Flickr

Saturday, 10 October 2015

ঝিনাইদহে রেললাইনে পাওয়া সেই লাশ সনাক্ত : বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

Posted by   on


ঝিনাইদহে রেললাইনে পাওয়া সেই লাশ সনাক্ত : বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

ঝিনাইদহে এনামুল কবির (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে রাতের আধাঁরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যার পর লাশ রেললাইনে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহতের স্ত্রী এ অভিযোগ করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ফুলবাড়ি গেটে শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারের কাছে ফুলবাড়ি গেটে ট্রেনে কাটা পড়া অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশের সন্ধান পায় বারবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। যেহেতু রেলওয়ের জায়গায় লাশটি পাওয়া যায়, তাই রেলপুলিশ যশোর ফাঁড়ি লাশটি গ্রহণ করে জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ওয়ারিশ না পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামকে খবর দেন লাশ দাফন করতে। এরই মধ্যে শনিবার সকালে ইছালীর মুক্তার আলীর ছেলে শার্শার নাভারণ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মাইনুল হাসপাতালে যান তার বড় ভাই এনামুল কবিরের সন্ধানে। লাশটি দেখে সন্দেহ হলে তিনি ভাবি শিউলি বেগম ও ভাইঝি ঈশিতাকে খবর দেন। তারা হাসপাতালে এসে নিহত ব্যক্তির পোশাক দেখে লাশটি এনামুলের বলে শনাক্ত করেন।

এনামুলের পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে এনামুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় ইছালী ক্যাম্পের পুলিশ। এরপর পুলিশ স্বীকারও করে, এনামুল তাদের হেফাজতে আছে। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ এনামুলকে হত্যা করে লাশ রেললাইনের ওপর ফেলে দেয়।

তবে পরিবারটির এই অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে। পুলিশের বক্তব্য, এনামুল সর্বহারা পার্টির ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন হত্যাসহ সন্ত্রাসী তৎপরতার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এনামুল এক সময় সর্বহারা পার্টি করতেন বলে স্বীকার করেছেন তার ভাইও।


বৃহস্পতিবার রাতে ইছালী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই রাসেল বাড়িতে গিয়ে এনামুলকে খোঁজ করেন বলে জানান তার স্ত্রী শিউলি।

তিনি বলেন, ‘গভীর রাতে পুলিশ এসেছে দেখে আমি দরজা খুলতে অস্বীকার করি। তখন পুলিশ জানায়, না খুললে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকা হবে। বাধ্য হয়ে ঘরের দরজা খুলে দিই। তখন এএসআই রাসেল, কনস্টেবল ইব্রাহিমসহ বেশ কয়েকজন এনামুলকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ বলে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

শিউলির অভিযোগ, পুলিশ তার স্বামীকে ধরে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ রেললাইনের ওপর ফেলে রাখে। মুখমণ্ডল এমনভাবে বিকৃত করে দেওয়া হয় যে, তাকে যেন কেউ চিনতে না পারে।‘ কিন্তু পরনের লুঙি ও জামা দেখে আমরা তাকে শনাক্ত করি।’

তবে পরিবারটির সদস্যদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘এনামুল নামে কাউকে পুলিশ আটক করেনি। পরিবারটির অভিযোগ অসত্য।’

এনামুলের মেয়ে ঈশিতা বলেন, ‘‘শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বাবার খোঁজ না পেয়ে ইছালী পুলিশ ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। সেখানে এএসআই রাসেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার বাবাকে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। তাকে যথাসময়ে পাওয়া যাবে।’’

রেলপুলিশের যশোর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মইনুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে মোবারকগঞ্জ জিআরপি ফাঁড়ি পুলিশ একটি মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের মাথা থেতলানো ছিল। ফলে চেহারা দেখে চেনার উপায় ছিল না। এই ঘটনায় ওই ফাঁড়ির সদস্য হাবিবুল্লাহ খুলনা জিআরপি থানায় অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার মর্মে একটি জিডি করেছেন। এর বাইরে কিছু জানি না।’

এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম। শনিবার থানায় এসেছি। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

বিকেলে ইছালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই তপনকুমার বিশ্বাসের কাছে মোবাইল ফোনে এনামুলের লাশ পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অবাক হন।

তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘লাশ পাওয়া গেছে না-কি? এই প্রথম শুনলাম।’

ক্যাম্পের পুলিশ এনামুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল বলে পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক না। ওই রাতে ভাইরাস নামে এক সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছিল। সে পালাতে গিয়ে আহত হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম।’

ইছালী ক্যাম্পের ইনচার্জ দাবি করে বলেন, ‘এনামুল ছিল সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হত্যার অভিযোগ আছে। সে চরমপন্থী দলের সদস্য। এ ছাড়া বহু খুন-খারাবি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।’

এনামুল এক সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির সদস্য ছিলেন বলে স্বীকার করেন তার ভাই কলেজ শিক্ষক মাইনুল। তবে তিনি বলেন, ‘ভাই এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন। চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। সর্বহারা পার্টি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক অনেক দিন থেকেই নেই।’

নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএসআই রাসেলের নাম্বারে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি ‘ফোনে কিছু শুনতে পারছেন না’ বলে পরে রিং করতে বলেন। কিছুসময় পর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এনামুলের লাশের ময়নাতদন্ত করেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ট্রেনে কাটা পড়েই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন বলে মনে হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লাশের শরীরে কোনো বুলেটের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’











                       

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter