Flickr

Friday, 9 October 2015

ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় মানুষ

Posted by   on

ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় মানুষ
 দেশে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। রাজধানীতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে থানায় মামলাও হচ্ছে না, আর কেউ জানছেও না। শুধু ভুক্তভোগীই জানছেন তিনি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন এবং মালামাল ও টাকাপয়সা হারিয়েছেন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সশস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে কেউ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন, কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার কেউ রাজপথে লাশ হচ্ছেন। এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চললেও এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। গ্রেফতার হয় না ছিনতাইকারী, উদ্ধার হয় না ছিনতাইকৃত টাকা ও মালামাল। এসব ঘটনায় কোটি টাকার ওপরে ছিনতাই হয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিকাশকর্মীকে গুলী করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও রয়েছে।
দিন দুপুরে গুলী করে, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে পর পর কয়েকটি স্থানে কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। (সূত্র : দৈনিক মানব জমিন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪)
রাজধানীর ৩৫১ পয়েন্টে শতাধিক ছিনতাইকারী চক্র এখন সক্রিয়। এসব পয়েন্টেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। খুন, গুম ও অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডেও ডিএমপিকে কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধ কর্মকাণ্ড তো রয়েছেই। ফলে মামলার তদন্ত, অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল, চেকপোস্ট, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সবই যেন থমকে গেছে। আর এ সুযোগে চিহ্নিত অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর এ জন্যই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ চাঁদাবাজির ঘটনা। এরপরেও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হচ্ছে।
রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ঘটনায় অস্ত্র ঠেকিয়ে, গুলী করে এমনকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে লুট করা হচ্ছে টাকা। গুলীবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া বা বড় অঙ্কের টাকা ছিনতাই হলে সে ঘটনাটিই ওঠে পুলিশের খাতায়। এসব ঘটনায় মামলা হলেও জড়িত ছিনতাইকারীদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। লুণ্ঠিত টাকাও উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হচ্ছে না। ফলে রাজধানীতে একের পর এক দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। এরা জামিনে বের হয়ে আবার একই পেশায় ফিরে আসে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে। এসব চক্র নতুন করে ছিনতাই শুরু করেছে।
রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা দিনে দিনে তাদের কৌশল বদল করে নতুন কৌশল নিয়েছে। ছিনতাইকারীদের একটি অংশ এখন ছিনতাইকালে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে, পুলিশ পরিচয়ে দেহ তল্লাশির নামে যাত্রীদের নামায় রিকশা বা গাড়ি থেকে। তারপরই দেখা যায় তাদের আসল রূপ।
রাজধানীজুড়ে ৩৫১টি ছিনতাইয়ের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব স্পটে সব সময় ছিনতাইকারীরা সক্রিয় থাকে। ছিনতাইয়ের এসব স্পটের মধ্যে রয়েছে মালিবাগ মোড়ের এসবি অফিসের সামনে, কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ১ নম্বর গেট, কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশ, পীরজঙ্গির মাজার, শান্তিনগর মোড়, ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের আশপাশ, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, গ্রীন রোড, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী মোড়, কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপথ মোড়, ধলপুর সিটিপল্লী, উত্তরার জসীমউদ্দীন রোড, রামপুরা ব্রিজ, মগবাজার মোড়, ঝিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও মোড়, আইডিবি ভবনের সামনে, বাড্ডা নতুনবাজার,গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া, বাবুবাজার ও হাতিরঝিল এলাকা।
এমন কিছু চক্রকে আটক করেছেন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা। হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো স্পটে দিন-দুপুরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার গলিতেও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা অধিকাংশ তরুণ। এদের মধ্যে রয়েছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। নেশার টাকা জোগাড় করতে এসব তরুণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে-
৫ জুন ২০১৪ রামপুরায় রমজান নামে এক বিকাশকর্মীকে গুলী করে ৪ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়।  ৭ জুন রায়ের বাজারে গুলী করে এক ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়।  ৮ জুন ধানমন্ডিতে প্রকাশ্যে গুলী করে ২৭ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়।
১১ জুন তাঁতীবাজারে স্বর্ণের দোকানে গুলী করে ১০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। ১৬ জুন ধোলাইরপাড় সাবান ফ্যাক্টরি গলির জাকির হোসেন নামে এক দোকানদারকে গুলী করে ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ১৭ জুন মুগদা বাসস্ট্যান্ডের সামনে রুবেল নামে এক ট্রাভেল এজেন্সি কর্মকর্তাকে গুলী কলে ৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
১৯ জুন ২০১৪ হাজারীবাগের ১ নম্বর বাদলপুর লেনে তানিম ও জনি নামে দুই বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে তাদের কাছে থাকা ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা নবাবপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন একটি বেসরকারি ব্যাংকে সারা দিনের কালেকশনকৃত টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন। একইদিন রামপুরার উলন রোডে ইরান মুন্সি নামে অপর এক বিকাশকর্মীকে বাম পায়ে গুলী করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
২৪ জুন কল্যাণপুর বিআরটিসির ডিপোর কাছে একটি প্রাইভেটকার আটকে পাঁচজনকে গুলী করে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ২০ জুলাই আদাবর থানার কয়েকশ’ গজ দূরে দুর্বৃত্তরা মঞ্জুরুল আলম নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলী করে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায়।
১৩ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁতীবাজার ২৮ নম্বর কোতোয়ালি রোডের ঝুলন বাড়ির খোরশেদ বলিয়ান স্টোরে এ লুটপাট হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় কামরাঙ্গীরচরে সাব্বির হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। একই দিন শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে রাকিব হোসেন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।
১৪ আগস্ট খিলগাঁওয়ের গোড়ান টেম্পো স্ট্যান্ডে আতিক হোসেন টুটুল নামে এক বিকাশকর্মীর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ১৮ আগস্ট মিরপুরেগুলী করে ছিনতাই হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ১৯ আগস্ট মগবাজারে গুলী ও বোমা ফাটিয়ে ছিনতাই হয় ৩০ লাখ টাকা। ২৮ আগস্ট গুলশানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই হয় ৭ লাখ টাকা।
১৯  আগস্ট ২০১৪ বেলা ১১টায় আকিজ করপোরেশনের ডিস্ট্রিবিউটর প্রতিষ্ঠান জে আর করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম একটি কাজের জন্য মগবাজারের দিলু রোডের অফিস থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে বের হন। টাকার সিকিউরিটির জন্য তিনি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাথে নিয়ে দিলু রোড সিএনজি পাম্পের গলিতে পৌঁছলে মোটরসাইকেলে করে পাঁচ-ছয়জন ছিনতাইকারী তাদের পথ আটকায়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা আবুল কাশেমের কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার সাথে থাকা অন্যরা এগিয়ে আসতে চাইলে ছিনতাইকারীরা প্রথমে পাঁচ-ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপরই কয়েক রাউন্ড গুলী করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। বোমার স্পিøন্টারে আহত হন কাশেমসহ অন্য সাতজন।
একই রাতে অজ্ঞান ও মলমপার্টির কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হন প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল দিলকুশা শাখায় নির্বাহী অফিসার মমিনুজ্জামান (৩৭) ও ইমরান হোসেন (২৬) নামে যুবক। রাত ৮টায় তিনি অফিসের কাজ শেষে বাড্ডায় বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে শাপলা চত্বরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় দুই যুবক এসে কথার ছলে তার চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। পরে তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে পকেট থেকে টাকা ও একটি দামি মোবাইলসেট নিয়ে তাকে ওসমানী উদ্যানের গেটের সামনে ফেলে দেয়। অপর দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে ফাহিম জুয়েলার্সের কর্মচারী ইমরান হোসেন দোকান থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে বের হন। রাত ৮টায় তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মগবাজারে কমিউনিটি হাসপাতালের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে অজ্ঞান করে টাকা ও চেক নিয়ে যায়।
২০ আগস্ট ২০১৪ রাতে পুরান ঢাকায় কোতোয়ালি থানাধীন তাঁতীবাজারে ২৮ নম্বর খোরশেদ গোল্ড স্টোর নামে একটি স্বর্ণের দোকানে এলোপাতাড়ি গুলী করে ১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় দোকান মালিক হাজী খোরশেদ আলম ও জুয়েল শেখ নামে এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
বিকাশের টঙ্গী সেনাকল্যাণ শাখার বিক্রয় প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে অফিসে ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। দিন দুপরে তাকে গুলী করে টাকাভর্তি ব্যাগ ও তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলীতে নিহত হন শরিফুল ইসলাম সায়মন নামে এক ব্যবসায়ী। দুর্বৃত্তদের গুলীতে আহত হন সায়মনের বাবা ইসরাইল। দুর্বৃত্তরা তাদের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বাসার সামনেই দুর্বৃত্তদের হাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ছিনতাই করার ঘটনায় ব্যবহƒত অস্ত্রগুলোও ভারত থেকে অবৈধ পথে আনা হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন। এ ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী কাজী সিরাজুল ইসলামকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অত্যাধুনিক তিনটি খুদে অস্ত্রই ছিল নতুন। গ্রেফতারকৃত অস্ত্র ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দাদের জানায়, অস্ত্র সরবরাহের অর্ডার পাওয়া গেলে মনিরুজ্জামান শিমুল ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তার পাশের এলাকা দিয়ে অস্ত্র ও গুলী বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এরপর অস্ত্র ও গুলী রাজধানীতে এনে কামাল ও রুহুল আমিনের কাছে পৌঁছে দেয়। এরপর অস্ত্রের অর্ডার প্রদানকারীর কাছে সেই অস্ত্র পৌঁছে দেয়া হয়। এজন্য অর্ডারকারীর কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নেয়া হয়। টাকা নিয়ে অস্ত্র না দেয়ার মতো বিশ্বাসঘাতকতা কখনই করেনি তারা।
১২ সেপ্টেম্বর ভোরে গাজীপুর নাগদা ব্রিজ থেকে ঈশ্বরদী ইপিজেডে অবস্থিত ভিনটেজ ডেনিম লিমিটেড নামের কারখানার ৮৫ লাখ টাকা দামের ২৪৩ রোলে ২৭ হাজার ৮৭১ গজ ফেব্রিকসসহ কাভার্ডভ্যান ছিনতাই হয়। র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কাপড়সহ কাভার্ডভ্যান ছিনিয়ে নেয়ার ওই ঘটনায় ব্যবস্থাপক (কর্মাশিয়াল ডিপার্টমেন্ট) মোঃ আছাদুজ্জামান বাদী হয়ে জয়দেপুর থানায় মামলা করেন।
১০ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মহানগরের জাঝর এলাকার নার সুয়েটার ফ্যাক্টরির শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের ৭২ লাখ টাকা নিয়ে কর্মকর্তারা মাইক্রোবাসযোগে উত্তরা থেকে কারখানায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কারখানার কাছে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাস থামিয়ে গাড়িসহ ৭২ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে দিন দুপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন যুবক গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিসের ২ জনের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। কালিয়াকৈরের খাড়াজোড়া নামক স্থানে দু’জনকে সড়কের পাশে ফেলে এরপর তারা চলে যায়।
২৩ মার্চ ২০১৫ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন দিপু (২৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে তিন-চারজন ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২৯ এপ্রিল রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে আকবর আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আকবর নরসিংদী পলাশ জুট মিলে চাকরি করতেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। বাড়ি থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন আকবর। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবরের মৃত্যু হয়।
২৪ মে রাজধানীর মহাখালীতে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান রকিবুজ্জামান নামের এক পুলিশ সদস্য।
২৭ মে ২০১৫ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ লাখ টাকা হারান দুই ব্যবসায়ী। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দুই ব্যবসায়ী হলেন মোঃ মহিউদ্দিন (২৮) ও হারুনুর রশিদ (৩০)। তাদের দুজনেরই নরসিংদী সদরে কাপড়ের দোকান রয়েছে। ওই দুই ব্যবসায়ীর বন্ধু অনীক সহ তিনজন নরসিংদী থেকে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় এসেছিলেন দোকানের মালামাল কিনতে। যাত্রাবাড়ী আসার পর হকারের কাছ থেকে হালুয়া কিনে খান মহিউদ্দিন ও হারুন। এটা খেয়েই হয়তো তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
১ জুন রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে এনায়েত উল্লাহ নামের ভারতীয় এক নাগরিককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
১৭ জুন ২০১৫ রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৪ লাখ টাকা খুইয়েছেন লিটন নামে এক ব্যক্তি। তিনি মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারে অবস্থিত সেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির অফিস সহকারি।
১৭ জুন ডিবির বিশেষ টিম যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট এলাকা থেকে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ২১ সদস্যকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান করার বিভিন্ন ওষুধও উদ্ধার করা হয়।
২৮ জুন ২০১৫ মিরপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ডিএমপি’র গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মোঃ মাহাতাফ মৃধা, মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ হানিফ হাওলাদার, মোঃ সেন্টু আকন, মোঃ শামীম, মোঃ জাকির হোসেন ও মোঃ খোকন সরকার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮টি ডরমিকাম ট্যাবলেট, ১৮টি এপিট্রা ট্যাবলেট, ৫টি গুলের কোটায় সংরক্ষিত চেতনা বিলোপকারী ওষুধ মিশ্রিত তরল পদার্থ ও কিছু নাম না জানা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
১৬ আগস্ট ২০১৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনসার আলী লিমনকে মেরে জোর করে তার এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড নিয়ে বুথ থেকে টাকা ছিনতাই এবং বান্ধবীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। রাতে লিমন ও তার মেয়ে বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে শিখা চিরন্তনী দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় প্রথমে ৫-৬ জন তাদেরকে ঘিরে ধরে। পরে তাদের ইশারায় আরো ২০-২৫ জন এসে জড়ো হয়। তারা সবাই চাপাতি-রড দেখিয়ে তাকে হুমকি দেয় এবং যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে।
এক পর্যায়ে তার মোবাইল-মানিব্যাগ ও মেয়ে বন্ধুটির গলায় থাকা চেইন ও মোবাইল সব নিয়ে যায়। এ সময় তার মানিব্যাগে থাকা এটিএম কার্ড বের করে জোর করে তার পাসওয়ার্ড নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে টিএসসির ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে যায়।
ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে বিকাশ ও মোবাইল ফেক্সিলোডের এজেন্টরা। বাদ পড়ছেন না সাধারণ মানুষও। সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নি¤œ আয়ের মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। রাস্তাঘাট, অলিগলি, মার্কেট, শপিংমল, পথচারী পারাপার, বাস-লঞ্চস্টেশনগুলো ছিনতাইকারীদের অভায়রণ্যে পরিণত হয়েছে। ফ্ল্যাক্সি লোড, রিচার্জ কার্ড, মোবাইল ফোন সেট ইত্যাদির টাকা সংগ্রহ করতে কর্মীদের সকালে মার্কেটে পাঠিয়ে সন্ধ্যায় অফিসে ফেরা পর্যন্তই থাকতে হয় উৎকণ্ঠায়।
বর্তমানে ছিনতাইকারীদের তেমন কোনো গডফাদার নেই। যে যখন সুযোগ পাচ্ছে বা যার কাছে অস্ত্র থাকছে সে তখন ছিনতাইকারীতে পরিণত হচ্ছে। এ কাজে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে সরকারদলীয় কিছু নেতা-কর্মী। ধনাঢ্য পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য। নেশাগ্রস্ত পথশিশুদের মধ্যে ছিনতাইয়ের প্রবণতা থাকলেও সাধারণত তারা বড় কাজ করতে সাহস পায় না। বর্তমানে বড় ছিনতাই, চুরি বা ডাকাতির জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হাত থাকতে হয়।
বর্তমানে নামিদামি ছিনতাইকারীদের টার্গেট বিকাশ ও মোবাইল ফোন ফেক্সিলোড এজেন্টদের ওপর। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারীদের টার্গেট করে তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের সোর্স নিয়োগ করতে হয়। যেসব এলাকায় বিকাশে বেশি টাকা লেনদেন হয় ওই সব এলাকায় ছিনতাইকারীদের একাধিক সোর্স নিয়োজিত থাকে। এজেন্টরা টাকা কালেকশনের জন্য কখন বিকাশের দোকানগুলোতে পৌঁছাল, কত টাকা সংগ্রহ করল এবং কখন কোন পথ দিয়ে তারা ফিরছে, সে পথে পুলিশ কত দূরে অবস্থান করছে, তার সব খবর রাখতে হয় সোর্সকে। এমনকি কালেকশন করা টাকাগুলো কোন ব্যক্তির কাছে কী রঙের ব্যাগে রয়েছে সেসব তথ্য দিয়ে থাকে সোর্সরা। সব কিছু জানানোর পর আগে থেকে প্রস্তুত থাকা ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দামি মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে এসে ঠিক টাকার ব্যাগ থাকা ওই ব্যক্তিকেই আক্রমণ করে। এরপর পিস্তল, রিভলবার, বোমা বা ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তোলা হলেও সে খবরও পৌঁছে যায় ছিনতাইকারী চক্রের কানে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিনতাইকারীদের সোর্স হিসেবে কাজ করে থাকে। আগের সোর্সরা ভাগে সামান্য কিছু টাকা পেলেও ব্যাংকের সোর্সরা অনেক বেশি পেয়ে থাকে।
রাজধানীর কয়েকজন অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। ওই ছিনতাইকারীদের শিষ্যরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক ছিনতাইগুলো রাজধানীর বাইরে থেকে এসে করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ২৩টি ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনা ঘটছে। ২০১৪ সালের সাত মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের হিসাবেই রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা হয় ২০টি। মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬-এ। এপ্রিল মাসে থানায় ১৯টি মামলা হলেও মে মাসে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২১। জুন মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় ৩১টি মামলা হলেও জুলাই মাসে এ মামলার সংখ্যা ২৩। কয়েকটি মামলায় আসামী গ্রেফতার হলেও বড় বড় ছিনতাই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। (সূত্রঃ দৈনিক সমকাল ২৩ আগস্ট ২০১৪)
মূলত ঈদ বা এ ধরনের বড় কোনো উৎসবে ছিনতাইকারী ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেশি থাকে। অন্যান্য সময় তা শিথিল থাকে। এ সুযোগেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ছিনতাইকারীরা। জিবলু রহমান

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter