Flickr

Wednesday, 29 December 2010

ঋণ শাপে বর না বরে শাপ?

Posted by   on

ঋণ শাপে বর না বরে শাপ?
এন.জি.ও (N.G.O) Non Government Organisation বলতে আমরা বুঝি বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান। আমরা জানি দীর্ঘদিন হল এন.জি.ও গুলো বাংলাদেশে দরিদ্র নিপীড়িত দুঃস্থ, পিছে পড়া অধিকার বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৬কোটি মানুষই এন.জি.ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ডের সাথে পরিচিত। বাংলার সকল দরিদ্র জনগণের ঘরে ঘরে এদের কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, এন.জি.ও-এর নিকট থেকে বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। অনেকের মতে আরও বেশী হতে পারে। এর প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এন.জি.ও গুলো গরীবের বন্ধু, অসহায় শ্রেণীর জন্য বর ইত্যাদি প্রচারিত হওয়ার পর থেকে তথায় গরীব দুঃখী লোকের ভিড় লেগে গেছে। এন.জি.ও সংস্থার দ্বারা বিপদগ্রস্ত অসহায় লোক উপকার পাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে (এন.জি.ও) তাদের সুদের হার বেশী হওয়ায় বরে শাপে হয়ে গেছে। সুদের হার কমান এবং কিস্তির মেয়াদ বেশী করা একান্ত প্রয়োজন যেমন মাসিক কিস্তি হলে ভাল হয়। তাহলে হতভাগ্য দরিদ্র শ্রেণী উপকৃত হতে পারবে এবং এন.জি.ও গুলোর সুনাম অর্জিত হবে। আর অধিক দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ মাপের পদ্ধতি রাখা দরকার। আরও দরকার ঋণের টাকা গ্রহণের তারিখ হতে কমপক্ষে ২ মাস পরে কিস্তি আদায়ের ব্যবস্থা করা। যেহেতু কোন ব্যক্তি যখন অর্থনৈতিক সংকটের সমস্যায় পতিত হয় তখন উপায়ন্তর না পেয়ে অপরের নিকট থেকে ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে তার সমস্যা সমাধানের জন্য বা চাহিদা মেটানোর জন্য অপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হাত পেতে টাকা পয়সা সংগ্রহ করে। এভাবে অর্থ নেয়াকে ঋণ বলে। ঋণের প্রতিশব্দ হতে পারে কর্জ, ধার, দেনা, হাওলাত ইত্যাদি। এই ঋণ কোথায় পাওয়া যায়, তা গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ লোকই জানেন। যেমন ধনী শ্রেণীর লোকের কাছে ঋণ, ব্যাংকের কাছে ঋণ এবং এন.জি.ও গুলোর কাছে ঋণ। ধনী শ্রেণীর লোকদের কাছে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ঋণ পাওয়া কঠিন কাজ। কারণ ধনী শ্রেণীর কাছ থেকে ঋণ নিলে চড়া সুদ দিতে হয় এবং ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়। উপরন্তু সাধারণ মানুষ ধনীক শ্রেণীর কাছে এবং ব্যাংকের কাছে যেতে সাহস পায় না। ফলে সাধারণ লোকজন সহজ পন্থার দিকে এগুতে বাধ্য হয়। এন.জি.ও প্রতিষ্ঠানগুলো ল্যান্ড মর্গেজ বা সম্পত্তি বন্ধক ছাড়াই কিস্তিভিত্তিক ঋণ দেয়ার জন্য ব্যবস্থা চালু করেছে। সাধারণ মানুষ সহজ পদ্ধতির ঋণ সম্মোহনীর টানে এন.জি.ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ পাওয়াকে আশীর্বাদ স্বরূপ বর মনে করছে এবং দলে দলে লোকজন ঝুঁকে পড়ছে। বিষয়টি আমরা সাধারণ ভাষায় বলতে পারি-বরশীতে যেমন কেঁচো লাগিয়ে পানিতে ফেললে পানির মধ্যে কেঁচো আলো ছড়িয়ে মাছকে আকৃষ্ট করে। ক্ষুধার্ত মাছ ঐ কেঁচোকে খাদ্য হিসাবে খেতে এসে আটকে যায়। তদ্রুপ ঋণ নামক বরশীতে দরিদ্র লোকেরা ঋণ গ্রহণ করে আটকে যাচ্ছে। ঋণের জন্য স্বাধীনভাবে চলাফেরার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঋণের কারণে আরাম আয়েশ হারাম হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু, বান্ধব, আনন্দ ভ্রমণ জীবন থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক চিন্তা আর চিন্তা। সাপ্তাহিক কিস্তির চিন্তা। এন.জি.ও প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় স্তব্ধ করেছে জীবন যাত্রা। কিস্তির টাকা পরিশোধ না করতে পেরে অনেকে দেশে-বিদেশে আত্মহত্যা করেছে। ভিটা ছাড়া হয়েছে, বাসস্থানের টিন খুলে নিয়ে গেছে, গরু, ছাগল ধরে নিয়ে গেছে। এরূপ ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। মুরুববীদের মুখে শোনা যায় যে, সেই লোক সবচেয়ে বেশী সুখী যার কোন ঋণ নেই। ঋণে জর্জরিত লোক হলো সবচেয়ে দুখী লোক। ঋণ মানুষকে পঙ্গু করে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে ঋণের ভাল দিকটা খুব কম। পক্ষান্তরে ঋণের বিপক্ষের সমর্থক বেশী। অনেকের মতে ঋণ এসেছিল আমাদের দেশে আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে দেখা যাচ্ছে ঋণ হচ্ছে এক প্রকার অভিশাপ অর্থাৎ ঋণ শাপে বর না হয়ে বরে শাপ রূপে আবির্ভূত হয়েছে।
সামাজিকভাবে ধর্মীয়ভাবে ঋণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে দেখা যায় যে, ঋণ হচ্ছে মন্দের ভাল অর্থাৎ মন্দকে যদি আমরা একটি বিষধর সর্প মনে করি। তাহলে দেখা যায়, একজন সাপুড়ে তার জীবন বাঁচার তাগিদে বিষধর সর্প নিয়ে খেলা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আবার ঐ বিষধর সাপের হাতেই অনেক সময় সাপুড়ের মৃত্যুও হতে দেখা গেছে। কাজেই ঋণ নিয়ে অনেকেই উপকৃত হয়েছে এরকম উদাহরণও আছে। তবে তা নগণ্য হতে পারে। হ্যাঁ, তবে একটি কথা বলা যায়-দক্ষ সাপুড়ে যেমন সাপ নিয়ে খেলা করে অর্থ উপার্জন করে দিবিব সংসার চালিয়ে আরাম আয়েশে আনন্দে দিন কাটায়, সাপ নিয়ে খেলা করায় তার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু অদক্ষ সাপুড়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে করতে অনেক সময় সাপের হাতে মৃত্যু হয়। দক্ষ সাপুড়ের সংখ্যা কম, তদরূপ ঋণ নিয়ে যারা সঠিকভাবে সঠিক পথে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করছে তারাই দক্ষ সাপুড়ের মত লাভবান হতে পেরেছে। আর অ-দক্ষের অবস্থা হয় শোচনীয়, করুণা, মর্মস্পর্শী এবং মৃত্যুপথের যাত্রী ছাড়া আর কিছু নয়। এই ঋণের বিষয় নিয়ে সারাদেশব্যাপী আলাপ আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে। পত্র-পত্রিকায়, বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। অত্র বিষয় নিয়ে সুধী সমাজ, গবেষক, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী মহোদয়গণ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বক্তৃতা, ভাষণ, আলোচনা পর্যালোচনা করে চলেছেন।
যেমন-মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন ‘‘দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যর্থ ক্ষুদ্রঋণ দানকারী এন.জি.ওগুলো’’ (দৈনিক সংবাদ তারিখ-০৭/১১/১০)। আরও বলেছেন ‘‘ক্ষুদ্র ঋণের চোরাবালিতে অসংখ্য মানুষ নিমজ্জিত’’। (কালের কণ্ঠ, তারিখ-০৭/১/১০ ইং), সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহিদ বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সাফল্য অর্জন হয়নি। তাই ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ঘরের টিন খুলে নেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, তারিখ-০৮/১১/২০১০) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দারিদ্র বিমোচনের নামে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দরিদ্র মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে। এ ঋণ নিয়ে কেউ দরিদ্রতা থেকে সর্বাত্মক মুক্তি পাননি। গরীব মানুষের রক্ত চুষে বেশি দিন টেকা যায় না। সেইটাই প্রমাণিত হয়েছে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ,তারিখ-০৬/১২/১০ ইং)
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি যে, স্বাধীনতার পূর্বে সাধারণ মানুষ কেবল ক্ষুধার জ্বালায় এক মুঠো ভাতের চেষ্টা করে আসছিল। প্রয়োজনে তারা মহাজনের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জীবন যাপনের চেষ্টা করত। চড়া সুদে মহাজনের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে পরে আর ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে বহু কৃষক পরিবার। এর বহু নমুনা আছে। এই লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও শোষিত কৃষক প্রজার মুক্তি দাতা হিসেবে উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে আবির্ভুত হয়েছিলেন শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। শেরে বাংলা কৃষক ও প্রজা সাধারণের প্রাণের বন্ধু ছিলেন। তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঋণ শালিশী বোর্ড গঠন করে বঞ্চিতদের, কৃষকদের, দরিদ্র শ্রেণীর লোকজনদের ঋণ থেকে বাঁচার পথ বের করে দিয়েছিলেন। তিনি দরিদ্র মানুষকে ঋণ থেকে মুক্ত করেছিলেন। এই মুহুর্তে আমাদের দেশে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের মত জনদরদী মানুষ প্রয়োজন। ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলা। কিন্তু সে ঋণ যদি দরিদ্র মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দেয় তবে ঐ ঋণের প্রয়োজন কি?

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter