Flickr

Saturday, 10 October 2015

চরম মানবেতর জীবন সেখানে

Posted by   on

তিন গুণ বন্দীতে ঠাসা দেশের ৬৮ কারাগার ॥ চরম মানবেতর জীবন সেখানে
কারাগারগুলোতে ঠাঁই নাই-ঠাঁই নাই অবস্থা। দেশের ৬৮টি কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দুইগুণ বেশী বন্দী রয়েছে । এররপর একের পর এক গ্রেফতার করা হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। ভিআইপি বন্দীদের জন্য করাগারগুলোতে নেই উপযুক্ত সেল। কাশিমপুর কারাগার ছাড়া বাকিগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। এসব কারাগারে বন্দীরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক বন্দী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
এর উপর নিরাপত্তার অযুহাতে বন্দীদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বন্দী গাদাগাদি করে রাখায় কি মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে না?
একুশে আগস্ট, ১০ ট্রাক অস্ত্র, কিবরিয়া হত্যা, বিডিআর বিদ্রোহ, যুদ্ধাপরাধ ও রাজনৈতিক মামলায় আটক হয়ে বিরোধী দলের বহু নেতা দীর্ঘ দিন ধরে কারা অভ্যন্তরীণ। আটক রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। কারাগারে আটক আছেন, দেশের শীর্ষ দুই গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা, বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। পুলিশের সাবেক তিন কর্মকর্তা। মানবতা বিরোধী আপরাধ মামলায় জামায়াতের আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের কয়েকশ নেতা কারাগারে আছেন। বন্দী রয়েছেন ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্র শিবিরে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। দেশের সবগুলো কারাগারের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। অতিরিক্ত বন্দীর চাপে সৃষ্টি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানান, 'দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৬৮১ জন। অথচ বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ৭১ হাজার ২৪১ জন। যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আর এই কারাবন্দীদের ৭০ শতাংশ বিচারাধীন। বাকি ৩০ শতাংশ কয়েদি বলে জানান কারাপ্রধান। তিনি বলেন, চলতি বছর ১৫ নভেম্বরের পর যেকোনো সময় ঢাকার কেরানীগঞ্জে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান আইজি প্রিজন। কারাগারের অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে কারাগারগুলোতে থাকা বন্দীর সংখ্যা তিনগুণের কাছাকাছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাগারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের। এর ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার ৭শ’। অথচ বর্তমানে ১০ হাজার বন্দী রয়েছে এখানে। ১৩৪ জনের জায়গায় বর্তমানে রয়েছেন ৬শ মহিলা বন্দী। তাদের সঙ্গে রয়েছে অর্ধ-শতাধিক শিশু। অতিরিক্ত বন্দীর কারণে কারাগারের পরিবেশ দূষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্দীরা। বন্দীদের চিকিৎসার জন্য একটি কারা হাসপাতাল থাকলেও এর বেড সংখ্যা মাত্র ৮০। কিন্তু বর্তমানে এখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই শত জন। গাজীপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুর-১ ও কাশিমপুর-২। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ভিআইপি বন্দীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেককে সেখানে পাঠানো হয়।
এদিকে কারাগারে স্থান সংবকুলান না হলেও দেশজুড়ে অব্যাহত আছে পুলিশের ধরপাকড়। সম্প্রতি ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী নাগরিক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতার করতে না পারলেও বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের আবারও গণহারে গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে পুলিশ। গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে বিএনপি জামায়াত জোট ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মাঝখানে কিছুদিন বিরতির পর আবারও বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় শুরু করায় অনেকেই বাসা-বাড়িতে রাতকাটাতে পারছে না। সম্প্রতি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে ময়দানে বিরোধীদলের কোন কর্মসূচি নেই। তবুও নাশকতার অভিযোগ ও পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের। আবার কোথাও কোথাও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই চলছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান। গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরবাড়িতে থাকতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-সেখানে। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। আদালতে আত্মসমর্পণের পরও পাঠানো হচ্ছে কারাগারে এমন অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি দল পুনর্গঠনে বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষণা আসার পরই সরকার তা বাধাগ্রস্ত করতে এই ধরপাকড় শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হামলা-মামলা সরকারের পরিকল্পনারই অংশ। গত ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ২টায় ভোলায় বিএনপির একটি সম্মেলন থেকে ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন থানা বিএনপির সহ-সভাপতি হাসান হাওলাদার, বড়মানিকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেনু হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, যুবদলের সভাপতি রবিন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক হেলাল বাকলাই।
একই দিন বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ জেলা বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালী থানায় নাশকতার মামলা করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। মামলায় অন্য আসামীরা হলেন- যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ছাড়াও শহর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রফিকুর রহমান তোতন, জাফর সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনকে। এরআগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুলনা উত্তর সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা এমরান হোসাইন, তার দুই পুত্র এবং খুলনা সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর জনাব মোঃ ওয়ালি উল্লাহসহ ২ জন কর্মী এবং যশোর জেলায় জামায়াতের ৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। এরআগে এছাড়াও কিশোরগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের তিন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীম ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক রমজান আলী। তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত রোববার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জেলার বাহুবল, লাখাই, নবীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াত আমীর মওলানা আশরাফ আলী, লাখাই উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি নুরুল আমিন, শায়েস্তাগঞ্জ থানা জামায়াত সেক্রেটারি ইয়াছিন খান, শায়েস্তাগঞ্জ থানা শিবির সভাপতি হোসাইন আহমদ, সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন ও বাহুবল উপজেলা শিবির কর্মী জহিরুল হক কায়েস প্রমুখ। এদিকে গত সোমবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের ১০ কর্মীকে আটক কওে পুলিশ। শহরের পাওয়ার হাউস রোডের নিউ মোড়াইল এলাকার একটি মেস থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা জামায়াতের আমির প্রফেসর মমিনের ছেলে জামায়াতকর্মী মাওলানা দিদার, শিবির কর্মী রাসেল, সামিরাত, সোহেল, মাঈনুদ্দীন প্রমুখ। গতকাল শুক্রবার টুয়াখালী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুল সালাম খানকে আটক করে সদর থানা পুলিশ।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলায় ইতালি ও জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে বিশেষ সতর্কতা জারি রয়েছে। এছাড়া জামায়াতের শীর্ষ নেতা আলী আহসান মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যু পরোয়ানা জারির কারণে কারাগারে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কারা অধিদফতর বিশেষ সতর্কতাসংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের সব কারাগারে পাঠায়। চিঠি পাওয়ার পরই যেসব কারাগারে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বন্দি রয়েছে সেগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারাগার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চিঠিতে কারাগারের দায়িত্বে থাকা সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কারাগারে বন্দী জঙ্গিরা যাতে কারা অভ্যন্তরে বসে কোনো ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে না পারে বা কোনো পরিকল্পনার ছক কষতে না পারে সেজন্য তাদের ওপর এ নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর দেশের প্রতিটি কারাগারের বাইরে পুলিশ ও র‌্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কারাগারগুলোতে বন্দীদের নিরাপত্তা রক্ষায় জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীরা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বজনদের দেখার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজন দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না বন্দীদের সঙ্গে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter