Flickr

Friday, 2 October 2015

শান্তির মা মারা গেছেন

Posted by   on

শান্তির মা মারা গেছেন, শান্তি শান্তি শান্তি- চারপাশে গুমরে মরছে শান্তির আকাক্সক্ষা। অথচ তরুলতা-বৃক্ষে শান্তির বাতাবরণ, কোকিলের কুহুতানেও শান্তির বারতা। কিন্তু প্রকৃতির বাতাবরণ ও আবাহনের সাথে মানবের কর্মপ্রবাহের আজ মিল নেই কেন? কেন এই ছন্দপতন! অথচ মানুষ তো প্রকৃতিরই অংশ, শ্রেষ্ঠ অংশ। শ্রেষ্ঠ অংশের কার্যক্রম আজ তার মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই কি অক্ষরহীন অশীতিপর বৃদ্ধার উচ্চারণ ‘শান্তির মা মারা গ্যাছে।’ কিন্তু শান্তির মাকে কে মারলো? নিরক্ষর, দুর্বল, দরিদ্র মানুষের তো শান্তির মাকে মারার সামর্থ্য নেই। দুর্বল ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোরও সেই সক্ষমতা নেই। তা হলে কে মারলো? হত্যার মতো নির্মম কাজে সাফল্য পেতে হলে শক্তি প্রয়োজন, সাহস প্রয়োজন। শক্তির উপাদান এখন নিহিত আছে- অর্থে, অস্ত্রে, মিডিয়ায়, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে, প্রতারণা এবং কূটচালে। এসব এখন যার কিংবা যাদের আছে তারাই তো শক্তিমান। তাই সহজ কথায় বলা যায়- দুর্বলরা নয়, শান্তির মাকে হত্যা করেছে শক্তিমানরাই। কিন্তু প্রহসনপুষ্ট বর্তমান সভ্যতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার কল্যাণে শান্তির মাকে হত্যার জন্য এখন দায়ী করা হচ্ছে দুর্বলকে, যার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে অক্ষম, অথর্ব ও নানা কোন্দলে বিভক্ত মুসলিম সম্প্রদায়। আবারও সেই একই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়- শান্তির পক্ষে আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, চীন, ভারত এবং জাতিসংঘসহ এতসব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও থিঙ্কট্যাঙ্ক থাকতে অথর্ব ও দুর্বল মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাই শান্তির মাকে মেরে ফেললো! বর্তমান সভ্যতা তো আমাদের এমন কথাই বিশ্বাস করতে বলছে। আমরা কি সেই কথাই বিশ্বাস করবো? তবে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এমন দোলাচলে আমরা একটি প্রস্তাব পেশ করতে চাই। বর্তমান সভ্যতার কর্ণধাররা সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে যেভাবে এপিসোডগুলো পরিবেশন করে যাচ্ছেন এবং শান্তির মাকে ক্ষতবিক্ষত করার নৃশংস কর্মে মুসলিম নামধারী কিছু বিভ্রান্তি মানুষকে যেভাবে জড়িয়ে নিতে সমর্থ হয়েছেন, তাতে তাদের কমপক্ষে নোবেল পুরস্কার দেয়া প্রয়োজন। এমন প্রস্তাবে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ নোবেল পুরস্কার শুধু মহৎ মানুষরাই পান না, খলনায়করাও পেয়ে থাকেন। অনুসন্ধিৎসু পাঠক এ প্রসঙ্গে এএফপি পরিবেশিত প্রতিবেদনটি দেখে নিতে পারেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসীদের বিশাল স্রোত নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আলোচনার ধরন দেখে মনে হয়েছে, অভিবাসী সমস্যাই যেন বর্তমান পৃথিবীর মূল সমস্যা। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, মূল সমস্যা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হলো না। অভিবাসীরা কি ঘুম থেকে উঠেই কোনো এক সকালে হঠাৎ করেই ইউরোপের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল? না, গল্পটা এমন নয়। শক্তিমানরা মিথ্যা অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় নিজেদের স্বার্থে যে খেলাটি খেলে চলেছেন, তার ফলে ওই রাষ্ট্রগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। শাসন-প্রশাসন, শৃঙ্খলা, অর্থনীতি, রাজনীতি সবই হয়ে গেছে বিপর্যস্ত। শক্তিমানদের কেউ শাসকদের পক্ষ নিয়েছেন, কেউবা অস্ত্র ও অর্থ জুগিয়েছেন বিদ্রোহীদের। এভাবেই বর্তমান বিশ্বসভ্যতার কর্ণধারদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে এক নারকীয় অবস্থায় পতিত হয়েছেন ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার জনগণ। রাশিয়া এখন সিরিয়ায় বাশার সরকারের পক্ষে যুদ্ধে নেমে গেছে স্পষ্টভাবেই, আর যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মদদ দিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীদের। শক্তিমানদের এখন নারকীয় নিষ্ঠুর খেলায় বিপর্যস্ত মুসলিম জনপদের নাগরিকদের অভিবাসী না হয়ে অন্য কোনো উপায় আছে কী? কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো, সভ্যতার নায়করা অভিবাসীদের বিশাল সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও অভিবাসী হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা করছেন না। অর্থাৎ সংকটের শিকড়ে না গিয়ে তারা লতাপাতা নিয়ে উদ্বেগের অভিনয় করে যাচ্ছেন। সংকটের শিকড়ে গেলে তো ধরা পড়ে যাবেন। প্রহসনের এমন নিষ্ঠুর সভ্যতায় শান্তির মা বেঁচে থাকবেন কেমন করে?
২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ১৩ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ লাখ ইরাকে, ২ লাখের বেশি আফগানিস্তানে। এই সময়ে মার্কিন ড্রোন ও অন্যান্য আক্রমণে শুধু পাকিস্তানেই নিহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। এ তো প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের হিসাব, এর বাইরেও আছে হতাহত ও বিভিন্ন ক্ষতির অন্য হিসাব। এখন তো আমরা ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ার সংকটের কথা বলছি। ছোটবেলায় আমরা ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর সমস্যার কথা শুনেছি। শুনেছি তথাকথিত শান্তি আলোচনার কথাও। কিন্তু এতগুলো বছর পরও ওইসব সমস্যার কোনো সমাধান হলো না। ইহুদিরা উড়ে এসে ফিলিস্তিনে জুড়ে বসলো, একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠন করলো; কিন্তু ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনীরা আজো তাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীন রাষ্ট্র পেলো না। জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত দিলেও আজো কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারলো না। শান্তির মা তো এভাবেই মারা যায়।
বর্তমান বিশ্বে নিত্যনতুন চাতুর্যের অভাব নেই। তেমন চাতুর্যের এক নমুনা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। এর লক্ষ্য কিন্তু বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, বরং যুদ্ধ ও সংঘাতকে অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক ও সামরিক দাপটের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করা। বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আর্নেস্ট ম্যান্ডেল বলেছেন, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা ‘স্থায়ী যুদ্ধ অর্থনীতি’র পর্বে প্রবেশ করেছে। সমরাস্ত্র উৎপাদন ও যুদ্ধ অব্যাহত রাখা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার অনিবার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। অতএব হত্যা, ধ্বংস ও অভিবাসী বর্তমান সময়ের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে পৃথিবীতে শান্তি কেমন করে প্রতিষ্ঠিত হবে? তাই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন এখন দার্শনিক, নৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব হয়ে উঠেছে। সিরিয়ার রণক্ষেত্রে আমরা এখন আমেরিকা ও রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থান লক্ষ্য করছি। যেমনটি আমরা লক্ষ্য করেছিলাম আফগানিস্তানে। সিরিয়ায় এখন সমরাস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে, মানুষ মরছে, সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, নাগরিকরা অভিবাসী হচ্ছেন। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়ার পর সিরিয়াও হয়তো এখন প্রস্তর যুগে প্রবেশ করবে। সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশগুলোকে এভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে নেয়ার জন্য সমন্বিত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে মার্কিন, বৃটিশ, ফরাসী ও ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এদেরই সৃষ্টি আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন।
বর্তমান সময়ে অদূরদর্শী মুসলমানদের মতো মুসলিম দেশগুলোর দুর্বল শাসকরাও আগ্রাসী শক্তির কবল থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের উদার ও সেক্যুলার হিসেবে প্রতীয়মান করার জন্য কোসেস করে যাচ্ছেন। এসব প্রচেষ্টা দেখে করুণা হয়, দুঃখও হয়। শক্তিমান রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দারা মুসলমানদের সব খবরই রাখেন। তাদের জন্ম-মৃত্যু, বিয়ে-শাদী, খতনা থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, মসজিদ মাদরাসার সংখ্যাসহ নবজাতকের বার্ষিক পরিসংখ্যানও তাদের নখদর্পণে। নিজেদের উদার কিংবা সেক্যুলার মুসলিম হিসেবে প্রতিভাত করে যারা ওদের ‘গুডবুক’-এ আসার চেষ্টা করছেন, তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এমন চেষ্টা করে অতীতে কেউ রক্ষা পাননি। রক্ষা পাননি বারবাক কারমাল, ইরানের শাহ, সাদ্দাম কিংবা গাদ্দাফির মতো শাসকরাও।
সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের মানুষ তো ভালোই ছিল। সামাজিক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য মানুষের জীবনকে বেশ অর্থবহ করে তুলেছিল। তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও নেতৃত্বের সংকট বর্তমানে দেশটির সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সুশাসন ও গণতন্ত্রের সংকট দেশের মানুষকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ব্লেমগেম ও আস্থাহীনতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শত্রুতার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। এমন অবস্থায় রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নানাক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাস প্রশ্রয় পাচ্ছে। এসব কারণে দেশে ঐক্য ও সংহতির পরিবেশ ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের এমন দুর্বল অবস্থায় ষড়যন্ত্রকারীরা চুপ করে বসে থাকে না। যারা মত্তকার অপেক্ষায় ছিল, তারা এবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি দেশের মানুষ প্রথম টের পেল, যখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফর বাতিল করলো নিরাপত্তার অজুহাতে। আমরা হয়তো ভুলে যেতে পারি, কিন্তু বিদেশী গোয়েন্দারা ভুলেননি- বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। বাংলাদেশে ইতালী ও জাপানের দুই বিদেশী হত্যা, ব্লাগার হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আল কায়েদা ও আইএসের দায় স্বীকারের খবর ফলাও করে প্রকাশ করতে লাগলো ‘সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট এনটিটিস’ (সাইট)। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে প্রোপাগান্ডায় নেমেছে এই সাইটের নিয়ন্ত্রক রিটা কাৎজ (Rita Katz)। এই মহিলা কুখ্যাত ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর গুপ্তচর। রিটার কাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও অনলাইনে ফাঁস করা। আল কায়েদা নেটওয়ার্ক, আইএস নেটওয়ার্ক, হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও হিজবুল্লাহ নিয়ে তার ‘সাইট’ নিয়মিত প্রচারণা চালায়। ৬ অক্টোবর আমাদের সময় পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আইএসের বরাত দিয়ে জানানো হয়- বাংলাদেশে বিদেশী হত্যাকাণ্ডে আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে বিশ্বে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কাজে ‘মোসাদ’ তৎপর। ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশের পুলিশ সদর দতফর জানায়, ইরাকে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা রিটার বাবাও মোসাদের গুপ্তচর ছিলেন। ইরাকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে ১৯৬৮ সালে সাদ্দাম সরকার তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেয়। উল্লেখ্য যে, ঢাকা ও রংপুরে ২ বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় আইএস’কে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করে এদেশে আলোচিত হয়েছে ‘সাইট’ ও রিটা কাৎজও। রিটা লন্ডনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক পরিচালক জশ ডেভনেটের সঙ্গেও কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী ও এফবিআই-এর সঙ্গেও। অনর্গল আরবী বলতে সক্ষম রিটা মুসলমানের ছদ্মবেশে থেকেছেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্দোলনে, কিন্তু কাজ করেছেন ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে। উল্লেখ্য যে, বাবাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর রিটা এবং তার পরিবার ইসরাইলের ‘বাটইয়াম’ শহরে বসবাস শুরু করে। ইহুদি হয়েও রিটা বিশেষ উদ্দেশ্যে আরবী ভাষা শেখেন। আর চাকরিটাও পেয়ে যান ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানেই তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, ইতিহাস ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ইসরাইলী গুপ্তচর রিটা তো মোসাদের একটি ছোট্ট নমুনামাত্র। আসলে বর্তমান বিশ্ব ‘স্থায়ী যুদ্ধ অর্থনীতি’র পর্বে প্রবেশ করার পর গোয়েন্দা তৎপরতা ব্যাপক ও নির্মম হয়ে উঠেছে। সমরাস্ত্র বিক্রির জন্য তো যুদ্ধ কিংবা গৃহযুদ্ধ প্রয়োজন। ফলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে একের পর এক মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়ার পর বাংলাদেশ আর কত দূর? বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র হওয়াটাই যেন বাংলাদেশের জন্য এক বড় অপরাধ। শক্তিমানরা গোয়েন্দাদের সাহায্যে কখন কীভাবে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেবে, তা হয়তো আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝে উঠতে পারবো না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এসব বিষয় উপলব্ধি করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে এতদিনে বাংলাদেশের জনগণ এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছে যে, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, দুঃখ-ক্ষোভ কিংবা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি দিয়ে বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়। নিজেদের, দলকে এবং দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্যের চেতনায় আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার উজ্জ্বল পথের অভিযাত্রী হতে হবে আমাদের রাজনীতিবিদদের। সময়ের দাবি পূরণে এ পথে আসতে ব্যর্থ হলে বিশ্বের বড় বড় সন্ত্রাসীদের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ ডামাডোলে জড়িয়ে পড়ে পাপেটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গ্লানির জীবনকেই হয়তো বেছে নিতে হবে। এমন জীবনের, এমন রাজনীতির কোনো অর্থ আছে কি? শান্তির মা তো মারা গেছেন, এখন তার অপূর্ণ আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের রাজনীতিবিদদের মূল কর্তব্য হয়ে উঠেছে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter