
এমপি লিটনের অজানা কাহিনী
থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের। কথায় বলে ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’ ‘চোরের দশদিন আর গৃরস্তের একদিন’। জনগণকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন ক্ষমতার দাপট ও বন্দুকের ভয় দেখিয়ে দিনকে রাত; রাতকে দিন বানিয়ে সে চলাফেরা করত। কেউ টু শব্দ করার সাহস পাইত না। শিশুর পায়ে গুলী করা তার বড় প্রমাণ। ভিন্ন মতের লোকদেরকে সে দেখলেই আর সহ্য করত না। তাকে যে ভাবেই হোক হেনস্তা করত বলে জানা গেছে। বর্তমানে গোটা জেলা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। এমপি পদ থেকে খারিজ, পার্টির থেকে বহিষ্কার এবং তার সকল অপকর্মের বিচার। কিন্তু প্রশ্ন হল আজ ৬দিন হয়ে গেল অথচ পুলিশ তাকে আটক করতে পারল না।
তার নানা কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। বর্ধিত সভা ডেকে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপরের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। বর্ধিত সভার মাধ্যমে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। বর্তমানে বামনডাঙ্গার তার বাড়িতে ঝুলছে তালা।
পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে চলতি বছর ১৭ আগস্ট ছাইতানতলায় মাদক সম্রাট মহির মিস্ত্রির বাড়িতে মদপান করে মুরগির বিষ্টার গর্তে ছিটকে পড়ে যান এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর পর ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৯৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নামে মামলা নিতে পুলিশকে বাধ্য করান তিনি। সাধারণ ও খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও সেই মামলায় আসামি হয়ে বাড়িঘর ছাড়া। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সুন্দরগঞ্জ প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ দেয়া টিআর অর্থ ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা দিতে উৎসাহিত করেছেন পুলিশকে। পুলিশের সাথে আঁতাত করে দলীয় ক্যাডাদের সাথে নিয়ে রাতের আঁধারে পুলিশি অভিযানের নামে লুট অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর, আসবাবপত্র তছনছ, টাকা-পয়সাসহ অলঙ্কার ছিনতাই করা হয় তারই মদদে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সুন্দরগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেও তার ব্যবহার ছিল দাম্ভিকতাপূর্ণ। শ্রীপুর ইউপির জনৈক এক বিধবা মহিলা জানান, তিনি তার স্বামীর ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে গেলে এমপি মঞ্জুর বাড়ির ভেতরে ডেকে অশ্লীল ভাষায় তাকে গাল-মন্দ করে। এমনকি জামায়াতের সোর্স আখ্যা দিয়ে গুলীর ভয় দেখিয়ে লাঞ্ছিত করে বের করে দেয়া হয় তাকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এমপি লিটনের এলাকার আশপাশের মানুষের কাছে গুলীর শব্দ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি নতুন কিছু নয়। এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর আরো বাড়ছে দুইটি বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার পর। তা-ও আবার জমা দেয়ার গুলীর সংখ্যার গরমিল। দলীয় নেতাকর্মীদের এক অংশের জল্পনা-কল্পনা দুটি অস্ত্র ছাড়াও তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন ও ক্যাডাদের কাছে যে অস্ত্র আছে তার সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। তার গড়ে তোলা এমপি বাহিনীর ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করেন থাকেন। এ নিয়ে শঙ্কিত সবাই।
এ দিকে ঘটনার পর থেকে এমপি লিটনের গ্রেফতারের দাবিতে আওয়ামী লীগের এক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
সুুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ইসরাইল হোসেন জানান, এমপি মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ দিকে মামলার বাদি গুলীবিদ্ধ শিশু সৌরভের বাবা সাজু মিয়া মামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ঘটনায় চরম ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতারা লজ্জায় রাস্তাঘাটে চলাফেরা পর্যন্ত করছেন না। তারা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি বর্ধিত সভা করার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বর্ধিত সভা করতে গেলে কেন্দ্রীয় সভানেত্রী ও সম্পাদকের অনুমতি লাগে। অনেক যোগাযোগ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। অনুমতি পাওয়া মাত্রই বর্ধিত সভায় তাকে সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরমেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অবিলম্বে এমপি মঞ্জুুরুল ইসলাম লিটনকে আইনের আওতায় আনা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া যাবে না। একজন আওয়ামী লীগ নামধারী এমপির কাছে যদি মানুষ নিরাপদ না হয়, তাহলে তাকে কেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না, প্রশ্ন রাখেন তিনি। অবিলম্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুন্দরগঞ্জবাসী তা বাস্তবায়ন দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এমপি লিটনের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : গাইবান্ধা-১, সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। তার নিজের দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউ তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন।
তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলার পাশাপাশি কথায় কথায় গুলী ছোড়ার ঘটনা উপজেলাবাসীকে আতঙ্কিত ও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তার স্ত্রী ও বিশেষ সহকারী খুরশিদ জাহান হক স্মৃতির বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, তিনি এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ৬২ টন জিআর চাল কোনো প্রকল্প ছাড়াই সম্পূণরূপে আত্মসাৎ করেন এমপি লিটন। পাশাপাশি সরকারের উল্লেখযোগ্য প্রকল্প সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রমেও তিনি নয়ছয় করেছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার বিশেষ সহকারী মিলে উপজেলার ৫০টি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং ৫০টি মন্দিরের নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া প্রকল্প করে ১০০ টন জিআরের চাল আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পেলে আত্মসাৎকৃত চাল ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া এমপি লিটন বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ২৮ একর সরকারি জমি দখল করে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি এমনকি নৈশপ্রহরী নিয়োগ থেকে শুরু করে এমন কোনো নিয়োগ বাণিজ্য নেই, যা তিনি করেননি। সম্প্রতি উপজেলার ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার অত্যাচারে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অতিষ্ঠ। তিনি ও তার স্ত্রী আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের নামেও বিপুল অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করেছেন।
তার বিভিন্ন অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও তার প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পাননি। তাদের বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানি করছেন।
সর্বশেষ দেশের ইতিহাসে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে শিশুকে গুলী করার মধ্য দিয়ে একটি ন্যক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি এলাকাবাসীর।
এমপি লিটনকে গ্রেফতারে দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অভাবী দরিদ্র পরিবারের চতুর্থ শ্রেণীর স্কুল ছাত্র শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ গুলীবিদ্ধ ঘটনায় একমাত্র আসামী গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতারের ও বিচারের দাবিতে পৌর নাগরিক সংগ্রাম পরিষদ, আ’লীগের একাংশ ও স্থানীয় জনতা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু চত্বরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি টিআইএম মকবুল হোসেন প্রামানিক। এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, পৌর নাগরিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি বীরেন সরকার মিন্টু, সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম মাসুদউল ইসলাম চঞ্চল, আ’লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক- সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের- সভাপতি গোলাম কবির মুকুল ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব মাসুদ। বক্তাগণ অবিলম্বে এমপি লিটনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল, দল থেকে বহিস্কারসহ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু হয়। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সুন্দরগঞ্জে ৩ কলেজের সভাপতি পদ থেকে তাকে অব্যাহত দেয়া হয়। গ্রেফতারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি সংসদ্য সদস্য হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী গ্রেফতারের বিষয়টি অনুররণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। থানা অফিসার ইনচার্জ ইসরাইল হোসেন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গ্রেফতারের জানতে চাইলে তিনি জানান, এমপিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে চেষ্টা জোরেসোরে চলছে। এলাকায় তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যখন যা নির্দেশ তখন তা পালনের চেষ্টা করছি। এদিকে শনিবার রাতে জাতীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এক প্রতিনিধির মাধ্যমে ৩ রাউন্ড গুলীসহ পিস্তল এবং ৫০ রাউন্ড গুলীসহ শর্টগানটি সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা প্রদান করেছেন। এতে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, জমাকৃত গুলীর সংখ্যায় হেরফের পাওয়া গেছে।
এদিকে ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কর্তৃক তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, সৌরভের পিতা সাজু মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন (নং-০২, তাং- ০৩-১০-১৫)। মামলা হলেও সংসদ সদস্য মঞ্জুুরুল লিটনকে গ্রেফতারের বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ইসরাইল হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা যথারীতি নিয়ম-কানুন মেনেই গ্রহণ করা হয়েছে।
তার নানা কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে। বর্ধিত সভা ডেকে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপরের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। বর্ধিত সভার মাধ্যমে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। বর্তমানে বামনডাঙ্গার তার বাড়িতে ঝুলছে তালা।
পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে চলতি বছর ১৭ আগস্ট ছাইতানতলায় মাদক সম্রাট মহির মিস্ত্রির বাড়িতে মদপান করে মুরগির বিষ্টার গর্তে ছিটকে পড়ে যান এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর পর ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৯৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নামে মামলা নিতে পুলিশকে বাধ্য করান তিনি। সাধারণ ও খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও সেই মামলায় আসামি হয়ে বাড়িঘর ছাড়া। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সুন্দরগঞ্জ প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ দেয়া টিআর অর্থ ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা দিতে উৎসাহিত করেছেন পুলিশকে। পুলিশের সাথে আঁতাত করে দলীয় ক্যাডাদের সাথে নিয়ে রাতের আঁধারে পুলিশি অভিযানের নামে লুট অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর, আসবাবপত্র তছনছ, টাকা-পয়সাসহ অলঙ্কার ছিনতাই করা হয় তারই মদদে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সুন্দরগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেও তার ব্যবহার ছিল দাম্ভিকতাপূর্ণ। শ্রীপুর ইউপির জনৈক এক বিধবা মহিলা জানান, তিনি তার স্বামীর ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে গেলে এমপি মঞ্জুর বাড়ির ভেতরে ডেকে অশ্লীল ভাষায় তাকে গাল-মন্দ করে। এমনকি জামায়াতের সোর্স আখ্যা দিয়ে গুলীর ভয় দেখিয়ে লাঞ্ছিত করে বের করে দেয়া হয় তাকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এমপি লিটনের এলাকার আশপাশের মানুষের কাছে গুলীর শব্দ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি নতুন কিছু নয়। এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর আরো বাড়ছে দুইটি বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার পর। তা-ও আবার জমা দেয়ার গুলীর সংখ্যার গরমিল। দলীয় নেতাকর্মীদের এক অংশের জল্পনা-কল্পনা দুটি অস্ত্র ছাড়াও তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন ও ক্যাডাদের কাছে যে অস্ত্র আছে তার সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। তার গড়ে তোলা এমপি বাহিনীর ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করেন থাকেন। এ নিয়ে শঙ্কিত সবাই।
এ দিকে ঘটনার পর থেকে এমপি লিটনের গ্রেফতারের দাবিতে আওয়ামী লীগের এক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
সুুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ইসরাইল হোসেন জানান, এমপি মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ দিকে মামলার বাদি গুলীবিদ্ধ শিশু সৌরভের বাবা সাজু মিয়া মামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ঘটনায় চরম ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতারা লজ্জায় রাস্তাঘাটে চলাফেরা পর্যন্ত করছেন না। তারা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি বর্ধিত সভা করার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বর্ধিত সভা করতে গেলে কেন্দ্রীয় সভানেত্রী ও সম্পাদকের অনুমতি লাগে। অনেক যোগাযোগ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। অনুমতি পাওয়া মাত্রই বর্ধিত সভায় তাকে সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরমেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অবিলম্বে এমপি মঞ্জুুরুল ইসলাম লিটনকে আইনের আওতায় আনা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া যাবে না। একজন আওয়ামী লীগ নামধারী এমপির কাছে যদি মানুষ নিরাপদ না হয়, তাহলে তাকে কেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না, প্রশ্ন রাখেন তিনি। অবিলম্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুন্দরগঞ্জবাসী তা বাস্তবায়ন দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এমপি লিটনের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : গাইবান্ধা-১, সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। তার নিজের দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউ তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন।
তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলার পাশাপাশি কথায় কথায় গুলী ছোড়ার ঘটনা উপজেলাবাসীকে আতঙ্কিত ও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তার স্ত্রী ও বিশেষ সহকারী খুরশিদ জাহান হক স্মৃতির বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, তিনি এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ৬২ টন জিআর চাল কোনো প্রকল্প ছাড়াই সম্পূণরূপে আত্মসাৎ করেন এমপি লিটন। পাশাপাশি সরকারের উল্লেখযোগ্য প্রকল্প সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রমেও তিনি নয়ছয় করেছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার বিশেষ সহকারী মিলে উপজেলার ৫০টি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং ৫০টি মন্দিরের নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া প্রকল্প করে ১০০ টন জিআরের চাল আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পেলে আত্মসাৎকৃত চাল ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া এমপি লিটন বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ২৮ একর সরকারি জমি দখল করে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি এমনকি নৈশপ্রহরী নিয়োগ থেকে শুরু করে এমন কোনো নিয়োগ বাণিজ্য নেই, যা তিনি করেননি। সম্প্রতি উপজেলার ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার অত্যাচারে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অতিষ্ঠ। তিনি ও তার স্ত্রী আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের নামেও বিপুল অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করেছেন।
তার বিভিন্ন অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও তার প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পাননি। তাদের বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানি করছেন।
সর্বশেষ দেশের ইতিহাসে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে শিশুকে গুলী করার মধ্য দিয়ে একটি ন্যক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি এলাকাবাসীর।
এমপি লিটনকে গ্রেফতারে দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অভাবী দরিদ্র পরিবারের চতুর্থ শ্রেণীর স্কুল ছাত্র শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ গুলীবিদ্ধ ঘটনায় একমাত্র আসামী গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতারের ও বিচারের দাবিতে পৌর নাগরিক সংগ্রাম পরিষদ, আ’লীগের একাংশ ও স্থানীয় জনতা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু চত্বরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি টিআইএম মকবুল হোসেন প্রামানিক। এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, পৌর নাগরিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি বীরেন সরকার মিন্টু, সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম মাসুদউল ইসলাম চঞ্চল, আ’লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক- সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের- সভাপতি গোলাম কবির মুকুল ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব মাসুদ। বক্তাগণ অবিলম্বে এমপি লিটনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল, দল থেকে বহিস্কারসহ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু হয়। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সুন্দরগঞ্জে ৩ কলেজের সভাপতি পদ থেকে তাকে অব্যাহত দেয়া হয়। গ্রেফতারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি সংসদ্য সদস্য হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী গ্রেফতারের বিষয়টি অনুররণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। থানা অফিসার ইনচার্জ ইসরাইল হোসেন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গ্রেফতারের জানতে চাইলে তিনি জানান, এমপিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে চেষ্টা জোরেসোরে চলছে। এলাকায় তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যখন যা নির্দেশ তখন তা পালনের চেষ্টা করছি। এদিকে শনিবার রাতে জাতীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এক প্রতিনিধির মাধ্যমে ৩ রাউন্ড গুলীসহ পিস্তল এবং ৫০ রাউন্ড গুলীসহ শর্টগানটি সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা প্রদান করেছেন। এতে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, জমাকৃত গুলীর সংখ্যায় হেরফের পাওয়া গেছে।
এদিকে ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কর্তৃক তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, সৌরভের পিতা সাজু মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন (নং-০২, তাং- ০৩-১০-১৫)। মামলা হলেও সংসদ সদস্য মঞ্জুুরুল লিটনকে গ্রেফতারের বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ইসরাইল হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা যথারীতি নিয়ম-কানুন মেনেই গ্রহণ করা হয়েছে।
No comments:
Write comments