আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের শুরুতে ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি করে এসেছেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি চুক্তি হল ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি। এর মাধ্যমে ভারত তার দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। ভারতের অপসংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বাজার এখন সয়লাব হয়ে আছে। আমাদের সরকার মহোদয় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের দরজা ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে আসল। ভারতের সাথে করা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ট্রানজিট চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রথমেই বিরোধীদলকে দমনের পথ বেছে নিলেন। কেড়ে নিলেন তাদের মিছিল, মিটিংসহ গণতান্ত্রিক সব অধিকার। তাদেরকে গৃহবন্দী করে সরকার একের পর এক চুক্তি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ জন্য সরকার বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদেরকে খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে গ্রেফতার করে বিনা অপরাধে কারাগারে ফেলে রাখছে। আমরা জানতে পারছি ভারত সরকার নাকি বাংলাদেশের দেখাশুনার জন্য সে দেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রণব মুখার্জীকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের সরকার এখন প্রণব বাবুর দিক-নির্দেশনার আলোকেই দেশ চালাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার মূলত ভারতের পরিকল্পনা। কাদেরকে কখন কিভাবে গ্রেফতার করতে হবে এর ছক ভারত নির্বাচনের পরই এঁকে দিয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভারত শুধু আমাদের সম্পদ লুট আর সীমানা দখলের পরিকল্পনাই করেনি। বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করতে তারা সুদূর প্রসারী এক সূক্ষ্ম পরিকল্পনাও করেছে। যার বাস্তব প্রমাণ বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি। এর মাধ্যমে ভারত তাদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের সরকারের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে ভারতের সাথে করা সাংস্কৃতিক চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু করছে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হলো আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে আসছে দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি ইসলামী সংস্কৃতির চর্চাও। অপসংস্কৃতির উত্তাল সাগরের মধ্যেও এদেশে গড়ে উঠেছে বহু ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা সুস্থ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদেরকে সহযোগিতা না করে উল্টো তাদের চলার পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিতে শুরু করছে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে তাদের জাতিসত্তার পরিচয় তুলে ধরতে চায়। কিন্তু আমরা হলাম এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমদানি করা সংস্কৃতির পূজা করতেই আমরা বেশি ভালবাসি। পাশ্চাত্যের লেংটা সংস্কৃতির চর্চা করে আমরা এখন লেংটা হয়ে পথে বসেছি। সংস্কৃতি চর্চার নামে দেশে আজ যা চলছে তা ভাবতেও কষ্ট লাগে। একটি মুসলিম দেশে সংস্কৃতির নামে যে ধরনের অশ্লীল বেহায়াপনা চালু হয়েছে তা আমাদের জাতিসত্তাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যেন একেবারে ভুলে গিয়েছি আমাদের পরিচয় ও অতীত ইতিহাস। আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের কিছু গোলাম রয়েছে যারা সর্বদাই এ কাজে আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। তারা মুসলমান নামটা ধারণ করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাশ্চাত্যের লেংটা সংস্কৃতি বিস্তারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েও যুব সমাজের নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দেয়া। আর হচ্ছেও তাই। জাতি হিসাবে আমরা আজ একেবারে পঙ্গু। বাসা থেকে বের হয়ে এক কিলোমিটার পথ হাঁটলে এর মধ্যে কমপক্ষে ৩/৪টি সিডির দোকান পড়ে। যেগুলোতে রাখা হয় শুধু চরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল সিনেমা ও নাটকের সিডি। আর এখন তো হলো আকাশ সংস্কৃতির যুগ। ভদ্র ঘরের ছেলেমেয়েদের দোকান থেকে সিডি নিতে হয় না। ডিসের মাধ্যমে টেলিভিশনেই সবকিছু তারা দেখতে পায়। দেশী-বিদেশী অনেক স্যাটেলাইট টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। সুন্দরী মেয়েদের লেংটা ছবি দেখতে কার ভাল না লাগে। আর তার সাথে যদি থাকে আরেকজন সু-দর্শন পুরুষ তাহলে তো হয়ে যায় গুড-বেটার-বেস্ট। লজ্জা-শরম বলতেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তাও আজ সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। আজকালের নাটক সিনেমাগুলোতে যা ইচ্ছে, নায়িকা এমন ধরনের শর্ট পোশাক পরে যাতে তার গোপন অঙ্গগুলো পুরুষে দেখতে পায়। একটা ছেলে একটা অর্ধনগ্ন সুন্দরী মেয়েকে জড়ায়ে ধরে চুমু খাচ্ছে, দুইজনে মিলে ঢলাঢলি করছে, শরীরের কাপড় খুলে পড়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্যগুলো আমাদের মুসলিম পরিবারের সদস্যরা বসে বসে দেখছে। এমনকি মা-বাবা, ভাই-বোন একসাথে বসে আনন্দের সহিত এগুলো উপভোগ করে। ছি....। তাদের কী একটুও লজ্জা করে না। এ নোংরা দৃশ্যগুলো দেখার পর তারা চোখাচোখি বসে কথা বলে কিভাবে। এই সমস্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা কিভাবে ভাল মানুষ হবে। এগুলো দেখার পর একটা ছেলে বা মেয়ে কোনভাবেই সুস্থ থাকতে পারে না। আর বিদেশী সিনেমাগুলোতে তো নায়ক-নায়িকারা পর্দার সামনে হাজির হয় একেবারে উলঙ্গ হয়ে। ভেঙ্গে পড়েছে আজ পরিবার ব্যবস্থা। অধিকাংশ পরিবারগুলোতে এখন শান্তি নেই। অশান্তির আগুন যেন দাউদাউ করে জ্বলছে। ছেলেমেয়েরা আজকাল মা-বাবা বা মুরববীদের কথায় চলে না। তারা এখন অনুসরণ করে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদেরকে। নায়িকা কোন পোশাকটা পরে নৃত্য করেছে সেটাই তারা পরবে। নায়িকা কিভাবে কথা বলেছে তারাও ছেলেদের সাথে সেভাবে বলার চেষ্টা করে। মূলত সিনেমার নায়ক-নায়িকারাই হলো এখন ছেলেমেয়েদের পথ চলার আদর্শ। আমার কাছে এমন অনেক পরিবারের তথ্য আছে যাদের ছেলে-মেয়েরা এই নোংরা সংস্কৃতি চর্চার কারণে এখন সম্পূর্ণভাবে বিপথগামী হয়ে পড়ছে। মা-বাবা এখন শুধু চোখের পানি ফেলে আর আল্লাহর কাছে দোয়া করে। এই নোংরা সংস্কৃতি এখন মোবাইলের মাধ্যমে সমাজে ভাইরাসের মত ছড়াচ্ছে। অশ্লীল গান-বাজনার জন্য এখন আর সিডির দোকানে যাওয়া লাগে না। মোবাইলের মেমোরিতেই শতশত গান লোড করার ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেতো এমপি থ্রি ফোর নামের কতগুলো রেকর্ডার বাজারে আছেই। দুঃখজনক বিষয় হলো বাচ্চাদের খাবারের বিভিন্ন কোম্পানির চকলেট এবং আচারের প্যাকেটগুলোতেও সুন্দরী মেয়েদের অর্ধনগ্ন ছবি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের চরিত্র নষ্ট করার জন্য যা দরকার সব ষড়যন্ত্রই আজ করা হচ্ছে। যার দরুণ সমাজব্যবস্থা আজ একেবারে ধ্বংসের পথে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে যারা স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের নৈতিকতা গঠনের জন্য কাজ করছে সরকার তাদেরকেও এগুতে দিচ্ছে না। ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী এদেশের ইসলামী ভাবধারায় পরিচালিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন যাবত সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করে আসছে। সংগঠনটি দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। একটা জাতি হয়ে তার নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তারা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা গানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশাত্ববোধ সৃষ্টি করেছে। তারা যেখানে একটি সুস্থ জাতি গঠনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে জাতির অভিভাবক রাষ্ট্র শক্তি তাদের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গত ১৪ নবেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে সাইমুমের পক্ষ থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাদের সব আয়োজন শেষ। কয়েকশ' টিকেটও বিক্রি হয়ে গেছে। বিকাল হওয়ার সাথে সাথে লোকজনের আসা শুরু হলো। হঠাৎ করেই পুলিশের বাধা। এখানে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। পুলিশী বাধায় পন্ড হয়ে যায় সাইমুমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি সরকার কেন বাধা দিচ্ছে। এখানেতো জামায়াত-শিবিরের কোন নেতা এসে ভাষণ দেবে না। পরে সাইমুমের পরিচালকের কাছে ফোন করে জানতে পারলাম তারা কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির কথা বলে তাদেরকে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। সরকারের নিকট আমাদের জানার অধিকার আছে তারা রাষ্ট্রের এমন কি ক্ষতি করেছিল যে, আপনারা তাদেরকে বাধা দিলেন। এর মাধ্যমে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করে সরকার ভারতের সাথে করা সাংস্কৃতিক গোলামী চুক্তির বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর শাহরুখ খানের কিং খান লাইভ ইন ঢাকা-এর মাধ্যমে সরকার সংস্কৃতির চুক্তি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে। ভারত নাকি প্রতিনিয়ত সরকারের উপর চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ভারতকে খুশি করতে সে দেশের বলিউডের নায়ক-নায়িকাদের দিয়েই সূচনা করলেন। শাহরুখের অনুষ্ঠানের পর দেশের বিশিষ্টজনরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেছে। দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করে বাহিরের নোংরা সংস্কৃতি চালুর ষড়যন্ত্র করছে বলে বুদ্ধিজীবী মহল মনে করছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরাও ভারতের নায়িকাদের লেংটামী দেখে হতভম্ভ হয়ে গেছে। যারা পরিবার পরিজন নিয়ে গিয়েছিল এমন কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখে তাদের মাথাও নাকি নিচু হয়ে গিয়েছিল। অন্তর শোবিজ নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একটি মুসলিম দেশে সংস্কৃতির নামে এ ধরনের বেহায়াপনা দেখানোর সাহস তারা কোথায় পেল? এর পিছনে যে সরকারের হাত রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের পরিকল্পনার আলোকেই অন্তর শোবিজ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শাহরুখের পর এবার নাকি তারা ওয়াকা ওয়াকা খ্যাত বিশ্বের অন্যতম হট সিঙ্গার-পারফর্মার শাকিরাকে আনার পরিকল্পনা করছে। শাহরুখের সফল অনুষ্ঠানে তারা নাকি বেজায় খুশি।
গত ১৭ ডিসেম্বরের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- অন্তর শোবিজের পক্ষ থেকে নাকি শাকিরার মুখপাত্রের সাথে তাদের কথা হয়েছে। আগামী মার্চে তারা শাকিরাকে ঢাকার মঞ্চে তুলতে পারবে বলে আশা করছে। শাহরুখ মাতিয়ে গেছে ঢাকা আর শাকিরা এসে মাতাবে সারাদেশ। রাণী মুখার্জীর ছড়িয়ে যাওয়া উত্তাপ শেষ হওয়ার আগেই তারা আনবে শাকিরাকে। শাকিরার অগ্নিঝরা শরীরের উত্তাপ হয়তোবা আরো বেশি হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের শরীরে এখন যে পোশাকটুকু আছে অন্তর শোবিজ এখন তাও খুলে নেয়ার ব্যবস্থা করতেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মত একটি ধর্ম চর্চার প্রতিষ্ঠানও আজ সরকারের চক্রান্তের শিকার। পাশ্চাত্যের নোংরামী এখন এখানেও ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা হলেন মসজিদের ইমাম সাহেবগণ। সেই ইমামদের সামনেও আজ সরকার বিদেশী নর্তকীদের নিয়ে নাচ-গানের আয়োজন করছে। সারাদেশ থেকে ইমাম সাহেবরা আসেন প্রশিক্ষণ নিতে কিভাবে একটি শান্তিময় সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়। মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে ছেলে-মেয়েদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যায়। অসামাজিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে মানুষকে কিভাবে সচেতন করা যায়। কিন্তু সরকার করছে এর উল্টোটা। ইমাম প্রশিক্ষণে এখন নাচগানের আয়োজন করা হচ্ছে। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর নির্লজ্জ কাজ কী হতে পারে। এ জন্য সরকার বেছে নিয়েছে বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী মুসলমান নামধারী ভন্ড শামীম আফজালকে। এই কুলাঙ্গারকে মুসলমানদের মাথার উপর বসিয়েছে। সেখানে বসে সে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আঘাত করে যাচ্ছে মুসলমানদের মূল চেতনার উপর। এসবই হচ্ছে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনার আলোকে। সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন- দেশে এগুলো কী হচ্ছে? সরকার কী এই মুসলিম দেশটির নাম-নিশানা সব মুছে দেবে? সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকার যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন ভারতের বস্তাপচা লেংটা সংস্কৃতি এদেশের মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না। ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংসের হীন চক্রান্ত থেকে সরকার যদি সরে না আসে তাহলে, জনগণ যেকোন সময় রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার মূলত ভারতের পরিকল্পনা। কাদেরকে কখন কিভাবে গ্রেফতার করতে হবে এর ছক ভারত নির্বাচনের পরই এঁকে দিয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভারত শুধু আমাদের সম্পদ লুট আর সীমানা দখলের পরিকল্পনাই করেনি। বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করতে তারা সুদূর প্রসারী এক সূক্ষ্ম পরিকল্পনাও করেছে। যার বাস্তব প্রমাণ বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি। এর মাধ্যমে ভারত তাদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের সরকারের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে ভারতের সাথে করা সাংস্কৃতিক চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু করছে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হলো আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে আসছে দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি ইসলামী সংস্কৃতির চর্চাও। অপসংস্কৃতির উত্তাল সাগরের মধ্যেও এদেশে গড়ে উঠেছে বহু ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা সুস্থ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদেরকে সহযোগিতা না করে উল্টো তাদের চলার পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিতে শুরু করছে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে তাদের জাতিসত্তার পরিচয় তুলে ধরতে চায়। কিন্তু আমরা হলাম এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমদানি করা সংস্কৃতির পূজা করতেই আমরা বেশি ভালবাসি। পাশ্চাত্যের লেংটা সংস্কৃতির চর্চা করে আমরা এখন লেংটা হয়ে পথে বসেছি। সংস্কৃতি চর্চার নামে দেশে আজ যা চলছে তা ভাবতেও কষ্ট লাগে। একটি মুসলিম দেশে সংস্কৃতির নামে যে ধরনের অশ্লীল বেহায়াপনা চালু হয়েছে তা আমাদের জাতিসত্তাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যেন একেবারে ভুলে গিয়েছি আমাদের পরিচয় ও অতীত ইতিহাস। আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের কিছু গোলাম রয়েছে যারা সর্বদাই এ কাজে আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। তারা মুসলমান নামটা ধারণ করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাশ্চাত্যের লেংটা সংস্কৃতি বিস্তারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েও যুব সমাজের নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দেয়া। আর হচ্ছেও তাই। জাতি হিসাবে আমরা আজ একেবারে পঙ্গু। বাসা থেকে বের হয়ে এক কিলোমিটার পথ হাঁটলে এর মধ্যে কমপক্ষে ৩/৪টি সিডির দোকান পড়ে। যেগুলোতে রাখা হয় শুধু চরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল সিনেমা ও নাটকের সিডি। আর এখন তো হলো আকাশ সংস্কৃতির যুগ। ভদ্র ঘরের ছেলেমেয়েদের দোকান থেকে সিডি নিতে হয় না। ডিসের মাধ্যমে টেলিভিশনেই সবকিছু তারা দেখতে পায়। দেশী-বিদেশী অনেক স্যাটেলাইট টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। সুন্দরী মেয়েদের লেংটা ছবি দেখতে কার ভাল না লাগে। আর তার সাথে যদি থাকে আরেকজন সু-দর্শন পুরুষ তাহলে তো হয়ে যায় গুড-বেটার-বেস্ট। লজ্জা-শরম বলতেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তাও আজ সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। আজকালের নাটক সিনেমাগুলোতে যা ইচ্ছে, নায়িকা এমন ধরনের শর্ট পোশাক পরে যাতে তার গোপন অঙ্গগুলো পুরুষে দেখতে পায়। একটা ছেলে একটা অর্ধনগ্ন সুন্দরী মেয়েকে জড়ায়ে ধরে চুমু খাচ্ছে, দুইজনে মিলে ঢলাঢলি করছে, শরীরের কাপড় খুলে পড়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্যগুলো আমাদের মুসলিম পরিবারের সদস্যরা বসে বসে দেখছে। এমনকি মা-বাবা, ভাই-বোন একসাথে বসে আনন্দের সহিত এগুলো উপভোগ করে। ছি....। তাদের কী একটুও লজ্জা করে না। এ নোংরা দৃশ্যগুলো দেখার পর তারা চোখাচোখি বসে কথা বলে কিভাবে। এই সমস্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা কিভাবে ভাল মানুষ হবে। এগুলো দেখার পর একটা ছেলে বা মেয়ে কোনভাবেই সুস্থ থাকতে পারে না। আর বিদেশী সিনেমাগুলোতে তো নায়ক-নায়িকারা পর্দার সামনে হাজির হয় একেবারে উলঙ্গ হয়ে। ভেঙ্গে পড়েছে আজ পরিবার ব্যবস্থা। অধিকাংশ পরিবারগুলোতে এখন শান্তি নেই। অশান্তির আগুন যেন দাউদাউ করে জ্বলছে। ছেলেমেয়েরা আজকাল মা-বাবা বা মুরববীদের কথায় চলে না। তারা এখন অনুসরণ করে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদেরকে। নায়িকা কোন পোশাকটা পরে নৃত্য করেছে সেটাই তারা পরবে। নায়িকা কিভাবে কথা বলেছে তারাও ছেলেদের সাথে সেভাবে বলার চেষ্টা করে। মূলত সিনেমার নায়ক-নায়িকারাই হলো এখন ছেলেমেয়েদের পথ চলার আদর্শ। আমার কাছে এমন অনেক পরিবারের তথ্য আছে যাদের ছেলে-মেয়েরা এই নোংরা সংস্কৃতি চর্চার কারণে এখন সম্পূর্ণভাবে বিপথগামী হয়ে পড়ছে। মা-বাবা এখন শুধু চোখের পানি ফেলে আর আল্লাহর কাছে দোয়া করে। এই নোংরা সংস্কৃতি এখন মোবাইলের মাধ্যমে সমাজে ভাইরাসের মত ছড়াচ্ছে। অশ্লীল গান-বাজনার জন্য এখন আর সিডির দোকানে যাওয়া লাগে না। মোবাইলের মেমোরিতেই শতশত গান লোড করার ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেতো এমপি থ্রি ফোর নামের কতগুলো রেকর্ডার বাজারে আছেই। দুঃখজনক বিষয় হলো বাচ্চাদের খাবারের বিভিন্ন কোম্পানির চকলেট এবং আচারের প্যাকেটগুলোতেও সুন্দরী মেয়েদের অর্ধনগ্ন ছবি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের চরিত্র নষ্ট করার জন্য যা দরকার সব ষড়যন্ত্রই আজ করা হচ্ছে। যার দরুণ সমাজব্যবস্থা আজ একেবারে ধ্বংসের পথে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে যারা স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের নৈতিকতা গঠনের জন্য কাজ করছে সরকার তাদেরকেও এগুতে দিচ্ছে না। ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী এদেশের ইসলামী ভাবধারায় পরিচালিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন যাবত সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করে আসছে। সংগঠনটি দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। একটা জাতি হয়ে তার নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তারা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা গানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশাত্ববোধ সৃষ্টি করেছে। তারা যেখানে একটি সুস্থ জাতি গঠনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে জাতির অভিভাবক রাষ্ট্র শক্তি তাদের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গত ১৪ নবেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে সাইমুমের পক্ষ থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাদের সব আয়োজন শেষ। কয়েকশ' টিকেটও বিক্রি হয়ে গেছে। বিকাল হওয়ার সাথে সাথে লোকজনের আসা শুরু হলো। হঠাৎ করেই পুলিশের বাধা। এখানে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। পুলিশী বাধায় পন্ড হয়ে যায় সাইমুমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি সরকার কেন বাধা দিচ্ছে। এখানেতো জামায়াত-শিবিরের কোন নেতা এসে ভাষণ দেবে না। পরে সাইমুমের পরিচালকের কাছে ফোন করে জানতে পারলাম তারা কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির কথা বলে তাদেরকে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। সরকারের নিকট আমাদের জানার অধিকার আছে তারা রাষ্ট্রের এমন কি ক্ষতি করেছিল যে, আপনারা তাদেরকে বাধা দিলেন। এর মাধ্যমে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করে সরকার ভারতের সাথে করা সাংস্কৃতিক গোলামী চুক্তির বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর শাহরুখ খানের কিং খান লাইভ ইন ঢাকা-এর মাধ্যমে সরকার সংস্কৃতির চুক্তি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে। ভারত নাকি প্রতিনিয়ত সরকারের উপর চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ভারতকে খুশি করতে সে দেশের বলিউডের নায়ক-নায়িকাদের দিয়েই সূচনা করলেন। শাহরুখের অনুষ্ঠানের পর দেশের বিশিষ্টজনরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেছে। দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করে বাহিরের নোংরা সংস্কৃতি চালুর ষড়যন্ত্র করছে বলে বুদ্ধিজীবী মহল মনে করছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরাও ভারতের নায়িকাদের লেংটামী দেখে হতভম্ভ হয়ে গেছে। যারা পরিবার পরিজন নিয়ে গিয়েছিল এমন কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখে তাদের মাথাও নাকি নিচু হয়ে গিয়েছিল। অন্তর শোবিজ নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একটি মুসলিম দেশে সংস্কৃতির নামে এ ধরনের বেহায়াপনা দেখানোর সাহস তারা কোথায় পেল? এর পিছনে যে সরকারের হাত রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের পরিকল্পনার আলোকেই অন্তর শোবিজ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শাহরুখের পর এবার নাকি তারা ওয়াকা ওয়াকা খ্যাত বিশ্বের অন্যতম হট সিঙ্গার-পারফর্মার শাকিরাকে আনার পরিকল্পনা করছে। শাহরুখের সফল অনুষ্ঠানে তারা নাকি বেজায় খুশি।
গত ১৭ ডিসেম্বরের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- অন্তর শোবিজের পক্ষ থেকে নাকি শাকিরার মুখপাত্রের সাথে তাদের কথা হয়েছে। আগামী মার্চে তারা শাকিরাকে ঢাকার মঞ্চে তুলতে পারবে বলে আশা করছে। শাহরুখ মাতিয়ে গেছে ঢাকা আর শাকিরা এসে মাতাবে সারাদেশ। রাণী মুখার্জীর ছড়িয়ে যাওয়া উত্তাপ শেষ হওয়ার আগেই তারা আনবে শাকিরাকে। শাকিরার অগ্নিঝরা শরীরের উত্তাপ হয়তোবা আরো বেশি হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের শরীরে এখন যে পোশাকটুকু আছে অন্তর শোবিজ এখন তাও খুলে নেয়ার ব্যবস্থা করতেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মত একটি ধর্ম চর্চার প্রতিষ্ঠানও আজ সরকারের চক্রান্তের শিকার। পাশ্চাত্যের নোংরামী এখন এখানেও ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা হলেন মসজিদের ইমাম সাহেবগণ। সেই ইমামদের সামনেও আজ সরকার বিদেশী নর্তকীদের নিয়ে নাচ-গানের আয়োজন করছে। সারাদেশ থেকে ইমাম সাহেবরা আসেন প্রশিক্ষণ নিতে কিভাবে একটি শান্তিময় সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়। মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে ছেলে-মেয়েদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যায়। অসামাজিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে মানুষকে কিভাবে সচেতন করা যায়। কিন্তু সরকার করছে এর উল্টোটা। ইমাম প্রশিক্ষণে এখন নাচগানের আয়োজন করা হচ্ছে। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর নির্লজ্জ কাজ কী হতে পারে। এ জন্য সরকার বেছে নিয়েছে বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী মুসলমান নামধারী ভন্ড শামীম আফজালকে। এই কুলাঙ্গারকে মুসলমানদের মাথার উপর বসিয়েছে। সেখানে বসে সে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আঘাত করে যাচ্ছে মুসলমানদের মূল চেতনার উপর। এসবই হচ্ছে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনার আলোকে। সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন- দেশে এগুলো কী হচ্ছে? সরকার কী এই মুসলিম দেশটির নাম-নিশানা সব মুছে দেবে? সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকার যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন ভারতের বস্তাপচা লেংটা সংস্কৃতি এদেশের মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না। ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংসের হীন চক্রান্ত থেকে সরকার যদি সরে না আসে তাহলে, জনগণ যেকোন সময় রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
No comments:
Write comments