হলমার্ক গ্রুপকে দেয়া সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিই। অথচ মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো ব্যাংকিং খাতেই ধস নেমেছে। এটা নিয়ে হৈচৈ করারও কিছু নেই। সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা চালিয়ে দেশের ক্ষতি করছে। এটা বড় কিছু নয়। তিনি আরো বলেন, দেশের সংবাদমাধ্যমেরও সংস্কারের (রিফর্ম) দরকার আছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ইউএসএআইডি, প্রগতি ও এমআরডিআই আয়োজিত ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর এসব বক্তব্য শুনে মনে হয়, তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আর সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হিসেবে তিনি যদি কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে বলতে হবে- কানার হাতে কুড়াল তুলে দেয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রগতি এবং ইউএসএআইডি'র মিশন ডিরেক্টর রিচার্ড গ্রিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম, টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডি. নেটের নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান। আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংকের সততা বিভাগ জিহাদি মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এই জিহাদি মনোভাব নিয়ে কাজ করা যাবে না। বিশ্বব্যাংক যা বলে, তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিহীন। এটি দুর্নীতি প্রতিরোধের বিরোধী হিসেবে কাজ করে। ওই সেকশনটাকে সংশোধন করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কালো টাকা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। কালো টাকা থাকবেই। এটা মেনে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।'
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শেয়ারবাজারে যে দুর্নীতি হয়েছে, এ জন্য দুদকে কেউ সাক্ষী দিচ্ছে না। সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা দুর্নীতি বন্ধে আইসিটি বা তথ্য প্রক্রিয়া সাহায্য করবে। কিন্তু সিস্টেমেটিক দুর্নীতি বন্ধে আইসিটি কি করবে- এমন প্রশ্ন রেখে হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে যদি অনুমতি নিতে হয় তাহলে দুর্নীতি কিভাবে বন্ধ হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিচারপতিকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ছোট ধরনের দুর্নীতি কমে এসেছে, এখন বড় ধরনের দুর্নীতি কমানোর জন্য বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। গোলামুর রহমান বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হতে পারে। দুর্নীতি এক দিনে আসেনি। তাই দুর্নীতি একদিনে, এক মাসে বা এক বছরে কমে যাবে না। যদি বছরে ১০০ জনের শাস্তি হয়, তাহলে এটা একটা উদাহরণ হতে পারে।' গোলামুর রহমান শব্দের অর্থ রহমানের গোলাম, দাস, বান্দাহ। কিন্তু জাতির আশা-ভরসার স্থলে বসার পর এই রহমানের গোলাম সরকারের গোলামে পরিণত হয়েছে। যেখানে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে পাহাড়সম অপকর্মের জন্য জিজ্ঞাসিত হতে হবে, সেখানে তাকে প্রধান অতিথি করে যে নজির স্থাপন করেছে, তা অবাক করার বিষয় বটে। যে মন্ত্রী তার কৃতকর্ম ও বেফাঁস বক্তব্যের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, সে অর্থমন্ত্রীকে ওই অনুষ্ঠানে কি তোয়াজই না করছেন দুদকের এই অপরিণামদর্শী কর্তাব্যক্তি। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার এটি অনন্য নজির নয় কি। সচেতন মানুষ তো এমনটাই মনে করছে। সর্বত্র যা টক অব দ্য টাউনে পরিণত।
দুর্নীতি ও জালিয়াতির এ ঘটনাটি মিডিয়া উপস্থাপনে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য পুরো মিডিয়া যেখানে ধন্যবাদ পাবে, সেখানে অর্থমন্ত্রী উল্টো মিডিয়াকে এক হাত দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন। তিনি এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে বলে অপরিণামদর্শী মন্তব্য করেছেন। দিনি রিফর্ম বা সংস্কারের কথা বলে সেটা দুর্নীতি সহায়ক মিডিয়া সংস্কারের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নিশ্চয়। মিডিয়াকে সঠিক, বাস্তব সত্য পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিই তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। তার কথায় তাকে অর্থমন্ত্রী না বলে অথর্ব মন্ত্রী বলাই মনে হয় অধিক যুক্তিযুক্ত। সংসদে তার এসব কথা নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাই তাকে তুলোধুনো করেছেন। ফলে তিনি দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে নিষ্কৃতির পাওয়ার চেষ্টা করছেন। দুর্নীতি তো দুর্নীতিই, সেটা এক টাকা হোক আর ৪ হাজার কোটি টাকা হোক। একে ভিন্ন চোখে দেখা আর উপস্থাপনের চেষ্টা দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও লালনের নামান্তর। এটা সত্য, এটাই বাস্তব। এটা সবাই জানে-বোঝে। এটা বুঝতে বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। লবণ-ভাত খাওয়া যে কেউ তা সহজে বুঝতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদের মতে, এ ক্ষেত্রে এভাবে ঋণ দেয়ায় সঠিক নিয়ম পালন করা হয়নি। তাই এটি স্পষ্ট দুর্নীতি। তার মতে, ব্যাংককে এমনিতেই তারল্য সংকট চলছে, তার ওপর এমন ঘটনা ব্যাংকে লেনদেনকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে মানুষ ব্যাংক বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। তার মতে, অর্থ নিরাপত্তা খোঁজে। সেখানে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাধার প্রাচীর তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, অর্থমন্ত্রী ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাকে তেমন কিছু ঘটনা নয় বলে উড়িয়ে দেয়ায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি তিনি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন? ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করা হবে, আর বাকি টাকার কি হবে, তা কিন্তু তিনি বলেননি। তা হলে কি সেটা দুর্বৃত্তরা হজম করবে নেবে? এভাবে জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ হবে?
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলে এবং পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা ওই ব্যাংকের কাজ নয় বলে মন্ত্রী কেন হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, এখন আর সেটাও বোদ্ধাদের কাছে অজানা নয়। কেন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেটা তো আজ ষোলো আনা পরিষ্কার। হঠাৎ কেন তিনি মিডিয়ার সংস্কার দাবি করলেন, সেটা বুঝতে কারো জজ-ব্যারিস্টার হতে হবে না। দুদক কেন সঙ্গে সঙ্গে হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্র তৎক্ষণাৎ সিজ না করে অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে সেমিনারে মনোনিবেশ করেছে-সে এক প্রশ্ন বটে। অনেকের মতে, দুদক সময়ক্ষেপণ করে দুর্নীতিবাজদের কাগজপত্রের বৈধতা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এই কাগজগুলো সিজ করলে ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছে, তা জানা যেত। এখন সুযোগ পেয়ে তারা আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র তৈরি করে নেবে। এতে বেঁচে যাবে রাঘব-বোয়ালরা। কাগজপত্র সঠিক না থাকলে কার কথা, কার ফোন এবং কার নির্দেশে এমনটা করতে হয়েছে- তা বেরিয়ে আসত। কাগজ ঠিক থাকলে সেখানে ইচ্ছা থাকলেও কারো কিছু করার নেই। সোনালী ব্যাংকের অডিট কেন এবং কার কারণে ঢিলে হয়েছে- খুঁজে বের করতে হবে তাও। কে বা কারা এ জন্য কলকাঠি নেড়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। হলমার্কের কর্ণধার বলেছেন, তিনি এর ২০ গুণ অর্থের মালিক। ভালো কথা। তিনি এ অর্থের মালিক হওয়া দোষের কিছু নয়। তবে তা তিনি বৈধ না অবৈধ পথে কামিয়েছেন, তা দেখার আছে বটে। আর বৈধ হলে সেটায় তিনি ট্যাক্স দিয়েছেন কিনা, তা এনবিআরকে ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আশার কথা, দেশে আইন করে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও তার বাবার ছবি টাঙ্গানোর নিয়ম করা হয়েছে, সেখানে হলমার্কের কর্ণধারের অফিসে তা না করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ছবি টাঙ্গানোর মাজেজা দেশ ও জাতি জানতে চায়। একটা লোন পেতে তার সমপরিমাণ সম্পদ বা তারও বেশি সম্পদ ব্যাংককে গ্যারান্টি হিসেবে দিতে হয়। দেখা হয় ব্যাংক লেনদেনের ইতিবৃত্ত। ম্যানেজার, অফিসার, পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ-কার কত লোন দেয়ার এখতিয়ার, সে সীমাও বেঁধে দেয়া আছে। এটার বদৌলতে লোন পাওয়া যায়। হলমার্কের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়েছে কিনা, তা খোলাসা হয়নি আজও। সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে মানুষ বলাবলি করছে। করছে সন্দেহ। হলমার্কের লোকজনের বৈশাখী টিভির সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়া এবং পরে হাতে-পায়ে ধরার পর সেই সন্দেহ আরো বেড়েছে। হলমার্কের লোকজনের মিডিয়ার ওপর হামলে পড়া আর অর্থমন্ত্রীর সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্যে কোথায় যেন একটা মিল যাওয়া যায়। আর সেটা হলো, আসল রহস্য উ ঘাটনে বাধার প্রাচীর তৈরি করা। সাংবাদিকরা এমনটাই মনে করছেন। তারা আরো মনে করছেন, কাজটা করেছে ওপর তলার লোকজন। অথচ এ জন্য বলি দেয়া হচ্ছে বা হবে অসহায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে আসল চোরের দল। ঘটনার পেছনের চোররা ধরা না পড়লে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন ঘটনা রোখা যাবে না। তবে সন্দেহ করা হয়, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এমন একজন সদস্যকে টিভিতে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। ঘটনার পর তার চেহারায় চোর চোর ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মানুষ বলাবলি করছে। পাশাপাশি তার কথায় রহস্যের গন্ধ মিলছে। ঘটনা অনেকটা ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না'-এর মতো। যিনি কথায় কথায় দেশ ও জাতিকে নীতিবাক্য শোনান, তার আমলে এমন ঘটনা ঘটল, আর তিনি তা জানেন না- এটা কোনো বেকুফও বিশ্বাস করবে না। শুধু পরিচালনা পর্ষদ নয়, পুরো পারিষদকে এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সময়ের দাবি। এখানে কারো দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী, গবর্নর থেকে লোন পাস করা পরিষদবর্গ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, এমন লোকজন লোনের জন্য নির্দেশ বা চাপ দিলে তা না দিয়ে পারে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার এ জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝতে পেরেছিল গত এপ্রিলেই। ফলে রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করতে গত মে মাসে পরিদর্শক দল পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্ত চলাকালে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রূপসী বাংলা শাখায় উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনি তদন্ত দলের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। উপদেষ্টার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করার কথা বলে তিনি তাদের নিজের বিজনেস কার্ডটিও দেন। রূপসী বাংলা শাখায় গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম চালালেও সে সময় হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে প্রকাশ করা হয়নি। বলা যায়, হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনাটি সে সময়ই উন্মোচিত হতে দেয়া হয়নি ওপর মহলের হস্তক্ষেপে। এই জালিয়াতি ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায়, এ জন্য ওই মহলটি শুধু সোনালী ব্যাংকেই হস্তক্ষেপ করেনি, বাংলাদেশ ব্যাংককেও প্রভাবিত করেছে। সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের প্রতিটি শাখা বছরে দুবার নিরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় নিরীক্ষা করা হয়নি! নিরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। নিয়মিত নিরীক্ষা করা হলে অনিয়ম বেরিয়ে আসত। আবার নিয়মানুযায়ী, কোনো কর্মকর্তার এক শাখায় তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়। রূপসী বাংলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমানকে পদোন্নতি দেয়ার পরও রূপসী বাংলা শাখায় রাখা হয়। প্রায় পাঁচ বছর তিনি একই শাখায় কর্মরত থাকেন। তাকে রেখে দেয়া হয় জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনরা।
সরকারের স্বার্থ রক্ষাকারী দুদককে মনে রাখতে হবে, অভয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য নিতে হবে। আর ধরতে হবে সেই চোরদের, যার প্রভাব খাটিয়ে এই অপকর্ম সংঘটিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ঘুণে ধরা এ সমাজের অপরাধ প্রবণতা কমাতে হলে ধরতে হবে সমাজের ওপর তলার চোরদের। ছিঁচকে চোরদের ধরে লাভ নেই। বরং এদের ফাঁসিয়ে এরা পার পেয়ে যায়। আর এভাবে পার পেয়ে যায় বলেই সমাজে অপরাধ বাড়ছে বৈ কমছে না। অপরাধ কমাতে হলে একটু কষ্ট হলেও দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে নির্মোহভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ পাবে না দুর্বৃত্তরা। দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে দুদককেই নিয়ামক শক্তি মনে করে দেশবাসী। এত কিছুর পরও মানুষ ভরসা করতে চায় যে, দুদক ঘুরে দাঁড়াবে। পরিচয় দেবে মেরুদন্ড সোজা আছে এখনো। নখর-দন্তসম্পন্ন বাঘ বলতে যা বোঝায়, তার পুরোটা নিয়ে দুদক কাজ করছে। দুদকের দায়িত্বশীলদের মাথায় রাখতে হবে, দুর্নীতি যে করে, তাকে পদ দিয়ে যতদিন বিচার করা হবে, দেশে ততদিন দুর্নীতি থাকবে। দুর্নীতিবাজ যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে যতক্ষণ পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো না যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দম্ভকে গুঁড়িয়ে দেয়া যাবে না- ততক্ষণ পর্যন্ত এ দেশ ও জাতিকে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দেয়া যাবে না। আর সেটা না পারলে যারা এ জায়গায় বসে আছেন, তারা জাতির অন্ন ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করছেন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।