Flickr

Tuesday, 6 October 2015

এমপি’র বেপরোয়া আচরণ দায় কার!

Posted by   on

এমপি’র বেপরোয়া আচরণ দায় কার!
আমরা কোন্ দেশে আছি? আমরা কি এমন একটা দেশে আছি- যে দেশ তার সন্তানতুল্য নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে চরম ব্যর্থ হচ্ছে। এটি বুঝার জন্যে ইতিহাসের মহাপন্ডিত বা আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনের সংবাদের পাতায় চোখ বুলালেই উত্তর পাওয়া যাবে। দেশে উন্নয়নের জোয়ার এত বেশি যা হজম করতে পারছে না সরকার দলীয় এমপিরা তাই তো মালয়েশিয়া কিংবা সিংগাপুর হওয়ার আগেই গুলি ছুঁড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছেন এই জনপদের দশ বছরের শিশুর নরম দেহ। যে সময়ে এই লেখাটি লিখছি সে সময়েও গ্রেফতার, গুম, খুন, বেওয়ারিশ লাশের বীভসৎতার ছবি পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হচ্ছে। আর লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখনও হয়ত বা শিরোনামে আওয়ামী লীগ এমপিদের বেপরোয়া আচরণের বিষয়টি উঠে আসবে। পত্রিকা এখন আর পড়তে ইচ্ছে করে না। কারণ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই কষ্টের সংবাদ দেখাই যেন আমাদের নিয়তি। চিড়িয়াখানার প্রাণীর যতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করে আজকের এই সমাজের একজন মানুষ ততটুকু স্বাধীনতাও ভোগ করতে পারে না। মন খুলে সব কথা বলা ও লিখা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।
পত্রিকার পাতায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের সংবাদটি দেখে রীতিমত অবাক হলাম। একী কাণ্ড! এই কি আইনের শাসন! এই যদি আইনের সুশাসন হয় তাহলে অভিধান থেকে সুশাসন শব্দটিকে ইরেজার দিয়ে মুছে দেওয়াই ভালো। একজন ডাকাত বা সন্ত্রাসীর কথা না হয় বাদই দিলাম। একজন সংসদ সদস্য কি করে প্রকাশ্যে এ রকম কাণ্ড জ্ঞানহীন অপকর্ম করতে পারল? এই প্রশ্নের উত্তর কোন অভিধানে খুঁজে পেলাম না। তবে ইতিহাসের অভিধানে এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা পেয়েছি, তা হচ্ছে ৫ জানুয়ারির প্রহসনমূলক একতরফার নির্বাচন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলে এ রকম অমানুষের কাজ করতে পারতো না। যিনি দেশের আইন প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত, যিনি একটি সংসদীয় এলাকার লাখ লাখ জনগণের প্রতিনিধি, তিনি কিনা নিছক খেয়ালের বশে গুলিবিব্ধ করলেন এক শিশুকে! এটা কি ভাবা যায়! যে কেউ শুনলে অবিশ্বাস করতে পারেন। আর করাটাই স্বাভাবিক! এই তো কয়েকদিন আগে পত্রিকায় সিরিয়ার কুর্দি শিশু আয়লানের লাশের ছবি দেখে বিশ্ববিবেক কেঁদেছে। শিশুদের প্রতি মায়া মমতা স্নেহ সবাই দেখায়। শিশুদের উপর আপন পিতাও যদি নির্যাতন চালায় তাও মেনে নেওয়া যায় না। আর একজন জনপ্রতিনিধি কী করে তার সন্তানতুল্য শিশুকে গুলি করতে পারলেন! সভ্যতার অধঃপতন আর কত নীচে নামলে হুঁস আসবে এই সব নরঘাতক জনপ্রতিনিধিদের তা বোধগম্য নয়।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে হাজারো মানুষের আর্তনাদে আকাশ ভারী হয়ে উঠলেও সমস্যার সমাধানের কোন পথ দেখা যাচ্ছে না। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৬ টায় চাচা শাহজাহান আলীর সঙ্গে স্কুল ছাত্র সৌরভ প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছিল । এ সময় সুন্দরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য লিটন নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাজির হন চাচা ভাতিজার সামনে। চাচা শাহজাহান আলীকে গাড়িতে উঠতে বললে মাতাল এমপি’র ভয়ে তিনি দৌড়ে পালাতে থাকেন। মাতাল অবস্থায় সংসদ সদস্য প্রতিদিন সকালে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরেন এটি এলাকার সব বয়সের মানুষেরই জানা বিষয়। তবে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় তার সামনে পড়লে নাজেহাল হতে হয় এটিও  এলাকায়  ওপেন-সিক্রেট। বেসামাল সংসদ সদস্যকে এড়াতে চাচা শাহজাহান আলী দৌড় দিলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। সংসদ সদস্যের ছোড়া তিনটি গুলি লাগে শিশু সৌরভের হাঁটুতে। গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর থেকে যেসব সংসদ সদস্য নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করার কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরই একজন হচ্ছেন এমপি লিটন।
জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ বয়ে আনার কথা যাদের তারাই যদি জনগণের রক্ত ঝড়াতে সদা ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সাধারণ জনগণ কার কাছে আইনের শাসন চাইবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া যদি লাগতো তাহলে পিস্তলের গুলি জনগণের জন্য বের হতো না। শুধু সাধারণ মানুষ বললে ভুল হবে। সরকার দলীয় এমপিদের হাতে লাঞ্ছিত ও নাজেহাল হওয়া থেকে সমাজের কেউ রেহাই পাচ্ছে না। খুন, জখম, মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ এমন কোন অপকর্ম নেই, যার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠছে না। কক্সবাজারের এমপি বদি তো এখন মাদক ব্যবসার গডফাদার হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত। ময়মনসিংহের এক এমপির ‘এইটটি’ বাহিনীর দাপটে তার এলাকার মানুষ তো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছে। গত ১৩ এপ্রিল রাত ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি মদ্যপ অবস্থায় দুই নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছিল। হত্যাকারী গুণধর পুত্র এখন জেলহাজতে। এমপি লিটনের কী হবে আমরা এখনও জানি না। তবে তার জঘন্য অপরাধ থেকে রেহাই দেয়ার কোন সুযোগ নেই। গত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অনেক এমপি’র বিরুদ্ধে এরকম ক্ষমতার দাপট দেখানোর হাজারো অভিযোগ রয়েছে।
আমরা আশা করেছিলাম আমাদের এমপিরা হবেন সাধারণ মানুষের জন্য অনুকরণীয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে,অনেক এমপিই আমাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তার আত্মীয়-স্বজনদের দাপট এখন এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তাদের এলাকার সাধারণ মানুষ অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। জনসাধারণকে তারা প্রতিপক্ষ বানাইতে ও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত হলে হয়তো জনসাধারণের প্রতি কিছুটা হলেও শ্রদ্ধাবোধ থাকত। মানুষকে মানুষই মনে করছেন না। তা নাহলে একজন জনপ্রতিনিধি ছোট্ট শিশুর উপর পাখির মতো গুলি করবেন কেন? এমপি হয়েছেন বলেই কি তিনি সাত খুন মাফ পেয়ে যাবেন? এমনটি যাতে না হয়, আমরা তা দেখতে চাই। বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ গঠনের পর সরকারের তরফ থেকে অহরহ বলা হয়, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা দেখতে চাই, সরকারের এ কথা শুধু বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে লীগ সরকারের এমপিরা জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন বিধায় শিশুকে গুলি করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। দেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবন ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। এই রাষ্ট্র কাউকে ইজারা দেয়া হয় নাই। যে ইচ্ছে করলেই গুলি ছোড়ে পার পেয়ে যাবে। আজ হয়তো বা ক্ষমতার জোরে ওপেন গুলি ছোড়ে শিশুর নরম দেহকে ক্ষত-বিক্ষত করে ও বহাল তবিয়তে আছেন। কিন্তু সময় একদিন আসবে সেদিন সকল অপকর্মের হিসাব প্রকৃতির কাছে দেয়া লাগবে। কারণ প্রকৃতির প্রতিশোধ বড় নির্মম ও বেদনাদায়ক হয়। আর ক্ষমতার সিড়িও চিরদিন কারও জন্য নির্ধারিত থাকে না। জোয়ার ভাটার কাছ থেকে সবারই শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter