Flickr

Monday, 5 October 2015

সীমান্তে বিএসএফ এর গুলীতে আর কত প্রাণ ঝরবে!

Posted by   on

সীমান্তে বিএসএফ এর গুলীতে আর কত প্রাণ ঝরবে! সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীবাহিনী বিএসএফ-এর আগ্রাসী তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাখির মতো গুলী করে নিরীহ বাংলাদেশী মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয় বিএসএফ। যে কোন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে আগ্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে বাংলাদেশীদের। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির  কারণে সীমান্ত এলাকায় মানুষ হত্যার মহা উৎসব চালিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে বিএসএফ। সরকারের নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকে জোড়ালো প্রতিবাদ না করায় বিএসএফ যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জয়পুরহাটের সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর গ্রামে বিএসএফ এর গুলীতে সায়েম উদ্দিন নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন বলেন, সীমান্তবর্তী এক পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর গুলী চালিয়েছে। জয়পুরহাটের সায়েম হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে ভারতীয় রক্ষীবাহিনী বিএসএফ ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরের চাপসা সীমান্তে গুলী করে আরও তাজা দুটি প্রাণ কেড়ে নিল। ভারতীয় বিএসএফের নিষ্ঠুর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্বরতা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানায়।
পাঠকদের মনে থাকার কথা এই সরকারের আমলে গত ৭.১.১১ইং তারিখে দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল সীমান্তে ফেলানীর মৃত্যু হওয়ার খবর। একশ্রেণীর খুচরা বুদ্ধিজীবীরা যখন বলেন ভারত আমাদের বন্ধু তখন ইচ্ছে করে মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে। ভারত যদি বন্ধুই হবে তাহলে ৫ই জানুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনকে কিভাবে বৈধতা দেয়। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ মোটেও ভালো নয়। সারাবিশ্ব যেখানে এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলছে সেখানে ভারত সরকার বলল তার উল্টো কথা। নিকট অতীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাসানী অনুসারি পরিষদ আয়োজিত ‘মাও সেতুংয়ের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, চীনের সাথে আমাদের ভালো সর্ম্পক রাখতেই হবে। তিনি ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অন্যথায় আমাদের পাশের বন্ধুদেশ নামক যে দৈত্য চেপে বসেছে সেই দৈত্য আরো চেপে বসবে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ঋণ আমরা এক বছরে শোধ করে দিয়েছি। এটা ভারতও অস্বীকার করতে পারবে না।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বাংলাদেশের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সহযোগিতা করতে এসে সিলেটের একটি বিশাল অংশ ছেড়ে যায়নি। আজো সেই এলাকা ভারতের দখলে। তারা সিলেটের তামাবিল সীমান্তের কাছে পাদুয়ায় একটি ক্যাম্প ও পাশবর্তী এলাকা দখল করে রেখেছে। দীর্ঘ ৪৪ বছরেও তারা এই ভূমি ছেড়ে যায়নি। জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র হচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রকৃতিগত শত্রু। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের জন্যই সীমান্ত পাহারার আয়োজন করে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র। এর ব্যতিক্রম নয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশ। আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে বিএসএফ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নেপাল ভুটান যেমন আমাদের বন্ধু সে হিসেবে ভারতও আমাদের বন্ধু। তবে বন্ধুত্বের ভালোবাসা এক পক্ষের ইচ্ছের উপর হয় না। দুই পক্ষেরই ভালোবাসার হাতকে প্রসারিত করে দিতে হয়। ভারতের বিএসএফের নির্মমতা আর পাশবিকতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ভারতকে কখনো আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বন্ধুত্বের নামে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিও যদি ভারতকে সন্তুষ্ট করতে না পারে,তাহলে রাষ্ট্রের ভেবে দেখা দরকার আসলে ভারত কী চায়? সীমান্তের নিরীহ নাগরিকদের রক্তের মূল্যে ভারতের বন্ধুত্বকে বাংলাদেশের জনগণ আর কতকাল সহ্য করে চলবে?
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএসএফ এর গুলী যেন আরো বেড়ে গেছে। রাষ্ট্র যখন তার সন্তানতুল্য নাগরিকদের ওপর প্রতিবেশীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করাটাও ভুলে যায় তখন সঙ্গত কারণেই যে কাহারও মনে হতে পারে জন্ম হওয়াটাই আমার পাপ। এদেশের হাজারো জনগণের অর্থে প্রতিপালিত আমাদের বিশাল চৌকস প্রতিরক্ষা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন বিএসএফ এর গুলীতে প্রাণ যাবে আমার ভাইয়ের। সে প্রশ্নের উত্তর আজ হয়তবা কেউ করার সাহস করবে না। কারণ ক্ষমতার দাপট আর গুলীর ভয়ে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের নির্বিকার হত্যায় ভারতীয় খুনীদের নৃশংসতার মধ্যে ফিলিস্তিন, লেবানন,গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলী নরপশুদের রক্তলোলুপ ভূমিকার একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশের সীমান্ত প্রহরা শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে শুকুনেরা আমাদেরকে গাজাবাসীর মতো অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র নৃশংসতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত কারণে অকারণে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্তে আগ্রাসী হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যার মহাউৎসব পালন করছে। আর প্রতিটি ঘটনার পর পরই লোক দেখানো পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আগ্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে ভারত। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বেপরোয়া গুলীবর্ষণে সীমান্ত এলাকায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য বাংলাদেশী নাগরিক। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে আমাদের দেশের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। ভারত চায় বাংলাদেশকে তার তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে। ঠাণ্ডা মাথায় একটু বিশ্লেষণ করলেই পাওয়া যাবে ভারত আমাদের বন্ধু নাকি শত্রু। পৃথিবীর সব দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আইন, বিধিবিধান ও রেওয়াজ চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেও বিদ্যমান যে আইন চালু আছে তা কিন্তু নরঘাতক বিএসএফ মানছে না। তারা বিনা বিচারে নিরীহ নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের একের পর এক হত্যা করে রীতিমত সীমান্তে মানবকি বিপর্যয় ঘটিয়ে চলছে।
বর্তমান সরকার নিজেকে ভারতবান্ধব মনে করে। ভারতীয়দের কাছে এই সরকার উদার ও বন্ধুভাবাপন্ন। তারপরেও সীমান্তে পাখির মতো গুলী করে বাংলাদেশী হত্যার মহাউৎসব কেন বন্ধ হচ্ছে না? ভারতের প্রয়োজনে তারা আমাদেরকে বন্ধু বানাইতে পারে,আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আমাদের রক্ত চুষেও নিতে পারে। ভারতীয় খুনি বিএসএফ এর হাত থেকে এদেশের মানুষের জীবনকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আশা করি রাষ্ট্র এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter