Flickr

Tuesday, 28 December 2010

আওয়ামী লীগ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার

Posted by   on

নূহ (আঃ)-এর কিস্তি পরিষ্কার আওয়ামী লীগ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার
হযরত নূহ (আঃ)-এর কিস্তির গল্প পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে। আল্লাহর এই নবীর সম্প্রদায়ের পথভ্রষ্ট লোকেরা যখন তার নবুয়তকে অস্বীকার করে তাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করলো, আল্লাহর পথ নির্দেশকে অস্বীকার করে অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনকে সামাজিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত করলো এবং নূহ (আঃ) তাদের সৎপথে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেন তখন তিনি আল্লাহর সাহায্য কামনা করলেন। আল্লাহ তাদের উপর গযব নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং নূহ (আঃ) কে প্রলয়ঙ্করী বন্যার খবর দিয়ে একটি বিশাল জাহাজ তৈরির নির্দেশ দিলেন যাতে করে আল্লাহর অনুগত বান্দা এবং পশু-পাখীদের তাতে তুলে প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। কখন সেই মহাপ্লাবন আসবে তাও তিনি তার নবীকে জানিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘‘যখন নির্দেশ আসবে, উনুন বিস্ফোরিত হবে এবং সেখান থেকে প্রবল বেগে তরল পদার্থ বের হতে থাকবে’’ তখন নৌকায় তুলে নেবে এক জোড়া করে প্রত্যেক প্রাণী, তোমার পরিবার, তবে পূর্বে যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আছে সে নয়। আর তুমি জালেমদের ব্যাপারে আমাকে বলো না, তারা ডুববে। যখন তুমি তোমার সাথীদের নিয়ে নৌকায় উঠবে, তখন বলবে সকল প্রশংসা তো আল্লাহর, যিনি জালেম সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করলেন এবং বল আমাকে, হে আমার রব আমাকে কল্যাণকরভাবে অবতরণ করাও আর তুমিই সর্বোত্তম অবতরণকারী’’ (সূরা মু'মিনুন)।
হযরত নূহ (আঃ) কাঠ দিয়ে বিশাল জাহাজ তৈরি করেছিলেন। এই জাহাজ দেখে তার সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত লোকদের উন্মত্ততা আরো বেড়ে গেল। তারা তাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। তারা নূহ (আঃ)-এর কাছে গিয়ে বললো, আমরা যদি আমাদের আচরণ ও জীবন পদ্ধতির সংশোধন না করি তাহলে তুমি আমাদের মহা বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়েছ। আমরা এই বিপর্যয় এখনি দেখতে চাই, তুমি তা নিয়ে আস। তা না হলে আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে গণ্য করবো। তারা নূহকে অবিশ্বাস করলো। তাদের ধারণা, টাইগ্রীস নদী বিধৌত মেসোপটেমিয়া অববাহিকার উজানে সমুদ্র থেকে প্রায় ৮০০-৯০০ মাইল দূরে একটি ভূখন্ড প্লাবিত হয়ে সমুদ্রের রূপ ধারণ করবে এবং তার উপর নূহের তৈরি জাহাজ সদৃশ সুবিশাল এই নৌকা ভাসবে, এটি নিতান্তই হাস্যকর একটি বিষয়। এই নৌকাকে তারা আরো হাস্যকর করার জন্য গণশৌচাগারে পরিণত করলো। নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই গিয়ে সেখানে পায়খানা পেশাব করা শুরু করলো। নূহ বিদ্বেষ তাদের এতই চরমে উঠলো যে, তার তৈরি নৌকায় তারা পায়খানা পেশা করাকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করতে থাকলো। পায়খানা পেশাবে নৌকা শেষ পর্যন্ত কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেল। এই অবস্থায় বয়সের ভারে ন্যুব্জ শতবর্ষী রোগাক্রান্ত এক বৃদ্ধা নাতি-নাতনীর সাহায্য নিয়ে এই পুণ্যে শরিক হবার জন্যে নৌকার কিনারে গিয়ে যেই বাহ্য করতে বসলো তখনি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে মলের ভেতর পড়ে গেল। তার সাথী নাতি-নাতনীরা হায় হায় করতে লাগলো। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো যে, এই বৃদ্ধা মলে ডুবে তার সকল প্রকার জ্বরা, ব্যাধি ও শারীরিক অসামর্থ্যতা থেকে মুক্ত হয়ে যৌবনের উচ্ছবলতা ও শক্তি সামর্থ্য ফিরে পেয়েছে। সে নৌকা থেকে নেমে তার আরোগ্যের কথা সবাইকে জানিয়ে দিল। মুহূর্তে খবরটি ছড়িয়ে পড়লো। নূহের কিস্তির মল এক মহৌষধে পরিণত হলো। আবাল-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মল ভরা কিস্তিতে শরীর ভেজানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগলো। হাজার হাজার লোক এভাবে কিস্তির মল গায়ে মেখে রোগমুক্ত হতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, গায়ে মাখার জন্য মল আর পাওয়া গেল না। তখন লোকজন নৌকা ধুয়ে সে পানি গায়ে মাখল এবং একই ফল পেলো। এভাবে নৌকাটি সম্পূর্ণ পাক-পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত ছিল। মহান আল্লাহ তাদের দিয়েই তার নির্দেশে তার নবীর তৈরি কিস্তি পরিষ্কার করালেন যারা তাকে অপবিত্র করেছিল।
ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলামের গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতনের কথা পাঠকরা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের ন্যায় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার এক ঠুনকো ও বানোয়াট মামলায় তাকে গত আগস্ট মাসে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে গোয়েন্দা অফিসে বসে তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা রুজু করা হয় এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলাবাহুল্য, ইতোপূর্বে জনাব রফিকুল ইসলাম খানকে সরকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিদেশ যাত্রা বন্ধের লক্ষ্যে পত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায় যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জনাব খান চার বছরের শিশু ছিলেন এবং তার পিতা স্বয়ং একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকার তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ মামলা না দিয়ে অপরাপর মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে হয়রানি করা অব্যাহত রেখেছে। সব মামলায় জামিন পাওয়া সত্ত্বেও জেলগেট থেকে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ঐসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। সম্প্রতি এমন একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয় এবং বলা হয় যে, তিনি গত ১৩ নবেম্বর আরামবাগে নটরডেম কলেজের কাছে সদলবলে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসের উপর হামলা করেছেন, ভাঙচুর করেছেন এবং নিজ হাতে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
আদালতে পুলিশ অফিসারের এই বক্তব্য সরকারি উকিলরাও জোরালোভাবে সমর্থন করায় এই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জনাব খানের আইনজীবীরা আদালতে দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করে অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জানান যে, বর্ণিত সময়ে জনাব রফিকুল ইসলাম খান গ্রেফতার অবস্থায় জেল কাস্টোডিতেই ছিলেন। অর্থাৎ অভিযোগটি পুরোপুরিভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশ কর্মকর্তার আনীত অভিযোগ যে মিথ্যা তা আদালতেই প্রতিপন্ন হয়েছে। আদালত এ প্রেক্ষিতে রিমান্ড আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও প্রতিহিংসামূলক একটি অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া ও তা সমর্থন করার জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। দেশের প্রচলিত ফৌজদারী দন্ডবিধি অনুযায়ী এটা তাদের প্রাপ্য ছিল, তারা আদালতের পবিত্র অঙ্গনকে কলুষিত করেছেন। তাদের শাস্তি না দেয়ায় আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কিভাবে সরকার ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বনদ্বীদের অন্ধ করে দেয় এবং তাদের বিবেক-বিবেচনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে তার আরেকটি দৃষ্টান্ত দেখলাম অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলায়। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তার নাগরিকত্বের বিরোধিতা করে আদালতে নিবেদন পেশ করে বলেছিল যে অধ্যাপক গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় দেশে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির ন্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এর প্রমাণ হিসেবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু রিপোর্ট এবং জেনারেল ইয়াহিয়া ও জেনারেল টিক্কা খানের সাথে তার সাক্ষাতের একটি ছবি আদালতে পেশ করা হয়েছিল। বিচারপতি ইসমাইল উদ্দিন সরকার তার রায়ের ২৪-২৫ পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে তার মন্তব্য ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন এভাবে,
“The petitioner (Prof. Golam Azam) also challenged the authenticity of some of the events mentioned in the subsequent publications. Except some news item and one photographs showing that the petitioner net General Tikka Khan or General Yahdya Khan there is nothing to directly implicate the petitioner in any of the atrocities alleged to have been perpetrated by the Pakistan Army or their associates, the Rajakars, Al Badrs or the Al Shams… We do not find anything that the petitioner was in any way directly involved in perpetrating the alleged atrocities during the war of independence.” বিজ্ঞ বিচারপতির মন্তব্য ও বিশ্লেষণ এখানে অত্যন্ত পরিষ্কার। রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনীর সহযোগিতায় সংঘটিত নির্যাতনের স্বপক্ষে পেশকৃত দলিল দস্তাবেজ ও সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রেক্ষাপটে মাননীয় আদালতের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, যুদ্ধপরবর্তী প্রকাশনাসমূহে উল্লেখিত কতিপয় ঘটনার সত্যতা ও যথার্থতাকে আবেদনকারী (অর্থাৎ অধ্যাপক গোলাম আযম) চ্যালেঞ্জ করেছেন। জেনারেল টিক্কা খান অথবা জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাতের ছবি ও কতিপয় নিউজ আইটেম ছাড়া আবেদনকারী অধ্যাপক গোলাম আজমকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস-এর কথিত নির্যাতনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ছাড়া কোনওভাবে সরাসরি জুলুম-নির্যাতন ও বর্বরোচিত কোন কাজে জড়িত ছিলেন এমন কিছু আমরা পাইনি (অনুচ্ছেদ নং ১২৬)।
বলা বাহুল্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনও অপরাধের সাথে যখন তাকে সম্পৃক্ত করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয় তখন এটর্নি জেনারেল পুনরায় তার স্বাধীনতা পরবর্তী আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন যে হাইকোর্ট ডিভিশনে তিনি পর্যাপ্ত কাগজপত্র দাখিল করতে পারেননি। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি অধ্যাপক আবু সায়িদ লিখিত একটি পুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান যে, অধ্যাপক গোলাম আযম হজ্বের পরে (১৯৭২-৭৩) একটি রাজনৈতিক-সামরিক মিশন নিয়ে সউদী আরব সফর করেছেন এবং সউদী সরকার ও লিবীয় সরকারকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তার অভিযোগের সমর্থনে এটর্নি জেনারেল জামায়াত কর্তৃক প্রকাশিত একটি পুস্তকও আদালতে পেশ করেন। পুস্তকটি অধ্যয়ন করে দেখা যায় যে অধ্যাপক গোলাম আযম বিভিন্ন মুসলিম দেশ সফর করেছেন এবং নবসৃষ্ট বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এই পুস্তকের বর্ণনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে সহযোগিতার লক্ষ্যে তিনি এমনকি রাবিতা-ই-আলমে ইসলামীর মাধ্যমে এসব দেশ থেকে আর্থিক সাহায্যও সংগ্রহ করেছেন। এই অবস্থায় বিজ্ঞ আদালত এটর্নি জেনারেল অভিযোগকে গালগল্পভিত্তিক অভিহিত করে (hearsay) পেশকৃত প্রমাণপত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন পাঠকরাই বলুন, আওয়ামী লীগের অভিযোগ আইন ও সততার ধোপে টিকে কিনা। আওয়ামী লীগ করলে আইনজীবী হোক আর রাজনীতিবিদ সম্ভবত: ফ্যাসীবাদ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাদের উন্মাদ করে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য করে তোলে। কেউ কেউ বলে তাদের মাথার বুদ্ধি হাঁটুতে নেমে আসে। রফিকুল ইসলাম খান ও অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় তারা তার প্রমাণ দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের মামলাসমূহেও তারা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে সেই প্রমাণ দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সরকারের হাতে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে, মন্ত্রী মিনিস্টারদের এই ধরনের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জামায়াতের পাঁচ জন শীর্ষ নেতাকে ছয় মাস আগে গ্রেফতার করা হয়। অদ্যাবধি তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটাররা সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ তৈরি করতে পারেননি। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে প্রহসনও হয়েছে। কথিত অকুস্থল থেকে ৭/৮ মাইল দূরের বাসিন্দা দলীয় কর্মীদের এনে তদন্ত দলের সামনে সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে। এমন লোক সাক্ষ্য দিয়েছেন যারা ঘটনার সময় শিশু ছিলেন। সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রসিকিউটার সাহেবরা তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন, তা জয় করেছেন, মিডিয়ার সামনে তা তুলে ধরেছেন। এলাকার নিরপেক্ষ লোকদের কাছে ঘেঁষতে দেননি। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে ট্রায়ালটা ট্রাইব্যুনাল আদালতের নয়, রাস্তায় বা মিডিয়াতে হবে। অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবীদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। সত্য কথা বললে আইনজীবীরাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার শিকার হচ্ছেন। অভিযুক্ত রাজনীতিক, আলেম-উলামা তাদের আত্মীয়-স্বজন, আইনজীবী সবাই এখন সরকারি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দেশ-বিদেশের সাথে তাদের যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না। গোয়েন্দারা তাদের অনুসরণ ও হয়রানি করছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেশে তারা পাচ্ছে না, বিভিন্ন রাষ্ট্রের আর্কাইভ থেকে সেগুলো সরকার জোগাড় করার চেষ্টা করছেন। তার এই তথ্যটি অদ্ভুত। অপরাধ ঘটেছে বাংলাদেশের ভূখন্ডে আর তার প্রমাণ রয়েছে এশিয়া ইউরোপ আফ্রিকা আমেরিকার বিভিন্ন দেশের আর্কাইভে। মাথা খারাপ হয়ে যায়নি এ ধরনের কেউ কি একথা বিশ্বাস করতে পারেন? যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল হয়েছে। মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে বিচার নিয়ে, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এবং অভিযুক্ত ও সম্ভাব্য অভিযুক্তদের নিয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন তাতে এই ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজন ও যৌক্তিকতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হয়। মামলা দিয়েও সরকার আশ্বস্ত হতে পারছেন বলে মনে হয় না। রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে অভিযুক্ত নেতাদের চরিত্র হননের লক্ষ্যে যে কসরৎ পরিলক্ষিত হচ্ছে কোনও সভ্য দেশে তা দেখা যায় না। বিচার যদি রাস্তায় আর মিডিয়ায় করতে হয় তাহলে আদালতের প্রয়োজন কি? আবার বিচার বিভাগ সম্পর্কে টিআইবি যে জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা দেখার পর বিবেকসম্পন্ন যে কেউই এখন বলতে বাধ্য হবে যে, এই দেশে এই সরকারের আমলে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। ইনসাফ ও আদলের পরিবেশ এখানে অনুপস্থিত। কাজেই যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলো জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক কোনও বিচারালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়াই বাঞ্চনীয়। আমার মনে হচ্ছে সরকার যে পথে যাচ্ছে, স্বখাত সলিলেই তাদের ডুবতে হবে। আওয়ামী লীগের মল আওয়ামী লীগেই পরিষ্কার করবে। দুনিয়াকে ধোঁকা দেয়ার কাজ বেশি দিন চলতে পারে না।
শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেছিলেন। এ জন্য ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকারিতা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকা গত ২৫ ডিসেম্বর' বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার সময় যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী নিরেনবার্গের পরামর্শ নিয়েছিলেন শীর্ষক একটি নিবন্ধ ছেপেছে, এই নিবন্ধে কি পরিস্থিতিতে এবং কোন দর্শনের ভিত্তিতে শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বিধৃত করা হয়েছে। ক্ষমাও বিচারের একটা অংশ। শেখ মুজিবের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার মরহুম পিতা প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাকে অস্বীকার করে মূল যুদ্ধাপরাধীদের পরিবর্তে তার এ দেশীয় রাজনৈতিক প্রতিদ্বনদ্বীদের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পিতার আমলে প্রণীত আইনে বিচার শুরু করেছেন। তার প্রজ্ঞার প্রশংসা না করে পারা যায় না। কিন্তু বিচার কয়বার হয়। তার শাসনামলের দু'বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। দালাল আইনে এ দেশে কাদের কাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের তালিকা অদ্যাবধি তারা তৈরি করতে পারেননি। যাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই কখনো থানায় আসেনি ৪০ বছর পর মরা হাড়গোড় দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও সাক্ষ্য প্রমাণ যোগাতে প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। এতে যেমন স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতিমালা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হচ্ছে তেমনি জনমনে ক্ষোভ বিক্ষোভও দানা বেঁধে উঠছে। হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস সৃষ্টি প্রভৃতির মাধমে সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাহাড় সৃষ্টি করে চলেছে সেখানে ৪০ বছর আগের মানবতাবিরোধী অপরাধের বানোয়াট অভিযোগে রাজনৈতিক প্রতিদ্বনদ্বীদের বিচারের নামে প্রহসন ক্ষমতাসীনদের দেউলিয়াপনাই শুধু নয়, আধিপত্যবাদী শক্তির ছত্রছায়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নির্লজ্জ অনুশীলন বলেই মনে হয়।
যুদ্ধাপরাধ আইনে স্বচ্ছ বিচারের বিশ্বস্বীকৃত মানদন্ডের অনুপস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন সিনেটর জজ বুজম্যান সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে একটা চিঠি লিখেছেন। চিঠিটির বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী ঘরানার পত্রিকাগুলো সম্ভবত: লজ্জায় তা ছাপেনি। এর আগে আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশনসহ বিশ্বের খ্যাতনামা আইনজ্ঞ এবং যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর বিভিন্ন ত্রুটি ও অমানবিক ধারার উল্লেখ করে সংশোধনীর সুস্পষ্ট সুপারিশ পেশ করেছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের প্রতিনিধি ড. স্টিফান ফ্রোয়েন প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, "The trial must meet the international standareds and due process must be ensured where an accused has the right to depend and appel. It should be an open trial and observers have access to it. Some journalists from Europe world come to see and report the trial proceedings." এর অর্থ সোজা। বিচারের আন্তর্জাতিক মান বজায় না থাকলে এই বিচার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থন ও আপিলের সুবিধা থাকতে হবে। এই বিচার হতে হবে উন্মুক্ত এবং তাতে পর্যবেক্ষকদের উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইউরোপের কিছু সাংবাদিকও বিচার প্রক্রিয়া দেখার ও রিপোর্ট করার জন্য এতে উপস্থিত থাকবেন। তার প্রস্তাবকে আমি চমৎকার প্রস্তাব বলে মনে করি। সরকার এক্ষেত্রে যে জট সৃষ্টি করেছেন তা তাদেরই এখন খুলে দিতে হবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter