Flickr

Tuesday, 20 July 2010

লিখতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে কলম

Posted by   on

লিখতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে কলম। জট পাকিয়ে যাচ্ছে ভাবনা-চিন্তায়। লিখেই যখন জীবন ধারণ করি তখন না লিখতে পারার বেদনা মনকে পীড়িত করে বৈ কি। এই পীড়ন মস্তিষ্কেও ঘর বাঁধে। তখন দেখাতেও হেরফের ঘটে যায়। ঝাপসা হয়ে আসে নজর। অতি দেখার প্রবণতাও উঠে আসে মাঝে মধ্যে। চারপাশে যে ধরনের আলামত প্রত্যক্ষ করছি তাতে করে সঞ্চারিত হচ্ছে ভীতি, দেহ ও মনে। সত্য বলতে গেলেও ভয়, লিখতে গেলেও ভয়। যেমন স্বাধীনতার শুরুর কয়েকটা বছর দিনাতিপাত করেছিল দেশবাসী। একটা অস্বস্তি আর ভীতিকর সময় ছিল তখন। সময় নাকি চলে যায়, সময় কিন্তু আবার ফিরেও আসে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে তেমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। স্বস্তিহীনতার সাথে সাথে সম্ভ্রমহীন সময়ের ভিতর যেন একটু একটু করে ঢুকে যাচ্ছি। হায়া-শরম-বিবেক কিছুরই অবশিষ্ট থাকছে না আর। নিরীহ মানুষজনদের জন্য এটা দুঃসময় না সুসময় ভবিষ্যতই নির্ণয় করবে বিষয়টি। কি লিখবো আর কি লিখবো না, দ্বনদ্বটা সেখানে নয়। মোটকথা লিখতেই মন চাইছে না। চারপাশে লেখার অন্তহীন বিষয়। অতি ভোজন যেমন পেটের জন্য ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি অতি বিষয় যতিহীনতার লক্ষণ। এই তো সেদিন নিমতলীতে কত উচ্ছবল সংসার পুড়ে ছাই হলো, অবসান ঘটলো একশত ঊনিশটি জীবনের। মরণযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আরো কতজন। এখন আমাদের বোধ জাগ্রত হয়েছে। রাসায়নিক পদার্থের গুদাম আবাসিক এলাকায় থাকবে কি থাকবে না সেই সিদ্ধান্তের অাঁচল ধরে এতকাল পর টানাহেঁচড়া। সীলগালা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে কর্তাব্যক্তিরা। কোনো প্রকার সময় না দিয়ে হুটহাট সব সীলগালা মেরে দিলেতো মুশকিল। রাসায়নিক সরঞ্জামের অভাবে যে অন্য রকম বিপদও আসতে পারে সেই বোধটাওতো থাকা দরকার। পুরান ঢাকা ঘিঞ্জি এলাকা, জরাজীর্ণ দালান-কোঠা, এই বুঝি পড় পড়। হতশ্রী রাস্তা-ঘাট। কর্তাব্যক্তিদের আলাপ-সালাপ শুনে মনে হচ্ছে এসব এই মাত্র তাদের নজরে এলো। কোনো রকম অঘটন ঘটলেই ঘুম থেকে জাগেন কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রী-আমাত্যরা। তাই জীবনানন্দ দাসের মতো বলতে হয় ‘এতদিন কোথায় ছিলেন নাটোরের বনলতা সেন!'
বেগুনবাড়িতে দালান ভেঙে প্রাণ হারালো পঁচিশ-ছাবিবশজন। এই পড়ে যাবার প্রক্রিয়াটিতো আর একদিনে শুরু হয়নি, বেশ ক'দিন যাবতই হেলাহেলির ব্যাপারটি ঘটছিল হয়তো। কিন্তু নজর দেয়ার ফুরসত কারো ছিল না। এলাকার বাসিন্দাদের, না কর্তৃপক্ষের। যা হবার তাই হলো। আকাশ ভেঙে বাজ পড়ার মতো দালান ভেঙে মাথায় পড়লো।
আচমকা ‘আমার দেশ' পত্রিকা বন্ধের সরকারি ঘোষণা, সম্পাদককে গারদেপুরা, রিমান্ডের নামে শারীরিক নির্যাতন দেশবাসীর মাথায় আকাশ ভেঙে বাজ পড়ার মতোই আর একটি খবর উঠে এলো প্রায় সমসময়ে। এই অন্যায় এবং অশোভন খবরটি দেশের যেকোনো বিবেকসম্পন্ন নাগরিককে বিচলিত করা স্বাভাবিক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিরই অংশ। কিন্তু ‘আমার দেশ' সংক্রান্ত ব্যাপারটিতে বর্তমান সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি এমন মত দেশের বিজ্ঞজনরা ব্যক্ত করেছেন। এটি যে সরকারের হিংসাত্মক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ সে মতও তারা উচ্চারণ করেছেন লেখায়, কথায়। ভিন্নমত থাকতেই পারে। তাই ভিন্নমতিদের টুটি চেপে ধরাটা কোনো সভ্য চিন্তার কর্ম নয়। কিন্তু সেই কর্মটিই করা হচ্ছে হর-হামেশা, অভব্যভাবে।
একেবারেই ঠুনকো অজুহাতে চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার বন্ধ করে দিলো সরকার। যমুনা টিভি'র চোখেও পট্টি বাঁধা হলো। বলা হলো খামোশ! ভিন্নমতে এতটা অসহিষ্ণু হলেতো মুশকিল। একদিকে ঘোষণা হচ্ছে অবাধ তথ্যপ্রবাহের পক্ষে, অন্যদিকে বন্ধ করা হচ্ছে বিপক্ষ মতের পত্রিকা-চ্যানেল। এই যে আচরণের বৈপরিত্য তা একটি সুসরকারের জন্য স্থিতিপ্রদতো নয়ই, দেশ ও জনগণের জন্যও স্বস্তিপ্রদ নয়। সাবেক আমলে অর্থাৎ মইন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সময়ে এমনি করে সিএসবি নামের টিভি স্টেশনটি বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। সেই ধারাবাহিকতাই যেন এখন প্রবাহমান দেশে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমাদের উত্তরণটা ঘটলো কোথায়! মুখে গণতন্ত্র আর আচরণে স্বৈরতন্ত্র কেবল শাসক কেন, দেশের জন্যও বয়ে আনে অমঙ্গল। চারপাশে যখন এমন দৃশ্য অবলোকন করি তখন বাকরুদ্ধ হয়ে আসে। থেমে থাকে কলম। লেখার ইচ্ছাতেই কিসের যেন কামড় অনুভূত হয়, বেদনা অনুভব করি। তাই লেখার বিষয় বিবেচনায় বিভ্রাটে পড়তে হয়।
দেশের বিদ্যাপীঠগুলোতে যখন দেখি জ্ঞানসন্ধানীদের বিপরীতে ‘বন্যবরাহের' বিচরণ অবাধ, তখন কষ্টের অন্ত থাকে না। যে হাতে থাকবে বই, খাতা আর কলম সে হাত শোভিত এখন নানা নামের অস্ত্রে। একজন আর একজনের ছিঁড়ে নিচ্ছে কলিজা-হাড়-মাংস। সবই হচ্ছে রাজনীতির নামে। যখন খবর আসে এসব অনাচারের সাথে কতিপয় শিক্ষকেরও সায় আছে, তখন আর কলম ধরতে ইচ্ছে হয় না, রাগে-ঘৃণায়। ভয়তো আছেই। রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নাকি এমন ‘বরাহনৃত্য' দেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রচার-প্রপাগান্ডা এমনটাই। এমন প্রচার দীর্ঘ সময় থেকেই। কথায় আছে ‘যা রটে কিছু না কিছু বটে।' এসবের বিপক্ষে প্রবল কোন প্রতিরোধ নেই। প্রতিবাদের কণ্ঠও ক্ষীণ। এমন চললে তো শিক্ষার ঘরেও আগুন জ্বলতে থাকবে। যে জন্য গত চল্লিশবছরও তেমন কোন অর্জন লক্ষ্যযোগ্য নয় এই এলাকায়। খুন-খারাবি আর অসভ্যতা ছাড়া। প্রায় প্রতিদিনই একটা না একটা বন্ধ হচ্ছে শিক্ষালয় হুটহাট। কৃষকের সন্তানকে আবার কৃষিতে ফিরিয়ে দেবার প্রক্রিয়া কিনা এটি কে জানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে কলকাতার বাবুরা বলেছিলেন, বাংলাদেশে তো এগ্রিকালচারই আছে সেখানে আবার কালচারের কী প্রয়োজন। কলেজ-ভার্সিটির সাম্প্রতিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে কারা যেন এগ্রিকালচারের পাঠ শিখাচ্ছে আমাদের। লিখতে গেলে তো বিষয় হিসেবে এসবই চলে আসে। তাই লেখালেখিতে মন সায় দেয় না। সত্য ভাষণে দুশমন বাড়ে। যে বিডিআর-এর নাম শুনলেই শত্রুর হৃদকম্পন শুরু হয়ে যেত সেই বিডিআর-এর শিরদাড়া ভেঙ্গে দেয়া হলো আচমকা। নিধন করা হলো সেনাবাহিনীর চৌকস সব সেনাঅফিসার। বিডিআর ‘বিদ্রোহ'-এর নেপথ্যনায়ক কারা এ তথ্য চাপাই পড়ে থাকলো। বিচারের নামে প্রহসনের প্রহেলিকা চলল। এখন আবার হঠাৎ তাও বন্ধ। সেনাসদস্যদের মনে যদি শাস্তি আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া যায় তখন তো এরা সীমান্ত রক্ষার পরিবর্তে নিজেকে রক্ষায়ই বেশি ব্যস্ত থাকবে। বিডিআর-এর অভ্যন্তরে এমনি একটা অজানা আতঙ্কের প্রাসাদ তৈরি করে ফেলেছে আমাদের যারা চিরদুশমন, তারা। বিভীষণদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং সহযোগিতাই এমন কান্ড ঘটার ইতিহাস অনেক। বিডিআর সেনা নিধনের প্রক্রিয়াটি এ দেশীয় বিভীষণদেরই কূটচালের কর্ম! বিভীষণদের আখের মঙ্গলজনক নয়। মীরজাফরদের অন্তিম সময়গুলোর কাহিনী কি অজানা কারো। সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশীদের ওপর ‘চানমারি' করে প্রায় প্রতিদিন, লাশ হয় জনাকয়েক বাংলাদেশী। বিপরীতে আমাদের কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। প্রতিবাদ করলেও কণ্ঠ এতটাই ক্ষীণ যে, সে আওয়াজ বাতাসেই মিলিয়ে যায়। বর্তমানে এমন অবস্থায় এসে ঠেকেছে ‘ভাসুরের নাম মুখে আনতেই যেন বারণ।' অন্যদিকে বন্ধুত্বের উষ্ণতায় শার্ট-প্যান্ট-গেঞ্জি সবই অর্পণ করছি বন্ধুর করকমলে। কেবল আন্ডারওয়ারটা দিতে পারছি না লজ্জায়-শরমে। একদিন হয়তো তাও অর্পণে দ্বিধা করব না। চারপাশে যা আলামত এসে জমা হচ্ছে, তাতে তো এর বাইরের কিছু ভাবা যাচ্ছে না। তাই মনঃপীড়ায়, হতাশায় আর অপমানে লেখালেখির পাঠ চুকিয়ে ফেলার কথাই ভাবছি। বলতে গেলে তো বিষয় হিসেবে এদের নিয়েই টানাটানি করতে হবে। যেখানে মানিলোকের মান রাখতে আমরা ব্যর্থ, মিথ্যা এবং অসত্য মামলায় জড়িয়ে দৈনিক ‘আমার দেশ' সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডের নামে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এমন অন্যায়ের বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ওঠে না, তাও ভয়ে আতঙ্কে তখন লেখার ইচ্ছাটাই উবে যায়। নীমতলীতে আগুন লাগে, বেগুনবাড়ীতে দালান ভেঙে মাথায় পড়ে- এসব কিসের আলামত তা দেশবাসী উপলব্ধি করতে পারে না। এই না পারার কারণেই সবার কপালেই এমন আগুন। অন্যায়-অবিচারের দালান ভেঙে পড়ছে মাথায়। লিখতে গেলে তো আগুনের কথায় আসতে হবে, দালান ভাঙার খবর দিতে হবে। লিখলে কি অন্যায়ের আগুন থামবে? না, হেলেপড়া অবিচারের দালানটি সোজা করা যাবে। যদি তা করা সম্ভব না হয় তবে লেখে কী লাভ!

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter