আইএসের বন্দিশিবিরে নারী যখন দাসী

ফাইল ছবি
আইসিস বা আইএসের হাতে বন্দি নারী, যুবতীরা নিজেদের সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে, দাসত্বের জীবন বেছে নেয়া থেকে আত্মহত্যা করছে। এমনি করে কয়েক শ যুবতী নিজেরাই নিজেদের জীবন খতম করে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়। অনেক ইয়াজিদি যুবতী আইসিস সদস্যদের যৌন লালসার শিকার। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন তারা। কোন যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে জোর করে গর্ভপাত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি আইসিসের হাতে বন্দি নারী ও যুবতীদের। এখনও আইসিস বা আইএসের হাতে বন্দি আছে যেসব ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারী তাদের উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন ইরাকের সাবেক এমপি আমিনা সাঈদ হাসান। এজন্য তিনি চালু করেছেন একটি হেল্পলাইন। এর মাধ্যমে তিনি নির্যাতিত এসব নারীকে নিরাপদে মুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমিনাকে যখন অন্যপাশ থেকে ফোনে ‘হ্যালো’ বলেন কোন যুবতী, তখন তাদের কণ্ঠ থাকে ফ্যাসফেসে, ভাঙা ভাঙা, অনেক সময় এমনও হয় যে সেই কণ্ঠ বোঝাও যাচ্ছে না। এর কারণ যাদের হাতে তারা ধরা পড়েছে তাদের ফাঁকি দিয়ে ফোন করা। যদি তারা কোনমতে বুঝতে পারে তাহলে সব শেষ। তারা ওপাশ থেকে বলেন, আমাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এর চেয়ে আরও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। ফোনের এপাশ থেকে তখন আমিনা সাঈদ হাসান সুযোগ দিয়ে দেন তাদের। উৎসাহিত করেন আইসিসের হাতে দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার। পরিকল্পনা সাজানো হয়। প্রায় দিনই তার কাছে এ রকম ফোন আসে। তাই তিনি যত পারেন ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মেয়েদের উদ্ধারে মনোনিবেশ করেছেন। প্রথমে ইরাকের মসুল থেকে আইসিস মেয়েদের তাদের জিম্মায় নিয়ে যায়। তখন আমিনা হাসান ভেবেছিলেন সিনজার পাহাড়ের ইয়াজিদিরা হয়তো নিরাপদে থাকবেন। কিন্তু না, সেই সিনজারে নারীরা ভাল নেই। সেখানে জিম্মি করা হয়েছে যুবতীদের। তাদের দাসী বানানো হয়েছে। আমিনা হাসান ফোন ধরে যখন বলেন, তোমরা কীভাবে সিনজারে বন্দি? সেখানে তো কোন তেলের খনি নেই। আইসিস সেখান থেকে কী নেবে? কিসের লোভে তারা তোমাদের সেখানে আটকে রেখেছে? অন্যপাশ থেকে তখন কোন উত্তর আসে না। তবে আইসিস যোদ্ধারা সিনজারে গিয়েছে অনেক আগেই। সেখানে চুরি করার মতো কোন তেলের খনি বা মজুত নেই। তবে আছে মানুষ। সেই মানুষকে তারা জিম্মি করেছে। অনলাইন সিএনএনের এক খবরে বলা হচ্ছে, ইসলামিক এসব জঙ্গি ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী ও শিশুকে জিম্মি করেছে। পুরুষদের হত্যা করেছে। তারা বলে, এসব নারী ও যুবতীকে ধর্ষণ করার বৈধতা আছে। ইয়াজিদি সম্প্রদায় ইরাকের ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী। তাদের ওপর আইসিস গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের। পরিবারের আপনজন নিখোঁজ আছে- এমন অসংখ্য পরিবার প্রতিদিন ছুটে যান আমিনা হাসানের কাছে সাহায্যের জন্য। আমিনা বলেন, মানুষ আমাকে চেনে। আমিও সিনজারের মেয়ে। আমিও একজন ইয়াজিদি। অপহরণ করা হয়েছে এমন অনেককে চিনি আমি। এর মধ্যে অনেকে আমার আত্মীয়, প্রতিবেশী। আমিনা হাসানের স্বামী খলিল হাসান। পাচারের শিকার নারীদের উদ্ধারে সহায়তা করে এমন একটি নেটওয়ার্কে কাজ করেন তিনি। আমিনা হাসান অপহৃত নারীর ফোন ধরে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। তারপর ওই নারীকে উদ্ধারে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে নামেন খলিল হাসান। তিনি ছুটে যান ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে। উদ্দেশ্য সেখান থেকে নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার করা। এখন পর্যন্ত এই দম্পতি উদ্ধার করেছেন শতাধিক মানুষকে।
এর মধ্যে প্রথম উদ্ধার করা হয় ৬ সন্তানের এক মাকে, যার বয়স ৩৫ বছর। এসব নারীকে জিম্মি রাখা হয়েছিল। তাদের কিনে নিয়েছিল আইসিস দাসত্বের বাজার থেকে।
এর মধ্যে প্রথম উদ্ধার করা হয় ৬ সন্তানের এক মাকে, যার বয়স ৩৫ বছর। এসব নারীকে জিম্মি রাখা হয়েছিল। তাদের কিনে নিয়েছিল আইসিস দাসত্বের বাজার থেকে।
No comments:
Write comments