Flickr

Wednesday, 14 July 2010

মন্ত্রীদের বক্তব্য এবং ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকান্ড

Posted by   on

গত ১০ জুলাই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে বলেন, তারা যেন নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হয়। আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের অতি দ্রুত বিচার ও জাতীয় উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিরোধ’’ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন। সংবাদটি নয়াদিগন্ত, প্রথম আলো, মানবজমিনসহ প্রায় সবক'টি জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মন্ত্রীর নির্দেশের কিয়দংশও এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগরা বাকী রাখে নাই। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত আঠারটি মাসে তারা ন্যূনতম এমন কোন অপকর্ম বাদ রাখেনি যা তাদেরকে নতুন করে কাউকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। সরকার বিরোধী দল নির্যাতনের যে এজেন্ডা নিয়ে এগুচ্ছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইতোমধ্যে প্রায় অনেকাংশই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এমন কোন দিন হয়তবা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কোন না কোন পত্রিকা বা চ্যানেলে তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত না হয়েছে। বলাই বাহুল্য, এর সব ক'টি তাদের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি সংবলিত খবর। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে প্রহার, ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে (প্রথম আলো, ১ জানুয়ারী)।
ফিরে দেখা ২০০৯ : চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের আধিপত্যের লড়াই (যুগান্তর, ৬ জানুয়ারী)।
রাজশাহী পলিটেকনিক বন্ধ, ছাত্রলীগের সাতজন বহিষ্কার, ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর নেতা খুন (প্রথম আলো ৮ জানুয়ারী)।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় এবার সাংবাদিক আহত (প্রথম আলো ১২ জানুয়ারী)।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকিয়ে টাকা আদায় ছাত্রলীগ নেতাদের (প্রথম আলো, ১৬ জানুয়ারী)।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতির হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, কক্ষ ভাংচুর, ভর্তির কাজ বন্ধ (নয়া দিগন্ত ৩১ জানুয়ারী)।
অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে/ঢাকা কলেজের সম্মানে ভর্তি কাজ বন্ধ, ইডেনে অনিয়ম (প্রথম আলো ১ফেব্রুয়ারী)।
ছাত্রলীগের ভর্তি সন্ত্রাস কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি বন্ধ (সমকাল, ২ ফেব্রুয়ারী)।
মধ্যরাতে ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলি, আহত ৩৫ (সমকাল, ৩ ফেব্রুয়ারী)।
চাঁদাবাজি-অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা থেমে নেই (প্রথম আলো ৪ ফেব্রুয়ারী)।
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা (নয়াদিগন্ত, ৫ ফেব্রুয়ারী)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের সমঝোতা (প্রথম আলো, ৯ ফেব্রুয়ারী)।
পাবনা প্রেসক্লাবে ছাত্রলীগের হামলা ও ভাংচুর (যুগান্তর, ১৫ ফেব্রুয়ারীা)।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ আহত ১০ (প্রথম আলো ১৬ ফেব্রুয়ারী)।
ভান্ডারিয়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ (নয়া দিগন্ত, ২০ ফেব্রুয়ারী)।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়/ছাত্রলীগের দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ১০ (প্রথম আলো, ১মার্চ)।
ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেলের টেন্ডার ছিনতাই করেছে ছাত্রলীগ (নয়াদিগন্ত, ৫ মার্চ)।
দেহব্যবসা নিয়ে ইডেনে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০ (আমার দেশ, ১৩ মার্চ)।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়/ছাত্রলীগের আন্দোলনে তিন মাস বন্ধ (প্রথম আলো, ১৪ মার্চ)।
ঢাকা কলেজে ৫৭ গুলি উদ্ধার/ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের নেপথ্যে সিট দখল ও চাঁদা-বাণিজ্য (প্রথম আলো ১৮ মার্চ)।
কেক কাটা নিয়ে সংঘর্ষ/বাকৃবিতে প্রক্টরের মাথা ফাটিয়েছে ছাত্রলীগ (আমার দেশ, ১৮ মার্চ)।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের জন্য ছাত্রলীগই দায়ী-৩১পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের অভিমত (নয়াদিগন্ত ২৪মার্চ)।
রাবিতে ছাত্রী লাঞ্ছনাকারী ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার ১০ মিনিটেই মুক্তি (যুগান্তর, ৪ এপ্রিল)।
টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সংঘর্ষে নিহত ১ আ'লীগ নেতার বাড়ি ভাংচুর, মহাসড়ক অবরোধ (নয়া দিগন্ত ৪ এপ্রিল)।
দিনাজপুরে ১৪ কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে দুই পক্ষের হাঙ্গামা, পঞ্চগড়ে ছাত্রলীগ নেতা খুন (প্রথম আলো ৯ এপ্রিল)।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ (প্রথম আলো, ৯ এপ্রিল)।
ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ, রাজধানীতে দিনদুপুরে ছাত্রলীগ নেতা খুন (সমকাল, ১৪ এপ্রিল)।
ঢাবি এলাকায় শিক্ষক-তরুণীরা লাঞ্ছিত, জড়িত ছাত্রলীগ (সমকাল, ১৬ এপ্রিল)।
ডাস্টবিন শৌচাগারও ইজারা নিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা (প্রথম আলো, ৫ এপ্রিল)।
ছাত্রলীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন: আ'লীগকে পাঁচ শিক্ষাবিদ নেতা, (নয়াদিগন্ত, ২২ এপ্রিল)।
এ এসআইকে পিটিয়েছে জবির ছাত্রলীগ কর্মীরা (যুগান্তর, ৭ মে)।
সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের ধারালো অস্ত্রের মহড়া ঃ গুলি (যুগান্তর, ১৬ মে)।
আদালতে এক ডাকাতের স্বীকারোক্তি, ফকিরহাট ছাত্রলীগের এক নেতার নেতৃত্বে ডাকাতি করতে যাই (প্রথম আলো)।
ইবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ গুলি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা (যুগান্তর, ২৮ মে)।
সিলেট ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০ (যুগান্তর, ৯ জুন)।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্র (প্রথম আলো, ১৮ জুন)।
ছাত্রলীগের চাপে ভর্তি বন্ধ, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত পাবনায় দুই কলেজের শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন (প্রথম আলো, ২৪ জুন)।
কক্সবাজারে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সম্মেলন পন্ড (ইত্তেফাক, ২৬ জুন)।
রাবিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সংঘর্ষে আহত ২ (ইত্তেফাক ২৭ জুন)।
ছাত্রলীগের হুমকির মুখে আজিজুল হক কলেজে ভর্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ (নয়াদিগন্ত, ২৫ জুন)।
হরতালে ছাত্রলীগের চন্ডমূর্তি। দায় নেবে না আওয়ামী লীগ : আশরাফ (কালের কন্ঠ, ২৮ জুন)।
র্যা ব-পুলিশের পোশাকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা হয়েছে (নয়াদিগন্ত, ২৯ জুন)।
রাবিতে ছাত্রলীগের হাতে জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ (যায়যায়দিন, ৩ জুলাই)।
জাবি ফের রক্তাক্ত : ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলি: আহত অর্ধশত (কালের কন্ঠ, ৬ জুলাই)।
ইবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২০ (যুগান্তর, ৯ জুলাই)।
বাকৃবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ (নয়াদিগন্ত, ১০ জুলাই)।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, উপরোক্ত শিরোনামগুলো প্রতিনিয়ত যাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রীমহোদয় ঠিক এমন একটি গ্রুপকে উসকিয়ে দিলেন অন্যদের সাথে সংঘর্ষ করার জন্য। একজন মন্ত্রীর নিকট সব নাগরিকই সমান হওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগা জাতির আজ দুর্ভাগা মন্ত্রী। তার এ নি©র্দশে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে। একটু নজর দিলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন কোন কারণে আজ ছাত্রলীগের অপকর্ম দিন দিন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে যাই বলুন আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি এসব অপকর্মের জন্য সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা অধিকন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী-এমপিদের এ ধরনের উসকানীই বহুলাংশে দায়ী। বর্তমান সরকার ক্ষমতা লাভের মাত্র ২৫ দিনের মাথায় যখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়ে ছাত্রলীগ অস্ত্রের মহড়া দিল এবং অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে বহু হতাহত হলো তখন তো তাদের বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় নাই। কিছুদিনের জন্য এদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল মাত্র। তাতে এসব সন্ত্রাসীদের কী ক্ষতি হলো দলীয় কার্যক্রম বন্ধ হলেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ ছিলনা কখনো। যার কারণে পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বহু শিরোনাম মিডিয়ায় এসেছে। সর্বশেষ ৭ জুৃলাই ঐ প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওদের একগ্রুপ অন্যগ্রুপের কয়েকজনকে চারতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়ার ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কোন কোন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে আবারো ছাত্রলীগ লাগামহীন। এসব শিরোনাম দেখলে মনে হয় ছাত্রলীগ কোন মানুষের সংগঠন নয়। মনে হয় এটি অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কোন অদৃশ্য শক্তির নাম, যে তাকে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে যাবে সেই শেষ হয়ে যাবে। আসলে কী তাই? না, মোটেও না। এদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কখনো করা হয়নি। নিয়ন্ত্রণের নামে যা করা হয়েছে তা মূলত তাদের উসকিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ হতে সরে দাঁড়িয়েছেন। যার ফলে গৃহে অবস্থানকারী সন্তানের চেয়ে ত্যাজ্য পুত্রের দুষ্টুমী কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আগেতো প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তাদের ডেকে সতর্ক করতেন কিন্তু এখন সাংগঠনিক পদে না থাকায় তাও করছেন না। ফলে তারা দিন দিন স্বেচ্ছাচারী হতেই থাকছে। গত ২৭ জুন হরতালের দিন বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সমগ্র দেশে তারা যে ত্রাস সৃষ্টি করছিল তা বিবেক সম্পন্ন প্রতিটি মানুষকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। হরতাল বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতালের সফলতা বা ব্যর্থতার মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন যাচাই করার সুযোগ থাকে। সরকার বার বার বলেছিল তারা হরতালে বাধা দিবে না। অথচ হরতাল যাতে সফল না হয় সেজন্য ১৫ জুন থেকেই সমগ্র দেশ থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করতে থাকে এবং বিভিন্ন পুরনো মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের তালিকায় ঢুকাতে থাকে। হরতালের দিন সরকারের পুলিশ বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে ছাত্রলীগ বিরোধী দলের নেতাদের উপর যে নৃশংস অত্যাচার করছে তা কোন সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। অথচ ইতিহাস থেকে প্রতিয়মান হয় যে এ ধরনের কোন ঘটনা না ঘটলেও আওয়ামী লীগ হরতালের আগের রাত থেকেই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করত। গাড়িতে আগুন দিয়ে শাহবাগ মোড়ে একরাতেই ১৩ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। এছাড়াও গাড়ী ভাংচুর এবং পুলিশের ওপর হামলা করার জন্য কুংফু কারাতে বাহিনীও নামাত। কিন্তু এবার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দেড় বছরের শাসনামলে বিরোধীদলের প্রথম হরতালে তারা ঐ ধরনের কোন সহিংস পথেই যায়নি। মাসাধিক কাল থেকে তারা সাধারণ মানুষের সাথে গণসংযোগ করেছে। তারা সর্বস্তরের মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, কোন কারণে এই হরতাল।
বিরোধীদল বার বার বলে আসছিল যে এ হরতাল হবে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। আর হয়েছিলও তাই। সরকারের অপশাসনের প্রতিবাদে গোটা দেশের মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। আমরা মনে করেছিলাম চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারী দলের ভরাডুবি এবং ২৭ জুন হরতাল পালন থেকে সরকার পজেটিভ কিছু শিক্ষা নিবে। কিন্তু সরকার তার কোন অনুসন্ধানের ধার ধারেনি। বরং জনগণের প্রতি তার ক্ষোভ কয়েকমাত্রা বৃদ্ধি করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই উঠে পড়ে লেগেছে। আর তা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ বাহিনীর সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগও যৌথভাবে আজ মাঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ যেমন এক আতংকের নাম তেমনি বাহিরেও এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। হরতালের দিন শাহবাগ মোড়ে সংসদ সসদ্য শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির উপর ছাত্রলীগ একটি জংগী মিছিল নিয়ে হামলা চালায় আর পুলিশ ছাত্রলীগকে সহায়তা করে এবং উল্টো আহত লোকদেরকেই গ্রেফতার করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আববাসের বাড়িতে ঢুকে র্যা বের পোশাকে যারা নিরীহ মহিলাগুলোকে বেদম লাঠিচার্জ করল তারা তো আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য হতে পারে না। যে ঘটনার মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপি নেতারা দাবি করেছে র্যা বের পোশাকে লাঠিপেটাকারী সবাই ছাত্র ও যুব লীগের সন্ত্রাসী। যদি তা সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশে যে নোংরা ও উচ্ছৃখল রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হলো তা ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে থাকবে। হরতালে ছাত্রলীগের তান্ডব নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবেনা। কারণ এরা এখন আলাদা সংগঠন। যদি তাই হয় তাহলে এদের অপকর্মের জন্য কেন প্রশাসনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয় না। কোন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে ওরা এসব জঘন্য অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে পুলিশ ছাত্রলীগের কর্মীকে ডাকাতির কাজে গ্রেফতার করছে মুহুর্তের মধ্যে ওপর মহলের ফোনে ঐ ডাকাতকে থানায় না নিয়ে মোটর সাইকেলে নিরাপদে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে। পুলিশ ডাকাত গ্রেফতার করলে কোন ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে থানা ভাংতে যায়। যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরীহ একটি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান চালিয়ে সমগ্র দেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং রিমান্ড দেয়া হলে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন অসংখ্য লোককে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। হয়তবা এই ঘটনায় সরকার তাদের বাকী মেয়াদ পর্যন্ত ঐ বিরোধী সংগঠনটির ওপর নির্যাতন হয়রানি চালিয়ে যাবে। কোন কোন মন্ত্রী-এমপিরা উক্ত সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারও দাবি তোলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে কেন এমনটি দেখছিনা। ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ নেবেনা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই ঘোষণার মাত্র তিনদিনের মাথায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-আলম হানিফ বলেন, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হবে আর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ঘরে বসে থাকবে তা হতে পারে না। এ কথার মাধ্যমে হানিফ সাহেব মূলত ছাত্রলীগকে মাঠেই রাখতে চান। আর সরকারও মূলত ছাত্রলীগকে বর্তমান রূপেই দেখতে চান। কারণ ১০ই জুলাই পাটমন্ত্রী ছাত্রলীগকে বিরোধী দলের উপর অত্যাচারের লাইসেন্স প্রদান করেছেন। পাট মন্ত্রীর এমন চিন্তা করা বোধ হয় ঠিক হবে না যে ছাত্রলীগ ইচ্ছা করেই বিরোধী দলের সাথে সংঘর্ষে কম লিপ্ত হচ্ছে। ব্যাপারটি নির্ভর করছে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর অত্যধিক দেশপ্রেমের উপর। কারণ আজ ছাত্রলীগ যা করছে তার যদি সিকি ভাগও বিরোধী সংগঠনগুলো মোকাবিলা করতো তাহলে দেশের জন্য বারটা বেজে যেত। তাই দেশের জন্য এটা বিরাট নিয়ামত যে বিরোধী দলের ছাত্রসংগঠনগুলো অতিমাত্রায় সহনশীল। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝানো যায়। গত ২৯ জুন সরকার জামায়াতে ইসলামীর তিন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে অভিনব কায়দায় নতুন নতুন মামলা দাঁড় করিয়ে জনপ্রতি ১৬ দিন করে রিমান্ড মন্জুর করাল। এ প্রহসনটা বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি যে এক ধরনের মামলায় এরেস্ট তাও আবার জামিন হয়ে গেলে নতুন নতুন মামলা দিয়ে শ্যেন এরেস্ট দেখিয়ে এক নাগাড়ে ১৬ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করানো হয়েছে। আদালতের ভিতরে চলছিল যখন এমন কান্ড ঠিক তখন আদালতের বাইরে চলছিল ছাত্রলীগের জঙ্গী তান্ডব। পুলিশ-র্যা ব, ছাত্রলীগ-যুবলীগ চতুর্মুখী হামলা চালিয়ে জামাত শিবিরের প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মীকে আহত করে গ্রেফতার করল। যদি কেউ অন্যায় করে তাহলে প্রশাসনের লোক হিসেবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগ এরা প্রশাসনের কি? ঐ দিন যদি ছাত্রশিবির পাল্টা প্রতিবাদে নামতো তাহলে অবস্থাটা কি হতো সেখানে। বিরোধীদল অভিযোগ করেছে বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি দলীয় ক্যাডারের ন্যায় নগ্ন ব্যবহার করছে। ছাত্রলীগ আর পুলিশ দুটোকে এখন আলাদা করা যায় না। অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো যখন ইচ্ছা করে হোক আর যেকোন কৌশলে হোক ছাত্রলীগ হতে দূরে সরে থাকতে চাচ্ছে যাতে তাদের সাথে সংঘর্ষ না বাঁধে। তখন মন্ত্রীর এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেশকে সংঘর্ষের পথে আরো বেশি ঠেলে দিবে। ছাত্রলীগ কোনদিনই শান্ত ছিলনা। এদের অশান্ত করার জন্য বিরোধী দলের উপর লেলিয়ে দিতে হবে না। ছাত্রলীগের সাথে জড়িতদের বর্তমান মানানসই এক নতুন ধাঁচে গড়ে উঠেছে। স্বাভাবিক কোন সাংগঠনিক আচরণই তাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আদর্শ ভাবাবেগ দূরে থাক সাধারণ চক্ষুলজ্জা যা যেকোন সংগঠনের নেতা কর্মীদের মধ্যে থাকে তাও নাই এদের মাঝে।
সবশেষে বলতে চাই এদেশটা আমাদের সবার। এ ভূখন্ডটাকে অশান্ত রাখলে সময়ের পরিবর্তনে কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোন খারাপ রাজনীতির দৃষ্টান্ত যদি আজ তৈরি করা হয় তাহলে তা সহজে মুছে যাবেনা। বরং তা একটি সময়ে দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিপরীতক্রমে যদি কেউ ভাল কোন উদাহরণ স্থাপন করে যায় তাও দেশের কল্যাণেই আসবে। আমাদের দেশের নেতা-নেতৃদের এটাই বড় সমস্যা যে তারা ক্ষমতায় একবার আসতে পারলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার চিন্তা মাথায় কখনো আসেনা। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো এ পর্যন্ত কোন সরকারই নির্বাচনের মাধ্যমে পরপর দুই মেয়াদ ক্ষমতায় আসতে পারে না। অর্থাৎ ক্ষমতার পালা বদল হবে এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে এ সত্যটা উপলদ্ধি করে চলতে হবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter