Flickr

Saturday, 3 October 2015

‘জঙ্গি’ প্রচারণার নেপথ্য কারিগররাই বিজয়ী হচ্ছে!!!

Posted by   on

‘জঙ্গি’ প্রচারণার নেপথ্য কারিগররাই বিজয়ী হচ্ছে!!!

 

 


অনেক দিন লেখায় বিরত ছিলাম। মনে করেছিলাম আমার মত ক্ষুদ্র প্রাণী আর কত লিখব। লিখেই বা কি লাভ! এরকম নানা চিন্তা মাথায় আসে। সত্য কথা কেউ শুনতে চায় না। সবাই চায় যেন একটু তেল দিয়া লেখা হয়। এজন্য লেখা থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়ার চেস্টাও করেছি। কিন্তু পারলাম না। গ্রামে একটা প্রবাদ শুনতাম ‘বান্দর (বানর) বুড়া হইলেও গাছে উঠে’। আমারও একই অবস্থা। ঢেকি যেমন স্বর্গে গেলেও বাড়া বানে, বানর যেমন বুড়া হইলেও গাছে উঠে, আমি যত কঠিন অবস্থায় থাকি না কেন লেখা মনে হয় ছাড়তে পারব না। পাঠক থাকুক আর না থাকুক লিখেই যেতে হবে মনে হচ্ছে।
দেশের বর্তমান হাল হকিকত দেখে ভাল লাগছে না। মনে হচ্ছে আমরা কঠিন কোন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ৫ জানুয়ারীর বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের জিকির তুলেছিল। কোন একটা ইস্যু সামনে আসলেই দাড়ি টুপি ওয়ালা কিছু লোক আটক করে ফলাও প্রচারণা চলানো হয় জঙ্গি নেতা অমুক আটক। সঙ্গে কিছু ধর্মীয় পুস্তক হাজির করে বলা হয় জিহাদী বই উদ্ধার। এই জঙ্গিবাদী জিকিরই মনে হয় আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়াচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে রওয়ানা হওয়ার আগের দিন যাত্রা স্থগিত করল। নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের এই সফর শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সফর চুড়ান্ত বাতিলের ঘোষণা আসার আগেই আরো অঘটন ঘটল। যেন অস্ট্রেলিয়ার এই সন্দেহ হাতে নাতে প্রমাণ করে দেয়ার মত অবস্থা। ইতালিয়ান একজন নাগরিক গুলশানের কুটনৈতিক পাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন। ঘটনা গুলো ধারাবাহিকতা খানিকটা ভাবিয়ে তুলে। এর কিছু সঙ্গত কারনও রয়েছে। ঘটনার সাথে সাথে কিছু ভুইফোঁর অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম আই এস এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। আবার ইন্ডিয়ান একটি পত্রিকার (টাইমস অব ইন্ডিয়া) বরাত দিয়ে দৈনিক মানব জমিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা গুলো সন্দেহ করছে আই এস ভাবাদর্শে উদ্ভুদ্ধরা এই তাবেলা সিজার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে। কি চমৎকার প্রচারণা!! আর এই ঘটনার পরপরই রাজনৈতিক দল গুলো বলতে থাকল ঘটনা যে বা যারা ঘটাক একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ বিশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। এই ঘটনা গুলোর মাত্র কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর উপদেস্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকার একটি পত্রিকায় কলাম লিখলেন। তাঁর পুরো কলাম জুড়েই ছিল বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী প্রচারণা। মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করছে জয়ের লেখায় তাদের জঙ্গি হিসাবে আখ্যায়িত করা হল। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে জঙ্গি সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করার একটা জোর প্রয়াস চালানো হয়েছে জয়ের লেখায়। এর আগেও এক লেখায় তিনি বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা এবং সেনা বাহিনীতে মাদ্রাসা ছাত্রদের চাকরি নিয়ে লিখেছেন। জয়ের সর্বশেষ লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হয় এর দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামী সিনিয়র দুই নেতাসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার এবং অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের দুইজনই হলেন সাবেক সংসদ সদস্য। জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত ছিলেন। জয়ের লেখায় তাদেরকে জঙ্গি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে কাউকে আটকের পর ফলাও করে প্রচার করে থাকে জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু কখনো বই গুলোর নাম প্রকাশ করা হয় না। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে নানা পুস্তুক পাঠ করে থাকেন। কোরআন হাদীসের আলোকে মাসআ’লা মাসায়েলের বর্ণনাসহ ধর্মীয় পুস্তুক বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলামানের ঘরে পাওয়া যাবে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসব বইকে জিহাদী পুস্তক হিসাবে আখ্যায়িত করে ফলাও প্রচারণা চালায়। ইসলাম বিদ্ধেষী মিডিয়া গুলো এই প্রচারণাকে আরো একধাপ এগিয়ে উস্কে দেয়।
জয়ের লেখাটি যখন প্রকাশিত হয় কাছাকাছি সময়ে ভোটার বিহীন নির্বাচনে ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি ইন্টাভিউ দিলেন। ইন্টারভিউতে তিনি লন্ডনে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের জঙ্গি সহযোগি হিসাবে চিহ্নিত করলেন। বৃটিশ সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বাংলাদেশে ‘জঙ্গি’ দমনে সহযোগিতা চেয়েছেন। বিশেষ করে তিনি পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার কথা উল্লেখ করলেন। এতে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদেরও তিনি ঝুকির মুখে ঠেলে দিলেন।
এই প্রচারণার পরিণতি কি দাড়াল? ইউরোপীয় ইউনিয়ন কঠোর সতর্কতা জারি করল। আমেরিকান ক্লাব বন্ধ করে দেয়া হল। আমেরিকান নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাফেরায় সতর্কতা থাকতে বলা হল। বৃটেন তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিল। সরকারি জঙ্গি প্রচারণার ফসল হচ্ছে এসব সতর্কতা জারি। যারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চায় তারাও এমনটাই সব সময় প্রত্যাশা করে। তাদের তৈরি করা রোডম্যাপ অনুযায়ী সরকারি তরফ থেকে জঙ্গি প্রচারনা চালানো হচ্ছে। কারন সরকারি তরফ থেকে জঙ্গি প্রচারণা চালানো হলে গুরুত্বই আলাদা। অন্য কোন মাধ্যমে প্রাচনায় তত গুরুত্ব পাবে না। তাই সরকারের মাধ্যমেই বারবার জঙ্গি জঙ্গি জিকির তোলানো হয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। ঢাকা মসজিদের শহর হিসাবে পরিচিতি এমনিতেই লাভ করেনি। এর পেছনে অনেক কারন ছিল। বাংলাদেশের মানুষ আদিকাল থেকেই ধর্মপ্রাণ। নিজ নিজ ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালবাসা থেকেই মসজিদ নির্মান করেছে। পাশাপাশি অন্য ধর্মের লোকরাও শান্তিতে সহাবস্থান করেছে। ধর্মীয় আচার আচরণ এবং সংস্কৃতির প্রতি মানুষের যেমন অনুরাগ রয়েছে তেমনি রয়েছে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা। নতুবা সম্প্রীতি বজায় থাকত না। গত বৃহস্পতিবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গরুর গোস্ত খাওয়ার অভিযোগে ইন্ডিয়ায় একজন মুসলামনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধার্মীয় রীতি পালনের কারনে বাংলাদেশে অন্য ধর্মের কাউকে হত্যা করা হয়েছে এমন নজির খুজে পাওয়া যাবে না। অথচ খোদ ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত। গুজরাটে তাঁর নেত্রীত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শত শত মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। ট্রেনি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তারপরও কি তাঁকে হিন্দু জঙ্গিবাদী বলা হয়ে থাকে!!! এই চরিত্র কোন মুসলমান নেতার হলে তাঁকে কি বলে আখ্যায়িত করা হতো জানি না।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। তিলে তিলে বিনাশ করা হয়েছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে। দলীয় করনের মাধ্যমে পরিণত করা হয়ে মানুষের আস্থাহীন। এখন কোন প্রতিষ্ঠানের উপরই আর মানুষ আস্থা রাখে না। বিচারালয়, প্রশাসন সব জায়গায় মানুষ অসহায়। এই অবস্থায় জঙ্গি প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করার শেষ ধাপে পৌছানো হয়েছে। তখন জঙ্গি আস্থানায় হামলার নামে ড্রোন অ্যাটক করা হতে পারে। হয়ত সেই দিকেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অলিউল্লাহ নোমান,  লেখক: দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।
nomanoliullah@yahoo.com

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter