বিশ্ব

Posted by   on

গণতন্ত্র বিভিন্ন দেশে ও সমাজে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শে চলমান। গণতন্ত্রের খাঁটি আদর্শ বুঝাতে আমরা সততই আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি সবাই তুলে ধরি। সেই উক্তিই যেনো গণতন্ত্রের বিকাশ,পরিচ্ছর্যা আর উন্নয়ন-বর্ধনশীলতার মাপকাঠি। সত্যিইতো, গণতন্ত্র মানুষের জন্য,মানুষের দ্বারা,মানুষের উপর। কিন্তু এই মানুষ বা জনগোষ্ঠী কারা ? আফ্রিকার আদিম মানুষের কাছে কি এই উক্তি গ্রহণযোগ্য ? অবশ্যই না। কেননা, আধুনিক এই সংজ্ঞা তাদের উপরই প্রযোজ্য, যারা মন আর মননশীলতায় আধুনিক।

 আমরা বা তৃতীয় বিশ্ব, ব্রিটেন এবং আমেরিকার গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় বলে মনে করি। আর তা অনুসরণে আমাদের শ্রম,মেধা আর অর্থ ব্যয় করে অসারতা ছাড়া আমাদের ঝুড়িতে গণতন্ত্রের একটি দানাও সংগ্রহ করতে পারিনি। কিন্তু কেন পারিনা, এর কারণ খুঁজে দেখার দায়ভার এড়িয়ে চলি। একটি জনগোষ্ঠী আর রাষ্ট্র একই মুদ্রার দুই পিঠ এবং সরকার এর পরিচালক। কিন্তু সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায় উভয়ের। যে সমাজে দায়বদ্ধতা উপেক্ষিত, সেই সমাজের উন্নয়ন কোনমতেই সম্ভব নয়।

 আমাদের সমাজে সবাই শিক্ষিত নয় মানি। কিন্তু বিট্রেন-আমেরিকার সব নাগরিক কি উচ্চ শিক্ষিত ? সে সব দেশেও স্বল্প-শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। তবুও তাদের গণতন্ত্র আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে পাকা আসন গেঁড়ে সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণটা কি ? কারণ- কর্মসংস্থান। যে সমাজে কর্মসংস্থান নেই, সেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা সুদূর পরাহত। তাই গণতন্ত্র বা রাজতন্ত্রই বলুন এর প্রথম পাঠ, কর্মসংস্থান।

 উন্নত বিশ্ব তাই নানান চিন্তা-গবেষণা করে সাধারণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমনভাবে বেঁধে দিয়েছে যে, কাজ ছাড়া উন্নত জীবনধারণ অসম্ভব। আর এই কর্মের পেছনে জুড়ে দেয় নানান ট্যাক্স-কর ইত্যাদি। এই ব্যবস্থায় একদিকে বেকারত্ব লাঘব করে, অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণের টাকায় ফান্ড সমৃদ্ধ করে সরকার জনসেবায় ব্রতী হয়। সুতরাং সাধারণ মৌলিক জন চাহিদা মেটাতে সরকারের তেমন হিমশিম খেতে হচ্ছেনা। আর এই ব্যবস্থায় একজন নাগরিক নিয়মিত কাজ না করলে তার জীবনের চাকার গতিময়তা হ্রাস পাবে বিধায় কাজে ফাঁকি দেয়ার চিন্তা মাথায় আনতে পারেনা।

 এতে দেখা যায় কাজে শ্রেণী বৈষম্য উপেক্ষিত এবং সকল নাগরিক সম মর্যাদায় রাষ্ট্র কর্তৃক সমাদৃত। তাই সকলেই সকলের কাজের প্রতি যত্নবান এবং অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কারণে রাষ্ট্র ছাড়া কেহ কারো কর্ম বা পরিধি বিষয়ে মননিবেশ করার চিন্তা-চেতনা বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগে রাষ্ট্র বা সরকার একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে জনসেবায় অধিকতর মনোযোগী হয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করিয়া থাকে। এতে রাষ্ট্রতন্ত্রের সাথে লেজুড়বৃত্তি গজিয়ে উঠতে পারেনা, যা আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের সকল দেশেই পরিলক্ষিত হয়।

দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্র একটি আদর্শ পন্থা, তা আধুনিক বিশ্বেও সর্ব্জন স্বীকৃত। কিন্তু আমাদের সাথে এর তফাৎ এই যে, আমরা নিয়তই ভিন্নমত সহ্য করতে পারিনা। যেহেতু ক্ষমতা আমার, সেহেতু আমার মতামতই শেষ কথা। কিন্তু উন্নত বিশ্বে ঠিক তেমনটা আমরা দেখতে পাইনা। সে সব দেশে দলীয় লেজুড়বৃত্তি না থাকায়, দলীয় হয়েও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করতে পিছপা হয়না। আবার বিরোধীদলের ভাল পরামর্শ বা সমালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে ক্ষমতাসীনরা লজ্জাবোধ করেনা। এতে প্রমাণিত হয়, তাদের গণতন্ত্রে দলীয়তন্ত্র নেই। তাই প্রত্যেক সদস্যই স্বাধীন মতামতের প্রবক্তা।

 কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। তাই গণতন্ত্রের সূফল আমরা ঘরে তুলতে পারিনা। কেননা, আমি যে দলই করিনা কেন, নেতা-নেত্রীর মতামতই শেষ কথা। এখানে আমার মতামতের গুরুত্ব না থাকায় দলীয় লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া আমার অবস্থান ধরে রাখা দূরুহ। সুতরাং আমাকে টিকে থাকার জন্য “ইয়েস” বলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এতে গণতন্ত্রের লেবাসে প্রচ্ছন্ন স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করে। যাকে এককথায় সংজ্ঞায়িত করলে বলতে পারি-তথাকথিত গণতন্ত্র। এহেন অবস্থায় দলতন্ত্রের ছত্রছায়ায় পেশী শক্তির উন্মেষ ঘটে। তখন ঐ পেশী শক্তি নিজেদের স্বার্থে নানা পেশাজীবী সংগঠন সৃষ্টি করতে উৎসাহী হয়। আর দলীয় লেজুড়বৃত্তি এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার খাতিরে সরকার এদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করে। ইহাতে পেশীশক্তি বেপরোয়া হয়ে সমাজের সকল স্তরে থাবা বসায়। একটি রাষ্ট্রের এমন অবস্থায় দেশে নানান সুবিধাবাদী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। তারা নিজেদের ফায়দা হাসিল করিবার লক্ষ্যে যে কোন অপরাধ করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে না। তখন রাষ্ট্রের বেতনভূক্ত সুযোগ সন্ধানি কর্মচারি-কর্মকর্তা ঐ সব পেশীশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে মূল্যবোধের অবক্ষয় আর নৈতিকতার স্খলনে সীমাহীন অপরাধ, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ইহাতে রাষ্টের প্রকৃত মালিকদের অসহায়ত্ব বেড়ে যায় এবং ভোগান্তিকেই নিয়তি মেনে নিয়ে চলতে থাকে।

 সুতরাং বেকারত্ব দূরীকরণ বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে যতদিন না জাতিকে মর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে পারবো, ততদিন আমরা সেই তিমিরেই থেকে যাবো। পরিশেষে কাব্যরূপে দুটো কথা বলেই শেষ করছি—“গণতন্ত্র যখন দেখি/দলতন্ত্রে মিলায় হাত।স্বৈরতন্ত্র রূপে তখন/বাড়ে দেশে রক্তপাত। 

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter