Flickr

Sunday, 27 September 2015

জাতীয় লজ্জা

Posted by   on

মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সনদ ব্যবহার করে সুযোগ-সুবিধা নেয়া প্রতারণার শামিল
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখেন, তারা সব দেশেই বিশেষভাবে সম্মানিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবদান রেখেছেন, তাদের জাতি সব সময়ই সম্মানের সাথে স্মরণ করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা স্বাধীন দেশের মানুষের নাগরিক কর্তব্য। তবে আমরা এ কথা জানি যে, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা মান-সম্মান কিংবা খেতাবের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন উপহার দেয়ার জন্য। কিন্তু আজ স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরে এসে দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কিছু মুক্তিযোদ্ধা 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দটির সঙ্গে সুবিচার করতে পারছেন না। এরা 'মুক্তিযুদ্ধ' ও 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চান, এমনকি দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করতেও কুণ্ঠিত হন না। দেশের জনগণ এমন তৎপরতা দেখতে চায় না।

 ২৭ আগস্ট তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় 'এ কী করলেন ১০ মুক্তিযোদ্ধা'! শিরোনামে একটি খবর মুঙ্গ্রিত হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়, সরকারি খাল ভরাট করে মুক্তিযুদ্ধের দুজন সেক্টর কমান্ডারের নামে মার্কেট নির্মাণ করেছেন ১০ মুক্তিযোদ্ধা। ভরাট করা জায়গার ২৬ শতাংশ প্লট আকারেও বিক্রি করেছেন তারা। নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর প্রান্তে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এই খাল। এটি সিটি করপোরেশনের ১৮ নাম্বার ওয়ার্ডে শীতলক্ষ্যা 'ম' খ- মৌজার শহীদনগর এলাকায় পড়েছে। এ খালে এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নৌকা পণ্য খালাসের জন্য নোঙর করত। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ৩ বছর ধরে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী থেকে বালু এনে খালটির ৩০০ শতাংশ ভরাট করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নীরব ছিলেন। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে এ অবৈধ কাজ করা হয়।

আমরা জানি যে, অবৈধভাবে নদী বা খাল ভরাট করা বড় অপরাধ। এতে শুধু দেশ ও জনগণেরই ক্ষতি হয় না, পরিবেশ দূষণ ও জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয় এতে। কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না। আর এমন কাজের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জড়িত থাকা খুবই বেমানান ঠেকে। সদর উপজেলার ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ বলেন, '২০০৯-২০১০ অর্থবছরে এক বছরের জন্য ১৫৬ শতাংশ খাল মাছ চাষের জন্য ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা ইজারা নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই ইজারা আর নবায়ন করা হয়নি।' তিনি বলেন, 'খাল ভরাটের ঘটনা আমাদের অগোচরে ঘটেছে। অভিযোগ পেয়ে আমরা ১৬ আগস্ট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিগগিরই একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাব'। এখন দেখার বিষয় হলো_ কর্তৃপক্ষ সঙ্গত পদক্ষেপ গ্রহণে কতটা সমর্থ হন। আর ওই ১০ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বোধোদয় ঘটুক, সেটাই আমাদের কাম্য।

 মুক্তিযুদ্ধ একটি স্পর্শকাতর ও জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকেই এর অপব্যবহার করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ নিয়ে অনেকেই রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। নিয়েছে সরকারি চাকরিও। এ অভিযোগ অনেক পুরনো হলেও এবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। সঙ্গত কারণেই দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন অনিবার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।

 মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে সুযোগ-সুবিধা নেয়া কেবল প্রতারণারই শামিল নয়, গুরুতর অপরাধও। অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে অপরাধীরা জাল সনদ সংগ্রহ করেছে। বিস্ময় জাগে একজন মানুষ কী করে অনৈতিকতার আশ্রয় নেন। অবশ্য এ দেশে এখন আর নৈতিকতার কোনো বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য।
এ দেশে কেবল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাই নয়, অনেক কিছুই এখন ভুয়া, জাল বা ভেজাল। অবৈধ বস্নাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ নামসর্বস্ব হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কেবল তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুয়া ডাক্তার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে 'বিশেষজ্ঞ' ডাক্তারও রয়েছেন। এ ছাড়াও চারদিকে কেবল ভেজাল, বিষাক্ত আর মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, এসব থেকে বাঁচার উপায় কী। এসব অপরাধের জন্য আইন রয়েছে, তবে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা যে পার পেয়ে যায় এর আগে প্রয়োগকৃত অনেক আইনের ক্ষেত্রেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশে আইন আছে অথচ আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই, তা কিভাবে মেনে নেয়া যায়। এমন পরিস্থিতি দেশের আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

 আমার প্রত্যাশা, যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে সরকারের কাছ থেকে সুবিদা নিচ্ছেন তাদের কেবল সনদ বাতিল করলেই হবে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ এটা কেবল ব্যক্তির অপরাধই নয়, জাতীয় লজ্জা।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter