Flickr

Thursday, 8 October 2015

গণতন্ত্রের ম্যালপ্র্যাক্টিস এবং জঙ্গিবাদ

Posted by   on

গণতন্ত্রের ম্যালপ্র্যাক্টিস এবং জঙ্গিবাদ
মিনা ফারাহ
মিনা ফারাহ
আলশাবাব, আইসিল অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী মধ্যপ্রাচ্যে বুশের গণতন্ত্র ম্যালপ্র্যাক্টিস, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী ভারতের গণতন্ত্র ম্যালপ্র্যাক্টিস। কেউই বলছে না, এই অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীর ভূমিকায় দিল্লি।
বিদেশী হত্যাকাণ্ড বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এপির মতো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা-ই লিখুক, স্বপ্নে পাওয়া বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিতত্ত্বে অনড় অবৈধ সরকার, জাতিসঙ্ঘ ফেরত প্রেস ব্রিফিংয়ে আবারো সে কথাই জানিয়ে দিলো। বার্নিকাটের দাবি সত্য হলে, প্রতিটি প্রেস ব্রিফিংয়ে সত্য আড়াল করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অর্থ কী? কেনই বা তথ্য গুম করা হচ্ছে? বিরোধী জোটের বলা উচিত ছিল, হয় প্রমাণ করুন, নয় অপমানসুলভ বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। বিএনপি-জামায়াত কি সত্যিই সন্ত্রাসী দল? যা কিছু ঘটেছে, ঘটবে এবং ঘটানো হবে, সব দোষ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল, খালেদা সন্ত্রাসীর মা। খালেদা জিয়া দেশটাকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাঁচাতে চায়। সাড়ে সাত বছর ধরে আওয়ামী প্রধানের এই একটাই বক্তব্য। জঙ্গিবাদের বিষয়টি এত হালকা নয়! এবার সত্যি সত্যিই অজগরের মাথায় পা রাখল আওয়ামী লীগ নেত্রী।
মাইনুকে ১১টি ঘোড়া উপহার এবং ধারাবাহিকভাবে এরশাদকেও দিল্লিতে নিয়ে জামাই আদরের পর ৫ জানুয়ারি ঘটিয়েছিল এক-এগারোর স্বপ্নদ্রষ্টারাই। ভারতসৃষ্ট মুজিব-বসন্তের শুরু ’৭১-এর বহু আগে। কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ছিল, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে ব্রিটিশরাজ স্টাইলে শোষণ। পরে বিদেশীদের চশমায়, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র দেখাতে আদাজল খেয়ে মাঠে দুই পক্ষ। আরব বসন্তের জন্য দায়ী আমেরিকা কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই গণতন্ত্র ছিল না। অন্য দিকে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র শুরু ১৯৯১ সালে, যাকে ৫ জানুয়ারিতে ম্যালপ্র্যাক্টিসের মাধ্যমে ধ্বংস করল দুই পক্ষ। কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমারা হাসিনা এস্টাবলিশমেন্টকে দায়ী করলেও কে কার কথা শোনে! পান থেকে চুন খসলেই বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা এক-এগারোর অংশ। চার মাসে মোদির সাথে তিনবার দেখা হওয়ার উদ্দেশ্য কী হতে পারে? পশ্চিমারা হাসিনার জঙ্গিবাদে পা দিলেও, ভারতের ম্যালপ্র্যাক্টিস বুঝতে কমনসেন্সÑ সম্পন্ন পাবলিকের কষ্ট হয় না।
যে জঙ্গিবাদ খুঁজছে আওয়ামী লীগ, তা বাংলাদেশে একবারই ঘটেছিল, নামÑ বিডিআর হত্যাকাণ্ড। বিদেশী হত্যা জঙ্গিবাদ কি-না এখনো স্পষ্ট নয়। বিডিআরের তুলনা নাইন-ইলেভেন। এই ঘটনার সাথে বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ জড়িত। যত দিন না রহস্য উদঘাটন হবে, তত দিন গণতন্ত্রের ম্যালপ্র্যাক্টিস বন্ধ হবে না। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সব দুর্ঘটনাই মুজিববাদের পক্ষে-বিপক্ষের শক্তির সংঘর্ষ। জাতীয় সংসদে থাকা ’৭৫-এর কারিগরদের খালেদা-হাসিনা দু’জনই জঙ্গির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারতেন, কিন্তু করেননি। কারণ, ’৭৫ ছিল স্রেফ রাজনৈতিক খুনোখুনি। নাইন-ইলেভেনের তুলনায় কোনো রহস্যই উদঘাটন হয়নি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের। পুরো বিষয়টাই নেতাজী উধাওয়ের মতো রহস্যজনক। যত সহজ সমীকরণে দেখাক, সে রকম নয়। বরং দিল্লির নথিপত্রে কী আছে, কিছুটা বলেছে মিডিয়া। বিচার হয়েছে দায়সারা, প্রিয়জনেরা জানতে চান, এতগুলো ব্রিলিয়ান্ট সেনা অফিসারকে হত্যা করল কেন? ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট কোনো ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। বিডিআরের পর থেকে সেনাবাহিনীর মধ্যে যেন শান্তিরক্ষা মিশনটাই প্রধান পরিচয়।
ভুয়া জঙ্গিবাদের খপ্পরে ২০ দল। হাসিনার গেম থিওরি বুঝতে অক্ষম খালেদা। আওয়ামী লীগ মনে করে, বাকশালের স্যুট-টাই না থাকলেই জঙ্গি। পঁচাত্তরেও বাকশালের স্যুট-টাই না পরলে জাতীয় সংসদের সদস্যপদ খারিজ। এখন পান থেকে চুন খসলেই খালেদা জিয়া জঙ্গি। বাংলাভাই কখনোই তালেবানদের মতো নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেনি। বাংলাভাই-ব্লগার হত্যা সব ক’টিই রাজনৈতিক খুনোখুনি। ওগুলো জঙ্গিবাদ হলে, ২৮ অক্টোবর এবং ক্রসফায়ার কী? বিএনপির উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদের ভিডিও বক্তব্য তালেবান হলে, ২৭ অক্টোবর ২০০৭ সালে হাসিনার ভিডিও বক্তব্য কী? ওই দিন লাঠি হাতে রাজপথে নামার হুকুম দিলে পল্টন, সোনারগাঁওয়ের সামনে কাঁড়ি কাঁড়ি লাশ। নেত্রীর হুকুমে ৩০৩ দিনের হরতালে অসংখ্য লাশ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট। ৩০৩ দিন হরতাল গণতান্ত্রিক হলে, সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত জোটের হরতাল, মিছিলের অধিকারও ১০০ ভাগ গণতান্ত্রিক। এই অধিকার কেড়ে নিয়ে যারাই কারাগার ভরে ফেলছে, তারাই জঙ্গিবাদ উত্থানের কারিগর। স্বপ্নে পাওয়া গণভবনের জঙ্গিবাদ ভুয়া। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর দাবিতে ২০ দলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগও ভুয়া। পাবলিক মনে করে, বিরোধী দল খতম মিশনে দ্বিপক্ষীয় ষড়যন্ত্র এগুলো।

জঙ্গি শব্দটি ব্যবহারের আগে সাবধানতা জরুরি। অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছিল বুশ, ভুগছে বিশ্ব। আবারো বলছি, এ দেশে জঙ্গিবাদ নেই বরং আছে জিরো টলারেন্সের নামে আজীবন ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র। নিউ ইয়র্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিজার হত্যার ঘটনায় যা বলল, তা কোনো দায়িত্ববান ব্যক্তির বক্তব্য হতে পারে না। বিষয়টি ন্যক্কারজনক। আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে থেকেও, বাংলা সাংবাদিকদের আচরণ ছিল কমিউনিস্ট দেশের সাংবাদিকদের মতো। বুদ্ধিদীপ্ত একটি প্রশ্নও ছিল না বরং ছিল তোষামোদি প্রশ্ন। সিজার হত্যার ঘটনায় বললেন, ...আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট খুন হলে নিউ ইয়র্কে কি রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল? দেশে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে জিজ্ঞাসাবাদ করব...। তার কথা ছাড়া দেশে সূর্য ওঠে না। জানি এরপর উদোর পিণ্ডি যাবে বুধোর ঘাড়ে, ইতোমধ্যেই গেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে অশ্লীল বক্তব্যের জায়গা নেই। ঢাকাকে আইসিলের খবর আগেই দিয়েছিল পশ্চিমারা, দাবি বার্নিকাটের। হঠাৎ ডেভিড ক্যামেরনকে আইসিল বিষয়ে সতর্ক করা এবং নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে সজীবের চিঠি লেখার সাথে এর সম্পৃক্ততা মেলে। তা হলে আইসিলের সাথে যোগাযোগ রাখছে কারা? আইসিলের অস্তিত্ব স্বীকার করে ড্রোন মারার কথা বলেছে কারা? ঘটনার ধারাবাহিকতা সাংঘাতিক। মনে হচ্ছে কেউ যেন পতনের পাগলা ঘণ্টি বেজে ওঠার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আইসিল ঢুকিয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্যের মতো ক্রাইসিস রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে পালানোর পথ খুঁজছে। ব্রিটিশরাজও ভেজাল দেশ ভাগ করে এভাবেই সাম্রাজ্য হারানোর প্রতিশোধ নিয়েছিল। ফলে ৬৯ বছর ধরে জ্বলছে ৪৭। আবারো বলছি, এ দেশে একমাত্র জঙ্গি ঘটনা বিডিআর, যার নথিপত্র দিল্লিতে।
প্রমাণ ছাড়াই কাউকে তালেবানদের কাতারে দাঁড় করানোর অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। পারলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের ম্যালপ্র্যাক্টিস আর চালিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। তাদের উদ্দেশ্য জিরো টলারেন্সের নামে, দেশটাকে বিরোধী দলশূন্য করা, প্রমাণ সর্বত্রই। ৫ জানুয়ারির মতো যা খুশি করবে, সব দোষ চাপাবে ২০ দলের ঘাড়ে, এটা কোন তামাশা? জিরো টলারেন্সের অজুহাতে নির্বাচিত বিরোধী দলের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এটা মধ্যপ্রাচ্য-চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার মতো কমিউনিস্ট রাষ্ট্র নয় যে, বিরোধী দল মানেই কারাগার আর বন্দুকের নল। দমন-পীড়ন করবে কিন্তু বিক্ষোভ করলেই হ্যান্ডকাফ। ২০ দলকে নেতৃত্বশূন্য করতে ট্রাইব্যুনালের আগাম মেনুফেস্টো দিয়েছিল এক-এগারো। এ দিকে মানবাধিকার হরণ আর ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ড দেখে হতাশা বাড়ছেই। সেই সুযোগে বারবার পেট্রলবোমা মেরে খালেদাকে জঙ্গি প্রমাণে মরিয়া আওয়ামী কর্মীদের সব তথ্য-প্রমাণ মিডিয়ায়।
যা দৃশ্যমান, আওয়ামী লীগ থাকলে জঙ্গি লাগে না। প্যালেস্টাইন, আয়ারল্যান্ড, উলফা, খালিস্তান লিবারেশন আর্মির সাথে ২০ দলের আন্দোলনকে এক চশমায় দেখানো যাবে না। লিবারেশন আর্মিরা ’৭১-এর মতো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছে, কিন্তু ২০ দল স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসির ডাক দেয়নি। তবে ওই দিন আওয়ামী লীগ প্রধানের পাঠানো বালুর ট্রাক, জলকামান এবং হাজার হাজার পুলিশ দিয়ে রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। আমার মনে হয়, বর্বর আফ্রিকানরাও হাসছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক এলেন বেরিকে খালেদার বাসায় ঢুকতে দেয়নি পুলিশ, দেয়নি রাষ্ট্রদূতকেও। তারা ৫ জানুয়ারি ঘটাবে আর ২০ দল ঘরে বসে আঙুল চুষবে? মুজাহিদ-নিজামীদের সাথে একই সংসদে, একই রাজপথে, এখন তাদেরকেই ফাঁসি দিয়ে কাকে বোকা ভাবছে আওয়ামী লীগ?
এ দিকে স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা এবং চাক্ষুস সাক্ষীর অভাব ইত্যাদির অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু বসে নেই ফাঁসির দড়ি। ভিকটিমরা সুবিচার চাইলে, জঙ্গি হবে কেন? তবে এই সুযোগে পেট্রলবোমা কারা মারছে, একমাত্র মিডিয়া ট্রায়াল ছাড়া দ্বিতীয় কোনো প্রমাণই দিতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ। মিডিয়া ট্রায়াল নয়, এগুলো প্রপাগান্ডা। এমনকি বিচারপতিদেরকে জড়ানো স্কাইপ কেলেঙ্কারির ব্যাখ্যা দিতে পারতেন হাইকোর্ট, কিন্তু দেননি। সিজার হত্যা, রেড অ্যালার্ট জারি, কূটনৈতিকদের অস্থিরতার ১২ ঘণ্টা পরই মৃত্যুদণ্ড বহালের ব্রেকিং নিউজ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের দিনক্ষণ গোনা শুরু কী বার্তা দিলো? এরপরও কি জুডিশিয়াল কিলিং বনাম গণতন্ত্র ম্যালপ্র্যাক্টিসের প্রমাণ লাগে! পেট্রলবোমাবাজরা হয়তো আবারো ২০ দলকে জঙ্গি প্রমাণে মহড়া শুরু করেছে শাহবাগে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সব দরজা বন্ধ।

২০ দল কখন আলশাবাব, আইসিল, আলনুরি হলো? আওয়ামী লীগ নেত্রী যখন জাতিসঙ্ঘে গিয়ে ২০ দলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ এবং বিশ্বশান্তির জন্য একযোগে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, জুরিসপ্র“ডেন্সে ব্যাখ্যা নেই। পশ্চিমারা মূর্খ হলেও আমরা সচেতন। একদলীয় শাসন কায়েমে দিল্লি-ঢাকার নতুন ট্রামকার্ডের নামÑ ‘প্রয়োজনীয় বিরোধী দল’। সত্য বললেই দেশদ্রোহী, জঙ্গি, লবির অভিযোগে কারাগার। ইদানীং আমার বিরুদ্ধে লবির অভিযোগ বেড়েছে। যদি বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনে আমার মতো জামায়াত হতো আওয়ামী লীগও, বেঁচে যেত দেশটা। জনকণ্ঠের পর অন্য কোনো পত্রিকা থেকেই লেখার সম্মানী নিচ্ছি না। জামায়াতের টাকার প্রশ্নই ওঠে না, নেইনি আওয়ামী লীগেরও। আমাকে যারা জানেন, তারা জানেন, কারো খাই না, পরিও না। আশা করি নিন্দুকেরা মুখে তালা দেবে।

জঙ্গিবাদ খেলার ভয়াবহ পরিণতি দেখেছে বুশ। সিরিয়ার ঘটনায়, জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ বললেন, ‘বোমা মেরে জঙ্গিদের হত্যা করা যাবে কিন্তু জঙ্গি নির্মূল করা হবে না, বরং এর গোড়া শুদ্ধি প্রয়োজন।’ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, মানুষ। ঢিল মারলেই পাটকেলটি ছোড়ে। পশ্চিমারা সাম্রাজ্যবাদে উন্নত কিন্তু জীবন মানেই নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ নয়। জঙ্গি যত মারছে, সংখ্যা ততই বাড়ছে। অর্থাৎ বাদশাহ আবদুল্লার কথাই ঠিক, শাহরিয়ার কবিরদের জঙ্গিতত্ত্ব ভুয়া। জঙ্গিবাদ কেউ সমর্থন করে না কিন্তু জঙ্গিবাদ কী, বেশির ভাগই বোঝে না, যেমন বোঝেনি আওয়ামী লীগ। তাই তারা রাতের অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে অজগরের মাথায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়টি এখন পশ্চিমাদের সামর্থ্যরে বাইরে। পুতিন-ওবামার ঠাণ্ডা যুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। চলছে আরব বসন্তের কবর খোঁড়াখুঁড়ি। আগুন নিয়ে খেললে যা হয়, খেলছে আওয়ামী লীগও। তবে এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হলে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি দায়ী থাকবে দিল্লি, কারণ তারাই আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করেছে।
সাত বছর পরেও জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য জোট সরকারকে দায়ী করার পুরনো অভ্যেসটি কখনো পুরনো হলো না। তবে ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর গীতা সরকারের কথায় প্রমাণ হলো, এরপরও যারা ৫ জানুয়ারি কায়েম করেছে, তারাই একমাত্র সন্ত্রাসী দল।

এই অঞ্চলে অস্থিরতার জন্য ১০০ ভাগ দায়ী দিল্লির গণতন্ত্র ম্যালপ্র্যাক্টিস। বাবা ছিলেন সেকুলার চরিত্রের বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। দেশ বিভাগ দেখা বাবা নিজের মতো করে অনেক কিছুই ভাবতেন, যা বোঝার উপযুক্ত কখনোই হইনি। তার বিচারে, গান্ধী ও মুজিব অনেক অঘটনের কারণ। দেশ বিভাগের পর, দুই দেশের সংখ্যালঘু ক্রাইসিসের জন্য গান্ধীকেই তিনি দায়ী করতেন। গান্ধী পাথালে কাঁটা না হলে, দেশ বিভাগের চেহারা অন্যরকম হতো। পরবর্তীকালে বাবার সাথে আমিও একমত। দেশ বিভাগের দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্রাইসিস দিয়ে আমার অভিজ্ঞতার শুরু। ’৭১-পরবর্তী বদলে যাওয়া পরিস্থিতিকেও নিজের মতো করেই ভাবতেন। ’৭২ থেকে ’৭৫, সংখ্যালঘুদের জীবনে নাইটমেয়ার। রমনা কালিমন্দিরে বুলডোজার মারা এবং অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণাও আরেকটি নাইটমেয়ার। রক্ষীবাহিনীর ত্রাস আগেও লিখেছি। ’৬৪, ’৬৫, ’৭১ এর পর আবারো সংখ্যালঘু মাইগ্রেশনের কারণে অসন্তুষ্ট বাবার বিরক্তি স্বাভাবিক। আমার বিচক্ষণ বাবা শুরুতেই যে রোগটি শনাক্ত করেছিলেন, ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ব্যর্থ। আমার বোধোদয় ঘটল এক-এগারোর পরে এবং ট্রাইব্যুনালকে কেন্দ্র করে- নয়-ছয়।
চতুর্থ সংশোধনীর পর, ১৫তম সংশোধনীটি ছিল আরেকটি রাজনৈতিক সন্ত্রাস। সুতরাং ৫ জানুয়ারি কায়েম করতে পেট্রলবোমার প্রয়োজন আওয়ামী লীগের। আমাদের সমস্যা, প্রয়োজনীয় বিরোধী দল বনাম সত্যিকারের বিরোধী দল, এখানে এসেই ধরা খায় দিল্লি। তারাই ৫ জানুয়ারিতে খোলামাঠে গণতন্ত্র ধ্বংস করল। সুজাতা সিং খোলামেলাই বললেন, বিএনপি-জামায়াতকে দিল্লি সন্ত্রাসী দল মনে করে। সুজাতাকে কংগ্রেস পাঠিয়েছিল ২০ দলকে মাইনাস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দিল্লির কোনো জবাবদিহিতা লাগে না। জাতীয় পার্টির অফিস থেকে এরশাদকে ব্ল্যাকমেইল করে সাদা গাড়িতে তুলে সিএমএইচে ঢোকানোর পর নির্বাচনে যাওয়ার জন্য এরশাদ-সুজাতার মুক্তিপণ খেলা। সে সময়কার সন্ত্রাস নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি শাহরিয়ার কবিরের মতো ভুয়া বিশেষজ্ঞরা। আমরা কালা মানিক, ধলা মানিকের মুক্তিপণ আদায়ের কাহিনী জানি। টাকাও নেয়, জীবনও নেয়। ব্ল্যাকমেইলে উঠল নির্বাচন কিন্তু গণতন্ত্রকে জীবন্ত ফেরত দিলো না দিল্লি। এখন অবৈধ সরকার এবং প্রয়োজনীয় বিরোধী দল নিয়ে অতল সাগরে ডুবছে বাংলাদেশ।

আসল ঘটনা ভিন্ন। এই ষড়যন্ত্র বোঝার মতো সৎ মানুষ নেই। উলফা দমন এবং জিরো টলারেন্স দুটোই ভুয়া। সীমান্তে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অজুহাতে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্বাসনে রাখার বন্দোবস্ত। এই কাজে গণতন্ত্র ম্যালপ্র্যাক্টিসের অভাব নেই। ’৭১-এর মতোই অনুপ চেটিয়ারাও স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। সেই সুযোগে মনের আনন্দে বিরোধী দল খুন করছে অবৈধ সরকার। নিউ ইয়র্কে আগাচৌ বললেনÑ প্রয়োজনে, প্রয়োজনীয় বিরোধী দল সৃষ্টি করা হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রয়োজনীয় বিরোধী দল? এই গোয়েবলসের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করল না গর্দভ ২০ দল। প্রশ্ন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামাল দিতে হাসিনাকে কেন ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখতে হবে? গেল ১০ বছরে শত শত বাংলাদেশী হত্যা করল বিএসএফ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামাল দিতে পারে না? বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বরং ভারতের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেই বেশি। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হাসিনা লাগে না। সুতরাং রওশনমার্কা প্রয়োজনীয় বিরোধী দলের অর্থ, সংসদে কখনোই আর ‘না’ ভোট হবে না। ৩০০ কণ্ঠ একসাথে যখন ‘জি হুজুর’-‘জি হুজুর’ বলে, তা হয় সংসদীয় গণতন্ত্রে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সন্ত্রাস।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগ নেত্রীর এত কী কথা থাকতে পারে, যে জন্য বারবার দেখা হতে হবে? বিষয়টি গিনেস বুকে ওঠার মতো চমৎকার। যেভাবেই পারো, যেখানেই পারো, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হওয়া চাই। প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ব্যবসায় বাড়ানোর বৈঠক? আবার আট সপ্তাহ বিরতিতে জাতিসঙ্ঘে মোদির সাথে একটি বৈঠক আদায়ের জন্য বাংলাদেশ মিশনের চুলকানি মনে রাখার মতো। একই চুলকানি রোগ ছিল মনমোহন আমলেও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানি এবং আরব বসন্ত শেষে মধ্যপ্রাচ্যে যে শরণার্থী ক্রাইসিস, একই ক্রাইসিস আওয়ামী লীগের বাংলাদেশেও। সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু নয়, নৈরাজ্যের কারণে দেশত্যাগীদের নীরব এক্সোডাস, ’৪৭-এর মতোই ভয়াবহ। আর সত্য ধামাচাপা দিতে জিরো টলারেন্স এবং হাজার হাজার উন্নতির বিলবোর্ড দিয়ে দৃষ্টি অন্য দিকে ধাবিত করা। এ ছাড়া আওয়ামী সমাজতন্ত্রবাদীরা অসহায়। ৯৯.৯৯ ভাগ মিডিয়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান মিডিয়ার আচরণে লিপ্ত। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের এক্সোডাস মিডিয়া নেই। মরছে সাগরে, লাশ মিলছে গণকবরেও। বাংলাদেশের ক্রাইসিসগুলো তাৎক্ষণিক গুম করা হচ্ছে, উন্নতির ব্রেকিং নিউজে। এই যেমন এয়ারপোর্ট থেকে গণভবন পর্যন্ত সংবর্ধনায় চাপা পড়ল দুই বিদেশী হত্যার ক্রাইসিস। দিল্লির বাংলাবসন্ত সফল, কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি?
ইমেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter