Flickr

Friday, 16 July 2010

নিপীড়নে সরকারি পাশবিকতা : মানবাধিকার ও বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি নৈবেদ্য?

Posted by   on

নিপীড়নে সরকারি পাশবিকতা : মানবাধিকার ও বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি নৈবেদ্য?
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নিপীড়ন এখন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। ক্ষমতা মদমত্তরা কোনো কথা চিন্তা না করে এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিদেশি প্রভুদের ইঙ্গিতে যাচ্ছেতাই জুলুম-অত্যাচারের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। লক্ষ্য : নিজেদের রাজনীতি বাদে সকল রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নির্মমভাবে উচ্ছেদ করা। গণতন্ত্রের কবর রচনাকারী বাকশালী পদ্ধতি তারা পুনঃপ্রবর্তনে রত রয়েছেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ' শ্লোগান সর্বস্ব স্বৈরাচারী ‘বাকশাল' পদ্ধতি যেরূপ জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রহিতকরণসহ সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করেছিল- অধুনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘এক নেতা এক দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ' নামক জংলী একদলীয় শাসনের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। সচিবালয়ের ‘দেশপ্রেমিক দক্ষ ঈমানদার' সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিবদের ওএসডি কিংবা অবসর প্রদানের মাধ্যমে ফোর্থ গ্রেডেড আওয়ামী কর্মকর্তাদের শূন্যস্থান পূরণের দ্বারা ‘হবু চন্দ্র রাজা, গবু চন্দ্র...' মার্কা প্রশাসনের বিরামহীন অসাধুতা ও লুটপাটে জাতি আজ অতিষ্ঠ। দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের তোড়ে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে থানা-পুলিশ-প্রশাসন-শিক্ষা বিভাগ সর্বত্রই লুণ্ঠনের মচ্ছব চলছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা না করে আগ্রাসী ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে দেশীয় ভূখন্ড ব্যবহারের ও চট্টগ্রাম-খুলনা সামুদ্রিক বন্দর ব্যবহারের একতরফা সম্মতি দেয়া হয়েছে। দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রসমূহ বাস্তবায়নের একমাত্র প্রতিবন্ধক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিসমূহ। তাই ২৭ জুনের সফল হরতালের পর এরা হামলে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াতের ওপর। লক্ষ্য- দেশপ্রেমিক প্রতিবাদী শক্তিসমূহকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করা। ক্ষমতাসীনরা বোঝে যে, মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা পেলে এরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো সবখান থেকেই ছিটকে পড়বেন। তাই তারা গণতান্ত্রিক ছদ্মাবরণে চূড়ান্ত স্বৈরাচারের ভূমিকায় নেমেছে। নিজেদের অপকর্মের কোন সমালোচনাই তারা সহ্য করছে না। অধিকাংশ প্রিন্টেড ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তাদের গুণগানে(?) রত থাকলেও গুটিকয়েক বিরোধী পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়া আসুরিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। তার মর্মান্তিক শিকার হলো চ্যানেল ওয়ান ও যমুনা টিভি। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের সমর্থক হওয়ায় সরকারের তীব্র রোষানলে বন্ধ করা হয়েছে জনমনে গ্রথিত দৈনিক আমার দেশ। সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে তড়িৎ গতিতে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশ-বিদেশের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক চৌকষ ব্যক্তিত্ব। তিনি জোট সরকারের আমলে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় জ্বালানি উপদেষ্টা ও বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র একটি সরকার বিরোধী দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিধায় তাকে একটির পর একটি মামলায় জড়িয়ে ১২ দিনের অমানবিক রিমান্ডের আওতায় এনে তার ওপর পাশবিকভাবে শারীরিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে। মনে হয় : মানবাধিকার কিংবা শিষ্টাচার শব্দটি ক্ষমতাসীনরা কস্মিনকালেও শোনেনি। চক্ষুলজ্জাও তাদের নেই! রিমান্ডের নামে এই স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বকে উলঙ্গ করে নির্মম নির্যাতন করে বেহুঁশ করা হয়েছে। এই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী গণতন্ত্রের নমুনা! আওয়ামী নেতৃত্ব এখন হরতাল শব্দটির ব্যাপারে ভীষণই প্রতিবাদমুখর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আওয়ামী যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ ক্ষমতাসীনদের কর্তা ব্যক্তিরা হরতালের বিরুদ্ধে নসিহত করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। অথচ এই আওয়ামী লীগের আহবানে দেশে ৫৭৩ দিনের হরতাল পালিত হয়েছে- ইতিহাস তার সাক্ষী। কথিত আছে : তাদের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে হরতাল সফল করতে দোতলা যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডারের সহায়তায় আগুন ধরিয়ে দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছিল। হরতাল যদি প্রতিবাদের প্রতিবাদের ভাষা হয়-- তবে পিকেটিং করাটাও গণতান্ত্রিক অধিকার। গত ২৭ জুনের সকালে পিকেটিংরত বিএনপি'র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ কমান্ড যেভাবে বর্বরোচিতভাবে পিটিয়ে আহত করেছে, তা মর্মান্তিক। মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যতই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ-যুবলীগের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করলেও পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে যৌথ গেস্টাপো বাহিনীর রুদ্র আচরণের কোন তদন্তের ব্যবস্থাই তিনি করেননি। হরতালের কয়েকদিন পূর্বে যুবলীগের সভায় ‘হরতাল করবে যারা, লাশ হয়ে ফিরবে তারা' শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় মিছিল প্রদক্ষিণ করেছে। অথচ-সরকার কিছুই জানে না, কিম্বা তাদের দায়দায়িত্ব আমরা নেব না' সর্বস্ব মন্তব্য জাতি সর্বৈবভাবে মিথ্যাচার হিসেবেই জানে ও বোঝে। ‘রিমান্ড' শব্দটি এখন জনমনে ছড়িয়ে পড়া একটি আতঙ্কের নাম। গত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে ক্ষমতালি≈y মইন-উ-আহমেদের টিএফআই সেলে যে নির্মম নির্যাতন রাজনীতিবিদদের উপর চালানো হচ্ছিল-- একই কায়দায় এই সরকার রিমান্ড নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজেদের অপকর্মের সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নির্লজ্জের মত বিরোধীদের শতশত মামলায় জড়ানো হচ্ছে। দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রত্যাহৃত মামলায় হাজার হাজার খুনী-সন্ত্রাসী জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে-- আতঙ্কের জনপদে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ ও বরেণ্য রাজনীতিবিদদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডের উৎসব (?) চালানো হচ্ছে। মাননীয় হাইকোর্টের ১৯৯৩ সালের নির্দেশনা ও ২০০৩ সালের বিচারপতি হামিদুর রহমানের রায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দেশীয় বরেণ্য রাজনীতিবিদদের উপর সরকারি পাশবিক নির্মমতার বিরুদ্ধে আইন আদালত নীরব! অথচ এই আইন আদালতই জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল! সন্ত্রাস ও যুদ্ধপীড়িত পাকিস্তানের উচ্চ আদালত যেরূপ স্বৈরাচারী পারভেজ মোশাররফ ও পরবর্তী ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল-- সেরূপ সাহসী ও বুক চিতানো পদক্ষেপের অভাবে দেশের বিচার ব্যবস্থায় জনমনে প্রকট আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। ‘রিমান্ড' মানেই আইনী সহায়তায় সরকার বিরোধীদের গেস্টাপো কায়দায় গরু পেটানোর এক মহড়ায় পরিণত হয়েছে। ডিবি অফিসে সুস্থ লোক হেঁটে যায়-- বেরোয় স্ট্রেচারে কিম্বা মুমূর্ষু অবস্থায়। উচ্চতর আদালত স্যুয়োমটো কিম্বা অন্য কোনোভাবে জানতে চাইলো না আসামীর পরিণতির কথা। ফলে সরকারি বর্বরতা বেড়েই যাচ্ছে দাবানলের মত। ধর্মীয় অবমাননার মিথ্যা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদ ও বিশ্ববরেণ্য মুফাচ্ছিরে কোরআন ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে বিভিন্ন হাস্যকর মামলায় ১৬ দিন করে রিমান্ড আদেশ দিয়েছে মুখ্য মহানগর আদালত। এসব বরেণ্য ব্যক্তির জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত-- কিন্তু পুলিশ ও সরকারি পিপি ও অ্যাটর্নীদের আবেদনের তাৎক্ষণিক রায় পেয়ে যাচ্ছে সরকার পক্ষ! ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার সহমর্মীতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। প্রতিহিংসা প্রতিহিংসারই জন্ম দেয়। মনে রাখা দরকার-- এ সরকারই শেষ সরকার নয়। যুগযুগান্তরের ফেলে রাখা বিদ্বেষ দেশ গড়ার কোন উপকারেই আসবে না।
পাদটীকা : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ ও যুদ্ধাপরাধ মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হলো: মূল ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধীদের দেশে এনে বিচার না করে শুধুমাত্র জামায়াত নেতাদের বিচার কি রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত নাকি বন্ধু রাষ্ট্রের চরণতলে নৈবেদ্য হেতু এ আয়োজন-- তা কিন্তু ভেবে দেখার সময় এসেছে। ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে এজাহারভুক্ত আসামীদের বিচার শেষে মাত্র ৭৫৩ জনের সাজা হয়েছিল। প্রায় ৪০ বছর পর পুনরায় তদন্ত করে বিচার-জনমনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। -আবুল কাশেম মজুমদার

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter