Flickr

Wednesday, 7 October 2015

হঠাৎ মারমুখী পুলিশ

Posted by   on

মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছুদের বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি

হঠাৎ মারমুখী পুলিশ

 
ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে পিপার স্প্রে নিক্ষেপেরও। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলিও ছুড়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে শাহবাগে সড়ক অবরোধের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কাওরানবাজারে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশের বাধায় কাওরানবাজার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে এসে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে আজ থেকে সারা দেশে সকল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ভর্তিচ্ছু ও ঢাকা মেডিক্যালের শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা মিছিল করে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে সার্ক ফোয়ারার পাশে প্রথমে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। বাধা টপকে কিছুদূর সামনে এগোবার পর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের ব্যারিকেডে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েন। কিছু শিক্ষার্থী সড়কেই বসে পড়েন। এ সময় রুম্মান নামে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেন পুলিশ ওই শিক্ষার্থীর মুখে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করায় তিনি আহত হয়েছেন। কোহিনূর বেগম নামে একজন অভিভাবক বলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাখালী অভিমুখে যাওয়ার পথে পুলিশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মুখে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে তাদের আহত করেছে। বেশ কয়েকজনকে লাঠিচার্জ করে আহত করেছে। কিন্তু এভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের আন্দোলন থেকে নিবৃত করা যাবে না। বাবুল বিশ্বাস নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদের দাবি আদায়ের পথ থেকে সরানো যাবে না। তাদের আন্দোলন চলছে চলবে। তবে উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা লাঠিচার্জ ও পিপার স্প্রে নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেন। প্রায় বিশ মিনিট রাস্তায় অবস্থান করার পর পুলিশ হঠাৎই মারমুখী হয়ে উঠে। ফার্মগেট থেকে আসা একদল পুলিশ শুরু করে লাঠিচার্জ। এ সময় ভয়ে আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী কান্না জুড়ে দেন। সাধারণ পথচারীরাও পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন। একসময় পিছু হটেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে তারা শাহবাগের দিকে যেতে থাকেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক ও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক আন্দোলনকারীর এই মিছিল শাহবাগ থানার সামনে আসলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের বাধা দেয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এতে শাহবাগের সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। তবে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেয়নি আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রতিটি রাস্তার মুখে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল)-এর শিক্ষার্থীরা শাহবাগে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। বিএসএমএমইউ’র শিক্ষার্থী ডা. মীরা রাবেয়া সাংবাদিকদের বলেন, ডাক্তারি পেশা মহান পেশা। এই সৎ পেশায় যোগ্যতা সম্পন্নদেরই আসা উচিত। কিন্তু সমপ্রতি যারা মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছে তারা অসৎ ডাক্তার হবে। ভবিষ্যতে এসব ডাক্তাররা সৎ মানুষ হিসেবে সেবা করতে পারবে না। তিনি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। এদিকে বিকালে শহীদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে সকল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কর্মসূচি ঘোষণা করেন সলিমুল্লাহ মুসলিম মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজ্জাকুল ইসলাম। একই সঙ্গে আরেক সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, আজ সকাল ১১টায় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাবেন তারা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। আমরা তাকে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ দেখাতে চাই। এরপর শহীদ মিনারে এসে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।
প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন: অন্যদিকে মেডিক্যালে পুনঃপরীক্ষার দাবিসহ চার দফা দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকা ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়েছে। গতকাল দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধর্মঘট পালিত হয়। দেশব্যাপী এই ধর্মঘটের সামগ্রিক অবস্থা জানিয়ে বেলা দেড়টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন জোট দুটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবিব রুমন বলেন, আমাদের ডাকা ধর্মঘট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে নওগাঁ, কুষ্টিয়া এবং বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়েছে নেতাকর্মীরা। তারপরও সেসব স্থানেও ধর্মঘট পালিত হয়েছে। তিনি পুনরায় মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আগামী ১২ই অক্টোবর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদিও আর কোন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয় তাহলে পরীক্ষার পরের দিন থেকে ওই প্রতিষ্ঠান অচল করে দেয়া হবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter