শিশু অপরাধী গ্রেপ্তার হলে আইনি ধারা অনুসরণ করেই তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও মানবিক বোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতেও সরকার ও সংশিস্নষ্ট বিভাগকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
অধিক জনসংখ্যা ও নানামুখী সমস্যা-সঙ্কটের ঘূর্ণিপাকে পড়ে আমাদের দেশে সামাজিক অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিক চাহিদা, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, দ্রব্যমূল্যের উধর্্বগতি, সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতাসহ আরো নানা কারণে অল্প বয়সী শিশু-কিশোররাও সচেতন অথবা অসচেতনভাবে কিংবা কারো দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে অনেক রকম অন্যায় ও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অল্প বয়সী শিশু-কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও সার্বিক বিষয় সম্পর্কে তাদের বাসত্দব অভিজ্ঞতা কম। তারা অনেকটা ঝোঁকের মাথায়, কোনো প্রলোভনে পড়ে অথবা কৌতূহলী হয়ে অবচেতনভাবেই অন্যায় কাজে করে। তাই আইনের দৃষ্টিতে তাদের অপরাধ ৰমাযোগ্য এবং রাষ্ট্র তাকে এ অপরাধপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দেয়। ফলে শিশু ও কিশোরদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী তাদের অনেককে পারিবারিক হেফাজতে অথবা প্রয়োজনে সংশোধনাগারে প্রেরণ করে যা অভিযুক্ত শিশুটির জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়ক হয়। কিন্তু শিশু-কিশোরদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক আলাদা আইন ও নির্দেশিত বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনীর অজ্ঞতা, অদৰতা, দায়িত্বের প্রতি অবহেলা ও এক ধরনের দায়সারা মনোভাব এবং একই সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের অসচেতনতার কারণে অনেক শিশু ও কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের আইনি বিচারের খপ্পরে পড়ে যায়। এতে শিশু বা কিশোরটি অপরাধ থেকে নিজেকে সংশোধনের সুযোগ না পেয়ে এবং প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সংসর্গে এসে আরো ভয়ানক অপরাধীতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে যার নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়ে গোটা সমাজব্যবস্থার ওপর। এতে নাগরিক নিরাপত্তা বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সুতরাং আমরা মনে করি, আগামীতে দেশের অভ্যনত্দরে সার্বিক নিরাপত্তা অব্যাহত রাখতে হলে সংশিস্নষ্ট মহলকে অতি সত্ত্বর বিষয়টির দিকে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
শিশু আইনের ৪৮ ধারা অনুযায়ী কোনো শিশুকে গ্রেপ্তারের পরপরই তার অভিভাবককে ডেকে এনে জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে একই আইনের ৩১ ধারায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তা শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জামিনের ব্যবস্থা করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে জামিন না হলে ওই শিশুর সামাজিক তদনত্দ প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দাখিল করার দায়িত্বও ওই কর্মকর্তার। কিন্তু নানা কারণ ও অজ্ঞতায় এসব নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না। তথ্যানুযায়ী সারা দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মাত্র ২১টি জেলায় প্রবেশন অফিসার রয়েছে। কিশোর বিচারব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায় থেকে শিশুদের আটকে রাখার পরিবর্তে পারিবারিক পরিমণ্ডলে সমাজের অভ্যনত্দরেই বেড়ে উঠতে দেয়ার নির্দেশ থাকলেও পুলিশ বাহিনী তাদের কাজের ঝামেলা এড়ানোর জন্য কম বয়সী এসব অপরাধীদের বেশি বয়স দেখিয়ে কারাগারে চালান করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারা সহজেই বড়দের আইনি বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে। যা একদিকে আইনি ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন অন্যদিকে কিশোরদের অপরাধ মনোভাবকে আরো উৎসাহিত করে বলে ধারণা করা যায়। কাজের প্রতি কারো অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে সমাজে ও দেশে অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সুতরাং সংশিস্নষ্ট মহল এ ব্যাপারে ত্বরিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎপর হবে বলে আমরা আশা করি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং শিশু আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী ১৬ বছরের কম এবং দেশের অন্যান্য আইনে ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। সুতরাং শিশু অপরাধী গ্রেপ্তার হলে আইনি ধারা অনুসরণ করেই তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও মানবিক বোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতেও সরকার ও সংশিস্নষ্ট বিভাগকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
No comments:
Write comments